আনারস একটি সুস্বাদু ফল।কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে আনারস খাওয়ার আগেপিছে কয়েকটি ঘন্টা আমাদের দেশের মায়েরা অন্য একটি সুস্বাদু খাবারের উপর ১৪৪ ধারা জারি করেন ,তা হচ্ছে দুধ। যুগ যুগ ধরে বাঙালি সমাজব্যবস্থায় এটি একটি অলিখিত নিয়ম হিসেবে পালিত হচ্ছে। মায়েদের বদ্ধমূল ধারণা আনারস খেয়ে কেউ যদি কেউ দুধ পান করে ( হজম হওয়ার আগে) তবে তা বিষে পরিণত হয়।ইংরেজীতে একে বলে ‘’অবসেসন’’ ।যদিও এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কিন্তু সন্তানের জীবন বিন্দুমাত্র ঝুঁকির মাঝে পরার সম্ভাবনা আছে (হোক তা অন্ধবিশ্বাস) অথচ মা বসে বসে বিজ্ঞানের তত্ত্বের উপর ভরসা করবে ? এমন মা বাংলাদেশে কেন পৃথিবীর কোনো দেশেই খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে ! আচ্ছা আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষায় বঞ্চিত মায়েদের কথা বাদই দিলাম শিক্ষিত মায়েরাতো জানেন আনারস খেয়ে দুধ পান করা যাবে না এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা । তারপরেও খুব কম মাকেই খুঁজে পাবো যারা আনারস খাওয়ার পরেই সন্তানকে দুধ পান করতে দেখে আতংকিত হবেন না। তাহলে তারা জেনেশুনে কেন ভ্রান্ত একটা বিষয় নিয়ে আতংকের মধ্যে থাকেন ? উত্তর হচ্ছে , তাদের আতংকের একমাত্র কারণ হচ্ছে , সন্তানের জীবন নিয়ে শংকা।প্রিয়জনের জীবন নিয়ে বাড়তি সাবধানতা। প্রতিটি মা জানেন তাঁর ধারণা হয়ত ভুল, কিন্তু তবুও সে তাঁর ভালোবাসার মানুষ নিয়ে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না।হোক এটা একধরনের ‘’অবসেসন ‘’ বা অন্ধবিশ্বাস তারপরেও যেখানে তাঁর নিজের জীবন, সন্তানের জীবন, প্রিয়জনের জীবনের প্রশ্ন জড়িত , সুস্থ থাকার প্রশ্ন জড়িত সেখানে যেকোনো অন্ধবিশ্বাস আকঁড়ে ধরতে বিন্দুমাত্র পিছপা হবেন না। আর এটাই স্বাভাবিক । মানুষ তাঁর ভালোবাসার মানুষের নিরাপত্তার জন্যে , একটু ভালো থাকার সবকিছু করতে রাজি।
এবার আসি সুন্দরবনের অতি নিকটে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রসঙ্গে। সাধারণভাবে একটা বিষয়তো পরিস্কার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলে সুন্দরবনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বা দুশ্চিন্তা রয়েছে সুতরাং খুব তাত্ত্বিক আলোচনার কি কোনো দরকার আছে এটা প্রতিষ্ঠা হলে কতটা ক্ষতি হতে পারে বা পারে না। সহজ কথা হচ্ছে সুন্দরবন আমাকে , আমাদেরকে , প্রকৃতিকে , আমাদের দেশটাকে নিরাপদে রাখে এবং রাখতে পারে, তাই সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে এমন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করাই হবে আমাদের জন্যে আনারসের সাথে দুধ পান করানোর মত।
সন্তানের জীবনের নিরাপত্তার জন্যে মা যেমন অন্ধবিশ্বাসী হতে পারেন , ঠিক তেমনি সুন্দরবনের নিরাপত্তার জন্যে আমরাও অন্ধবিশ্বাসী অর্থ্যাৎ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলে সুন্দরবন বাঁচবে না । আমরা এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই না।
তাই আমরা সুন্দরবনকে নিরাপদে রাখতে চাই কারণ সুন্দরবন আমাদের নিরাপদে রাখে এবং নিরাপদে রাখবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৪:২১