somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন জীবন- বারো

১৩ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্ব: নতুন জীবন- এগারো

(তেরো)
এ্যান প্রচন্ড ক্ষেপে গেল,
- আমি কি একটা গর্দভ! ভালো করে ভেবেচিন্তেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি! আমি একটা মেয়ে, সব মেয়ের মত আমারও ইচ্ছা হয় বিয়ে করে ঘরসংসার করতে, সন্তানের মা হতে... অথচ দেখ, আমরা তিনজন ছেলে আর পাঁচজন মেয়ে। তার মানে, দু'জন মেয়েকে হয় কোন সাধারণ ছেলেকে বিয়ে করতে হবে অথবা সারাজীবন অবিবাহিত থাকতে হবে! আমার মনে হয়েছে, অবিবাহিত থাকার চাইতে বরং একজন সাধারণ ছেলেকে বিয়ে করাই ভালো! তাই এ্যালেনকে আমি বিয়ে করবোই, কোন কথা শুনব না।
- কিন্তু এ্যান, এমনও তো হতে পারে, আমাদের মতো ছেলে আরও আছে, হয়ত এখন আমাদের সীমানার বাইরে কোথাও... কিছুদিন যদি অপেক্ষা...
- কেন অপেক্ষা করব? এমনও তো হতে পারে,  তেমন কাউকে কখনোই পাওয়া যাবে না। কিসের ভরসায় আমি অপেক্ষা করব? আমি তো নিজে শখ করে এমন হই নি! এমন হয়েছি বলেই কী আমার কোন সাধ- আহ্লাদ থাকতে পারবে না? তিনজন ছেলে তিনজন মেয়েকে বিয়ে করবে, বাকি দুজন সঙ্গীর অপেক্ষায় বছরের পর বছর কাটিয়ে দেবার পর হয়তো একদিন বুঝবে তাদের বাকি জীবন নিঃসঙ্গই কাটাতে হবে। সেই দুজনের একজন কি আমি হব? অসম্ভব!!

এ্যান কিছু ভুল বলেনি, সারাটা জীবন একাকী কাটিয়ে দেয়া সত্যি খুব কঠিন হবে, কিন্তু  আমাদের মতো কারো পক্ষে একজন সাধারণকে বিয়ে করে তার সাথে জীবন কাটানো কঠিনতর হবে, আবেগের বশে এ্যান এটা বুঝতে পারছে না। আমাদের আটজনের একাত্মতা এমন যে, পরিবারের সদস্যদের চাইতে আমরা একে অপরকে বেশি আপন মনে করি। কোন সাধারণ মানুষ বুঝতেই পারবে না কিভাবে আমরা একে অপরের অংশ হয়ে থাকি, বুঝতেই পারবে না যে আমরা কিভাবে একসাথে চিন্তা করি! আমাদের কখনো মনের কথা প্রকাশ করার জন্য শব্দ খুঁজে ফিরতে হয়না, আমরা একে অন্যের থেকে কিছু লুকাতে পারিনা, এমনকি একে অন্যকে ভুলও বুঝতে পারি না, প্রত্যেকের মনে কি আছে আমরা প্রত্যেকে জানি ! এই অবস্থায় কী করে একজন সাধারণকে বিয়ে করে দিনযাপন সম্ভব! সে তো একটা বোবা- কালার মত যে তার সঙ্গীর মনের কথা আঁচ পর্যন্ত করতে পারবে না!! এমন বিয়ের পরিণতিতে আসবে দীর্ঘস্থায়ী বেদনা আর হতাশা, যার ফলে হঠাৎ কোন বড় ভুল করে ফেলা, বা দিনের পর দিন সন্দেহ জাগানিয়া ছোটখাটো ভুল করে একদিন ধরা পড়ে যাওয়ার খুবই সম্ভাবনা...

এ্যান এই সবই জানে, তবু একগুঁয়েমি করে আমাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে চাইল; সবাই যখন একসাথে কথা বলি, তখন দেখা গেল এ্যান সাড়া দিচ্ছে না!! ও কি ওর মনকে আমাদের থেকে আলাদা করে নিল, নাকি আমাদের সাথে থেকেও চুপচাপ থাকছে, এটা বুঝতে পারতাম না। সম্ভবত ও আমাদের থেকে আলাদাই হয়ে গিয়েছিল, তবুও আমরা ওকে নিয়ে আলোচনা করতাম না, শুনে ফেলে যদি!!

এ্যানের থেকে রোজালিন একেবারেই আলাদা। ওর দীর্ঘাঙ্গী, কমনীয় চেহারা এতই আকর্ষণীয় যে, এলাকার প্রতিটা তরুণই ওর সাথে খাতির জমাতে চেষ্টা করেছে। খুব ভদ্র ভাবে রোজালিন তাদের প্রত্যেককে প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ একজন স্বাভাবিক মানুষ যতই উপযুক্ত হোক না কেন, সঙ্গী হিসাবে তার সাথে অনেক ব্যবধান থেকেই যাবে... এ্যানের ঘটনার আগেই রোজালিন এটা স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছিল। অবশ্য আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে রোজালিন ভালোবাসতেও পারত না, আমিও রোজালিন ছাড়া কাউকে ভাবতেই পারতাম না। তবে সেই মূহূর্তে ভালবাসা না, আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছিল এ্যানের সৃষ্ট জটিলতার  সমাধান!

শেষ পর্যন্ত আমি এক্সেল খালুকে সব খুলে বলে পরামর্শ চাইলাম।

- এ্যান আমাদের সাথে সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। ও এখন প্রাণপণ চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষের মতো হতে, আর ওর যে অন্যের মনের সাথে যোগাযোগের ক্ষমতা আছে সেটা ভুলে যেতে। এ্যালেনের প্রতি ভালবাসায় ও অন্ধ আর মরিয়া হয়ে উঠেছে।
- খুব করে চেষ্টা করলেও কি এ্যান ওর এই ক্ষমতা ভুলে যেতে পারে না? এক্সেল খালু জানতে চাইলেন।
- না পারে না। এটা অনেকটা এরকম, একজন অন্ধ লোককে বিয়ে করে তার মতো হবার জন্য সারাজীবন নিজের দুচোখ বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করা...

এক্সেল খালু কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন,
- মেয়েরা প্রেমে পড়লে প্রেমিকের জন্য সবকিছু ছাড়তে পারে। ওর যে আচরণ তোমাদের কাছে পাগলামি, ওর কাছে তা একেবারে ঠিক। ওর মনের উপর এখন একসাথে অনেক ভার; অনুতাপ, পাপবোধ, নিজেকে ভুলে থাকা, নিজেকে বিশুদ্ধ করে তোলার আকাঙ্ক্ষা। এই ভার বইতে বইতে একসময় ও ক্লান্ত হয়ে উঠবে, কারো সাথে এই ভার ভাগাভাগি করতে চাইবে... এটা হবেই, আজ না হলে কাল...
- আমরা এখন কী করব? অসহায়ভাবে জানতে চাইলাম আমি।
- ভেবে দেখ, এ্যান এমন কিছু করতে যাচ্ছে যা কিনা তোমাদের জন্য ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক হতে পারে। ও এই ছেলেটাকে বিয়ে করতে যাচ্ছে, জেনেবুঝেই ও তোমাদের মাথার উপর বিপদের খাঁড়া ঝুলিয়ে দিচ্ছে।
- আমরা তো সবরকম ভাবে চেষ্টা করেছি ওকে বোঝাতে, বিয়েটা ঠেকাতে...
- কিন্তু ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছ! এখন কী করবে? কবে ও কোন ভুল করবে আর তোমরা ধরা পড়বে, সেই অপেক্ষায় থাকবে?
- জানিনা... কিছু বুঝতে পারছি না...

এক্সেল খালু বললেন,
- শোন ডেভিড, তোমাকে এক নাবিকের থেকে শোনা গল্প বলি। একবার জাহাজডুবির পর সে সহ চারজন একটা নৌকায় উঠেছিল।খাবার আর পানি তাদের অল্পই ছিল, এরইমধ্যে একজন নাবিক কিভাবে যেন পাগল হয়ে গেল; সে নৌকা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতে লাগল... ওর উৎপাত এত বেড়ে গেল যে  বাকিরা বাধ্য হয়ে ওকে নৌকা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিল। এর ফলে বাকিরা নিরাপদে তীরে পৌঁছাল, তাদের জান বাঁচল।
- অসম্ভব, এমন কিছু করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব, বলে উঠলাম আমি।
- তোমাদের মতো মানুষ, যারা স্বাভাবিক মানুষের থেকে আলাদা, তাদের মাঝে মাঝে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে, নাহলে টিকে থাকতে পারবে না।
- আপনি যদি বলতেন এ্যালানকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে, আমরা নির্দ্বিধায় সেটা করতে পারতাম। কিন্তু এ্যানের সাথে এটা করতে পারি না; ও আমাদেরই এক অংশ...কতখানি, সেটা আপনাকে বোঝাতে পারবো না।
- তাহলে তোমাদের মাথার ওপর বিপদের খাঁড়া ঝুলিয়ে রাখবে?
- বুকের ভেতর খাঁড়া ঢোকানোর যন্ত্রনার চাইতে মাথার উপরে ঝুলিয়ে রাখা কম যন্ত্রনার, খালু...
 এছাড়া বলার মতো আর কিছু পেলাম না।

আমি ভেবে দেখলাম এক্সেল খালু যে সমাধান দিয়েছেন সেটাই একমাত্র কার্যকরী সমাধান, কিন্তু এটা নিয়ে কারো সাথে আলোচনার উপায় ছিল না। অবশ্য জানতাম, আলোচনা করলেও অন্যদের সিদ্ধান্ত আমার থেকে আলাদা কিছু হবে না।

এ্যান আমাদের সাথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিল, ওর বোন রেচেল বলল, এ্যান শুধু মুখে উচ্চারিত কথা শুনছে!  পরের কয়েক সপ্তাহ ধরে যখন এ্যান যখন একইরকম রইল, আমরা ভাবতে শুরু করলাম যে, এ্যান হয়তো সাধারণ মানুষ হবার চেষ্টায় সফল হয়ে গেছে!

অবশেষে বিয়ের দিন এল, বিয়ে হয়ে গেল; বিয়ের পর এ্যান এ্যালানকে নিয়ে তাদের বাবার দেয়া নতুন বাড়িতে উঠলো। আমাদের সাথে যোগাযোগ না থাকলেও এ্যানের খবর পেতাম, নতুন সঙ্গীর সাথে ও ভালোই আছে। এটা জেনে আমাদেরও ভালো লাগত, এ্যানকে নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আস্তে আস্তে কমে আসতে লাগলো।

এই সময়টাতেই আমি আর রোজালিন বুঝতে পারলাম, আমাদের জীবন যে একসাথে বাঁধা পড়েছে, এটা আমাদের নিয়তি। যেন প্রকৃতিই আমাদের দুজনকে এক করে দিয়েছে; আমরা দুজন শৈশব থেকে একসাথে সব ভাবনা ভেবে বড় হয়ে উঠেছি, তারপর যখন বুঝেছি আমাদের চারপাশে যারা আছে তারা কেউ আমাদের আপন নয়, তখন আমরা দুজন একে অন্যের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছি, আর তারপর একসময় বুঝতে পেরেছি এটাকেই বলে ভালোবাসা! আমরা বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু বুঝতে পারলাম, আমাদের ভালবাসা কোন মসৃণ পথে গন্তব্যে পৌঁছাবে না; কারণ আমাদের দুজনের বাবা...

আমার বাবা আর এ্যানগাস মর্টনের মধ্যে সম্পর্ক সবসময়ই তিক্ত ছিল। এরপর দৈত্য ঘোড়া নিয়ে বাবা যে বিবাদ শুরু করেছিলেন তা দিনে দিনে বেড়েই গেছে! দুইজনই গুপ্তচর রেখেছিলেন অন্যের ফসল আর গবাদি পশুর উপর নজরদারি করার জন্য, যদি কখনো ইন্সপেক্টরের কাছে বিকৃতির খবর দেয়া যায় তাহলে অন্যপক্ষকে বেশ একটু হেয় করা যায়! আমার বাবা এ্যানগাস মর্টনের থেকে এগিয়ে থাকবার জন্য কখনো কখনো বড়রকমের ক্ষতিও মেনে নিতেন। একবার ভুট্টা আর টমেটোতে অল্প বিকৃতি দেখামাত্রই বাবা পুরো ক্ষেত জ্বালিয়ে দিলেন। স্ট্রর্ম আর মর্টনদের সম্পর্ক এমন আদায় কাঁচকলায়, তারা যে আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবেন এমন কোন সম্ভাবনা ছিল না, আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক থাকতে পারে এটা তারা কল্পনাও করেনি। তাই রোজালিনের আর আমার মা আমাদের দুজনের জন্য পাত্র- পাত্রী দেখছিলেন, পছন্দমত কাউকে পাচ্ছিলেন না বলে রক্ষা!!

আমাদের মনে হচ্ছিল আমরা যেন কানাগলিতে আটকে গেছি, সঙ্কট থেকে বের হওয়ার কোনো পথ নেই! এ্যানের বিয়ের পর ছয়মাস পার হয়ে গেল, কিন্তু আমাদের বিয়ের কোন উপায় করতে পারছিলাম না।

তবে এই ছয়মাসে এ্যানকে নিয়ে আমাদের ভয় আস্তে আস্তে কমে আসছিল, মনে হচ্ছিল ও হয়তোবা ওর অতীত আর আমাদের কথা ভুলেই গেছে!

এরমধ্যেই এক সন্ধ্যায় ওদের বাড়ির সামনের রাস্তায় এ্যালানকে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেল, ওর ঘাড়ে একটা তীর বিঁধে ছিল!

আমরা খবরটা পেলাম রেচেলের কাছ থেকে। রেচেল বলল, এই দুঃখজনক মৃত্যুর কথা শুনে  ও এ্যানের সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল, কিন্তু গত আট মাস যেমন করেছে, এখনও এ্যান মনের সব দুয়ার বন্ধই করেই রেখেছে! রেচেল বলল, ও এ্যানের কাছে যাচ্ছে, এই দুঃসময়ে বোনের পাশে ওর থাকাটা খুব দরকার।

আমরা অপেক্ষা করে বসে রইলাম, ঘন্টাখানেক পর রেচেল যোগাযোগ করল, খুবই বিচলিত হয়ে।
- ও আমাকে বাসাতেই ঢুকতে দেয়নি! প্রতিবেশী এক মহিলাকে ঢুকতে দিল, কিন্তু আমাকে গালিগালাজ করে বলল বেরিয়ে যেতে!
- ও ভাবছে আমরা কেউ এ্যালানকে খুন করেছি।  আসলে কি তোমরা কেউ করেছ... বা কিছু জানো এ সম্পর্কে?
মাইকেল জিজ্ঞেস করল। আমরা সমস্বরে অস্বীকার করলাম।
 মাইকেল বলল,
- যেভাবেই হোক ওকে বোঝাতে হবে যে আমরা এ্যালানকে খুন করিনি। চল আমরা সবাই মিলে একসাথে ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি।

আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেও এ্যানের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হলাম। শেষপর্যন্ত হতাশ হয়ে মাইকেল রেচেলকে বলল,
- এভাবে হবে না... তুমি বরং ওকে একটা চিঠি লিখে জানাও যে আমরা কেউ একাজ করিনি। এমন ভাবে লিখবে, যেন এর অর্থ একমাত্র এ্যান বোঝে, অন্য কারো হাতে পড়লেও সে যেন চিঠিটার অর্থ বুঝতে না পারে।
 - আচ্ছা, দেখি চেষ্টা করে... কেমন দ্বিধান্বিত স্বরে রেচেল বলল।

একঘন্টা পর রেচেল যোগাযোগ করে বলল,
- পারলাম না। একজন মহিলা ওর সাথে দেখা করতে যাচ্ছিল, আমি তাঁর হাতে চিঠিটা দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। মহিলা পরে বের হয়ে বলল, এ্যান চিঠিটা ভাঁজ না খুলেই টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলেছে!

মাইকেল অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর বলল,
- যেকোনো সময় আমাদের পালাতে হতে পারে, সবাই তৈরি হয়ে থেকো। কিন্তু কারো সন্দেহ হয়, এমন কিছু করে বোসো না। রেচেল, তুমি খেয়াল রেখ, কিছু ঘটলে সাথে সাথে জানাবে।

আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব! পেট্রা ঘুমিয়ে গেছে, এখন কারো নজর এড়িয়ে ওকে আমার কাছে আনা সম্ভব না। আমি মনে মনে ছক কষতে লাগলাম পালাবার জন্য, আর দোয়া করতে লাগলাম যেন তেমন পরিস্থিতিতে পড়লে পেট্রাকে নিয়ে নির্বিঘ্নে পালাতে পারি...

গভীর রাতে রেচেল সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাল,
- আমি আর মা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। মা ওর সাথে থাকতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু এ্যান জোর করে বের করে দিয়েছে। ও একেবারে পাগলের মতো আচরণ করছে। মাকে বলেছে, ও জানে যে কারা এ্যালানকে মেরেছে!
- তার মানে কি ও আমাদের কথা ভাবছে? এ্যালানের কারো সাথে হয়ত শত্রুতা ছিল, এটা ভাবছে না কেন এ্যান? মাইকেল জিজ্ঞেস করল।
- ও আমাকে দেখে যেভাবে চেঁচিয়ে উঠেছিল, তাতে আমি নিশ্চিত, ও আমাদেরকেই খুনী ভাবছে...ভোরে আবার যাব, দেখি ওকে বোঝাতে পারি কিনা!!

রেচেলের কথা শুনে একটু নিশ্চিন্ত হলাম; রাতে এ্যান কিছু করবে না। ক'ঘন্টা ঘুমিয়ে নিতে পারব!

পরদিন সকালে যা হয়েছিল তা পরে রেচেলের থেকে শুনলাম। ভোরের আলো ফোটার আগেই রেচেল এ্যানের বাড়ি গিয়ে হাজির হয়েছিল। আগের দিন এ্যান ওকে যেভাবে গালাগালি করেছে সেসব ভেবে দরজার ঘন্টা বাজাতে ইতস্তত করছিল প্রথমে। কিন্তু পরে সাহস সঞ্চয় করে ঘন্টা বাজায়, বাইরে দাঁড়িয়ে শুনতে পাচ্ছিল ভেতরে ঘন্টার শব্দ। অনেকক্ষণ ঘন্টা বাজানোর পরও ঘরের ভেতরে কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে ও ভয় পেয়ে যায়। পাশের বাড়ির যে মহিলা আগের দিন এ্যানের সাথে ছিল তাকে ডেকে আনে; তারপর দুজনে মিলে একটা বড় লাকড়ি দিয়ে জানালা ভেঙ্গে বাসায় ঢুকে। তারপর এ্যানের বেডরূমের কড়িকাঠের সাথে ওর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পায়!! ওরা দুজন মিলে এ্যানকে নামিয়ে আনে, কিন্তু ওর ঠান্ডা শরীর দেখে বুঝতে পারে এ্যান অনেক আগেই মারা গেছে!!

এ্যানের এমন মৃত্যু রেচেল মানতে পারছিল না;  ও যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছিল। প্রতিবেশী মহিলাটি ওকে ধরে ধরে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিল। যেতে যেতে টেবিলের ওপর একটা ভাঁজ করা কাগজ দেখতে পেয়ে মহিলাটি রেচেলের হাতে দিয়ে বলল,
- তোমার বাবা-মা বা তোমার জন্য হয়ত লিখেছে...

ঘোরের মধ্যে চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখে রেচেল মহিলাকে প্রায় বলেই ফেলেছিল যে চিঠিতে প্রাপকের নাম দেয়া আছে ইন্সপেক্টর, কিন্তু শেষ মূহুর্তে নিজেকে সামলাতে পেরেছিল। মহিলা সম্ভবত লেখাপড়া জানত না, তাই না বুঝেই ওটা রেচেলকে দিয়েছিল। চিঠি পড়ে রেচেল দেখে, এ্যান আমাদের সকলের এমনকি পেট্রার সম্পর্কে পর্যন্ত সবকিছু জানিয়ে ইন্সপেক্টরকে চিঠিটা লিখেছিল, ওর ধারণা এ্যালানের খুনের জন্য দায়ী আমরা সবাই! রেচেল একবার পড়েই চিঠিটা পুড়িয়ে ফেলে।















সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০২
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×