আমি যেসব লেখার চেষ্টা করি তার সবগুলোই এক ধরনের। খাপছাড়া, অসংলগ্ন লেখা। আসলে আমি মনে যা আসে তাই লেখার লেখক।
মাঝে মাঝে কিছু বিষয় নিয়ে খুব ভাবি। আজ সামান্য এফ এম শুনতে গিয়ে আবার আমার নিজের প্রজন্ম নিয়ে ভাবনাটা চলে এল।
যখন বড় হচ্ছিলাম তখন আমি খেয়াল করে দেখতাম যে আমি আসলে বুদ্ধিমানদের মধ্যে একজন। সবাই বলে যে নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করা বোকার লক্ষণ। ব্যাপারটা কোন দিক দিয়ে ঠিক হতে পারে, কিন্তু এটা পরিষ্কার যে কারো বুদ্ধি যদি আপনার চেয়ে কম হয়, আপনি সেটা বুঝতে পারবেন।
আমি গ্রামের ছেলে। এখানকার পরিবেশের সাথে আমি পরিচিত। যখন কলেজে পড়ার জন্য শহরে আসলাম তখনই মূলত শহুরে সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটল। আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে এটা বুঝতে শুরু করলাম। আমি খেয়াল করতাম যে, গ্রামের ছেলে বলে আমার আলাদা একটা 'স্ট্যাটাস' আছে। আমি কৌতূহলের সাথে দেখতাম যে যাদের বাসা ঢাকায় তারা নিজেদের খুব আধুনিক মনে করে।
আমার নিজের সম্পর্কে কোন সংশয় ছিলনা। আমি ছোটবেলা থেকে বই পড়তাম। আমি কি পরিমাণ বই পড়েছি তার কোন হিসাব আমি দিতে পারবনা, কিন্তু আমি অনুভব করি যে আমার পছন্দ এখন সাধারণ গল্প উপন্যাস থেকে চিন্তাশীলতার দিকে গেছে।
তো, আমি বোঝার চেষ্টা করতাম যে শহরের ছেলেমেয়েরা আসলে কি পছন্দ করে। দূঃখজনক হলেও সত্য, এখানে এমন কিছু ছিলনা যাতে আমি প্রভাবিত হতাম। সাধারনত আড্ডাতে যদি মেয়েদের নিয়ে আলোচনা হতো তাতে আমি মোটেও বিরক্ত হতাম না। কিন্তু বেশীরভাগ সময় এটা হতো হয় হিন্দি সিনেমার কোন জুটি, বা কাহিনী নিয়ে, অথবা মোবাইল ফোন কোম্পানি গুলোর নতুন কোন অফার নিয়ে। গল্প উপন্যাসের কথা উঠলে তা হুমায়ুন আহমেদ এই সীমাবদ্ধ থাকত।
আমার করুণা হতো যে এর বাইরে যাবার মতো বিকাশ এদের এখনও হয়নি। সবচেয়ে মজা লাগত যখন আমাদেরই কারও এসব ভাল না লাগত এবং সেটা প্রকাশ করত তখন তাকে বেশ গাইয়া বলা হতো।
এক কথায় ওরা মূল্য দিত এমন বিষয় গুলো হচ্ছে একটা ন্যাকা ন্যাকা ফ্রেন্ডশীপ, ডিজুসের নতুন কোন অফার, হুমায়ুন আহমেদের নতুন কোন বই, হাবিব বালাম ন্যান্সির নতুন কোন অ্যালবাম। দ্যাটস্ ইট।
এর যেকোন একটায় কারো জ্ঞান কম থাকলে তাকে নিয়ে হাসাহাসি হতো।
ভাবতাম, এরা এখনো ছোট, বড় হলে এদের মস্তিষ্কের বিকাশ হবে, চিন্তা করতে শিখবে। আমি পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই, যে তরুন হুমায়ুন আহমেদের বই এখনও পছন্দ করে তার মেধার বিকাশ এখনও অপূর্ণ।
এতো অনেক আগের কথা। এখন অবস্থা দেখি আরও খারাপের দিকে। আজকাল এফএম এ ফালতু আড্ডা না শুনলে তাকে অসামাজিক মনে করা হয়। আমি সবসময়ই দেখতাম একটা মার্জিনাল স্রোত আমাদের সাথে বয়ে চলেছে যারা এমন বিষয় পছন্দ করত যাতে মস্তিষ্কের যোগ আছে। তারা শুনত এমন সংগীত যাতে বিশুদ্ধ আবেগ আছে, কেবল হেডফোন লাগিয়ে রাস্তায় হাটার মতো না। তাদের মধ্যে দেখতাম নেতৃত্ব, এবং তাদের বেশিরভাগই ছাত্র হিসেবেও ভাল ছিল। আজকাল তাদের অনেককেই ভাল জায়গায় দেখতে পাই।
আমার প্রশ্ন, কেন এই ডিজুস স্রোতের বেশীর ভাগ ভাল করতে পারছে না, কেন তাদের মেধা অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে? কেন এরা সমাজকে এগিয়ে নিতে পারবেনা, ক্ষেত্রবিশেষে পিছিয়ে দেবে?
আমি মনে করি কেবল বেঁচে থাকলে দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি আমার ঋণ শেষ হয়না। আমাদের অবশ্যই কিছু দিতে হবে। কেবল বেঁচে থেকে সেটা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন হতে পারে যে কেন শহরের ছেলেমেয়েদের নিয়েই বলছি। কারণ এদের শিক্ষার, উন্নত জীবনমানের সুযোগ সবচেয়ে বেশী।
এই সংস্কৃতি আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। করপোরেট হাউসগুলো ব্যবসার জন্য আমাদের হারিয়ে যেতে বলবেই। তাই বলে আমরা এতটা মাথামোটা হতে পারিনা যে ওদের কথামতো হারিয়ে যাব।
যাহোক, লিখতে গিয়ে অনেককে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করেছি, সেজন্য আমি দূঃখিত।
জ্ঞানের জগৎ অনেক আনন্দময়। এখান থেকে বঞ্চিত যাতে কেউ না হয় সেটাই আমার চাওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




