আমরা প্রায়ই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন লোগোতে দেখি একটা ছড়ি বা কাঠির গায়ে পেঁচানো সাপ থাকে। সাপের সংখ্যা বেশিরভাগ সময়ে এক কিংবা কখনো কখনো দুই। ছড়ির গায়ে জড়িয়ে থাকা একটা সাপ চিকিৎসাবিজ্ঞানে বেশ ব্যবহৃত একটা লোগো । এর সাথে জড়িয়ে আছে রূপকথার গল্প। গ্রীক রূপকথা। এই চিহ্নটা কে বলা হয় রড অফ এসক্লিপিয়াস।
গ্রিক দেবতা এপোলোর ছেলে ছিল এসক্লিপিয়াস। সে মানুষকে সারিয়ে তোলার বিদ্যেয় অসাধারণ পারদর্শিতা অর্জন করেছিল। এসক্লিপিয়াস শিক্ষা পেয়েছিল পিতা এপোলো আর অশ্বমানব কাইরনের কাছে। এসক্লিপিয়াসের গল্পে সাপ কিভাবে আসল তার অনেক বর্ণনা আছে। ভিন্ন ভিন্ন। গ্রিক মিথলজিতে সাপ খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রানী হিসেবে বিবেচিত হয়। সাপকে জ্ঞান, রোগমুক্তি আর পুনর্জীবনের সাথে জড়িত বলে ভাবা হয়। এক বর্ণনায় আছে কোন একটা ভাল কাজের প্রতিদান দিতে গিয়ে এক সাপ এসক্লিপিয়াসের কানে কানে রোগমুক্তির গোপনকথা বাতলে দেন। আরেক ভাষ্যমতে, এসক্লিপিয়াস কে একবার গ্লকাস নামে একজনের জীবন বাঁচাতে ডেকে আনা হয়। সে গ্লকাসের জীবন বাঁচাতে না পারায় তাকে বন্দী করে রাখা হউ। বন্দীশালায় এসক্লিপিয়াস একটা সাপ মেরে ফেলে। কিছুক্ষণ পরে আরেকটা সাপ কিছু গাছের পাতা নিয়ে এসে আগের সাপটিকে বাঁচিয়ে তোলে। এসক্লিপিয়াস একই গাছের পাতা ব্যবহার করে গ্লকাসকে বাঁচিয়ে তোলেন। সেই থেকে এসক্লিপিয়াসের সাথে সেই সাপ জড়িত হয়ে গেছে
এপিডিউরাসের রাজা এসক্লিপিস এর একবার চোখের এক ভয়ানক অসুখ হয়। এসক্লিপিয়াসের নাম তখন ছিল হিফিয়াস । হিফিয়াস কে ডেকে আনা হয় রাজার চিকিৎসা করার জন্যে। হিপিয়াস সেই চোখের অসুখ সারিয়ে তোলেন এবং তখন থেকে তার নাম হয়ে যায় এসক্লিপিয়াস। এসক্লিপিয়াস মানুষকে সারিয়ে তোলার বিদ্যেয় তার গুরু এপোলো আর কাইরনকে ছাড়িয়ে যায় । পাতালের দেবতা হেইডিস এসক্লিপিয়াসের এহেন সুনামে খুবই ভীত হয়ে পড়ে। সে জিউসের কাছে তার নামে নালিশ করে। জিউস ও ভয় পেয়ে যায়, পাছে এসক্লিপিয়াস তার এই বিদ্যে সব মানুষকে না শিখিয়ে দেয়। তাই সে এসক্লিপিয়াস কে মেরে ফেলে। এসক্লিপিয়াসের বাবা এপোলো ছেলের মৃত্যুতে খুবই রেগে যায়। এপোলো আর জিউস বিরোধেও জড়িয়ে যায়। সবার শেষে এপোলোর অনুরোধে জিউস এসক্লিপিয়াসকে দেবতা হিসেবে পুনর্জীবিত করেন। এসক্লিপিয়াসের সন্তানদের মাঝে পরিচ্ছন্নতার দেবী হাইজিয়া এবং সার্বজনীন সুস্থতার দেবী প্যানাসিয়া উল্লেখ্য।
পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এসক্লিপিয়াসের মন্দির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। মানুষকে সুস্থ করার বিভিন্ন ক্রিয়াকর্মে তার অনুসারীরা একজাতের নির্বিষ সাপ ব্যবহার করত এসব মন্দিরে । ধারণা করা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিপক্রেটিস এমন একটা মন্দিরেই তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।
এসক্লিপিয়াসের ছড়িতে যদিও একটা সাপ জড়িয়ে থাকার কথা , অনেক জায়গায় একটা ছড়িতে দুইটা সাপ জড়িয়ে থাকার ছবি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা মূলত ভূল । কারণ এক ছড়িতে পেঁচানো দুই সাপ আর পাশে দুইটা পাখা মূলত গ্রিক দেবতা হারমিসের চিহ্ন। সে আরেকদিনের গল্প ...
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০৯