somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হলে উঠার মহাভারত এবং অাগ্রহীদের জন্য অ আ ক খ

৩১ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৩:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদিও আমি ধরে নিতে পারিনা যে, আমি যে হলের কথা বলব সবাই সে হলেই উঠবে, তবু যদি কিছু মিল পান তো মন্দ কিসে?
'ভার্সিটিতে পড়বি, আর হলে উঠবি না!' আমার এক বড় ভাইয়ের উক্তি। তো মিশন শুরু করেছিলাম প্রথম বর্ষ থেকেই। একদিন পরিদর্শনে গেলাম। আপনারা যারা গণরুম চেনেন তারা তো জানেনই, আমিও সেদিন জানলাম এবং দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে মিশন এক বছরের জন্য স্থগিত ঘোষনা করলাম। দ্বিতীয় বর্ষে আসার পর আমার এক ক্লাসমেট যে প্রথম বর্ষেই হলে উঠেছে সে বলল, এই বেলা উঠে পর। বেশীদিন গণরুমে থাকতে হবেনা, তাড়াতাড়ি রুম পাবি।
শুরু করলাম ঘুরঘুর করা। আস্তে আস্তে জানলাম, হলে উঠতে হলে সব পলিটিক্যাল ভাইদের নাম মুখস্ত করতে হবে। তাদের নামের লিস্ট নিয়ে একটি শীট গণরুমের ছেলেদের কাছে থাকে। আমিও একটি 'আউটডেটেড' লিস্ট জোগাড় করলাম। 'আউটডেটেড' মানে হচ্ছে, এখানে নামের পাশে যে রুম নাম্বার লেখা আছে তা বর্তমানে পরিবর্তিত।সেটাতেই কয়েকদিন চোখ বুলালাম। সারাদিন ক্লাশ করতাম, সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে সময় কাটিয়ে রাত ১০:০০ ঘটিকার পর নামতাম পরিচিতি অভিযানে। কারন ১০ টার আগে কোন ভাইকেই রুমে পাওয়া যায়না। এভাবে ১২ টা বেজে যেত। তখন আর ৩০ টাকা ভাড়ার দুরত্বের বাসায় যাওয়া সম্ভব হতোনা। থাকতাম কোন বন্ধুর মেসে। এভাবে একদিন ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো, জেলার এক ভাইয়ের সাথে পরিচয় হলো। তিনি আমাদের ইমেডিয়েট সিনিয়র এক ভাইকে বললেন, 'এই ছেলেটাকে তুলে দে তো..'।
এভাবে উঠে পড়লাম গণরুমে। যেখানে এমনকি নিজের তোষক তো দুরের কথা, ব্যাগ রাখার জায়গা পাওয়াও দুষ্কর। ঘুমানোর জন্য অপেক্ষা করতে হতো, কখন অন্যরা সবাই ঘুমাবে। সবাই ঘুমানোর পর খেয়াল করতাম কোন লাইনে একটু জায়গা ফাকা আছে। গণরুমে যেহেতু ঢালাও ফ্লোরিং, মাঝে মাঝে জায়গা পেতাম, কখনো কখনো পেতাম না। চলে যেতাম রিডিং রুমে, কয়েকটা চেয়ার একত্র করে শুয়ে পড়তাম। কপাল যদি খুব খারাপ থাকত, সেদিনই গণরুমে শোবার জায়গা পেতাম। আর সারারাত ছাড়পোকা তাদের কামড়ের ধার পরীক্ষা করত শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়িয়ে। তখন আর মনে হতোনা দোজখ এর চেয়ে খারাপ কিছু হতে পারে। মনে মনে সান্ত্বনা পেতাম এই ভেবে যে, যেহেতু ছাড়পোকা গুলো এই রুমে আমার চেয়ে 'সিনিয়র' তাই তাদের দাবড়ানি একটু সহ্য করতেই হবে।
এরপর আসে গেস্টরুম প্রসঙ্গ। গেস্টরুম হচ্ছে সিনিয়র ভাইদের কর্তৃক জুনিয়রদের ডেকে নিয়ে 'সুবিধা অসুবিধা' আলোচনা করা,(মতান্তরে ঝাড়ি দেয়া)। দ্বিতীয় বর্ষে বলে যদিও গেস্টরুম কম হতো, তবুও যেদিন থাকত সেদিন আমার গলা শুকিয়ে প্রায় মরুভূমি হয়ে যেত। সেখানে উপস্থিত প্রত্যেক বড় ভাইয়ের নাম বলতে হবে এবং না বলতে পারলে যথারীতি 'ঝাড়ি'। আমার স্মরণশক্তি, বিশেষ করে নাম মনে রাখার ব্যাপারে বিশ্ববিখ্যাত, ফলে যা হবার তাই হতো। যদি রাস্তা দিয়ে সিনিয়র যাবার সময় সালাম দিতে ভূল হতো, 'প্রোগ্রাম' এ না যেতাম তখনও কপালে এই থাকত।
'প্রোগ্রাম' ব্যাপারটা এখানে কম্পিউটার ল্যাঙ্গুয়েজ না। এটা হচ্ছে বিভিন্ন পলিটিক্যাল উপলক্ষে মিছিল। এখানেও স্লোগান আস্তে দিলে বা শুধু ঠোট মেলালে 'ঝাড়ি'। শুধুমাত্র পরীক্ষা ব্যতীত অন্য কোন কারণে এটা বাদ দেয়া যাবেনা।
এইসব নিয়েই আপাতত হলে আছি। সবার দোয়া চাই যাতে ছাড়পোকাটা অন্তত একটু কমে।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×