somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুরাধা এসেছিল

১১ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনুরাধা এসেছিল আমার বাড়িতে। বাহিরে তখন দমকা হওয়ায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। অনুরাধা প্রথমে আমার হাত ধরে বলেছিল প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না।

কিন্তু আমার পক্ষে অনুরাধা-কে গ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। অনুরাধা অবুঝের মতো অনুনয়- বিনয় করেই চলল। শেষমেষ আমার পা ধরে বলল, আপনি যদি আমাকে গ্রহণ না করেন তাহলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোন গতি থাকবে না। আপনি ছাড়া অন্য কোন পুরুষকে আমি কল্পনাও করতে পারিনা। অন্য কোন ছেলেকে মেনে নেওয়া অসম্ভব।

আমি ওকে বুঝালাম দেখো অনুরাধা, তুমি আমার ছোট বোনের মতন। তুমি আমাকে ভালোবাসো ঠিক আছে কিন্তু সে ভালোবাসা ছাত্রী-শিক্ষকের নি:কলুষ ভালোবাসা হিসেবেই থাক। আর আমি তো কোনদিন তোমাকে ছাত্রী ছাড়া অন্য কোন সম্পর্কের হিসেব ধরে ভালোবাসিনি।

-আমার সংসার আছে। স্ত্রী আছে, সন্তান আছে। ওদেরকে আমি কি জবাব দেব। ওদেরকে ফেলে তোমাকে নিয়ে আমি থাকতে পারবো না। কারণ সমাজ, সংসার, ধর্ম এই সম্পর্ককে কখনোই মেনে নেবে না।

তুমি হিন্দু আমি মুসলিম আর তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা আমি তোমার শিক্ষক। আমি শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক হতে চাই না ।আমার একটি ভুলের জন্য অন্য শিক্ষকদের মুখে কালিমা লেপন হোক তা আমি হতে দিতে পারিনা।

তোমার সামনে সারা জীবন পড়ে রয়েছে। তুমি চাইলেই স্মার্ট, সুন্দর, ধনী কোন ছেলেকে বিয়ে করতে পারবে। কিংবা তোমার বাবা-মা যেখানে তোমার বিয়ে ঠিক করেবে সেখানেই তোমার বিয়ে করা উচিত।

-উচিৎ অনুচিৎ বুঝিনা। আমি শুধু আপনাকে চাই। আমার কাছে ভালোবাসার অপর নাম আপনি।

আমি বললাম, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো অনুরাধা । আমি কিছুতেই আমার চরিত্রে কালি লাগাতে চাইনা।

অনুরাধা, আর যাই করো একজন চরিত্রবান ছেলেকে বিয়ে করবে। কারণ চরিত্র এমন এক জিনিস যা হারালে জীবনের সবকিছু হারাতে হয়। চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়ে অধম। যে তোমার রুপ, সৌন্দর্য, ধন দৌলত দেখে ভালোবাসবে সে একদিন তোমার চেয়ে আরো ভালো কোন তরুণীকে পেলে তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে একটুও দ্বিধাবোধ করবে না।


অনুরাধা কেঁদেই চলেছে। সে কিছুতেই বুঝ মানতে চাইছে না। আকাশও যেন কাঁদছে অনুরাধার কান্না হয়ে।

তবুও শেষবারের মতো বললাম, অনুরাধা তুমি কি তোমার শিক্ষকের মর্যাদা রাখবে না। তোমাকে বিয়ে করলে আমি কি আর কলেজে মুখ দেখাতে পারবো ? আমার ছাত্র-ছাত্রীরাই তো আমাকে তখন আঙ্গুল দেখিয়ে বলবে, মানুষ নামের অমানুষ।

অনুরাধা উঠে দাঁড়ালো ।চোখ মুছল। তারপর বলল, স্যার আমি আপনার মর্যাদা রাখবো । আমি আমার ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিয়ে চিরদিনের জন্য আপনার জীবন থেকে চলে যাব। যাতে কোনদিন কেউ বলতে না পারে অনুরোধার জন্যই স্যারের আজকের এই পরিণতি।

তারপর যেমন হুট করে অনুরোধে এসেছিল তেমনি করে রাতের আঁধার, ঝড়, জল উপেক্ষা করেই চলে গেল।

আমি তার চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বেদনায় বুকের ভেতরটা নীল হয়ে গেছে। বিষন্ন মুখে দরজা যখন বন্ধ করতে যাব তখন আমার স্ত্রী সারিকা এসে বলল, কি ব্যাপার এত রাতে তুমি দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছো কেন ?

আমাকে মিথ্যা বলতেই হলো। না মানে বাহিরে খুব ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে তো গাছ থেকে গাছের ডাল ভেঙে পড়াতে প্রচন্ড শব্দ হয়েছে। তাই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। আমি ভাবলাম আবার চোর টোর এলো কিনা তাই দেখতে এলাম।

-চলো চলো ঘুমোতে চলো। খুঁকু আবার উঠে গেলে আমাদের না দেখে ভয় পেয়ে কেঁদে উঠবে।

সেদিন রাতে বিছানায় গেলাম ঠিকই কিন্তু ঘুম হলো না । কেবলই অনুরোধা সেই করুন মিনতির কথা মনে পরতে লাগলো।

আমার পাশে আমার প্রিয়তমা স্ত্রী ঘুমাচ্ছে। ডিম লাইটের আলোয় তার ঘুমন্ত মুখটা কি মায়াবী লাগছে, আমার একমাত্র কন্যা মালিহা ঘুমিয়ে আছে কি সুন্দরই না লাগছে তাকে। আমার একটি ভুলের জন্য হয়তো এই সুখের সংসার ভেঙ্গে যেত।

আমার স্ত্রী আর সন্তান বানের জলের মত ভেসে যেত দূরে আর অনুরাধাকে নিয়ে আত্মগ্লানিতে ভুগে আমিও সুখী হতে পারতাম না কোন দিন।


আমি নেহাল জুবায়ের। কুমিল্লা শহরের একটি সরকারি কলেজের লেকচারার। কলেজে আমি বাংলা পড়াই। একদিন ক্লাসে আমি যখন কবিতা আবৃতি করে ছাত্র-ছাত্রীদের শুনিয়েছিলাম। সেদিন আমার কন্ঠ, চশমার ফাঁকে আমার বড় চোখ, ঝকড়া চুল আর মায়াবী চেহারা দেখে ক্লাসের দু’একটি মেয়ে ঘন ঘন তাকাচ্ছিল। অনুরাধা ছিল তাদের মধ্যে একজন।

মেয়েরা সহজে আমার প্রেমে পড়ে যায়। এটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়।


সেদিনের পর থেকে অনুরাধা আমার সাথে দেখা করে বিভিন্ন ধরনের কথা বলার চেষ্টা করত। আমার কন্ঠ সুন্দর, আমার জামা কাপড় পড়ার স্টাইল সুন্দর, ক্লাশে আমার পড়ানোর সিস্টেম সুন্দর ইত্যাদি অনেক ধরনের কথা বলতো আর প্রশংসা করতো।

অনুরাধা অষ্টাদশী তরুণী। দুধে আলতা বদন তার। এক পলক দেখলেই ভালোলাগার একটা আবেশ মনের ভিতর দোল খায়। কলেজের অনেক ছেলেপেলে ইতিমধ্যে অনুরাধাকে নিজের করে পেতে চায়।

অনেকেই চিরকুট দেয়, চিঠি দেয়, এমন কি প্রেম নিবেদনও করে। এসব নিয়ে অনুরাধা আছে মহা ঝামেলায়। দিন দিন তার প্রতি ছেলেদের আসক্তি বেড়েই চলেছে। তাই উপায় না পেয়ে সে বাধ্য হয়ে প্রিন্সিপাল স্যারকে কয়েকজন ছেলের নামে নালিশ করে।

কলেজের সব শিক্ষক এক হয়ে মেয়েদের যারা উত্যক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়ায় তরুণ প্রেমিক যারা মজনু কিংবা দেবদাস হবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তাদের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এলো।

যেহেতু কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধ তাই ছেলেরা আর কিছু করার সাহস পেলনা। এতে কেরে কলেজে অনুরাধা সহ অন্যান্য মেয়েরাও হাফ ছেড়ে বাঁচল।

অনুরাধা কারণে অকারণে আমাকে উপহার পাঠাতো । তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণও করেছিল। ভদ্রতার খাতিরে আমাকে যেতে হয়েছিল।

উচ্চবিত্ত অনুরাধার বাবা-মা বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি দেখতে পাই অনুরাধার চোখে অন্য কিছু। সেখানে প্রেম আর কামের লুকোচুরি খেলা।

আমি বুঝতে পেরেছি অনুরাধা কি চাচ্ছে। তাই সব সময় একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম। কিন্তু অনুরাধা সেই অদৃশ্য কাচের দেয়াল ভাঙার চেষ্টা করতো। তবুও শেষ পর্যন্ত অনুরাধা এমন দেওয়ানা হবে কে জানত ?

আমি ইশারা ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইতাম আমার পক্ষে ওর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

সেদিনের পর থেকে ঝড় বৃষ্টির দিন এলেই আমার অনুরোধা হওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। আমার বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর, শুনেছি সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে সফল হতে পারেনি।

অনুরাধারা বাবা- মা তাকে ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে সে সুখেই আছে।

আসলেই কি সুখে আছে ? কে যে কিসে সুখী হয় বলা মুসকিল।

অনুরাধা তার বান্ধবী শ্যামলীকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে নেহাল জুবায়ের স্যার কি এখনো কুমিল্লা শহরে আছে নাকি চলে গেছে অন্য কোথাও । তিনি কি অনুরাধার কথা জানতে চান । অনুরাধা কোথায় আছে, কেমন আছে?

শ্যামলী নেহাল জুবায়ের কে চিঠির কথা জানিয়েছিল। বলেছিল, স্যার অনুরাধা যে আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেটা আমি জানতাম। হয়তো এখনো মনে মনে আপনাকে ভালোবাসে । তাই আমি বলেছি স্যার তোমার সম্পর্কে কোন কিছু জানতে চান না । স্যার কুমিল্লা শহরেই আছেন আগের কলেজেই আছেন।

আমি বললাম, শ্যামলী তুমি ভালো করেছো। কারণ তুমি যদি লিখতে আমি অনুরাধার খোঁজ খবর জানতে চাই তাহলে সে হয়তো মন থেকে আমাকে কোনদিনই ভুলতে পারবে না। এতে করে সারা জীবনই সে কষ্ট বয়ে বেড়াবে।

আসলে ভালোবাসা এমনই। কেউ কেউ ভুলতে পারেনা ভালোবাসার মানুষকে। তাইতো তাকে না পেয়ে মনের গহীন কোণে লুকিয়ে রেখে স্মরণ করে দিবানিশি।

অনুরাধার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তার ভাললাগা, ভালোবাসার মানুষ নেহাল জুবায়েরকে সে কখনো ভুলে যেতে পারেনি।


ছবি-David Stoll
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১১:৪৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×