'আমি কেন কাঁদবো?'
জাকির মিঞার তিন বিয়ে। প্রথম দুই স্ত্রীর সাথে সংসার টেকেনি। তৃতীয় স্ত্রীর সাথে টানা সাতাশ বছর সংসার করে তিনি মারা গেলেন। শেষের স্ত্রীর নাম সমশুনির মা।
জাকির মিঞা জীবনে বিস্তর খাটাখাটুনি করে মাত্র তেষট্টি বছর বয়সে রোগশোকে ভুগে মারা গেলেন। মারা যাবার আগে আগে টানা ষোলদিন জ্বরে ভুগেছিলেন; ভালো চিকিৎসাও পাননি। তাঁর বড়ো ছেলের বউ মাবিয়া অনেক যত্নআত্তি করেও শ্বশুরকে বাঁচাতে পারেননি। ওদিকে সমশুনির মা স্বামীর দেখভাল তেমন করেননি।
এক ভোরে জাকির মিঞার ঘুম ভাঙতে দেরি হলে মাবিয়া 'বাবা' 'বাবা' বলে ডাকতে গিয়ে দেখলেন 'বাবা' আর নেই। ছেলেমেয়েদের সাথে মাবিয়া ও বিলাপ করতে করতে কেঁদে বুক ভাসালেন। আর, সমশুনির মা-পাশের কক্ষ হতে এসে কেবল এক নজর দেখে গেলেন নিথর জাকির মিঞাকে। তারপর দেরি না করে একই মহল্লায় বসবাসরত পাড়ার 'বান্ধবী' সোনাইয়া মা'র ঘরে বসে পান চিবোতে লাগলেন। কথাবার্তাও বলছেন স্বাভাবিক ঢংয়ে; যেন তাঁর নিজ বাড়িতে কিছুই ঘটেনি। কান্নাকাটি বা শোক-বিলাপের কোন আলামত নেই তাঁর চেহারায়।
নির্বিকার অবস্থা দেখে সোনাইয়ার মা সমশুনির মার কাছে জানতে চাইলেন স্বামীর মৃত্যুতে তিনি কেন কান্নাকাটি করছেন না।
সমশুনির মা জবাব দিলেন, 'আমি কি তাঁর একমাত্র বউ ছিলাম যে আমাকেই কাঁদতে হবে? আমি কেন কাঁদবো?'
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০২২ সকাল ১০:১২