বাবা, আব্বা, আব্বু , বাবু, বাপজান এই রকম বিভিন্ন নামে একজন ব্যক্তি আমাদের জীবনে সর্বদা বাস করে অনেকটা নিরবে নিভৃতে। লেখক হুমায়ন আহমেদ তার এক লিখনী তে এই বাবাদের জন্য লিখে গেছেনঃ- "পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু একটি ও খারাপ বাবা নেই"
আবার ছোট বেলায় পরীক্ষার খাতায়, ভাবসম্প্রসারন করতে গিয়ে, বহুবার লিখতে হয়েছেঃ
"ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে"
হুমমম ! অন্তরে !
এই সব বাবাদের মধ্যে আবার শ্রেনী ভেদ ও আছে।
উচ্চবিত্তের বাবা!
মধ্যবিত্তের বাবা !
নিম্নবিত্তের ও
নিন্ম মধ্যবিত্তের বাবা !
বর্তমানে অবশ্য দিন বদলায়ছে, তাই সকল বাবারা ই কেমন যেন বন্ধু বন্ধু রুপে আর্বিভাব হচ্ছে চারপাশে। অবশ্য আমার মনে হয়, আমরা যারা ১৯৯০ সালের আগে জন্মিয়েছি, তাদের জন্য অনুধাবনটা ভিন্ন বৈ কি !
আমার বাবা!
আমার স্বল্প জীবনে উচ্চবিত্তের বাবাদের কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। তবে নিম্ন মধ্যবিত্তের আর নিম্নবিত্তের বাবা দের বেশ দেখা আছে। তবে উচ্চবিত্তের বাবারা ও হয়ত বা একই রকম। ক্ষনিকের মনটা আবার বলে উঠে, বাবাদের আবার শ্রেনীবিভাগ কি ! বাবাদের শ্রেনীবিভাগ করতে নেই।
তবে আমার জন্ম এই নিম্নমধ্যবিত্তের এক বাবার ঘরে। তাই এই শ্রেনীর, বাবার সাথে আমার পরিচয় সেই জন্মসূত্রে।
তাই তো আমি দেখেছি , নিম্ন মধ্যবিত্তের বাবা রা বেশির ভাগ সময় থাকে রাশভারী হিসাবে । কথা ও চোখ এর শাসনে বলতে গেলে সর্বদা তটস্থ। মনে হয় পিটিয়ে, পিঠের চামড়া তুলে ফেলায় তাদের জুড়ি মেলা ভার।
বাবা!
সন্ধ্যার আগে ঘরে ফিরতে হবে না হলে খবর আছে।
আওয়াজ করে বই পড়তে হবে, নাহলে খবর আছে ।
বাসায় হৈ চৈ করা যায় না , বাবা বাসায় থাকলে।
পরীক্ষার রেজাল্ট কার্ড নিয়ে তার সাইন আনা মানে, রেসলিং এর ব্রকলেন্সার এর সামনে পড়া।
পাড়ায় এমন কিছু করা যাবে না, যাতে বিচার বাসায় আসে । না হলে চামড়া দেওয়ালে শোভা পাবে।
টিভি দেখায় সীমাবদ্ধতা।
আর আছে তাদের এক ঝাঁক নীতি বাক্য ও সেই সাথে নৈতিকতার শিক্ষা ।
আরও কত কি !
সে যেন মূর্তিমান আতঙ্ক ! তাই এই নিম্ন মধ্যবিত্তের বাবা দের ঘরে সন্তানদের সকল কিছুর ঠাঁই হয় গিয়ে ওই "মা" এর আঁচল এর নিচে। আমার ও ক্ষেত্রে তাই ব্যতিক্রম হয় নাই, "মা" ই ছিল সকল চাওয়া পাওয়ার মাধ্যম। বাবা, কে দেখেছি আমাদের বড় করার জন্য অপরিসীম কস্ট করতে । যদি ও তখন অতটা বুঝি নাই ।
কিন্তু এখন বুঝি, বেশ বুঝি কিন্তু !
নিম্নমধ্যবিত্তের বাবাদের কিছু কমন বৈশিষ্ট্য থাকে। আমার বাবা ও যেহেতু এই নিম্নমধ্যবিত্তের গন্ডি তে আটকা। তাই সেও এই বৈশিষ্টের মধ্যে আটকা।
- এরা বেজায় রাগী হয়ে থাকে সর্বদাই একটা গম্ভীর ভাব । সব রাগ এসে পড়ে পরিবার সব সদস্য এর উপর।
কি করবে বলুন, কর্মক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ কর্মকতার সর্বদা ঝাড়ি খাওয়ার দরুন। গৃহে অন্তত সে যে একটা বাঘ তাতো প্রমান করতে হবে না ?
- বেজায় কৃপণ ! সহজে খরচ করতে চায় না । নিজের বেলায় কৃপণ এর মাত্রা যে এভারেস্ট এর চূড়ায় উঠে।
কি করবে বলুন , আয় যে সীমিত । পরিবারের সকল এর চাহিদা মেটানোর প্রদীপ এর দৈত্য সে ছাড়া আর কেউ নেই যে !
আমার বাবার কথাই ধরুন না। একটা ঘটনা বলি ১৯৯৬ সালের, সরকারী চাকরীর সুবাদে শুক্রবার সে বাজার করতে যাওয়ার সময় পেত । বদ অভ্যাস ছিলনা বলতে গেলে , তবে বাজার করে ফেরার সময়
একটা পান !
ওই একদিন ই, সে বাজার করে খেতে খেতে বাসায় আসত। পানের দাম শুনুলে এখনকার ছেলে পিলে কেন আমি ও নাক সিঁটকাতাম ।
মাত্র ৫০ পয়সা ! মানে আটানা !
তো হলো কি , পান মহাশয় তার দাম বাড়িয়ে নিজেকে একটাকা করে ফেললেন হঠাৎ করে। বাবা, ও সেদিন থেকে পান মহাশয় এর দাম বাড়াতে দেখে হাসি মুখে বাজার শেষে খালি মুখে "মা" কে এসে বললেনঃ
দিলাম আজকে ছেড়ে , একটাকা দিয়ে কেউ পান খায়।
আমি পাশ থেকে শুনে অবাক হলাম, একটাকার জন্য কেউ এভাবে শখ ছেড়ে দেয় !
নিম্নমধ্যবিত্তের বাবা রা দেয়, তারা পারে ।
তখন বুঝি নাই, এখন বুঝি।
যাতায়ত খরচ বাচ্চানোর জন্য এদের সাথী থাকে সর্বদা হিরো কিম্বা ফনিক্স।
দাড়ান দাড়ান, মটর সাইকেল না বাই সাইকেল। পরম মমতায় সব সময় সেটা আগলে রাখতে দেখেছি আমার বাবাকেও।
- শপিং এ তো এরা আরো এক ড্রিগ্রি উপরে, দামে সস্তা হতে হবে কিন্তু টেকসই হতে হবে অন্তত কা। তাতে ডিজাইন যাই হোক না কেন!
কেন তারা এমন করে !
তখন বুঝি নাই, এখন বুঝি।
বাবা, রা আমাদের আগলে রাখে, নারকেল এর মতো। বাহ্যিক দিকে শক্ত খোলসের আবরনে ভিতরে একটি কোমল শাস্ যুক্ত তরল ভালবাসা দিয়ে। তা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না, খালি অনুধাবন করা যায়।
না, আজ "বাবা দিবস " নয় যে, এত কথা আওড়াছি । শুধু সাধারন একটা অনুভূতি থেকে উপলব্দি ।
একজন অভিনেতা " ফজলুর রহমান বাবু" যার নামেও (বাবু) বাবা নামের একটা ছোঁয়া আছে । বর্তমান সময়ে তার তিনটি কাজ। এই নিম্ন মধ্যবিত্তের ও নিম্নবিত্তের বাবাদের মহান করেছে ।
"অজ্ঞাতনামা"
র্নিমাতা তৌকির আহমেদ এর হাত ধরে অজ্ঞাতনামা হিসাবে আড়ালে থাকা বাবাদের ভালবাসার প্রতিছবি ফুটে উঠেছে । যা এক কথায় অন্য রকম এক ভালবাসা ।
কেউ দেখতে চাইলে এই লিংক যানঃ https://youtu.be/-CDvaJWFH6s
"বাবাদের ঈদ"
বাবারা কিভাবে নিজের সুখ গুলো বিলিয়ে দিয়ে সন্তান দের মুখে হাসি ফুটায় তার উদাহরন, অলিম্পিক বিস্কুট এর এই "বাবাদের ঈদ" এর TVC। যদিও অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু জানতেন এটা একটা শর্টফিল্ম হবে ।
কেউ দেখতে চাইলে এই লিংক যানঃ https://youtu.be/ZelodbJFEUw
আর সর্বশেষেঃ
"বিকাল বেলার পাখি"
সন্তান এর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃসহ দৃশ্যের নাম , পিতার পরাজিত মুখ। এই মুখ তাকে বিধস্ত করে দেয়, ধংস করে দেয়। জীবনের সব আয়োজন সব ছুটে চলা তখন তুচ্ছ মনে হয়, নগন্য মনে হয় । সংসার তুচ্ছতার খেলা, ভালবাসাই তার একমাত্র ভেলা ।
এই ভালবাসার আবেগ আপনাকে কাঁদাবে নিশ্চিত । অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু লক্ষ কোটি নিম্ন মধ্যবিত্তের বাবাদের প্রতিনিধিত্ব করে আপনাকে সেই শক্ত আবরনের ভিতরে ভালবাসার স্বাদ গ্রহন করাবে।
কেউ সেই স্বাদ নিতে চাইলে এই লিংক যানঃ https://youtu.be/JlS5zLUTZro
অনেক ছোট বেলা থেকে , ফজলুর রহমান বাবু নামের বাবার ভক্ত । তার অভিনয়ের মাঝে আমাদের চিনিয়েছে সেই শক্ত আবরনের পিছনে এক কোমল পিতার মন যে সর্বদা তার সন্তান এর জন্য বটবৃক্ষ হয়ে নিরবে দাড়িয়ে রয় ।
বাবা!
তখন বুঝি নাই, এখন বুঝি।
***মিঠুন বিশ্বাস রানা ***
04-july-2017
২০ শে আষাঢ় ১৪২৪
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪১