somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারি ব্যাংক গুলোর পিছিয়ে থাকার কারণ

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠানের বাজেটের হাজার হাজার কোটি টাকার একটি অংশ (৬০%) সরকারী ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হয় । তারপরেও সরকারী ব্যাংকগুলো বেসরকারী ব্যাংকের চেয়ে কেন পিছিয়ে আছে ? আমার কাছে যে সব কারণ মনে হয়েছে, সেগুলি হচ্ছে-
- সরকারী ব্যাংকের মূল আয় আসে ঋণ বিতরণ ও ঋণ আদায়ের মাধ্যমে । কিন্তু যদি আপনি ঋণ বিতরণ করে আদায় করতে না পারেন- তখনতো আপনি আপনার এখানে যারা আমানত (Deposit) রেখেছে, তাদের কাছে ঋণী হয়ে যাবেন । আমরা পত্রিকার পাতায় কয়েক দিন পর পর বড় বড় হেডলাইন দেখতে পাই- “সোনালী ব্যাংক থেকে ১২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ” কিংবা “সরকারী ব্যাংকে খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রায় আশি হাজার কোটি টাকা”। ঘটনার কয়েক দিন পরে দেখা যায়, যে শাখা থেকে এই ঋণ প্রদান করা হয়েছিল, ঐ শাখার ব্যবস্থাপক এবং ঋণ বিতরণের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে । এতে কি সমস্যার কোনো সমাধান আসে ? খেলাপী ঋণের ক্ষেত্রে বেশীর ভাগ সময় দেখা যায় যে, ঋণগ্রহীতা তার জামানতের মূল্য অতিমূল্যায়িত করে দেখায় অথবা ভুল ঠিকানা দেয় কিংবা ঐ নামে কোনো লোকই খুঁজে পাওয়া যায় না । এই ধরণের ঋণ বিতরণের দায় শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপক কিংবা কর্মকর্তার উপর বর্তায় না । এর জন্য Head Office এবং Local Office-ও দায়ী । কারণ ঋণ নেয়ার সময় গ্রাহক যে জামানত রাখে তার মূল্য এবং গ্রাহকের দেয়া তথ্য Verify করার জন্য Head Office কিংবা Local Office থেকে এক জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় । তারা সবকিছু দেখেশুনে সন্তুষ্ট হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপক ঋণ বিতরণ করতে পারেন । আবার অনেক সময় ব্যবস্থাপক কোনো ঋণ বিতরণকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলেও উপর মহলের চাপে তা দিতে বাধ্য হন ।
- সরকারী ব্যাংকের আরেকটি আয়ের উৎস হচ্ছে আমানতের উপর প্রাপ্ত সুদ । সরকারী কিংবা স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ইত্যাদি) তাদের বাজেটের একটি অংশ আমানত রাখে বিভিন্ন বেসরকারী ব্যাংকে । কারণ এ থেকে অনেকেই কিছু ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে । তারা চাইলেই তাদের সম্পূর্ণ বাজেটের অংশ সরকারী ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখতে পারে । আর সরকারী ব্যাংকে সাধারণ জনগণের আমানতের পরিমাণ কম ।
- আপনি বেশির ভাগ সরকারী ব্যাংকের শাখা খুঁজতে গেলে দেখতে পাবেন, রাস্তার আশেপাশে প্রচুর বেসরকারী ব্যাংকের শাখা, কিন্তু সরকারী ব্যাংকের শাখাটি আছে কোনো এক চিপা গলির এক কোণায় । যেখানে প্রয়োজন সেখানে শাখা নেই, কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের উপর লেভেলের কোনো কর্মকর্তার কিংবা তার আত্মীয়ের বাড়ির পাশে শাখা খুলে বসে আছে । আবার অনেক সরকারী ব্যাংকের শাখার ভিতরে ঢুকলে ঐটা কোনো ব্যাংক মনে হয় না, মনে হয় যেন কোনো কারখানার গুদামঘর । সরকারী ব্যাংককে Location নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে আরো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং অবকাঠামোগত দিক দিয়ে আরো আধুনিক হতে হবে ।
- সরকারী ব্যাংকে কিছু বয়স্ক এবং পুরনো ধ্যানধারণাসম্পন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে, যারা ব্যাংককে নিজের বাপের সম্পত্তি মনে করে । আমার পরিচত এক আত্মীয় এক সরকারী ব্যাংকে যায় T.T.(Telegraphic Transfer) করতে । ওখানকার এক কর্মকর্তা তাকে প্রায় ২ ঘন্টা বসিয়ে রাখে এবং শেষে জানায় আজকে আর T.T করা যাবেনা । এই সব কর্মকর্তাগণ যতদিন ব্যাংকে থাকবেন ততদিন সরকারী ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসবেনা ।
- সরকারী ব্যাংকের সকল শাখা এখনো Online Banking শুরু করতে পারেনি । যতগুলি হয়েছে তাদেরকেও সম্পূর্ণভাবে Online Bank বলা যায়না । এখনো এই সব ব্যাংকে Branch Code দিয়ে চেক পাশ করাতে হয় কিংবা টাকা জমা দিতে হয়, শুধু Account Number দেখেই Branch Name জানা যায়না । বেসরকারী ব্যাংকে হিসাব খুললেই MICR Cheque সরবরাহ করা হয়, কিন্তু সরকারী ব্যাংক এখনো সেই মান্ধাতার আমলের Non-MICR Cheque দিয়ে থাকে ।
- বর্তমানে গ্রাহকরা সহজ ও নিরাপদ ভাবে লেনদেন করতে চায় । কিন্তু তাদের এ চাওয়া পূরণ করার জন্য সরকারী ব্যাংকের হাতে আছে মাত্র গুটিকয়েক ATM Booth. বাইরে Booth স্থাপন করতে না পারুক, অন্তত প্রত্যেকটি শাখার পাশে একটি ATM Booth স্থাপন করা উচিত এবং যতদ্রুত সম্ভব Mobile Banking চালু করা দরকার ।
- আমি এর আগে “সরকারী ব্যাংকে চাকুরী তুলনামূলকভাবে খারাপ”- শিরোনামে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম । এত কম বেতনে পরিশ্রমী ও দক্ষ লোক কাজ করবেনা । যারা করে, তাদেরও একটি অংশ পরবর্তী সময়ে এর চেয়ে ভালো বেতনে এবং উচুঁ পদে বেসরকারী ব্যাংকে সুইচ করে থাকে ।
যাই হোক, সরকারী ব্যাংককে বর্তমান রুগ্নপ্রায় অবস্থা থেকে রক্ষা করতে হলে, একে আরো যুগোপযোগী ও আধুনিক করতে হবে এবং কর্মকর্তাদের ব্যাংকের প্রতি আরো দায়িত্বশীল হতে হবে ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×