somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডায় ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ যেভাবে সহজ করতে পারে সরকার

১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মূল লিংক: কানাডায় ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ যেভাবে সহজ করতে পারে সরকার

কানাডীয় ইমিগ্রেশন পরামর্শক (আরসিআইসি) হিসেবে বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশিদের পক্ষে কানাডায় ইমিগ্রেশন (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট, বা পিআর) পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে শিক্ষার্থী হিসেবে কানাডায় আসা। তবে শিক্ষার্থী হিসেবে কানাডায় আসার অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রার্থীর আর্থিক স্বচ্ছলতা। যথেষ্ট স্বচ্ছল না হলে কিংবা স্টাডি পারমিটের আবেদনে স্বচ্ছলতার বিষয়টি যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে না পারলে, আবেদন অনুমোদনের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। পাশাপাশি, প্রার্থীর ইংরেজি ভাষায় প্রয়োজনীয় দক্ষতাসহ আরও কিছু প্রাসঙ্গিক শর্তাবলী পূরণের বিষয় তো থাকছেই।

স্টাডি পারমিটকে অনেকে ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ও বলে থাকেন, যদিও ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ বলে অফিশিয়াল কোন টার্ম নেই। ‘স্টাডি পারমিট’ এর আবেদন প্রসেসিং অনুমোদন কিংবা প্ৰত্যাখ্যান ঠিক কতদিনের মধ্যে হবে তার কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এ ধরনের আবেদন অনুমোদনে কমবেশি ছয় সপ্তাহ লেগে যায়। ‘স্টুডেন্ট ডিরেক্ট স্ট্রিম’ (এসডিএস) পদ্ধতিতে কয়েকটি দেশকে কানাডা দ্রুত আবেদন নিষ্পত্তির সুযোগ দিয়েছে।

এ বিশেষ পদ্ধতিতে আবেদনপত্র দাখিলের মাত্র বিশ দিনে আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়। সাধারণ ব্যবস্থায় যে সময় লাগে, তার অর্ধেক সময় লাগে এসডিএস পদ্ধতিতে। আমার জানা মতে, এখন পর্যন্ত ১৪টি দেশ এসডিএস পদ্ধতিতে স্টাডি পারমিটের আবেদনের সুযোগ পেয়েছে। তার মধ্যে পাকিস্তান, ভারত, মরক্কো, সেনেগাল বা ভিয়েতনামের মতো দেশও রয়েছে; অথচ বাংলাদেশ নেই।

এসডিএস পদ্ধতিতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক সময়ে আবেদন নিষ্পত্তি হয় বলে প্রার্থী কিছু বাড়তি সুবিধা পান। যেমন, কোন কারণে আবেদনের ফলাফল নেতিবাচক হলে দেরি না করে স্টাডি সেশন মিস হওয়ার আগেই রিসাবমিশন বা পুনঃআবেদন করা যায়। ক্ষেত্রবিশেষে, বিকল্প হিসেবে অন্যকোনও দেশে পড়াশোনার জন্য আবেদনের সিদ্ধান্তও এতে দ্রুত নেওয়া যায়।

এসডিএস পদ্ধতিতে আবেদনের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ শর্ত পূরণ আবশ্যক। যেমন- আইইএলটিএস এ কমপক্ষে ৬ স্কোর তোলা, দশ হাজার কানাডিয়ান ডলারের গ্যারান্টিড ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেট (জিআইসি)-র ব্যবস্থা, কানাডায় পড়াশোনার প্রথম বর্ষের টিউশন ফি দেওয়ার প্রমাণ এবং আগাম মেডিকেল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা। অন্যান্য শর্তগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় স্টাডি পারমিটের আবেদনের অনুরূপ।

উপরের শর্তগুলোর মধ্যে কেবল গ্যারান্টিড ইনভেস্টমেন্ট সার্টিফিকেট বা জিআইসি জোগাড়ের বিষয়টি মোকাবেলা করা গেলেই এসডিএস প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত হতে বাংলাদেশের কোনও বাধা থাকে না। এটি অসম্ভব কিছু নয়। বাংলাদেশের যেসব ব্যাংক কানাডার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে সমর্থ তাদের কোনটির মাধ্যমে সহজেই জিআইসি-র ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিদেশে অর্থ পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতাও প্রয়োজন হতে পারে, যা কেবল অভ্যন্তরীণ উদ্যোগের বিষয়।

সাধারণভাবে বলা যায়, এসডিএস পদ্ধতিতে দাখিল করা আবেদনে সফলতার হার নন-এসডিএস পদ্ধতিতে দাখিলকৃত আবেদনের তুলনায় বেশি। এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, জিআইসি-র মাধ্যমে কানাডিয়ান ১০ হাজার ডলার শুরুতেই কানাডার ব্যাংকিং সিস্টেমে চলে যায়। চলমান সাধারণ আবেদন প্রক্রিয়ায় যা ঘটে না। ফলে, ভিসা অফিসাররা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে বাড়তি কনফিডেন্স বা আত্মবিশ্বাস পান। এর বাইরে, আইইএলটিএস পরীক্ষায় কমপক্ষে ৬ পেতে হয় বলে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার বিষয়টিও অনেকাংশে নিশ্চিত হওয়া যায়। ফলে, সার্বিক বিবেচনায় ভিসা অফিসার এসডিএস পদ্ধতিতে দাখিল করা আবেদন ফিরিয়ে দেওয়ার আগে দ্বিতীয়বার চিন্তা করে থাকেন।

এ লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকেও এসডিএস পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসার আহ্বান জানানো। এতে কানাডায় পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আবেদনের পর সিদ্ধান্ত প্রাপ্তির জন্য অনিশ্চিত বা অনির্ধারিত সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হয়না। প্রশ্ন জাগে, এসডিএস পদ্ধতিতে স্টাডি পারমিটের আবেদন বিবেচনার যোগ্য হওয়ার উদ্দেশ্যে এমন কোন কঠিন শর্ত আছে কি যা পাকিস্তান, ভারত, মরক্কো, সেনেগাল বা ভিয়েতনামের মতো দেশের শিক্ষার্থীরা পূরণ করতে পারছে, কিন্তু বাংলাদেশ পারছে না? উত্তর- না, মোটেও না; এটা স্রেফ সরকারিভাবে উদ্যোগের অভাব।

আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে কানাডায় শিক্ষার্থী হিসেবে ভিসা পেতে অন্যতম প্রধান অন্তরায় আর্থিক অস্বচ্ছলতা। পিতামাতার সহায়তায় কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী আর্থিক সক্ষমতা দেখাতে সমর্থ হলেও, সে অর্থের উৎস নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কাগজপত্র দাখিল করতে পারে না। এ কারণেও অনেক সময় স্টাডি পারমিটের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকে। তা ছাড়া যাদের বাস্তবেই অর্থাভাব রয়েছে সেসব আবেদনকারী দৃশ্যমান কারণেই প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার চাইলে শিক্ষাঋণ দেওয়ার মাধ্যমে বিদেশে পড়াশোনার ব্যাপারে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করতে পারে।

শিক্ষা ঋণের বিষয়টি দুইভাবে একজন শিক্ষার্থীকে ভিসা পেতে সাহায্য করতে পারে-

এক. এতে পড়াশোনাকালে শিক্ষার্থীর অর্থাভাব না হবার একটা নিশ্চয়তা থাকে;

দুই. আর্থিক ঋণ নেওয়ার কারণে শিক্ষার্থীর সাথে তার নিজদেশের বন্ধনটাও ভালোভাবে ফুটে ওঠে। এটি স্টাডি পারমিট আবেদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। ভিসা অফিসার নিশ্চিত হতে চান শিক্ষার্থী শিক্ষা শেষে আদতেই নিজ দেশে ফিরে যাবেন কিনা।

বিদেশে পড়াশোনার জন্য ঋণ প্রক্রিয়া চালু করলে সরকার তথা দেশেরই লাভ। এতে বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে সেসব শিক্ষার্থী যাদের মেধা আছে, কিন্তু বিদেশে পড়াশোনার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। চলমান ব্যবস্থায় কেবল আর্থিকভাবে স্বচ্ছলরাই বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ নিতে পারছে। অর্থাৎ শিক্ষাঋণ বাংলাদেশিদের বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্র প্রসারিত করবে।

এসডিএস পদ্ধতির আওতায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশন উদ্যোগ নিতে পারে। তারা চাইলে এ নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহের বিষয়টি কানাডার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজরে আনতে পারেন। তবে কানাডার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের আগে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও এসডিএস পদ্ধতি কী ও কেন প্রয়োজন তা ভালোভাবে বুঝতে হবে। এ বিষয়ে সহযোগিতা চাইলে একজন রেজিস্টার্ড কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি) হিসেবে আমি প্রয়োজনীয় সময় দিতে রাজি আছি। Email: [email protected]

আমার বিশ্বাস, কানাডায় বসবাসরত অন্য যে কোন বাংলাদেশিও এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সহযোগিতা দিতে দ্বিমত করবেন না। তবে মূল উদ্যোগটি নিতে হবে কানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনকে। এতে দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের লাভ বৈ ক্ষতি হবে না। উল্লেখ্য, পৃথিবীর আরো অনেক দেশ এসডিএস পদ্ধতির আওতায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজেদের স্বার্থে। মাত্র কিছুদিন আগেই নতুন কয়েকটি দেশ কানাডার এসডিএস তালিকায় যোগ হলো। অন্যসব দেশ পারলে বাংলাদেশ না পারার কোন কারণ দেখিনা।

ML Gani

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১২:২১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×