ইসলামে সর্বোত্তম নফল আমল কোনটি? এই প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বিভ্রান্ত হই। সামান্য কিছু হাদিস জেনে নিয়ে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হই। অবস্থা এমন হয়েছে যে, আমি যে হাদিসটি জানি, সেটাকেই সঠিক বলে ধরে নিতে চেষ্টা করছি। আমার জানার বাইরেও যে এই বিষয়ক আরও হাদিস থাকতে পারে, অথবা এই বিষয়ের সকল হাদিস আমার যে এখনও পড়া হয়ে ওঠেনি, বেমালূম তা ভুলে যাই। যার ফলে নিজের মতামতকে চূড়ান্ত বলে ধরে নিয়ে তাতে বিশ্বাস পোষন করে চলি এবং বাদবাকি লোকদেরও আমার মতামতের প্রতি বিশ্বাসী হতে আহবান জানাতে থাকি। যদিও কাজটি ঠিক নয়। অন্তত: এই বিষয়ক সঠিক ধারণা অসংখ্য হাদিসের ভান্ডার থেকে পরিপূর্ণভাবে গ্রহন করার পূর্বে একপাক্ষিকভাবে এমন তথ্য প্রচার করা থেকে বিরত থাকা একজন মুমিন বান্দার নৈতিক এবং ঈমানী দায়িত্বও বটে। যেমন- সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে 'কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াত'কে সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে।
কুরআন তিলাওয়াতকে সর্বশ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কুরআন তিলাওয়াত শ্রেষ্ঠ ইবাদত। তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর। কারণ, কিয়ামতের দিন কুরআন পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে।” (সহিহ মুসলিম)।
অপর এক হাদিসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ''ছিয়ামের সমতুল্য কোন ইবাদত নেই।'' (নাসায়ি শরিফ)
আরেক হাদিসে এসেছে, ''সর্বোত্তম নেকির কাজ হচ্ছে পিতার বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক অটুট রাখা।'' (মুসলিম ৬৬৭৭)
আবার ছালাতকেও সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত বলা হয়েছে অন্য হাদিসে। এছাড়া হজ্জ পালন, জিহাদ করা, ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করা, চেনা-অচেনা প্রত্যেককে একে অপরের সালাম প্রদানসহ বিভিন্ন কাজকেও সর্বোত্তম আমল বলা হয়েছে হাদিসে। এমতাবস্থায় ইসলামের কোন্ আমলটি আসলে সর্বোত্তম?
এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, প্রত্যেক আমল তার নিজ অবস্থানে উত্তম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচে' বিচক্ষন। সবচে' জ্ঞানী। সবচে' বেশি হিকমতপূর্ণ ছিল তাঁর প্রতিটি কথা। কোন ব্যক্তির ভেতরে কোন্ আমলটির ঘাটতি রয়েছে প্রথমেই তিনি তা অনুধাবন করতেন। এরপরে ব্যক্তি, সময় কিংবা কখনো অবস্থার প্রেক্ষিতে একেকটি আমলকে উত্তম আমল বলে উম্মাহকে নেক আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। এই কারণে আমরা দেখতে পাই, কখনো ছালাত, কখনো হজ্জ, কখনো জিহাদ আবার কখনো ছিয়ামকে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ আমল সাব্যস্ত করেছেন। তবে মুহাক্কিক আলেমগনের মতে, ইবাদতগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত ছালাত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ''আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার নৈকট্য লাভের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম ছালাত। সুতরাং, যার সাধ্য রয়েছে তা অধিকহারে আদায় করার সে যেন তাই করে।'’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৮৭০; ছহীহুত তারগীব হা/৩৯০)
আর নাসাঈ বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম সিন্ধী বলেন, প্রবৃত্তি দমনে এবং শয়তানী প্ররোচনা প্রতিহতকরণের ক্ষেত্রে বা অধিক ছওয়াবের ক্ষেত্রে ছিয়ামের সমতুল্য কিছুই নেই। এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, আত্মাকে মন্দকর্ম থেকে বিরত রাখা। আর এটাই হল তাক্বওয়া। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন, '‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত ঐ ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু।'’ (হুজুরাত ৪৯/১৩; ‘হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলান নাসাঈ’ অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
আল্লাহ পাক আমাদের প্রতিটি বিষয় কুরআন হাদিসে বর্ণিত জ্ঞানের আলোকে বুঝার তাওফিক দান করুন। সেই অনুযায়ী আমল করারও শক্তি দান করে আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাত উজ্জ্বল করার খোশনসিব দান করুন।
ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:২২