দাদির একটা সবুজ রংয়ের বাক্স ছিল।কাঠের বাক্স আর তাতে ম্লান সবুজ রঙ। কত দিন আগে রঙ করা কে জানে। আমাদের বাচ্চাদের ভারী একটা কৌতুহল ছিল, কি আছে ওতে? সবাই বলতো গুপ্তধন। কিন্তু কোনদিন দেখতে পারিনি, বুড়িটা দারুন চালাক ছিল!সে লুকিয়ে লুকিয়ে খুলতো আর দেখা শেষে ঢুকিয়ে রাখতে সেই আদ্দিকালের দুর্ভেদ্য লোহার সিন্দুকে। বাবা চাচা ফুপু রা বুড়িকে ভয় পেত যমের মত। ফিস ফাস থাকলেও সে বাক্স সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার সাহস কারো ছিলনা। দাদীর চেহারাটা কেমন ছিল মনে করার চেষ্টা করলাম।একটু মোটা, চশমা ছিল, চুল অর্ধেকের বেশি পাকা, হাতে চুড়ি, গায়ের রঙ আশ্চর্য রকম ফর্সা, একটু বেটে, খুব চেচিয়ে কথা বলা ছিল তার অভ্যাস।
দাদু মরে গিয়েছিল অনেক আগেই, বুড়োর পয়সা ছিল ঢের। প্রচুর জমিজমা, ধানের কল, বাজারে বড় চারটা দোকান! দাদির সব চেষ্টা থাকা সত্তেও ছেলেপুলেরা মানুষ হয়নি। টাকা পয়সা দিয়ে তো আর বিদ্যে কেনা যায়না।
একদিন খুব ভোর বেলা বুড়িটা চুপচাপ মারা গেল। লোকজনের ভীড়ে বাড়ী গম গম করে উঠলো, যাদের কে কোনদিন দেখিনি তারাও এলো। সেই সোরগোল আরও দুইদিন থাকলো, তারপর আস্তে আস্তে সব কিছু ঝিমিয়ে পড়লো। দাদির ঘরটা দখল করলো বড় চাচার মেয়ে বিনু ।
ওহ হো আসল কথাটাই তো বলা হলনা, সবুজ বাক্সটা এখন আমার। সে এক মজার ঘটনা।
দাদী মরে যাবার পরের দিন সিন্দুক টা খোলা হয়। সিন্দুকে সোনা রুপার গয়না, কাগজ পত্র আরো অনেক কিছু ছিল কিন্তু সবার আগ্রহ ছিল সেই সবুজ বাক্সটাতে। সেই বাক্সটা খুলে বাবা চাচা সহ সবাই অবাক হয়ে গিয়ে ছিল, তাদের মুখ দেখে খুব হাসি পেয়েছিল আমার। সেখানে গুপ্তধন তো দুরের কথা দামি কিছুই ছিলোনা। সবাই দাদীর উপরে খুব রেগে গিযেছিলো। সবই ছিলো একদম তুচ্ছ জিনিষ, বুড়িটা খুব বোকা ছিল।
বাক্সটাতে ছিলো- দাদুর একটা ঝাপসা ছবি, তার একপাটি জুতো,অনেক চিঠি যেগুলো কিচ্ছু বোঝা যায়না, ছোট চাচার দু বছর বয়সের লাল রংয়ের একটা প্যান্ট, ১৪ বছর বয়সে হঠাৎ একদিনের জ্বরে মরে যাওয়া আমার ছোট ফুপুর গালে মাখা ক্রিমের কৌটা, তার বই, লাল রঙের ভাঙা কাচের চুড়ি, বিভিন্ন রঙের পুঁতি এ রকম আরো হাবিজাবি জিনিষ।
বাবা গজ গজ করতে করতে বললেন, " যা, কেউ একজন বাক্সটাকে চিলেকোঠায় রেখে আয়তো!"
(অন্য একটা ব্লগে দেয়া ছিল, সামুত্ওে একটা কপি রেখে দিলাম)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৪