somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন জীবন- তের

২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব: নতুন জীবন- বারো
চৌদ্দ
এ্যানের এমন মৃত্যু দুঃখজনক হলেও সবাই  মেনে নিয়েছিল। প্রথমবার সন্তান সম্ভাবা হয়েছে এমন একজন তরুণী যখন স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুর খবর পায়, তখন সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করতেই পারে, এর মধ্যে কোন রহস্য থাকতে পারে এমনটা কেউই ভাবল না। কিন্তু এ্যালেনের মৃত্যু একটা রহস্য হয়েই রইল, অন্য সবার মতো আমরাও এটা নিয়ে ভাবলাম। এ্যালেনের সাথে শত্রুতা ছিল এমন সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল, কিছু পাওয়া গেল না। এছাড়া সন্দেহভাজন কয়েকজনকে বাজিয়ে দেখা হল, কিন্তু দেখা গেল তাঁরা কেউই জড়িত নয়। যে তীর দিয়ে  এ্যালেনকে হত্যা করা হয় সেটা বুড়ো উইলিয়াম টাইয়ের বানানো, টাই বলতে পারল না এটা কে ওর থেকে কিনেছিল; এমন তীর সে শয়ে শয়ে তৈরি আর বিক্রি করেছে। মানুষ এ্যালেনের মৃত্যু নিয়ে নানারকম জল্পনা কল্পনা করতে লাগলো, এমনও শোনা গেল যে এ্যান নিজেই খুন করে তারপর  আত্মহত্যা করেছে! অবশ্য প্রমানের অভাবে এই গুজবও থেমে গেল। কিছুদিন পর আলোচনার নতুন বিষয় পাওয়া যাওয়ায় এ্যালেনের মৃত্যু রহস্য ধামাচাপা পড়ে গেল!!

আমরা কিছুদিন খুব করে চোখকান খোলা রেখে দেখলাম, কোন ভাবে কেউ আমাদের এই খুনের সাথে সম্পর্কিত করে কিনা! যখন দেখলাম আমাদেরকে কেউ কোন সন্দেহ করছে না, তখন মনে হল মাথা থেকে মস্ত এক বোঝা নেমে গেল!

তারপর প্রায় একবছর কেটে গেছে। মাথার বোঝা নেমে গেলেও মনের ভেতর একটা দুশ্চিন্তা সবসময় কুড়ে কুড়ে খেত, মনে হত আমাদের একতা ছিন্ন হয়ে গেছে, নিজের নিরাপত্তার  খেয়াল রাখতে হবে। এ্যান তো অনেক আগে থেকেই আমাদের থেকে আলাদা হয়ে গেছিল, তাই ওর না থাকাটা মাইকেল বাদে আমরা কেউ সেভাবে অনুভব করতাম না; শুধু মাইকেল মাঝে মাঝে গভীর উদ্বেগ নিয়ে বলতো,
- আমাদেরই একজন আমাদেরকে ধরিয়ে দিতে যাচ্ছিল....

 সে বছর বসন্ত যেন এল জয়ের মালা নিয়ে! এলাকার সকল ক্ষেত- খামারেই ফসলের বাড়- বাড়ন্ত, শুধু দুটো ক্ষেত বাদে আর কোথাও কোন বিকৃতি দেখা গেল না। আগের দু'বছর লোকজনকে অনেক ক্ষেত জ্বালিয়ে দিতে হয়েছে বিকৃতি ধ্বংসের জন্য। মাঠভরা ফসল দেখে মানুষের মেজাজ সবসময় ফুরফুরে থাকে, পাড়া প্রতিবেশীর সাথে আড্ডা, গল্পগুজব চলতে লাগলো। বুড়ো জেকব পর্যন্ত বলতে ।।লাগলো,
- ঈশ্বর আমাদের খুব কৃপা করেছেন, আমাদের কর্তব্য এখন ঈশ্বরের পথে চলা, তাকে সন্তুষ্ট করা, নাহলে আবার তার কৃপা বন্ধ হয়ে যাবে।

জেকবের ধারণা মিথ্যে হল, ঈশ্বর মোটেও কৃপা করা বন্ধ করলেন না; সে বছর গ্রীষ্মের ফলনও ভালো হল, প্রচুর অবিকৃত শাকসবজি জন্মাল। অবস্থা এমন হল, ইন্সপেক্টর তার অফিসেই সবসময় বসে থাকতেন, কারণ কোথাও তদারকি করবার দরকারি হতো না!

ক্ষেতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হচ্ছিল, কিন্তু আমাদের সবাই নিশ্চিন্ত, শান্তিময় দিন পার করছিলাম। কিন্তু এমন শান্তিময় দিনে অশান্তি নেমে এল পেট্রার কারণে...

এক রোদ ঝলমলে সকালে পেট্রা কাউকে না জানিয়ে একা একা বেড়িয়ে পড়ল ওর ছোট্ট টাট্টু ঘোড়ার পিঠে চেপে। একা বাড়ি থেকে বেরোনো ওর জন্য নিষিদ্ধ ছিল, ও এই নিষেধ তো মানলোই না বরং খোলা মাঠ পেরিয়ে জঙ্গলে গিয়ে ঢুকল। এমনিতে ওয়াকনুকের জঙ্গল তেমন ভয়ংকর কিছু নয়, হিংস্র প্রাণী ছিল না বললেই চলে, কিন্তু কালেভদ্রে তাদের দেখাও যেত, যখন প্রান্তভূমি এলাকার অদ্ভুত কোন প্রাণী জঙ্গলে চলে আসত! সেজন্য জঙ্গলে যেতে হলে অস্ত্র ছাড়া যাবার কথা কেউ ভাবতেই পারত না, অথচ পেট্রা এমনিই চলে গেছিল!

আমি আমাদের কামারশালায় হাতুড়ি পেটাচ্ছিলাম, হঠাৎ পেট্রার আর্তনাদ মাথার মধ্যে হাতুড়ির বাড়ির মতোই লাগলো, আগেরবারের মতোই অপ্রত্যাশিতভাবে, যদিও এবারের আর্তনাদের আকুলতা আগেরবারের মতো আমার মধ্যে ছুটে যাবার ভয়ংকর তাড়না সৃষ্টি করছিল না, কিন্তু এর মধ্যে আতঙ্ক আর উদ্বেগ এত তীব্র ছিল যে তৎক্ষণাৎ ছুটে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই মাথায় আসছিল না। তাছাড়া  চিৎকারে কোন থামাথামি ছিল না, ওর চেতনার সবটুকু জুড়ে বসেছিল প্রচন্ড আতঙ্ক, ও এমনভাবে তার বিচ্ছুরণ করছিল, যে মনে হল আমার সমস্ত চেতনাকে তা গ্রাস করে ফেলেছে। আমি অন্যদের জানাতে চাইলাম যে পেট্রাকে আমিই সামলাবো, আর কেউ যেন না আসে। কিন্তু জানাবো কী করে, আমার সমস্ত অনূভুতি যেন অসাড় হয়ে গেছে! কানফাটানো আওয়াজের মধ্যে যেমন নিজের কথাও শোনা যায় না, এটা অনেকটা সেরকম। সমস্যা হচ্ছে পেট্রা তার সমস্যা কী সেটা জানাচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচন্ড প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সেই প্রতিবাদে কোন ভাবনার প্রকাশ বা কোন নিয়ন্ত্রন নেই! আমার মনে হচ্ছিল, ও সচেতনভাবে এটা করছিল না, মনের অবচেতন থেকে এই আর্তনাদ বেরিয়ে আসছিল... আমি শুধু এটুকু বুঝলাম যে এটা কোন বিপদগ্রস্তের সাহায্য চেয়ে আকুলতা, আর এটা আসছে বেশ দূরে থেকে।

আমি কামারশালা থেকে দৌড়ে বেড়িয়ে প্রথমেই বাসায় ঢুকে বন্দুক নিলাম, জরুরি অবস্থায় ব্যবহারের জন্য এটা সবসময় দরজার কাছে ঝুলানো থাকে। চটপট একটা ঘোড়ায় চেপে বসলাম, কোন দিকে যেতে হবে সেটা বুঝতে পারছিলাম, ধূলা উড়িয়ে ঘোড়া ছুটল পশ্চিমের বনের দিকে।

পেট্রা যদি এই তীব্র আহ্বান কয়েক মূহুর্তের জন্যও থামাতো, আমি হয়তো অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার একটা সুযোগ পেতাম। কিন্তু পেট্রা এক মূহুর্তের জন্যও থামছিল না...

 শব্দ অনুসরণ করে গাছপালার মধ্যে দিয়ে আগাতে আগাতে থেমে গেলাম, সামনে গাছের ফাঁক গলে যাওয়া যাবে না। ঘুরে আরেক দিক দিয়ে আগাতে লাগলাম, এবার গাছের ফাঁকে ফাঁকে সরু, আঁকাবাঁকা পথে মাথা ঝুঁকিয়ে আগাতে আগাতে গাছপালা কমে এল, অবশেষে বনের মধ্যে একটা খালি জায়গায় এসে পৌঁছালাম।

পেট্রাকে দেখলাম না, কিন্তু ওর টাট্টু ঘোড়াকে দেখতে পেলাম। ফাঁকা জায়গাটায় আমার ঠিক উল্টা পাশে ঘোড়াটা পড়ে ছিল, ওর পেট চিরে ফেলা। একটা বিশাল জন্তু এত মনোযোগ দিয়ে ঘোড়ার পেটের মাংস খুবলে খাচ্ছিল যে আমার আগমন টেরই পেল না। জন্তুটা একটা বিকৃত প্রাণী, লালচে খয়েরী পশমের উপর হলুদ আর গাঢ় খয়েরী দাগ, সামনের দুই পায়ে বড় বড় বাঁকা  নখ, দুই থাবা রক্তে মাখামাখি। থ্যাবড়া মুখে হলুদ দুটো জ্বলজ্বলে চোখ, বিরাট দুই কান আর হাঁ করা মুখের মধ্যে শ্বদন্ত দেখা যাচ্ছে, এই দাঁত আর থাবা দিয়ে ঘোড়াকে চিরে খাচ্ছিল...

আমি কাঁধ থেকে বন্দুক নামালাম, এই শব্দে জন্তুটা মাথা ঘুরিয়ে জ্বলজ্বলে চোখে কিছুক্ষণ আমাকে দেখে খাওয়া বাদ দিয়ে গুঁড়ি মেরে বসল। আমি যেই বন্দুক চাপতে যাব, তখনই একটা তীর উড়ে এসে প্রাণীটার গলায় বিঁধে গেল! ওটা বিশাল একটা ঝাঁপ দিয়ে চার পা ছড়িয়ে আমার ঠিক সামনে এসে পড়ায় আমার ঘোড়া ভয় পেয়ে পিছু হটে গেল, ফলে আমার গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলো। কিন্তু জন্তুটা উঠে দাঁড়াবার আগেই ওর মাথায় আর পিঠে আরো দুটো তীর এসে বিঁধল।

 ঘোড়ায় চেপে রোজালিনকে আসতে দেখলাম আমার ডান দিক দিয়ে, হাতে ধনুক ধরা। মাইকেল এল উল্টা দিক থেকে, প্রাণীটাকে লক্ষ্য করতে করতে ধনুকে তীর জুড়ে তৈরি হয়ে। আমরা তিনজন এক জায়গায়, পেট্রা নিশ্চয়ই আমাদের দেখতে পাচ্ছিল, কিন্তু ওর আর্তনাদ কমছিল না।
- পেট্রা কোথায়? রোজালিন জিজ্ঞেস করল।

চারপাশে তাকিয়ে অবশেষে পেট্রাকে পেলাম; ৮/৯ হাত উঁচু একটা গাছের দুই শাখার মাঝখানে বসে দুহাতে একটা শাখা আঁকড়ে আছে। রোজালিন ঘোড়া নিয়ে গাছের নিচে গিয়ে পেট্রাকে নেমে আসতে বলল, কিন্তু পেট্রা একটুও নড়ল না। আমি ঘোড়া থেকে নেমে গাছে উঠে পেট্রাকে নামতে সাহায্য করলাম,  রোজালিন পেট্রাকে ওর ঘোড়ায় বসিয়ে শান্ত করতে চেষ্টা করল কিন্তু মরা ঘোড়ার দিকে তাকিয়ে পেট্রার দুঃখ বেড়ে যাচ্ছিল। আমি রোজালিনকে বললাম,
- ওকে থামাতে হবে। ও আমাদের সবাইকে এখানে জড়ো করে ফেলবে।

প্রাণীটা মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে মাইকেল ততক্ষণে আমাদের সাথে যোগ দিয়েছে, উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
- ও এমন করতে থাকলে তো বিপদ হবে! প্রবল আতঙ্কে ও মনের আর্তনাদ থামাতে পারছে না... বরং মুখে চিৎকার করলে হয়তো মনের আর্তনাদ থামবে। ঘোড়ার সামনে থেকে ওকে সরিয়ে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে দেখি।

আমরা একটা ঝোপের আড়ালে সরে এলাম। মাইকেল ওকে শান্ত করার চেষ্টা করল, কিন্তু ওর আর্তনাদের মাত্রা একটুও কমল না। আমি প্রস্তাব দিলাম,
- তিনজন একই সাথে ওকে ভাবনা- আকার পাঠাই, ভালবাসা-সহানুভূতি- সহমর্মিতার ভাবনা-আকার...

কিছুক্ষণ চেষ্টা করলাম, এক মূহুর্তের জন্য থেমেই পেট্রা আগের অবস্থায় ফিরে গেল। রোজালিন হতাশ হয়ে বলল,
- লাভ নেই। আমরা অসহায় দৃষ্টিতে পেট্রাকে দেখতে লাগলাম। ওর আর্তনাদে ভয়ের মাত্রা কমে এলেও কাতরতা আর বিহ্বলতা কমছে না। হঠাৎ পেট্রা কাঁদতে শুরু করল, রোজালিন আদর করে ওকে জড়িয়ে ধরল।
- ওকে কাঁদতে দাও। এতে কষ্ট কমে আসবে, মাইকেল বলল।

যখন আমরা পেট্রাকে শান্ত করার চেষ্টা করছি,
তখনই রেচেল হাজির হল ঘোড়ায় চড়ে! একটু পরেই অন্যদিক থেকে একটা ছেলে, আগে কখনও না দেখলেও আমি বুঝলাম এটা মার্ক!

অবশেষে যে ভয়টা আমরা সবসময় পেতাম তাই ঘটল, আমরা সবাই একসাথে জমায়েত হলাম; মনে হচ্ছিল বাকি দুজন মেয়েও চলে আসবে... এমন হলে যে বিপদ হবে সেটা আমরা সবাই জানি। তাই আমি খুব অল্প কথায় ওদের দুজনকে বোঝালাম কী ঘটেছে, তারপর ওদের দুজন আর সাথে মাইকেলকেও বললাম সেখান থেকে চলে যেতে, আমি আর রোজালিন
পেট্রার সাথে থাকব। ওরা তিনজন এক মূহুর্তেই পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারল, তৎক্ষণাৎ তিনজন তিন দিকে ঘোড়া ছোটাল।

পেট্রার কান্না থামাতে চেষ্টা করতে করছি, এমন সময় দেখি ঝোপঝাড়ের মাঝ দিয়ে ঘোড়ায় চেপে স্যালী আর ক্যাথেরিন এসে হাজির,  দু'জনেই  হাতে তীরধনুক। আমি ভেবেছিলাম ওদের তিনজনের কারো সাথে স্যালী আর ক্যাথেরিনের দেখা হবে, ফলে ওরা ফিরে যাবে। বোঝা যাচ্ছে কারো সাথে দেখা হয়নি। ওরা দুজন  কৌতুহল নিয়ে পেট্রাকে দেখতে দেখতে আমাদের কাছে এল, আমি আরেকবার ঘটনাটা বললাম, তারপর ওদের বললাম তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে। ওরা ফিরে যাবার জন্য ঘুরল, তখনই দেখি ফাঁকা জায়গায় ঘোড়ার পিঠে এক বিশালদেহী লোক বসে আছে। লাগাম টেনে ধরে লোকটা জানতে চাইল,
- হচ্ছে কী এখানে?
লোকটা আমার অচেনা, তাই তার সন্দেহকে পাত্তা না দিয়ে আমি উল্টা তার ২৭) পরিচয়পত্র দেখতে চাইলাম। লোকটা বিরক্ত হয়ে পরিচয়পত্র দেখাল। দেখলাম পরিচয়পত্র আসল, লোকটা আবার বলল,
- এখানে কি হচ্ছে?

ভাবলাম বলি, নিজের চরকায় তেল দিতে; কিন্তু ঝামেলা বাড়তে পারে ভেবে তাকে পুরো বৃত্তান্ত বললাম, যে আমার বোনের ঘোড়া আক্রান্ত হবার পর ওর চিৎকার শুনে আমরা ছুটে এসেছি। আমার কথা শুনে লোকটা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকল, মনে হয় ঠিক বিশ্বাস করল না। তারপর স্যালী আর ক্যাথেরিনের দিকে ফিরল,
- কিন্তু তোমাদের ব্যাপার কী? এভাবে এখানে ছুটে এলে কেন?
- বাচ্চাটার চিৎকার শোনার পর ছুটে আসব না? স্যালী বলল।
- আমি তোমার পেছনেই ছিলাম, কিছু শুনতে পাই নি!! লোকটা বলল।

স্যালী ক্যাথেরিনের সাথে মুখ চাওয়াচাওয়ি করল, তারপর সংক্ষেপে বলল,
- আমি তো শুনেছি।
- আমার তো মনে হচ্ছিল কয়েক মাইলের মধ্যে থাকা সবাই ওর চেঁচানী শুনেছে, বেচারা ঘোড়াটার ডাকও শুনতে পাননি? চলুন, ঘোড়াটাকে দেখবেন।
কথার মোড় ঘোরানোর জন্য আমি বললাম। লোকটা ঘোড়া আর জন্তুটাকে দেখে একটু থমকালো, কিন্তু ঠিক সন্তুষ্ট হল না। এবার রোজালিন আর পেট্রার পরিচয়পত্র দেখতে চাইল। আমি কারণ জানতে চাইলে বলল, আমরা প্রান্তভূমির গুপ্তচর কিনা তা যাচাই করছে।
- আমাদের দেখে আপনার প্রান্তিক মানুষ বলে মনে হচ্ছে?
লোকটা আমার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলল,
- জঙ্গলের উপর আমরা নজর রাখি ওদের ধরার জন্য। তোমরা এভাবে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি না করলে ভালো হয়।
কিছুতেই লোকটা যেন সন্তুষ্ট হবার নয়! সে কিছুক্ষণ ঘোড়াটা দেখে স্যালীকে জিজ্ঞেস করল,
- দেখে মনে হচ্ছে প্রায় আধা ঘন্টা আগে ঘোড়াটা মরেছে। তোমরা দুজন কিভাবে ঠিক জায়গামতো এসে পৌঁছালে?
- আসলে এদিক থেকে ডাকছিল, কাছাকাছি আসতেই বাচ্চাটার চিৎকার শুনি; স্যালী বলল।

আমি ওদের দিকে ফিরলাম,
- ভাগ্যিস তোমরা ছুটে এসেছিলে! আমরা আগে পৌঁছে না গেলে তোমরাই নিশ্চয় ওকে রক্ষা করতে। যাক, সব তো মিটে গেছে, এখন বাড়ি যাওয়া যাক, প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছে ও। সাহায্য করতে আসার জন্য তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।

ওরা দুজন আমার ইঙ্গিত ধরতে পারল।
পেট্রা আর আমাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ওরা ফিরতি পথ ধরল। লোকটা কিন্তু দাঁড়িয়েই থাকল, মনে হচ্ছিল ও কোন হিসাব মেলাতে পারছে না! দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে থেকে অবশেষে আমাদের বলল আর যেন জঙ্গলে ঘোরাঘুরি না করি, তারপর ওরা দুজন যেদিকে গেছে সেদিকে জোরে ঘোড়া ছোটাল।

==================================================================================
এইটুকু লিখেছিলাম মার্চের মাঝামাঝি, তারপর খুব তাড়াতাড়ি সব বদলে যেতে লাগল, আমাদের জীবনে আর ব্লগে; আমারও পোস্ট করার ইচ্ছা চলে গেল। পরে একসময় ভাবলাম এটা শেষ করা দরকার, তাই আরো কয়েক পর্ব লিখে ফেললাম, এখন পরপর দিয়ে শেষ করে দিতে চাই...




 











সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪৭
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×