মিনহাজের কথা আপনাদের অনেকেরী মনে থাকার কথা। আমার সাথে যারা অনেকদিন যুক্ত আছেন তাদের মাঝে মাঝেই বিরক্ত করেছি মিনহাজের সন্ধান চেয়ে, ওর সাথে থাকা স্মৃতি শুনিয়ে। মিনহাজুল আবেদিন সোহান। বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়িতে। একই এলাকার হওয়াতে পরিচিত এক ভাই যার খোজে মানুষ অব্দি লাগিয়েছিলেন তার এলাকায়। কিন্তু পাওয়া যায় নাই।
বর্তমানে মিনহাজ
কাশেম বিন আবুবকর এর সেই ছোট্ট পাঠক এখন অনেক বড় হয়েছে। বিয়েও করেছে গত ফেব্রুয়ারিতে। পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী এখন ক্লাশের সেরা ছাত্রদের একজন সেই মিনহাজ।
শেষ তাকে বিদায় দিয়েছিলাম বরিশাল লঞ্চঘাটে। আজ থেকে ১৩ বছর আগে। বাসায় গিয়ে পরের দিন ফোন দেয়ার কথা ছিল। তবে সেই ফোন এল গতকাল, ১৩ বছর পর।
বেচে থাকলে মিনহাজকে আমি খুজে বের করব, এই ছোট পৃথিবীর মাঝে। খুব শক্ত করেই আটঘাট বেধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সব চেষ্টা যখন বৃথা হচ্ছিল, ভেবেছিলাম দেশে আসলে আমি নিজে যাব ওর জেলায়, খুজেতে।
মাঝে মাঝেই আমি ওর নাম বিভিন্ন ভাবে লিখে সামাজিক মিডিয়াতে খুজতাম। শতবার খুজেও যখন না পেলাম তখন মনেই করে নিয়েছিলাম যে, হয়তো সেইও তার আইডির নাম দিয়েছে 'শেরপুরের পোলা' কিংবা 'বাংলার বাঘ' অথবা এমন অন্য কিছু। যেমনটা হয় আর কি আজকাল।
কিন্তু না, গতকাল অনেক চেষ্টা করে নামের সঠিক বানান বসিয়ে খোজ বাক্সে চাপ দিতেই সামনে চলে আসল। শুরুতে বাড়ন্ত শরীর আর দাড়ির চাপে একটু বুঝে নিয়ে সময় লাগলেও সেটা খুব বেশিক্ষন না। বুঝে ফেললাম এই তো সেই মিনহাজ যাকে আমি গত ১৩ বছর ধরে খুজছি। যে মিনহাজের সাথে কেটেছে শৈশবের দিন গুলো। হুজুরের চোখ এড়িয়ে উপন্যাস পড়া। উপন্যাস লিখতে অব্দি শুরু করা। ছারছিনার লিল্লাহ বোডিং এর লাইনে প্রতিদিন একসাথে দাঁড়িয়ে থাকা। ৩ মাস পর যখন হুজুর রুম পরিবর্তন করে দিতেন তখন আমার যেন একরুমে দেয় আমাদের সেই তোড়জোড় করা। স্বরূপখালী বাজারে গিয়ে ২ জন মিলে একটা মোগলাই খাওয়ার ভান করে পুরো বাংলাদেশের খেলার দেখা। আরো কত কত কি...।
১৩ বছর আগের মিনহাজ
খুজে পেয়েই যথাযথ আধুনিক চিঠি পাঠালাম তার চিঠির বাক্সে গিয়ে। সন্ধায় ফিরিয়ে দিল তার উত্তর। এরপর ১৩ বছর আগে দেয়া সেই কথা রেখে কল দিল। কথা হল, অনেক সময়। অনেক স্মৃতিচারণ। সেও খুজেছিল আমাকে। বলছিল, "এতগুলো বছর গেলেও আমি কোন দিন ভুলি নাই তোমার নাম। যখন প্রথম ফেইসবুক চালানো শুরু করি তখনও খুজেছি। তবে জীবন সংগ্রামের বাস্তবতায় নতুন অধিকার সামনে চলে এসেছিল।"
ঘটনাটা আমাদের পাশে থাকা আমাদের স্ত্রী'রা সহ আপনাদের অনেকের কাছেই হয়তো কোন অর্থ বহন না করতে পারে। তবে আমাদের জন্য একটা জীবনের একটা অংশ। কারন এটা আমাদের গল্প।
এখন অপেক্ষা সারসরি সাক্ষাতের। "দেশে গেলে বউ নিয়ে তোর বাড়ীতে বেড়াতে আসব", বলে দিয়েছি। আরো বলে দিয়েছি, "১৩ বছরের অতিত আর তোর সাথে কাটানো দিনগুলোর আলোকপাত করত সেই অধ্যায়ে"।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৩