somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপিকা, ১৪শ অধ্যায়

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৩শ পর্ব লিঙ্ক Click This Link

লীনার আসন্ন অনুষ্ঠানের চেয়ে পরীক্ষার টেনশন টা বেশী কাজ করছে । তাছাড়া দীপু তার অচেনা নয় যে নানান চিন্তায় পেয়ে বসবে তাকে নিয়ে ।
তবে বাড়ীর পরিবেশটা হঠাৎ করেই ভারাক্রান্ত হয়ে গেল । সেটা রাকিবের জন্য । সে তার লন্ডন চলে যাওয়া এবং সেখানে ভবিষ্যৎ জীবন কাটাবার কথা জানিয়েছে এবং সে অনঢ় এ বিষয়ে সেটাও জানিয়ে দিয়েছে পরিষ্কার । খুব অল্প দিনের মধ্যে সে ঢাকা ছাড়ছে সেটাও নিশ্চিত করেছে । দুই পরিবারের এক পুত্র সন্তান রাকিব , কি করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারল কেউ কূল পায় না ভেবে । রেহানা একদিন জানতে চেয়েছিলেন , কোন বিশেষ কারন ছাড়া এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়া তার ঠিক হচ্ছে কিনা । রাকিব বলে দিয়েছে যে এ বিষয়ে সে কোন কথা বলবে না । এই বাড়ীর একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না যে রাকিবের লন্ডনবাসী হওয়াকে সমর্থন করছে । কিন্তু কিছুই করার নেই ।
রেহানা রাকিবের মা , তিনি নানাভাবে সূত্র খুঁজে হয়রান ।ল
লীনারও ভাল লাগছে না রাকিবের এ বিষয়টা । হুট করে এমন করা ঠিক না । কিন্তু রাকিব ভাইয়াটা এত ভাল , কখনো কারো ক্ষতি হয় এমন কিছু করে না , কে জানে হয়তো কোন বিশেষ কারন আছে । লীনা ভাবে যদি জানতে পারতো ও চেষ্টা করতো রাকিব ভাইয়াকে সাহায্য করতে । নিরুপায় হয়ে বসে থাকতে হচ্ছে ।
এর মাঝে একদিন রাকিব ওর মায়ের হাতে দুটো শাড়ীর প‌্যাকেট দিল । নাম লেখা প‌্যাকেটগুলোর গায়ে । লীনার একটা , রুমানার জন্য আরেকটা।
মিসেস রেহানা দেখলেন খুব সুন্দর দুটো জামদানী শাড়ী ওদের জন্য । রাকিব জানালো পরিচিত একজন অর্ডার দিয়ে বানিয়ে দিয়েছে । মিসেস রেহানা রাকিবকে অনুরোধ করলেন শাড়ী দুটো নিজের হাতে ওদেরকে দিতে । রাকিব 'আচ্ছা তাই হবে' বলে প‌্যাকেট দুটো নিয়ে রাখল । মাকে বলল , ' তোমার যে শাড়ীটা লীনা পরেছিল রুমানার বিয়েতে সেটা কি তুমি আর পরবে? ওকে দিয়ে দিও পরবে ও । কিছু মনে করো না আম্মা, আমার মনে হল তাই বললা,' ।
মিসেস রেহানার মনটা কেমন খচখচ করছে । লীনার এন্গেজমেন্ট এর ব্যাপারে কোন কৌতুহল দেখায় না রাকিব, বরঞ্চ এ প্রসঙ্গে কথা হলে চুপ করে থাকে । আজ আবার এত দামী আনকমন জামদানী শাড়ী লীনার জন্য । সাথে রুমানারটা হয়তো বিষয়টাকে হালকা করবার জন্য ।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন মিসেস রেহানা । মা হবার বড় যন্ত্রনা মনে হল ওনার ।
রাকিবের ফ্লাইট এক সপ্তাহ পরে ; যাবার তোড়জোড় চলছে । মিসেস রেহানা প্রতিদিনই এটা ওটা কিনছেন ছেলের জন্য , গুছিয়ে দিচ্ছেন ।
আজ আড়ং থেকে দুটো বেল্ট, দুটো ওয়ালেট আরো কিছু দরকারী জিনিস কিনেছেন । আলাদা আলাদা করে সব রাখলেন । রাতে খাবারের পর রাকিবকে দেখিয়ে রাখলেন জিনিসগুলো । তারপর ওর পুরোন মলিন হয়ে যাওয়া ওয়ালেটটা চাইলেন । রাকিব দেখিয়ে দিল ড্রয়ার; বললো, 'আছে ওখানে বের করে নাও' ।
মিসেস রেহানা সেটা থেকে সব বের করে করে রাখছেন , চমকে হঠাৎ দেখলেন রাকিবের ছবির পেছনে রাখা লীনার একটা ছবি , পুরোন । কোন গ্রুপ ছবি থেকে কেটে রাখা হয়েছে । কেমন অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন তিনি । এক এক করে অনেক কথা তার মনে হচ্ছে । কেন যেন মনে হল তিনি বুঝতে পারছেন রাকিবের এভাবে দেশ ছেড়ে যাবার কারন । লীনার বিয়ের বিষয়টা সে মেনে নিতে পারছে না । মিসেস রেহানা আদর্শ নিয়ে নীতি মেনে মাথা উঁচু করে এতটা দিন পার করে এসেছেন । আজ নিজেকে বড় অসহায় মনে হল । একজন 'মা ' রেহানা এতবড় পৃথিবীতে কেমন অক্ষম অসাড় একা হয়ে গেলেন । তার সন্তান, তার সুবোধ সুশীল ভাল মানুষ ছেলেটা এমন একটা বেদনার সাঁকোতে পা রেখেছে যেটার অপর প্রান্ত কোন তীরের ছোঁয়া পায়না, পাবেও না কোনদিন । কেন এমন হোল ?
আবার মনে হল লীনার মত মেয়েকে যে চিনতে পারে সেকি তাকে ভাল না বেসে থাকতে পারে । উনি চাচী হয়েও মেয়েটাকে কেমন সারাক্ষন মনে রাখেন ।
ধীরে ধীরে রাকিবের ওয়ালেটটা গুছিয়ে অন্য সব কিছু ঠিক করে রেখে বেরিয়ে এলেন ।
কোথায় যাবেন কার কাছে যাবেন । তার প্রিয় সন্তানের কষ্ট নিজের বুকে বড় বাঁজল যেন ।

একটা আনন্দ অনুষ্ঠান এগিয়ে আসছে । রাকিবের চলে যাবার বিষাদ সেই আনন্দকে আসতে দিচ্ছে না বাড়ীর চৌহদ্দির মধ্যে ।
একদিন রাকিব তার চাচীর কাছে গেল ।
রাকিব: চাচী আমার যাবার দিন চলে আসছে, কোন প্রয়োজন হলে আমাকে জানাবেন ; লন্ডন তো বেশী দূরে নয়, আজকাল যোগাযোগ ব্যবস্থা এত ভাল ।
মিসেস সালমা: ঠিক আছে বাবা মন যখন ঠিক করেছো যাও। তবে না গেলে ভাল হত । তোমার জন্য আমাদের সবার মন খারাপ হবে । ভাল থেকো বাবা ।

চাচীর সাথে এসব কথা বলা গেলেও মায়ের সামনে কোন এমন কথা বলা সম্ভব নয় । ভাল করে তাকিয়ে দেখতে পর্যন্ত পারে না মায়ের দিকে । সবাইকে অন্ধকারের মধ্যে রেখে তার এই চলে যাওয়া ।
যাবার আগের রাতে রাকিব তার মায়ের হাতে ব্যাংকের চেকবইটা দিল । তিনটা পাতায় সিগনেচার করে রেখেছিল । টাকার অংক বসানো নেই ।
বলল, ' আম্মা আমার একাউন্টে ভাল ডিপোজিট আছে, লাগে নি কখনো তাই জমেছিল; তোমাদের লাগলে তুলে নেবে । আর আম্মা লীনার বিয়েটা যেন ঠিকঠাক মত হয়, অর্থের জন্য কোন অনর্থ ঘটতে দেবে না। টাকা যা লাগে তুলে দিও । আমি হয়তো থাকতে পারবো না সে সময়ে । দেখো যেন কোনভাবে কোন ঝামেলা না হয় । মেয়েটা বড় ভাল ।'
মিসেস রেহানা দেখলেন রাকিব অন্যদিকে ফিরে গেছে । তার অভিব্যক্তি লুকোবার জন্য একটা কিছু খুঁজছে মনে হল ।
মিসেস রেহানা: বাবা তোমরা সবাই ভাল করে জানো লীনা আমার কতটা স্নেহের , আমি থাকতে কোন সমস্যা হবে না; তুমি ভেবো না ।

ভাবনাগুলো কি কারও বারন শোনে? শুনলে কত অঘটন বন্ধ হয়ে যেত পৃথিবীতে ।

চলে গেল রাকিব লন্ডনে । সেখানে তার চাকরি ঠিক করা আছে । তার বাবার নামে কেনা একখানা বাড়ীও আছে সাউথে । সেটাতে থাকবে না বলে আগেই বলে বাড়ীও ঠিক করে রেখেছে । লন্ডনের আলো বাতাসে সে বড় হয়েছে তবু তাকে এখানে কেমন পরবাসী মনে করে বয়ে নিয়ে এসেছে শরীরটাকে । মনটা পড়ে আছে ঢাকায় ।
যেখানে লীনার বিয়ে নিয়ে কত কথা কত আয়োজন ।
চলবে.....
পরের অধ্যায় Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৩
৫টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×