somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুজিব রহমান
সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

সময়ের ভাষায় লেখা উপন্যাস

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’
শওকত আলীর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’



উপন্যাস দুটির যতই অনুবাদ হোক বাংলায় পড়ার স্বাদ আর পাওয়া সম্ভব হবে না অন্য ভাষার পাঠকদের। আগুনপাখিতে রয়েছে একজন গৃহবধূর ভাষ্য যিনি বর্ধমানের ১৯৪৭ সালের আঞ্চলিক ভাষায় বর্ণনা করে গেছেন তাঁর জীবন কথা।সেই ভাষা হয়ে হয়ে উঠে সকল বাঙালি মায়ের ভাষা। মায়ের বুকের গহীনে লুকিয়ে থাকা ব্যথাগুলো যখন পাপড়ি মেয়ে তখন কে না-পড়ে পারে! বাংলা সাহিত্য ১৯৪৭ এর ভারত ভাগ আর একাত্তর নিয়ে একটি মহৎ ও বৃহৎ উপন্যাস কি লেখা হবে না? হাসান আজিজুল হকের ছোট পরিসরের ‘আগুনপাখি’ কিন্তু সাতচল্লিশপূর্ব-উত্তর সময়ের চিত্রটি কিছুটা মিটিয়েছেন।ওই নারীর কথ্য জবানীতে উঠে এসেছে একটি এলাকার, পরিবারের অসামান্য গল্প। স্বল্প শিক্ষিতা একজন নারীর আঞ্চলিক ভাষায় উপস্থাপন দেখে আমি আশ্চর্য, মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়েছি।ওই নারী যেন একটি ডায়রী লিখে গেছেন। অথচ উপলব্ধি তো হাসান আজিজুল হকের। একটি মহৎ উপন্যাসের সারিতে যদি বাংলা ভাষার একটি উপন্যাস রাখতে হয় সেটি হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখিও হতে পারে। এটিই লেখকের প্রথম এবং সম্ভবত একমাত্র উপন্যাস, প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। তিনি অসাধারণ অনেকগুলো ছোটগল্প লিখেছেন, প্রবন্ধও লিখেছেন। তাঁর ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পগ্রন্থটির জন্যই মূলত খ্যাতির শীর্ষে উঠেছিলেন। তাঁর কয়েকটি গল্প বারবার পড়তে হয়েছে। তাঁর জন্ম সম্ভবত বর্ধমান জেলায়। আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসটি পাঠককে ইতিহাসের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ভারত ভাগের আগের বিশ্বযুদ্ধের অসহনীয় উত্তাপ, মানবতা-লাঞ্ছিত, মনন্তর, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর দেশভাগের প্রভাব কিভাবে বিপন্ন হয়ে যায় মানুষ সে আখ্যান। কেন দেশভাগ? কেন দেশান্তরী হবো? সেই প্রশ্নে সেই নারী যখন দেশত্যাগে অস্বীকৃতি জানায়, তার দৃঢ়তা ও ওই প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা নিয়ে কথা উঠতে পারে, কেউ বলতে পারে সেটাই উপন্যাসের দুর্বলতা। ধর্মীয় বিদ্বেষ ও বিভেদের কারণেই লেখকের পরিবারও নিজ দেশ ভারত ত্যাগ করে বাংলাদেশে এসেছেন।ধর্মান্ধতা কিভাবে কোটি কোটি মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে আর খুন-ধর্ষণের মুখে ঠেলে দিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষকে আমরা তা দেখেছি। ধর্মীয় উন্মাদনা ভারতকে খণ্ড-বিখণ্ড করে দিল আর ওই নারী তার টের পাবে না তাও হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি সবই দেখেছেন। তারপরও তার দৃঢ়তা- জন্মভূমি ছেড়ে কেন যাবো? শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় বলতে হয়- যেতে পারি কিন্তু কেন যাব? স্বামী-সন্তান বাংলাদেশে চলে আসলেও তিনি একাই থেকে যান স্বামীর ভিটায়।



প্রদোষে প্রাকৃতজন আঞ্চলিক ভাষায় লেখা নয়। এর পাত্রপাত্রীর মুখের ভাষা ওই সময়ের সংস্কৃত-সমৃদ্ধ বাংলা। ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসে থাকার কথা, রাজা-বাদশাদের কথা। আর এ উপন্যাসে আছে ক্ষমতাবানদের তাণ্ডবে সেসময়েও সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থার বিবরণ। ১২০০ সালের দিকের ঘটনা। তুর্কিরা আসছে সেই ভীতি আছে সামন্ত ও তাদের পাণ্ডাদের, তাদের দৌরাত্মও আছে। এরমধ্যেই আছে সেন-আমলে চরম নিপীড়নের মধ্যে থাকা বৌদ্ধ, উচ্চ বর্ণের ধর্মান্ধ হিন্দুদের হাতে সীমাহীন নিপীড়িত অবস্থায় থাকা প্রাকৃতজনের কথা। রাজনীতিতে এই ত্রিমুখী দ্বন্দ্বর ভিতরে বর্ণপ্রথার অভিশাপ উঠে এসেছে। ওই সময়ের নিম্নশ্রেণির মানুষের জীবনই মূল উপজীব্য। ডোম, কৃষক, কামার, জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী- তারাই প্রাকৃতজন। ওই সময়ে অধিকাংশ এলাকাজুড়েই ছিল সাধারণ দরিদ্র মানুষ। বাংলায় মধ্যবিত্ত শ্রেণি তখনও তৈরি হয়নি। এই নিম্নশ্রেণির মানুষের ধর্মত্যাগের কিছুটা কারণও উপলব্ধি হয়। উপন্যাসে প্রচুর সংখ্যক সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ওই সময়ের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা কি ছিল? সংস্কৃত মিশ্রিত বাংলা? এই উপন্যাসের চরিত্ররা কথা বলেছে প্রচুর সংস্কৃত শব্দ ব্যবহার করে। আমাদের মতো সংস্কৃত না জানা মানুষেরও তা বুঝতে সমস্যা হয়নি। ক্ষেত্রকর মানে মনে হয়েছে কৃষক, মৃৎশিল্পী মানে কুমার...। এই যে ১৯৪৭ সালের বর্ধমানের ভাষায় কথা বলা এক নারীর বয়ান যা পড়তে একটুকুও অসুবিধা হয় না আবার আরো আগের সেই ১২শ সালের সংস্কৃত সমৃদ্ধ ভাষায় কথা বলা একজন কামার বা কুমারের ভাষাও বুঝতে অসুবিধা হয় না এই কৃতিত্ব কেবলই লেখকের।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×