somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অবনি মণি
অনেক বছর হলো ; তবুও নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো নির্জন নিস্তব্ধ মৌন পাহাড়ের মতোই একা পড়ে আছি আজও। একাই আছি এই দীর্ঘশ্বাসের মতো! তোমারও কি শুধু দীর্ঘশ্বাস,গ্রীলে বিষন্ন গোধূলী?

"কি দেবো শিরোনাম শুধু আবেগ ছাড়া"

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিয়ের পর বদলে যাওয়া পুরুষদের কথা মাথায় আসতেই,তাঁর স্মৃতিগুলোতে হাতড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকেনা।

যে মা ছায়া হয়ে সারাটি জীবন আগলে রেখে নিজের মনের মতো একটা মেয়ে খুঁজে বউ করে নিয়ে আসলো,সেই মা-ই আজ বউ থেকে গুরুত্বহীন হয়ে গেল। যে 'মা' ছাতা হয়ে আজীবন না থাকলে তুমি কি পারতে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পার করে একটা চাকুরী যোগাড় করে নিতে? সেই মায়ের দোয়া না থাকলে তুমি কি পারতে এতো পথ পাড়ি দিতে?

একটা মা দিনের পর দিন চিন্তা করতে করতে পার করে,রাতের পর রাত নিদ্রাহীন কাটায়। সারাক্ষন চিন্তায় মগ্ন থাকে 'ছেলেটি সারাদিন স্কুল থেকে ফিরে কি খাবে?কলেজ থেকে ফিরে কি খাবে? 'নুনভাত! সারাদিন কষ্ট করে এসে এগুলি খেয়ে আমার ছেলের পেট ভরবে?হজম হবে তো!

কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়। ছেলে হয়তো ৫০০ টাকার একটা টিউশন পেয়েছে,মা নিশ্চিন্ত হলেন ; আমার ছেলেটা আর সারাদিন উপোস করে ক্লাস করবেনা,পাঁচ টাকা দামের একটা কেকতো খেয়ে নিতে পারবে। কিন্তু না ; প্রচন্ড রকমের মা ভক্ত ছেলেটি মাস শেষে হয়তো সেই ৫০০ টাকা মায়ের হাতে তোলে দিয়ে বলে 'ভাই স্কুলে যাবার সময় প্রতিদিন ৫ টাকা করে ওর হাতে তোলে দিও মা'। মায়ের খুশিতে যেন গোটা পৃথিবী খুশি হয়ে যায়। সেই ছেলে কিভাবে পারে বদলে যেতে?? লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করেও কিভাবে পারে মায়ের হাতে একটা পয়সাও না দিয়ে থাকতে! কিভাবে পারে মায়ের অসুখ নিয়ে ঘরে বসে থাকতে ?

মা অপেক্ষা করে 'ছেলে কখন ফিরবে?' ফিরলেই ছেলের হাতের ব্যাগটা তাড়াহুড়ো করে নামিয়ে রেখে হাতে টাওয়াল তোলে দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে আয় ; ও হ্যাঁ,লুংগিটা রেখে আসিস বাবা ; আমি ধুয়ে দেব। টেবিলে ভাত বাড়া হয়ে গেছে এরই মধ্যে। ছেলে খাচ্ছে আর পরম সুখে তার দিকে তাকিয়ে আছেন মমমতাময়ী মা,তরকারি পাতে তোলে দিচ্ছেন,গ্লাসে পানি ঢেলে দিচ্ছেন। ছেলের খাওয়া শেষ। তুই বরং একটু বিশ্রাম নে বাবা। ও হ্যাঁরে, বিদ্যুৎ তো নেই,দাড়া ; আমি বরং হাতপাখাটা দিয়ে বাতাস করি,তুই একটু ঘুমিয়ে নে। এই মা এর সাথে কিভাবে এই ছেলেটি পারে কথা না বলে থাকতে? বয়সের ভারে নুয়ে পড়া অসুস্থ মা সময় কাটায় তার বেড রুমে একা একা আর ছেলে তার বউ বাচ্চা নিয়ে এতো ব্যস্ত যে মা কেমন আছে এই কথাটা জিজ্ঞেস করারও সময় নেই তার। আজ এই পার্টি ; তো কাল ঐ পার্টি।প্রতিদিনই ডিনার পার্টি শেষ করে এসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে হেলে পড়েন বিছানায়। একবারও খোঁজ নিয়েছে কি মা রাতে খেয়ে ঘুমিয়েছেন কীনা!

বিয়ের দিন পর্যন্ত যে মা জোয়ান ছেলের জাংগিয়া,সেন্টু গেঞ্জিটাও ধুয়ে দিলেন, বিয়ের পরদিনই ছেলে পুরো নতুন মানুষ। নিজের কাপড় তো ধুতে পারেই সাথে স্ত্রীর কাপড়ও। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মায়ের হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে কখনো ধুয়ার চেষ্টা করেছে কি এই ছেলে? কখনো মায়ের পাতে নিজ হাতে তরকারি তোলে দিয়ে দেখেছে কি মায়ের খুশি?

আমরা তো কোনোকিছুর আগপাছ না ভেবে ঠাস করেই বলে দেব "সব দোষ বউয়ের"। বউ মন্ত্র দিয়ে ছেলেটিকে বশ করে নিয়েছে।বউ সারাদিন মায়ের নামে কানপড়া দেয় ছেলের কাছে। মায়ের নামে যা তা বলে মায়ের প্রতি বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু কেন? এই পুরুষটি কি তবে পুরুষ নয়? এই পুরুষ কি তবে কোনো সক্ষমতা ছাড়া এই নারীকে বিয়ে করেছে? তবে কি তার সব বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছে?? সে কি নির্বোধ??

তার জন্মের ১০ মাস আগে থেকে বিয়ের দিনটি পর্যন্ত ঐ স্মৃতিগুলোও কি স্ত্রী ভুলিয়ে দিয়েছে? স্ত্রীর মন জয় করতে গিয়ে মাকে পায়ের তলায় ফেলে পিষ্ট করতে হবে এমন বিবেকহীন তো একটা পুরুষ হতে পারেনা। স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য পালনের পাশাপাশি মায়ের প্রতিও কর্তব্য পালনে এতো অনীহা কেন এই পুরুষগুলোর?

আবার ভিন্নতাও আছে।এই ভিন্নধর্মী পুরুষগুলো আরেক ধরনের কাপুরুষ। বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীকে কাজের মানুষ কিংবা বাচ্চা প্রতিপালনকারী ছাড়া আর কিছু মনে করেনা। বসতে মা উঠতে মা,স্ত্রীও যে একজন আছে সেটা সে পরওয়া করেনা; বাচ্চা খেয়েছে কীনা,পরেছে কীনা এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।মায়ের মাথার কাছে বসে নাহয় ফোনে খোশগল্প চলছে। তবুও এই ধরনের পুরুষের সংখ্যা কম। আর এই স্ত্রীরও কিছু জায়গা থাকে দুঃখগুলো প্রকাশ করার মতো।কিন্তু মা-রা যে বড় অসহায়! একটু প্রকাশ করার মতো একটা জায়গাও থাকেনা তাদের।

এই অসহায় মায়েরা,বাবারা কিভাবে বেঁচে থাকে এইটুকু অনুধাবন করার ক্ষমতা নেই আমাদের,তাদের চোখের ভাষা বুঝারও ক্ষমতা নেই আমাদের। আমরা শুধু দেখি,শুনি আর আমাদের মতো সোজা পথ দিয়ে চোখ কান বন্ধ করে হেটে যাই...........আর ভাবি এই সময়টা হয়তো আমাদেরও আসবে; কিন্তু আমরা কোন চরিত্রে অভিনয় করব তা জানিনা। এই না জানা অব্যাহত থাকবে আমৃত্যু ।

সেই মায়েদের প্রতি কেবল সমবেদনা প্রকাশ করেই যেন আমরা ক্ষান্ত না হই; বরং এটাই যেন চেষ্টা করি আমাদের জন্যে অন্তত কোনো মাকে যেন এমন দুঃখের ব্যয়ভার বহন করতে না হয়। আমরাই তো একজন মায়ের মেয়ে,কোনো মেয়ে কিংবা ছেলের মা,এক মায়ের ছেলের বউ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:১৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×