একঃ
১৪ ই ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা। সব প্রেমিক-প্রেমিকাদের মত আকিবের মনে আজ প্রচন্ড উত্তেজনা। সেই উত্তেজনা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে। সাত সকালেই ঘুম ভেংগে দেখেছে, শরীরের কিছু একটা বিশ্বাসঘাতকতা করে ইতিমধ্যেই তার লুঙ্গিকে তাবু বানিয়ে ফেলেছে। কারন, গত রাতে কথা হয়েছিল গার্লফ্রেন্ড তমা’র সাথে.... সে আশ্বাস দিয়েছে- জানু! আজকে কিন্তু হবে....! (কি হবে, তা জানতে সামনে আগান..)
দুইঃ
তমা’র সাথে দেখা হবে সেই বিকেল বেলা- ’ক্লোজ আপ’ পার্কে। ভাবতে শুরু করলো আকিব... কত মধুর স্মৃতি জমে আছে পার্কের প্রতিটি ঘন ঝোপে, প্রতিটি গাছের নিচে। এই ‘ক্লোজ আপ’ পার্ক থেকেই তো তাদের কাছে আসার গল্প, ছোঁয়াছুঁয়ির গল্প শুরু। তমা কথা দিয়েছে, আজকে সন্ধ্যায় লিটনের খালি ফ্ল্যাটে তাদের আরো কাছে আসার গল্প রচিত হবে। বয়ফ্রেন্ড হলো হাজব্যান্ডের মত- এসব কথা তমা’র মত আধুনিকা মেয়েরা অনেক আগে থেকেই জানে। তমার এই উন্নত মানসিকতা দেখে আকিবের বুক (পড়ুন অন্যকিছু) গর্বে ফুলে উঠলো।
তিনঃ
কিন্তু সকাল বেলাটা কিভাবে কাটানো যায়? ও হ্যাঁ! ডিপার্টমেন্টের ‘যাষ্ট ফ্রেন্ড’ অনু’র সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসাটা ব্যয় না করলেই নয়। আকিব এক তোড়া ফুল নিয়ে ’যাষ্টফ্রেন্ড’ অনু’র বাসায় গেল। দৌড়ে এসে আকিবকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালো অনু, তারপর ”কেমন আছিস দোস্ত”- বলে তার গালটাও একটু টেনে দিল। ব্যাপার নাহ! আকিবের কাছে বরং আদুরে ছোঁয়াটা বেশ ভালোই লাগলো, মনে পড়ে গেল গার্লফ্রেন্ড তমা’র সাথে ঝোপের আড়ালে সেই ছোঁয়াছুঁয়ি ও কিসিমিসি (বুঝে পড়ুন) বিনিময়ের কথা।
(ব্যাকগ্রাউন্ড সং হবেঃ ☉▶ সেদিন কত সুন্দর দিন কাটাইছিলাম.... ভার্সিটির ছেলেরা... আর কিউত কিউত মেয়েরা... একসাথে বেড়াইছিলাম আর ইশক ইশক খেলেছিলাম।)
চারঃ
বিকেল বেলা ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পার্কে দু’জনের রসালো মহব্বত বিনিময়ের পর, আকিব এখন সিএনজিতে করে তমাকে নিয়ে লিটনের ফ্ল্যাটের দিকে ছুটছে। দু’জনেরই অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না, আজকে যে হবে.....! তমাকে লিটনের ফ্ল্যাটে রেখে আকিব ফার্মেসিতে গেল- স্ট্রবেরী ফ্লেভারের বেলুন কিনতে (বিজ্ঞাপন দেখে দেখে সব ফ্লেভার এখন নাকি বাচ্চাদেরও মুখস্ত হয়ে গেছে!)। এসব ব্যাপারে সে সাংঘাতিক সতর্ক। এটা তার চতুর্থ শিকার। তারপর সে লিটনের ফ্ল্যাটে ফিরে আসলো। তারপর..... যা ঘটার তাই ঘটলো...। পবিত্র(!) ভালোবাসার পবিত্র(!) বিনিময়ের মাধ্যমে তাদের ভালোবাসার ষোলকষা পূর্ণ হলো।
(ব্যাকগ্রাউন্ড সং হবেঃ ☉▶ নিশিতে যাইও ফুলবনে রে ভোমরা। নিশিতে যাইও লিটনের ফ্ল্যাটে। জ্বালায়ে ক্যামেরার বাতি, আমি ভিডিও করবো সারা-রাতি গো।)
পরিশিষ্টঃ
এক বছর পর...। আকিব আর তমা’র মাঝে এখন আর কোন সম্পর্ক নেই। ক’দিন আগেই আকিব তমাকে বিয়ে করতে চূড়ান্ত অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তমা বিয়ের জন্যে চাপ দেয়ায়, আকিব ”লিটনের ফ্ল্যাটে তাদের পবিত্র ভালোবাসা বিনিময়ের ভিডিও” ইউটিউবে ছেড়ে দিয়েছে। ফেসবুক ও ইউটিউবের কল্যানে, ছোকরা থেকে বুড়ো, সবার হাতে হাতে এখন এক ঐতিহাসিক(!) লিংকঃ ”ফাঁস হয়ে গেল আকিব-তমার ভিডিও”। তমা’র পৃথিবীটা এখন অন্ধকার, সেই সাথে আকিবেরও। আকিবের বিরুদ্ধে সে আইসিটি আইনে মামলা করেছে, হয়তো আকিবের শাস্তি হবে (যদিও দু’জনেই যেনার দায়ে অপরাধী)। কিন্তু, তমা যা হারিয়েছে, যে সম্মান তারা দু’জনেই হারিয়েছে, তার কোন ক্ষতিপূরণ কখনো হবে কি?
[লেখকের স্বীকারোক্তিঃ অনেকক্ষন ধরে কচলিয়ে কচলিয়ে এই বাঙালি লেবু-জাতিকে চিপলাম, কিন্তু দুঃখের বিষয়ঃ এই লেবু-জাতির রস পুরোপুরি বের হবে না (সবার লালসা দুর হবে না)। বিবাহপূর্ব অবৈধ প্রেম ও বয়ফেন্ড-গার্লফ্রেন্ড সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী এই বাঙালি জাতির অনেকেই শত সাবধান বাণী ও ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা জানা সত্ত্বেও, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস পালনে বের হবে, পার্কে গিয়ে নোংরামী করবে ও লিটনের ফ্ল্যাটে গিয়ে খাঁট কাঁপাবে। আসলে বাঙালি জাতির একেকটা এতটাই লেবু হয়েছে যে, এদের রস শুধু লিটনের ফ্ল্যাটে গেলেই বের হয়! - Kamal Uddin Mehed (মেহেদী হাসান নিলয়)]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪২