প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও সংসদীয় বোর্ডের জরুরি সভার সূচনা বক্তব্যে জিয়াউর রহমান এবং এইচ এম এরশাদকে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ।
এক্ষেত্রে হাইকোর্টের স্পষ্ট রায়কে ভিত্তি হিসেবে অনুসরণ করতে তিনি সবাইকে আহবান জানিয়েছেন।্তিনি বলেছেন পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল ঘোষিত হয়েছে। তার মানে, জিয়াউর রহমানকে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলা যাবে না। যদি রাষ্ট্রপতি বলা হয়, তাহলে হাইকোর্টের রায়কে লঙ্ঘন করা হবে। কারণ, তাঁর ক্ষমতা অবৈধ। তিনি যেসব মার্শাল ল অর্ডিন্যান্স জারি করেছেন, সংবিধান সংশোধন বা যেসব আইন করেছেন, সব বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কাজেই এখন সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ বা জিয়াউর রহমান, কেউ কিন্তু আর সাবেক রাষ্ট্রপতি নন। কারণ, তাঁরা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। উচ্চ আদালত যখন এই ঘোষণা দেন, তখন সবাইকে এটা মানতেই হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত বক্তব্য রেখেছেন। তাঁর বক্তব্য বোঝা যাচ্ছে তিনি হাইকোর্টের রায়ের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে বদ্ধপরিকর। এটাই হওয়া উচিৎ। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী বিচারবিভাগের নির্দেশনার প্রতি সম্মান প্রদান করে যে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন এতে নাগরিক হিসেবে আমরা গর্বিত।কিন্তু তখনই আমি হোচঁট খেয়েছি যখন দেখি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কেবিনেটের সদস্য হিসেবে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর এরশাদের দলের সদস্যরা। শুধু তাই নয় সেই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী এরশাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছেন। এটা কিন্তু অনেক সময় আমাদের গ্রামদেশে খুনীর সাথে মেয়ে বিয়ে দিয়ে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মত ঘটনা সাথে মিলে গেল না!!
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়ত ভুলে গেছেন অনেক ভালো কাজ বা ভালো উদ্যেগ অথবা চিন্তাভাবনা মানুষের ব্যক্তিগত দৈনন্দিন আচরণ বা তার কর্মকান্ডের কারণে খেলো হয়ে যায়। তবে হ্যা, মানুষ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন অযাচিত ভুল করতেই পারেন, যা হয়ত সর্বসাধারণের কাছে বেশিরভাগ সময় নৈতিকতা বিবর্জিত হিসেবে বিবেচিত হয় । রাজনৈতিক পরিমন্ডলে যা আমরা হরহামেশাই ঘটতে দেখি।এইতো সেদিন ব্রিটেনের সাবেক স্বীকার করেছেন তাঁর ইরাক আক্রমণের সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো।যদিও সারা বিশ্বের তামাম জনগণ তখনোই জানত যে, রাসায়নিক অস্রের অভিযোগে মার্কিনীদের নেতৃত্বে যে ইরাক আক্রমণ করা হচ্ছে তা সম্পুর্ণ ভুল এবং ভিত্তিহীন তথ্য।যদিও সেই ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আজ মার্কিন অর্থনীতি চীনের কাছে প্রতিনিয়ত মার খাচ্ছে। রাজনীতিতে ভুল সিদ্ধান্তের খেসারাত একটি দেশকে, জাতিকে , একটি সমাজকে বহুদিন ধরে দিতে হয়। এর ক্ষত শুকাতে বহু মানুষের রক্তের প্রলেপ দিতে হয়। যেরকমটা হয়েছিলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী এরশাদের ক্ষমতা দখলের সময়ে স্বাগত জানানোর মধ্যে দিয়ে।স্বাধীন বাংলাদেশে এত বড় দীর্ঘ সময়ের জন্য এত বড় রাজনৈতিক সংগ্রাম, এত রক্ত আর কোনো সময় ঘটেনি।এইতো সেদিন ১০ নভেম্বর পালিত হলো নুর হোসের হত্যা দিবস, যদিও সংবাদপত্রের পাতায়।
মাঝে মাঝে ভাবি , আচ্ছা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন তাঁর বিশেষ দূত এরশাদের সামনে নুর হোসেনের ভাইয়ের দিকে তাকান তখন কি তাঁর একটুও অনুশোচনা লাগে না? তাঁর চোখের সামনে কি একবারের জন্যও ভেসে ওঠে না , সেই জীবন্ত পোস্টার, ‘’স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’’ বুকে ধারনকারী নুর হোসেনের মুখখানা।তাঁর কি মনে পড়ে না , রউফুন বসুনিয়ার কথা , যাকে এরশাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর ট্রাক দিয়ে পিষে মেরে ফেলেছিলো। তাঁর কি একবারের জন্যে চোখের সামনে ভেসে ওঠে না শহীদ ডাঃ মিলনের নিস্পাপ শিশুর মুখখানা। তাঁর কি মনে হয় না তিনি স্ববিরোধী আচরণ করছেন ?
অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরাও আপনার সাথে একমত, অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের সাবেক রাষ্ট্রপতি বলা যাবে না। আমরাও চাইনা। তবে প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদে আসীন এবং সাথে বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলের প্রধান। এই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের একজন এরশাদের ক্ষমতা দখল করাকে তিনি যে স্বাগত জানিয়েছিলেন , তা যে তাঁর রাজনৈতিক ভুল ছিলো সেটা স্বীকার করতে হবে।তাঁকে সেই ক্ষমতা দখলকারী এরশাদের দলের সাথে সব ধরনের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে । সেই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী এরশাদকে তাঁর বিশেষদূতের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে দায় মুক্তি ঘটাতে হবে। যাতে অন্তত শহীদ নুর হোসেন, শহীদ ডাঃ মিলন, শহীদ জেহাদ, রউফুন বসুনিয়া আত্মা শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।। আমরা বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে এরশাদের ক্ষমতা দখলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম ভুল ছিলো তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নিবেন।
অন্যথায়, তাঁর পুরো বক্তব্যই স্ববিরোধী , সস্তা ও সুবিধাবাদী রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর হিসেবে সাধারণ জনগণের কাছে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।বিশেষকরে ইতিহাসের প্রতি দুর্বল অনুসন্ধিৎসু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০০