somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

সিজদাবস্থায় পরপারে যাত্রা ; ঈর্ষণীয় এমন মৃত্যু কে না চায়!......

২৭ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

সিজদাবস্থায় পরপারে যাত্রা ; ঈর্ষণীয় এমন মৃত্যু কে না চায়!......

মৃত্যু অমোঘ। জন্মিলে মরিতে হইবে, কে কোথায় অমর কবে! অমর কেউই নন। আমরাও নই। যেতে হবে। একে একে সকলকেই যেতে হবে। কিন্তু এই যাওয়ার ধরণটা সবার একইরকম হয় না। মহাসৌভাগ্যবান কারও কারও এমনও মৃত্যু নসিব হয় যা হয়ে থাকে ব্যতিক্রমী এবং ঈর্ষণীয় বটে। এমনই দু’টি ঈর্ষণীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সদ্য বিগত এবছরের পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন। সংবাদে আমরা জেনেছি যে, নামাজে সিজদারত অবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার দু’জন মাহবূব বান্দার ইনতিকাল হয়েছে। একজন হলেন, চট্টগ্রামের সুপ্রাচীন ও সুপ্রসিদ্ধ জিরি মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ তৈয়ব রহ. এবং দ্বিতীয় জন হলেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের শেলাচাপরি গ্রামের বাসিন্দা এবং শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র প্রভাষক মাওলানা আইয়ুব আলী রহ.।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাওলানা আইয়ুব আলী রহ. এর পৈত্রিক নিবাস সাথিয়া উপজেলার চিনানারী গ্রাম। কিন্তু তিনি বসবাস করতেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রূপবাটি ইউনিয়নের শেলাচাপরি গ্রামে এবং শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তার বাবার নাম মৃত দেরাজ আলী মুন্সী।

আর অন্যজন অর্থাৎ, আল্লামা শাহ তৈয়ব রহ. রমজান মাসের শেষ দশকে ইতেকাফ শেষে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঈদের আগের দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ শরীর নিয়েই ঈদের দিনের আগের তাৎপর্যপূর্ণ রাতের নফল নামাজ পড়ছিলেন তিনি। সেখানে নামাজের ভেতরে এক সময় সিজদারত অবস্থায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাকে কবুল করে নেন তাকে।

সিজদায় নৈকট্যলাভ হয় মহান মালিকেরঃ

মূলতঃ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু মুহূর্তের সমষ্টিই আমাদের জীবন। আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু মুহূর্তের সমন্বয়েই আমাদের প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত। নানান কাজে, নানাবিদ কাজে পেরিয়ে যায় আমাদের দিবসযামীর ক্ষণগুলো, মুহূর্তগুলো। তবে আমাদের দিন-রাতের সময়গুলো যত রকম অবস্থার ভেতর দিয়ে অতিবাহিত হয়, এসবের মধ্যে সিজদা হচ্ছে সর্বোত্তম অবস্থা। হাদিস শরিফে এসেছে-

عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: أقرب ما يكون العبد من ربه و هو ساجد فأكثروا الدعاء

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- 'বান্দা তার রবের সর্বাধিক নিকটবর্তী হয় যখন সে সিজদারত থাকে। সুতরাং, তোমরা (সিজদারত অবস্থায়) অধিক হারে দুআ কর, (কারণ, এই সময়ের দুআ কবুলের অধিক আশা করা যায়)।' -সহিহ মুসলিম: ৪৮২।

পবিত্র কুরআনুল হাকিমের সর্বপ্রথম নাযিলকৃত সূরার সর্বশেষ দু'টি আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,

وَاسْجُدْ وَاقْتَرِبْ

‘সিজদা করুন এবং কাছে আসুন।’ -সূরা আলাক : ১৯

আয়াতের মর্ম চিন্তা করলেই সিজদার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।

এমন কল্যানের মৃত্যু কার না প্রত্যাশা!

আমাদের কার মৃত্যু কখন হবে, কোন অবস্থায় হবে, কোথায় হবে- আমরা কেউই তা জানি না। সবাই তো আমরা বাঁচতে চাই। বেশি দিন বাঁচতে চাই। দীর্ঘ হায়াত কামনা করি। সুন্দর এ পৃথিবীর মায়ায় জড়িয়ে থাকতে চাই। যেতে চাই না পরপারের অদেখা ভূবনে। কিন্তু সবার এ কামনা পূরণ হয় না। কারো হয়, কারো হয় না। প্রত্যেকের মৃত্যুর সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নিকট নির্ধারিত। সুনির্ধারিত। নির্ধারিত-সুনির্ধারিত সেই সময়েই মৃত্যুর ফেরেশতা এসে হাজির হন। মৃত্যু আসন্ন লোকটি তখন কোন অবস্থায় আছেন তা দেখা হয় না। দেখার সুযোগ নেই। সিস্টেম নেই। পথ ও পদ্ধতি নেই। ভালো অবস্থায় থাকলে তার জন্য সৌভাগ্য যে, তার জীবনের শেষ সময়টায় বিদায়লগ্নটা একটি ভালো আমলে অতিবাহিত হয়েছে। আর মন্দ অবস্থায় থাকলেও কোনো কিছু করার অবকাশ থাকে না, ভালো অবস্থায় ফিরে আসার জন্য মূহুর্তকাল সময়ও দেয়া হয় না। আমাদের চব্বিশ ঘন্টা সময় আবর্তিত হয় ভালো-মন্দ নানা অবস্থায়। যদি কারো কাছে মৃত্যুর ফিরিশতার সাক্ষত হয় এমনই একটি অবস্থায় যে, তিনি তখন সিজদারত, তাহলে সেটি কত বড়ই না সৌভাগ্যের বিষয়! এমন মৃত্যু কে না চায়! এমন কল্যানের মৃত্যু কার না প্রত্যাশা!

উত্তম মৃত্যুর জন্য আমাদের যেসব আমল করা জরুরিঃ

সংক্ষিপ্ত পরিসরে এখানে আমরা জানার চেষ্টা করবো একটি ভালো মৃত্যু, উত্তম মৃত্যুর জন্য আমরা কী কী আমল করতে পারি। এক হাদিসে এসেছে-

عن علي رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من سره أن يمد له في عمره، و يوسع له في رزقه، و يدفع عنه ميتة السوء فليتق الله و ليصل رحمه.

হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: 'যাকে একথা আনন্দিত করে যে, তার হায়াত দীর্ঘ করা হবে, তার রিযিকে প্রশস্ততা দান করা হবে এবং মন্দ অবস্থার মৃত্যু থেকে তাকে হেফাজত করা হবে সে যেন আল্লাহ তাআ'লাকে ভয় করে (অর্থাৎ, গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে) এবং আত্মীয়তার হক আদায় করে।' -মুসনাদে আহমাদ: ১২১৩

আরেক হাদিসে এসেছে-

عن أنس بن مالك قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إن الصدقة لتطفئ غضب الرب، وتدفع ميتة السوء.

হযরত আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: 'নিশ্চয় সদকা রবের ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং মন্দ অবস্থার মৃত্যুকে রোধ করে।' -জামে তিরমিযি: ৬৬৪

মন্দ অবস্থার মৃত্যুর ব্যাখ্যা:

ميتة: وهي الحالة التى يكون عليها الإنسان في الموت. قال العراقى: الظاهر أن المراد بها ما استعاذ منه النبي صلى الله عليه وسلم الهدم و التردى و الغرق و الحرق و يتخبطه الشيطان عند الموت و أن يقتل في سبيل الله مدبرا. وقال بعضهم هي موت الفجاءة، و قيل ميتة الشهرة كالمصلوب مثلا. انتهى. تحفة الأحوذي.

অর্থাৎ, মন্দ অবস্থার মৃত্যু বলে উদ্দেশ্য হচ্ছে যেসব মৃত্যু থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় চেয়েছেন। দেয়াল ধ্বসে, উঁচু স্থান থেকে পতিত হয়ে, পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে, মৃত্যুকালে শয়তান দ্বারা বিপথগামী হয়ে ও জেহাদের ময়দান থেকে পলায়নরত অবস্থায় মারা যাওয়া। কেউ কেউ বলছেন এর দ্বারা উদ্দেশ্য আকষ্মিক মৃত্যু। আবার কেউ বলছেন, প্রকাশ্যে জনসম্মুখে সাজার মৃত্যু। (তিরমিযির উল্লেখিত হাদিসটির ব্যাখ্যায় তুহফাতুল আহওয়াযি)

কোন কবিরা গোনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া হচ্ছে মুমিনের সবচেয়ে জঘন্য মৃত্যু। যেমন ডাকাতি করতে গিয়ে বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কেউ মারা গেলো।

উপরের হাদিস দু’টোতে মন্দ অবস্থার মৃত্যু থেকে বাঁচতে মোট তিনটি আমলের কথা বলা হয়েছে। যথা-

১. তাকওয়া অবলম্বন করা। আল্লাহকে ভয় করে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। কখনো গোনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা-ইস্তেগফার করে নেওয়া।
২. আত্মীয় স্বজনের হক আদায় করা।
৩. দান-সদকা করা।

সিজদা বান্দার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত ও অবস্থাঃ

সিজদা বান্দার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত ও অবস্থা। সিজদায় রয়েছে মহাপরাক্রমশালী দয়ালু আল্লাহ তাআ'লার প্রতি বিনীত হওয়ার আনন্দ। আছে পরম করুণাময় দয়াময় আল্লাহ তাআ'লার আনুগত্যের সৌন্দর্য্য। সিজদার মুহূর্তগুলো এমন বরকতময় ও মহত্ত্বপূর্ণ, যার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। সিজদায় রয়েছে অনির্বচনীয় স্বাদ ও তৃপ্তি। তাতে আছে এমন এক প্রফুল্লতা যা কোনো কলম ও কালির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়, যা সিজদাকারীকে জমিনের সংকীর্ণ গন্ডি থেকে আসমানের প্রশস্ত পরিসরের সুউচ্চতায় নিয়ে যায়। সসীম পৃথিবীতে অবস্থান করেই অসীমের সন্ধানে ব্যাপৃত হয় সিজদাকারী ব্যক্তি।

হাদিসে বর্ণিত আমলগুলোর প্রতি আমরা যতবেশি যত্নবান থাকবো ততবেশি ভালো মৃত্যুর আশা করতে পারবো। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের উত্তম মৃত্যু নসিব করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:২১
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×