বর্তমানে বোধ হয় নারীদের ধারনা পুরুষ মুক্ত বিহঙ্গ ও যা খুশি তাই করতে পারে , হতে পারে এটা না বুঝেই পুরুষ সম্বন্ধে নারীর ভূল ধারনা বা উগ্র নারীবাদী ধারনা ,, কিন্তু আপনি জানেন একজন উপার্জনক্ষম পুরুষের দায়িত্ব কত ,,মা-বাবার ভরণপোষন , স্ত্রী-সন্তানের খরচ থেকে শুরু করে উজ্জল ভবিষ্যত গড়া ,, কম ঝক্কি নয় । কখনো নারী হিসেবে ভেবেছেন আপনার স্বামী বা আপনার বাবা কত টাকা খরচ করেছেন আপনার মা থেকে শুরু করে আপনাদের ভরণপোষনের জন্য । একবার ভাবুনতো আপনি নারী হয়ে উপার্জন করে আপনার স্বামী সন্তানের চাহিদামাফিক সারাজীবন টাকা খরচ করবার কথা , তারপর আপনার মা-বাবা -শ্বশুরবাড়ি তো আছেই ।একটা জিনিস মনে রাখবেন রাধুনী হওয়া মানেই হাড়ির সমস্ত খাবার আপনার নয় ,, রাধুনী সব খাবার বন্টন করে পায় হাড়ির নিচের ঝোল ,, কিন্তু সবাই দেখে রাধুনীর কাছে এক হাড়ি খাবার ছিলো ,, পুরুষ হলো সেই রাধুনীর মতো । পরিবারে মাতাও তেমন পরিস্থিতিতে থাকেন রান্না করে । দায়িত্বে যারা থাকে তাদের থেকে অধীনস্তের টেনশন অনেক কম । একটা বাসার বিয়ের দাওয়াতে গেলেন , ওনারা ভালোমন্দ রান্না করলেন , তার মানে ওনারাই কি সব খেলেন ,, বরং সবার খাদ্য চাহিদা মেটাতে তাদের গলদঘর্ম হয়ে গেলেন , সেটা ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান বা মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান যেখানেই যাননা কেন ।
অনেকে উদাহরন হিসেবে ধর্ষক , ইভটিজার বা নারী নির্যাতক পুরুষের উদাহরন দেন ,এ রকম পুরুষের অবশ্যই বিরোধী আমরা ,এক জন নারীকে ধর্ষনকারী আর যাই হোক কোন পুরুষের কাছ থেকে সমর্থন পেতে পারেনা ,কারন একজন ধর্ষিতা নারী আমার আপনার বা কোন একজন পুরুষের মেয়ে -বোন-বা স্ত্রী ,, কিন্তু পাশাপাশি তো স্বামীর সামর্থ্যের বাইরে বেহিসাবী ,বদমেজাজী , পরকীয়া আসক্ত স্বামী - সন্তান হত্যাকারী , সেচ্ছা উগ্র যৌনতা প্রদর্শনকারী নারীও তো আছে , পেপার খুললেই তো আমরা দেখি অনেক নারী আছে যারা স্বামীর বিদেশ থেকে উপার্জনের সমস্ত টাকা নিয়ে চম্পট দিচ্ছে । গৃহকর্মী কাজের বাচ্চা মেয়েকে না খাইয়ে রেখে , খুন্তির ছ্যাকা দিচ্ছে । এরকম নারী - পুরুষ , নারী ও পুরুষ উভয়ের কাছে বর্জনীয় । তারপর অনেক নারী প্রেম বা দেহের প্রলোভনে অনেক পুরুষকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা নিচ্ছে ,, এই অপরাধটা তো বিয়ের প্রলোভনে মেয়েদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে অস্বীকারের সমতুল্য । হয়রানি মূলক যৌতুক ও ধর্ষন মামলার কথাও তো শোনা যায় । আবার আপনারা নারীরা ভাবেন যে মেয়ে দেখবার সময় ছেলেপক্ষ নারীদের সৌন্দর্য , বাপ কি করে সব খুটিয়ে দেখে , এতে নারীদের নাকি অমর্যাদা হয় । আচ্ছা বলি মেয়েরা কি আশা করেনা বা মেয়েদের টপ চয়েজ এরকমটা নয় কি যে , আমার স্বামী একই সাথে সুন্দর ও ধনী হোক , নারীরা কি মন থেকে চায় যে, ভালো ঘর–বর-গয়না-আরাম আয়েশ না পেলেও হবে । সবাই মানুষ হিসেবে প্রবৃত্তিগত সৌন্দর্য ও আরামের পুজারী । আজ আপনি বিয়ের কনে হিসেবে যেটা খারাপ ভাবছেন ,, একবার ভাবুনতো আপনি ছেলের মা হিসেবে দুর ভবিষ্যতে আপনি কি আপনার ছেলের জন্য কালো,বেটে ,গরীবের মেয়ে পছন্দ করতে পারবেন ? কারন নিম গাছ লাগিয়ে আপনি আপেলের আশা করেননা ।অধিকাংশ মহিলারা হন একচোখা , তারা নিজের মেয়ের রাত দশটায় বাসাতে ফেরা দেখতে পারেন , জিন্স পরে চলুক , উচ্চ শিক্ষা লাভ করুক চান , কিন্তু বউমা চান ঠিক তার উল্টা । মনে রাখবেন আপনার মেয়ের প্রতি আপনি যে ব্যবহার আশা করেন আপনার মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে , ঠিক তেমন ব্যবহার করুন আপনার বউমার সাথে । আবার নারীর জন্য অধিকাংশ পুরুষ বিয়ের সাথে তার নিজের মা বাবা ভাইবোনের সান্নিধ্য হারায় , আলাদা বসবাস করে হয়তো মা বউকে সহ্য করতে পারেনা বা বউ শ্বাশুড়ীকে সহ্য করতে পারেনা । শুধু একতরফা পুরুষকে দায়ী করে বেড়ানো ঠিক নয় ।
আবার কোন পুরুষকে যদি বলা হয় , আপনার স্ত্রী বা মা কি করেন । দেখা যায় বলেন কিছু করেননা । এটা কি পুরুষটি ভেবে বলেন ? যদি আপনার বাসায় যদি সার্বক্ষনিক কাজের মহিলা রাখা থাকে তাহলে ভিন্ন কথা । কিন্তু যদি তা না থাকে তাহলে আপনার মা বা স্ত্রী যে পরিমান শ্রম দেয় কখনো ভেবে দেখেছেন সেই শ্রমের মূল্য টাকার অংকে দিতে হলে আপনাকে কত টাকা গুনতে হতো ? আবার নারীর কাছ থেকে পাওয়া সব শ্রম বা ঋণ টাকা দিয়ে শোধ করতে পারবেননা । মায়ের দুধের দাম , আপনার দিনের পর দিন চাকুরীর সুবাদে বাইরে থাকার কারনে আপনার সন্তান –সংসার নিয়ে বিশ্বস্ততা টিকিয়ে রাখার ও মানুষ করে সন্তানদের গড়ে তোলার জন্য স্ত্রীর কাছে হওয়া ঋণ কি আপনি টাকা দিয়ে শোধ করতে পারবেন ?
নারীকে নারীর অধিকার বুঝে নিতে বলেছেন মহিয়সী বেগম রোকেয়া । কিন্তু নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দী হতে বলেননি , নারীকে বলা হয়েছে পুরুষের অর্ধাংঙ্গিনী ও জীবনসঙ্গিনী । আর সেই অর্ধাঙ্গিনী যদি শিক্ষা ও দীক্ষায় সমান না থাকে তবে সেখানে ব্যলান্স থাকেনা , উদাহরন হিসেবে তিনি বলেছিলেন আপনার ডান হাতের থেকে বাম হাত বা ডান কাঁধের থেকে বাম কাঁধ যদি এক হাত উচু বা নীচু থাকে তাহলে কেমন দেখাবে ? তিনি নিয়ম শৃঙ্খলা বিহীন নারী অধিকারের কথা বলেননি । নারী অধিকার মানে সংসারের গৃহস্থালী কাজ আপনার ভালো লাগবেনা , ক্যারিয়ারের দোহাই দিয়ে বাচ্চা নেওয়া পালন করা বা সংসার বন্দীত্বের অপর নাম মনে হবে তা নয় ।রাগের মাথায় স্বামী বা স্ত্রীর বলা কথা একজন আরেকজন গায়ে সইতে পারবেননা , ডিভোর্স ডালভাতের মত বানিয়ে ফেলবেন , ভালোবাসা-দাম্পত্য ঠিক আছে এটা দেখানোর জন্য বছর পাঁচেক ফেসবুকে স্বামী-স্ত্রীর ভালো ভালো প্লেসে ঘুরতে যাবার হাস্যজ্জল-আলিঙ্গনাবদ্ধ ছবি দিলেন , ক্যাপশনে লেখা দেখলাম এ ভালবাসা চলবেই , বছর দুই এর পর ঘুরতে না ঘুরতে মনের অমিল , সংসারে অশান্তি ও ডিভোর্স । এমন যান্ত্রিক ভালো লাগা না লাগা ও অর্থ প্রধান লোক দেখানো সম্পর্ক সব। এ রকম শিক্ষিত পার্সোনালিটি থেকে কিছু কি শেখার থাকে ? । এ রকম আপনি শিক্ষিত পুরুষ বলে বা খুব ভালো পিতৃ অর্থ সম্পদের মালিক আছেন বলে , নিজের খাবার পানি নিজে ঢেলে খেতে পারবেননা , আপনার জুতা পরিষ্কার করতে একজন চাকর লাগবে , খাবার খাইয়ে দিতে একজন চাকর লাগবে এটা ঠিক নয় । এ সব চল করেছিলো ব্রিটিশ লর্ডরা । ব্রিটিশ গেছে কিন্তু ব্রিটিশ সেই সব স্বভাবের বীজ আমাদের ভিতর থেকে গেছে । আমরা এখনো সব শ্রমের মর্যাদা দিতে জানিনা , বা শ্রমের মর্যাদা দিতে শিখিনি । মুচি , নাপিত এদের কাজ এখনো অসম্মানের চোখে দেখি । মুচি বা নাপিত এর কাজ কি সোজা , একজন মানুষের মাথার চুল কাটা একটা জটিল শিল্প । আপনার হাতে কাইচি দিলে আপনি চুল কেটে দিতে পারবেন ? একবার জাবেদ হাবিব বা বাটা দিকে তাকানতো । একবার আমেরিকান প্রেসিডেন্টআব্রাহাম লিংকনভাষন দিচ্ছিলেন , একজন বেশ নাক উচু লোক বলে উঠলো এনার বাবা মুচি ছিলো ।তখন প্রেসিডেন্ট বললেন , হ্যা ছিলো , কিন্তু আমার বাবার বানানো জুতাটা কি বানানোতে কি কোন সমস্যা ছিলো স্যার ? সমস্যা থাকলে আমি ঠিক করে দিচ্ছি বিনয়ের সাথে বললেন প্রেসিডেন্ট ।কাজকে সম্মান এর চরম দৃষ্টান্ত এটা ।
সবশেষে একটা গল্প বলি । একজন লোক একজন আলেম-মৌলভীকে প্রশ্ন করলেন । প্রশ্নটা ছিলো এ রকম যে , মহিলারা কেন পিতৃ সম্পত্তি পুরুষের অর্ধেক পাবে ?। ইসলামে কেন এটা বলা হলো , ইসলাম তো নারীকে ঠকিয়েছে । তখন আলেম ব্যাক্তিটি বললেন , দেখুন আপনার কথা ঠিক নয় , কিছুটা বোঝার ভুল আছে । কারন ইসলামে একজন নারীকে অধিকার দেওয়া হয়েছে বাবা , স্বামী সবার সম্পত্তির অংশীদার হিসেবে । তদপুরি ইসলাম স্ত্রী সন্তানের ভরণপোষণের সমস্ত দায়িত্ব দিয়েছে পুরুষকে , নারীকে সম্পূর্ণ মুক্ত করেছে এ দায়িত্ব থেকে । এখন যদি নারীরা বলতে বা প্রশ্ন করতে পারেন আমরা ঘর গৃহস্থালিতে যত কাজ করি সেটা অনর্থক , এর কোন স্বীকৃতি নেই , তাহলে একজন পুরুষও তো হিসাব করতে পারে সারাজীবন আমি আমার স্ত্রী সন্তানের পিছনে অর্থ ব্যায় করে কি পেলাম ?। একবার হিসাব করে দেখুনতো মাসে ৩০ হাজার টাকা সংসার খরচ হলে একজন পুরুষের ৩০ বছরে কত টাকা খরচ হয় ?। সেটার মূল্য কি পুরুষ পায় ?।একজন নারী পুরুষের পাশাপাশি সম অধিকার পাচ্ছে , শিক্ষালাভ ও চাকুরী করছে । কিন্তু সম দায়িত্বের গুরুভার তো নারীর উপর চাপানো হচ্ছেনা । একজন পুরুষের বেকারত্ব কাটানো মানে যতটা না সুখ তার থেকে বেশি নতুন করে পারিবারিক আর্থসামাজিক দায়িত্বের বোঝা চেপে বসা আর নারীর কাছে চাকুরী পাওয়া মানে আজ থেকে সে শাসন বারণ পুরুষতন্ত্রের অধীনতামুক্তি ।পার্থক্য এখানে । ওই যে আগেও একবার বললাম একজন পুরুষের রক্ত পানি করে উপার্জন করা অর্থ অকাতরে খরচ করবার কলিজা ও দায়িত্ববোধ আর শত কষ্ট সহ্য করে সন্তান জন্ম দিয়ে লালন পালন করা থেকে শুরু করে সংসারের জন্য নারীর করা পরিশ্রমের মূল্য কোন টাকার স্কেল দিয়ে আপনি পরিমাপ করতে পারবেননা ।এ জন্যই আমাদের এক চোখা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বা নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার ।নারী ও পুরুষের পারষ্পরিক সহযোগিতামূলক ও শ্রদ্ধামূলক মনোভাবই পারে সুন্দর সমাজ উপহার দিতে ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


