somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন অভিনেতা, কিছু মুভি রিভিউ এবং আমার পাগলামি- ২ :P

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শিন্ডলার্স লিস্ট ছবিতে অস্কার শিন্ডলারের চরিত্রটা এত সহজে লিয়াম নিসনের পাওয়ার কথা ছিলো না। আসলে লিয়াম তখন অভিনেতা হিসেবে এত বিখ্যাত ছিলো না, সে বিখ্যাত ছিলো বিভিন্ন বিখ্যাত নায়িকাদের প্রেমিক/ডোমেস্টিক পার্টনার হিসেবে! কেভিন কস্টনার এবং মেল গিবসনের মত বড় বড় তারকা অভিনেতারা এই চরিত্রটি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সেই ব্রডওয়ে মঞ্চনাটক ‘আনা ক্রিস্টি’তে অভিনয় করতে গিয়েই অভিনেতা লিয়াম পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের নজরে পড়ে যান। স্পিলবার্গ বুঝতে পেরেছিলেন যে এই ভদ্রলোককে দিয়েই তাঁর হবে, তবু একটা স্ক্রিন টেস্ট নিয়েছিলেন আরেকটু পরীক্ষা করে দেখার জন্য, আর তারপর তো যা হলো তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। শিন্ডলারের কাহিনী আর না বলে এবারে মুভি রিভিউয়ে যাওয়া যাক।

Les Miserablés



একেবারে টানটান একটা মুভি , একবার দেখতে বসলে শেষ না করে ওঠা যায় না। মূল কাহিনীর সাথে ঠিক কতটুকু মিল আছে সেটা আমার পক্ষে বলা কঠিন, কারণ এই বইটা সেই ক্লাস সেভেন থাকতে বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র স্কুল কার্যক্রমের সদস্য থাকা অবস্থায় পড়েছিলাম, তাও আবার অনেক সংক্ষেপিত ফরম্যাটে। এতদিন পর আর সেই উপন্যাসের তেমন কিছুই মনে পড়ে না। এখানে আসলে মুভি তৈরীর জন্য পরিচালক বিলি অগাস্ট কেবলমাত্র কাহিনীর শেষের অংশটিকে বেছে নিয়েছেন (ওনার দোষ দেয়া যায় না, এত বিশাল উপন্যাস নিয়ে মুভি বানাতে গেলে হয় বিপুল পরিমাণ কাটছাঁট করতে হবে, আর নইলে সিক্যুয়াল করে ৩/৪ পর্বে রিলিজ করতে হবে)। মুভি তৈরীর সুবিধার্থেই কাহিনীর প্রথম অংশগুলো ফ্লাশব্যাক হিসেবে এসেছে, যখন যেটুকু লাগে। সত্যিই খুব চমৎকার মেকিং, আর ডায়ালগগুলোও দারুণ। এটা তো ঠিক টিপিক্যাল নায়ক নায়িকা মার্কা মাসালা মুভি নয়, নায়কের নায়ক ফাংশনের চেয়ে বাপ ফাংশনটাই মুখ্য। তবে জাঁ ভালজাঁকে (লিয়াম নিসন) নায়ক ধরা হলে নায়িকা নিশ্চয়ই হবে ফন্টিন (উমা থারম্যান)। তো লিয়াম এখানে উমার দিকে কি মারাত্মক রোমান্টিক চাহনি দেয় একবার সেটার নমুনা দেখুনঃ



দেখলেই আমার কান্না পায়। মনে হয় ধুর, কেন ওই মেয়েটা উমা থারম্যান হতে গেলো? X(( কেন ওইটা আমি হলাম না? :(( :((

Michael Collins



লিয়াম নিসনের ক্যারিয়ারে যে কয়েকটা মাইলফলক চরিত্র আছে , এটা তার মধ্যে একটা। তার অন্য আরও অনেকগুলো মুভিতে রিয়াল লাইফ ক্যারেক্টার আছে (ও হ্যাঁ, গতপর্বে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, রব রয় চরিত্রটাও কিন্তু একটা বাস্তব চরিত্র এবং বাস্তব ঘটনার ওপরে নির্মিত), এই মাইকেল কলিন্স ছবিতেও তাই। মাইকেল কলিন্স ছিলেন আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী একজন বিপ্লবী, আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতায় যাঁর নাম চিরদিন অক্ষয় অম্লান হয়ে থাকবে। যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে লিয়াম নিজে একজন আইরিশ, কাজেই এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তার ঠিক সেরকমই অনুভব করার কথা যেমনটি শহীদ মাইকেল কলিন্স করেছিলেন।



এই ছবিতে মাইকেল কলিন্স চরিত্রটা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, দেখলে বোঝা যায় যে তিনি ব্যক্তিগত জীবনে খুব দেশপ্রেমিক ছিলেন, কিন্তু অনেক মজারও ছিলেন, খুবই একটা পাগলাটে স্বভাব ছিলো তাঁর। অস্থির একজন মানুষ… কি দেশের জন্য, কি প্রেমের জন্য! তিনি নিজেরই সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু এবং সহকর্মী হ্যারি বোল্যান্ড (আইদান কুইন) এর প্রেমিকা কিটি কিরন্যান (জুলিয়া রবার্টস) এর প্রেমে পড়েছিলেন এবং তাঁরা দু’জন বিয়ের সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন, দুর্ভাগ্য যে বিয়ের আগেই তাঁকে মাত্র ৩২ বছর বয়সে আইরিশ সিভিল ওয়ারের সময় অ্যান্টি ট্রিটি স্নাইপারদের হাতে মৃত্যুবরণ করতে হয়।



এই ছবিতে সর্বসাকুল্যে বিচার করলে জুলিয়া রবার্টসের চরিত্রটা বেশ ছোট, তবু তার মত নামকরা অভিনেত্রী এই চরিত্রে অভিনয় করতে কেন রাজি হলো কে জানে? অনেক আগে একসময় দীর্ঘদিন লিয়ামের সাথে ভালোবাসাবাসি ছিলো বলে নয়তো? :P

কিছুদিন আগে রাগ ইমন আপার একটা পোস্ট থেকে জানতে পারলাম যে এককালে উনিও লিয়াম নিসনের খুবই পাংখা ছিলেন, খুব মজা লাগলো দেখে। তো আমি জানান দিলাম যে আমিও উনার গোত্রেই পড়ি, তখন উনার সাথে আমার যে কথোপকথন (কমেন্ট বিনিময় আর কি) হয়েছিলো তার স্ক্রীনশট দেখুনঃ

:P :P =p~

Taken



সাম্প্রতিক সময়ে এটাই লিয়ামের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি । মূলত অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার কাহিনী, যেখানে এক বাবা জীবনমরণ পণ করে তার হতভাগ্য মেয়েকে পাচার হয়ে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহৃত হবার পর দেহ ব্যাবসায়ীদের হাত থেকে উদ্ধার করে। মেয়ের প্রতি বাপের ভালোবাসা যে কত তীব্র হতে পারে তা বোঝার জন্য নিশ্চয়ই মুভি দেখার প্রয়োজন নেই, কিন্তু এই ছবিটি দেখলে সেটা নতুন করে উপলব্ধি হবেই।



এখন পর্যন্ত এই ছবিটি কারো খারাপ লেগেছে বলে শুনিনি, আমার নিজেরও অনেক ভালো লেগেছে (ফেসবুকে লিয়ামের অনেক বড় একটা ফ্যানক্লাব আছে, একবার সেখানে ঢুকে দেখুন এই ছবি নিয়ে মানুষের কি পাগলামি, তারা লিয়ামকে খুব ভালো করে হয়তো চেনেও না, এমনকি শিন্ডলার্স লিস্ট ছবিটাও দেখেনি, শুধু টেকেন টেকেন করে ফাল পাড়তে থাকে… হা হা হা)। :)



আচ্ছা, এই লোকটা এত লম্বা (৬’৪” বা ১৯৪ সে.মি.), কিন্তু এই ছবিতে তাকে এত পিচ্চি পিচ্চি দেখায় কেন? :P :|

Five Minutes of Heaven



কিভাবে যে দুইনম্বরি পরিচালকের হাতে পড়ে ভালো কাহিনীর একটা মুভির বারোটা বেজে যেতে পারে, তার মোটামুটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো এই ছবিটি । এত সুন্দর একটা স্টোরিলাইন কিন্তু এমন ত্যানা প্যাঁচানো মেকিং, কি আর বলবো! ১৯৭৫ সালে আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক-প্রটেস্টান্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অ্যালিস্টার লিটল (লিয়াম) নামের এক তরুণের হাতে জিম গ্রিফিন নামের একটি তরুণ খুন হয়, দুর্ভাগ্যবশতঃ খুনের সময় সামনেই জিমের ছোটভাই জো গ্রিফিন(জেমস নেসবিট) সেখানে উপস্থিত ছিলো। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার পর থেকে জো এর জীবন আমূল পালটে যায়, সে পাগলের মত অ্যালিস্টার লিটল নামক সেই লোকটিকে খুঁজতে থাকে, মনের মাঝে ভয়াবহ ঘৃণা লালন করতে করতে সে ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চায় এবং বহুবছর পর এই ঘটনাকে উপজীব্য করে একটি টিভি শো তৈরী করা হয় যেখানে এই দু’টি চরিত্র মুখোমুখি হবার সুযোগ পায়।



কি হবে এরপর? অ্যালিস্টার কি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে? সে কি বোঝাতে পারবে যে কোনও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা থেকে সে জিমকে হত্যা করেনি, সে এমন একটা সময় এই কাজটা করেছিলো যখন প্রতিটি ক্যাথলিক কিশোর-তরুণকে প্রটেস্ট্যান্ট হত্যার জন্য বাহবা দেয়া হতো? কিংবা জো কি পারবে তার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে, তার বুকের জ্বালা জুড়াতে? ব্যাটা পরিচালক চাইলেই খুব সুন্দর করে বানাতে পারত মুভিটা, কিন্তু খুবই অপ্রয়োজনীয় কিছু দৃশ্য সংযোজন মুভিটার আবেদন অনেকখানি নষ্ট করে দিয়েছে। উইকিপিডিয়া দেখুন, সাকুল্যে এই মুভির দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে দেড় ঘন্টা, কিন্তু এইসব আলগা ত্যানা প্যাঁচানো বাদ দিলে মাত্র ৪০-৪৫ মিনিটেই মুভিটি শেষ করে দেয়া যেত। সেক্ষেত্রে হয়তো এটা আর পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র থাকতো না, কিন্তু তাতে এর আবেদন একটুও কমতো না। হোয়াট আ ডিজঅ্যাপয়েন্টমেন্ট ইট ইজ!

The Other Man



সবচেয়ে বেশি যে অভিনেত্রীর সাথে লিয়ামের কাজ করার সুযোগ হয়েছে তার নাম হচ্ছে লরা লিনি, আর এই ছবিটিও তার মধ্যে একটা। একজন মানুষ ২৫ বছর সুখেশান্তিতে তার স্ত্রীর সাথে সংসার করার পর জানতে পারে যে, তার অসম্ভব ভালোবাসার স্ত্রীর জীবনে সে-ই একমাত্র পুরুষ নয়, দেয়ার ইজ অ্যান আদার ম্যান! রাগে দুঃখে ক্ষোভে হতাশায় সে তার স্ত্রীর প্রেমিককে খুঁজতে বের হয় এবং একসময় ঠিকই তাকে বার করে ফেলে।



মুভির বাকি অংশটুকু আর বলছি না, শুধু বলি- বড় ধরনের একটা টুইস্ট আছে এই কাহিনীতে। প্রথমবার আমি যখন দেখি তখন একেবারে মদন হয়ে গিয়েছিলাম, মাথায়ই আসেনি এমনটা হতে পারে। কাজেই আগ্রহীদেরকে বলছি, দেখে ফেলুন, ভালো লাগার কথা। :)


লিয়ামের ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত একটা মজার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি নিচে, জনারণ্যে...পথিক ভাইয়ের ১৭ নং কমেন্টের রিপ্লাইয়ে। ;)


****************************************




আবারও পোস্টের শেষে লিয়াম আর নাতাশার একটা ছবি দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। বিশ্বাস হতে চায় না যে, এই ছবিগুলো এখন শুধু ছবি হয়েই রয়ে গেছে।

একজন অভিনেতা, কিছু মুভি রিভিউ এবং আমার পাগলামি - ১
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৮
৬৯টি মন্তব্য ৬৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×