somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

সুন্দর ব্যবহার এবং আচার-আচরণের জন্য হাদিসে বর্ণিত পুরস্কার এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সুন্দর ব্যবহার এবং আচার-আচরণের জন্য হাদিসে বর্ণিত পুরস্কার
সুন্দর ব্যবহার, সুন্দর আচার-আচরণ মানবজীবনের সৌন্দর্য্যকে ফুটিয়ে তোলে। এ বিষয়ে ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। মার্জিত, উত্তম এবং সুন্দর আচার-আচরণের জন্য হাদিসে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে পুরস্কারপ্রাপ্তির ঘোষনা। আজ সে বিষয়েই সামান্য আলোকপাত করার ইচ্ছে-

এক. মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটু কথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তাঁর ব্যবহারের কারণে নফল রোযা ও তাহাজ্জুদের সাওয়াব লাভ করবে।' [সুনানে তিরমিযী]

দুই. প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য এক হাদিসে বলেছেন, 'সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে, তা হলো- মহান আল্লাহ্ তায়ালার ভয় এবং সুন্দর আচরণ। আর সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে, তা হলো- (মানুষের) মুখ এবং লজ্জাস্থান।'' [সুনানে তিরমিযী, হাকিম আল মুসতাদরাক]

তিন. অারেক হাদিসে প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ''সুন্দর আচরণ্ই নেক আমল।'' [সহীহ মুসলিম]

চার. অন্য একস্থানে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 'তোমাদের মধ্যে যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, সে আমার সবচেয়ে বেশি প্রিয় এবং কিয়ামতের দিন সে আমার সবচেয়ে কাছে থাকবে।' [সুনানে তিরমিযী]

পাঁচ. অাল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য এক হাদিসে বলেছেন, 'অশোভন-অশ্লীল কথা ও আচরণের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আর যার আচরণ যত সুন্দর তার ইসলাম তত সুন্দর।'' [মুসনাদে আহমদ]

ছয়. প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য এক হাদিসে বলেছেন, 'যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে
একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি।'' [আবু দাউদ]

সাত. প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য এক হাদিসে বলেছেন, 'যদি কেউ বিনম্রতা ও নম্র আচরণ লাভ করে, তাহলে সে দুনিয়া ও আখেরাতের পাওনা সকল কল্যাণই লাভ করল। আর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং সুন্দর আচরণ বাড়িঘর ও জনপদে বরকত দেয় এবং আয়ু বৃদ্ধি করে।'' [আহমদ]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের সকলকে বর্ণিত হাদিসগুলোর উপর আমল করে সকলের সাথে উত্তম আচার-আচরণে অভ্যস্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন।


প্রশ্নোত্তরে প্রয়োজনীয় এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা যা জেনে রাখা ভালো:
প্রশ্ন এক. কেরোসিন তেল কি পবিত্র, না অপবিত্র? কাপড় বা গায়ে কেরোসিন লাগলে, তা সহ নামাজ পড়া যাবে কি?

উত্তর : কেরোসিন তেল মূলত: নাপাক নয়। কোনো অনুসঙ্গ (নাপাক পদার্থ) তাতে মিশ্রিত হলে কেরোসিন নাপাক হতে পারে। আর কেরোসিন তেল থেকে সতর্কতা অবলম্বন করা হয় এটির দুর্গন্ধের জন্য। এই একই কারণে দ্রব্যটি মসজিদেও পরিত্যাজ্য। তবে, বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে মসজিদেও ব্যবহার করা যায়।

প্রশ্ন দুই: প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন খাদ্য বেশি পছন্দ করতেন এবং কোন খাদ্যের গুণ, প্রাণশক্তি ও নিরাময় ক্ষমতা বেশি বলে বর্ণনা করতেন?

উত্তর : হযরত নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় খাদ্যের মধ্যে ছারীদ উল্লেখযোগ্য। গোশতের তরকারিতে টুকরো রুটি মিলিয়ে যে খাদ্য তৈরি করা হয় তাকে ছারীদ বলা হয়। গোশতের মধ্যে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি পছন্দ করতেন খাসীর সামনের রানের গোশত। তরি-তরকারির মধ্যে তাঁর নিকট সর্বাধিক পছন্দের ছিল লাউ। এছাড়া দুধ, মধু, খেজুর, সিরকা, পনির ইত্যাদি খাবার তিনি আগ্রহভরে খেয়েছেন। শ্রেষ্ঠ খাদ্য হিসেবে দুধের উল্লেখই বেশি পাওয়া যায়, যা একই সাথে খাদ্য এবং পানীয়। প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য গ্রহনের তরিকা সম্পর্কে যেসব আদর্শ রেখে গিয়েছেন তন্মধ্যে মৌলিক কিছু প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে। হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 'তোমরা ততক্ষণ খাদ্যগ্রহণ করবে না, যতক্ষণ না তোমরা ভালোরকম ক্ষুধিত হও। যখন খানা খাবে তখন পেটকে তিনভাগে বিভক্ত করে নিও। একটি অংশ খাদ্যের, একটি পানীয়ের, অপর একটি শূন্য রেখো আল্লাহর জিকিরের জন্য, স্বাচ্ছন্দে শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য। খেতে বসলে কিছুটা বাকি থাকতেই উঠে পড়। একজনের খানা দু’জনের জন্য যথেষ্ট। দু’জনেরটা যথেষ্ট তিনজনের জন্য' - হাদিসে বর্ণিত এসব গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা মেনে চললে একজন মানুষ সাধারণত: খাদ্যজনিত কোনো রোগব্যাধির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

প্রশ্ন তিন: কোনো মুসলমান অন্য ধর্মের লোককে সালাম দিতে পারবে কি? যদি পারে, তাহলে তার নিয়ম কি?

উত্তর : একজন মুসলমানের জন্য আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ থেকে রহমত, বরকতপূর্ণ সালাম দেওয়ার যে বিধান ইসলামে রয়েছে, তা কেবল মুসলমানদের জন্যই। অমুসলিমকে সালাম দেওয়া যাবে, তবে তা ইসলামের সালাম নয়, সামাজিক ও মানবিক সালাম। এটি প্রচলিত নির্দোষ যে কোনো পন্থায় হতে পারে। বলা হয়, শান্তিপূর্ণ অবস্থায় অমুসলিমদের জন্য সালাম এরকম ‘আসসালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা’। অর্থাৎ, আল্লাহর দেখানো পথ গ্রহণকারী এ সালামের উপযুক্ত। কোনো অমুসলিম সম্ভাষন জানালে তার প্রতিউত্তর, গোনাহ হয় না এমন যে কোনো উপায়ে দেওয়া চলে। অমুসলিম যদি মুসলমানের মতো সালাম উচ্চারণ করে, তাহলে প্রতিউত্তরে সমভাবে সালামের জবাব দেওয়া যায়। তবে তাদের সাথে সালাম বিনিময়ের সময় হেদায়াতের শর্ত ও দুআ অবশ্যই মনে মনে পোষণ করতে হবে।

প্রশ্ন চার: অনেকেই মৃত ব্যক্তির জন্য চল্লিশা/কুলখানি করতে নিষেধ করেন, অবৈধ, বিদআত বলে থাকেন। তাহলে মৃত ব্যক্তিদের রূহে সওয়াব পৌঁছানোর উপায় কি?

উত্তর: মৃত ব্যক্তির রূহে সওয়াব পৌঁছানোর সবচেয়ে উত্তম উপায় তার জন্য দুআ করা। সর্বোত্তম দুআ, 'হে আল্লাহ আপনি আমাকে, আমার বাবা-মা ও সকল ঈমানদার নারী পুরুষকে ক্ষমা করে দিন।'

কেবল পিতা-মাতার জন্য বলতে হয়, 'হে আল্লাহ আমার বাবা-মাকে রহম করুন, যেমন তারা আমাকে ছোটবেলা লালন করেছিলেন।'

এছাড়া যতরকম নফল ইবাদত আছে যেমন, কুরআন পড়া, নফল নামাজ-রোজা, দুআ-দরুদ, দান-খয়রাত ইত্যাদি করে তাদের রূহে সওয়াব পৌঁছানোর জন্য আল্লাহ তাআ'লার কাছে দুআ করা যায়। এজন্য তিন দিন, চল্লিশ দিন বা বছর শেষে মৃত্যুর দিন ধার্য করে আমল করা জরুরী নয়। বরং এভাবে না করাই উত্তম। সওয়াব পৌঁছানোর এ প্রক্রিয়া বছরের প্রতিটি দিন নিজের অভ্যাসে পরিণত করে নেওয়াই সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের কর্তব্য। যারা নিষেধ করেন, বিদআত বলেন, তারা মূলত: আনুষ্ঠানিকতাকে নিষেধ করেন, সওয়াব পৌঁছানোকে নয়। ইসলামে বিষয়টি এমনই।

প্রশ্ন পাঁচ: অনেকেরই এই বিষয়ে জানার ইচ্ছে যে, নানার আগে মা ইন্তেকাল করলে নাতি/ নাতনী মায়ের ওয়ারিশ পাবে কি না।

উত্তর : এটির উত্তর হচ্ছে, পাবে না। মা না থাকায় অর্থাৎ মা নিজে ওয়ারিশ না হওয়ায় নাতি/নাতনী নানার সম্পত্তি পাবে না। পাওয়ার একটিই উপায় রয়েছে, যদি মায়ের মৃত্যুর পর নানা তাদের নামে ওসিয়ত করে যান। ক্ষেত্রবিশেষে এমন ওসিয়ত করা শরীয়তে বাতলে দেয়া আছে। ওসিয়ত না করলে তারা হকদার হবে না।

সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের প্রতিটি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জনের তাওফিক দান করুন এবং কেবল সহি আমলগুলো সঠিক পদ্ধতিতে করার শক্তি দান করে ধন্য করুন।

ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৪
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×