somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

করোনাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি

১০ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি: অন্তর্জাল।

করোনাকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবনীয় একটি ভিটামিন যা শরীরের ক্যালসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন ডি শরীরে অস্থির কাঠামো তৈরি এবং ঘনত্ব বৃদ্ধিতে প্রভূত ভূমিকা রাখে। নাম শুনে ভিটামিন মনে হলেও ভিটামিন ডি আসলে একটি স্টেরয়েড হরমোন। অন্যান্য ভিটামিন যেখানে এন্টি অক্সিডেন্ট বা কো-এনজাইম হিসাবে কাজ করে, ভিটামিন ডি সেখানে (স্টেরয়েড হরমোন) জিন এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ দেহের প্রোটিন তৈরিতে নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকায় থাকে। প্রাণীজ ও উদ্ভিদজাত স্টেরল ও ফাইটোস্টেরল হতে সূর্যালোকের অতি বেগুনী রশ্মি দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হয়।

ভিটামিন ডি-২ ও ভিটামিন ডি-৩ মানব দেহে থাকে।

বড়দের যেমন ভিটামিন খুবই দরকার, শিশু-কিশোরদের শরীরেও তেমনি পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি তাদের শরীরের গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সুস্বাস্থের অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠার জন্যে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।

বিশেষত বাড়ন্তকালে শিশুদের দৈহিক কাঠামো তৈরি করার অন্যতম কাঁচামাল ক্যালসিয়াম- যা শরীরের ভিটামিন ডি দ্বারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হয়। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, দৈহিক স্থুলতা সবকিছু ভিটামিন ডি-র সাথে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই কম বয়সী শিশু-কিশোরদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস ক্রমশ: বেশি মাত্রায় দেখা দেওয়ার পিছনে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি একটি বড় কারণ হয়ে থাকতে পারে।

ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে কিছু কিছু ক্যান্সার হবার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। এটা এখন নিশ্চিতভাবে জানা গিয়েছে যে, ভিটামিন ডি-র অভাব থাকলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ঘাটতির সাথে তাল মিলিয়ে কমতে থাকে।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ভিটামিন ডি-র ভুমিকাঃ

সারা বিশ্ব এখন কোভিড ১৯ (সারস-করোনা ভাইরাস-২ দ্বারা সংঘটিত রোগ) মহামারীতে জর্জরিত।

এপর্যন্ত প্রায় ৭২৩৭০৯৩ জন মানুষ এটি দিয়ে সংক্রমিত হয়েছে। আর মৃত্যুবরন করেছে ৪১১১৪৪ জন মানুষ (১০ জুন ২০২০ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী)।

মৃত্যু হারে সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র, তারপর ইটালী, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য রয়েছে (সুত্রঃ সি এস এস ই, জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়)।

বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এখানে একটি জিনিষ মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে যে, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত কম, তাদের কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ততোটাই বেশী; শুধু তাই নয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমওয়ালা কেউ এতে আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকিও তার বেশী। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দৈহিক স্থুলতা, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ থাকলেও রোগীর ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক অন্য আরেকটি গবেষণায় করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পেতে প্রতিদিন সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করার কথা বলা হয়েছে। ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি-সহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, এমন খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে সেই গবেষণায়।

এর সূত্র ধরে, ডায়াবেটিস রোগীতো বটেই, অন্যদেরকেও এ কোভিড ১৯ মহামারীকালে অন্যান্য উপকারী খাদ্য উপাদান গ্রহণে উদ্যোগী হবার সাথে সাথে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের দিকে নজর দিতে হবে (ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানের তালিকা যুক্ত করা হলো)। কিন্তু সচেতনতা এবং সঠিক জ্ঞান না থাকায় বাংলাদেশে প্রচুর সূর্যালোক থাকার পরও অধিকাংশ মানুষ ভিটামিন ডি-র ঘাটতিতে ভুগছেন এবং তাদের ভিটামিন ক্যাপ্সুল সেবেনের পরামর্শ দিতে হচ্ছে।

ভিটামিন ডি-র উৎস:

উৎস সূর্যরশ্মি পরিমাণ শরীরের ভিটামিন ডি-র চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি ত্বকে সূর্যরশ্মি পতিত হওয়ার কারণে তৈরি হয়।

খাদ্য উপাদান থেকে:

স্যামন ফিশ তাজা (সামুদ্রিক) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ৬০০-১০০০

তাজা (চাষের) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ১০০-২৫০

সার্ডিন (কৌটাজাত) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ৩০০

টুনা (কৌটাজাত) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ২৩৬

ম্যাকারেল (কৌটাজাত) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ২৫০

মাশরুম (তাজা) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট)১০০

কৌটাজাত পরিমাণ ৩.৫ আউন্স আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ১৬০০

ডিম (সিদ্ধ) পরিমাণ ৩.৫ আউন্স ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ২০

টক দই পরিমাণ ১৭৫ গ্রাম ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ৫৮-৭১

গরুর কলিজা (রান্না করা) পরিমাণ ৭৫ গ্রাম ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি (ওট) ৩৬
৪০ (ওট) ভিটামিন ডি-র কার্যকারিতা ১ মাইক্রোগ্রাম সমতুল্য।

সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি পেতে হলেঃ

সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি পেতে হলে মার্চ থেকে অক্টোবর মাসের (অন্যান্য মাসগুলোতে আরো বেশি সময় ধরে) প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট রোদ পোহাতে হবে যখন শরীরের ১৮ শতাংশের বেশি অংশে রোদ লাগবে।

১-৭০ বছর বয়সি মানুষের গড়ে প্রতিদিন ৬০০ ওট এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সিদের ৮০০ ওট ভিটামিন ডি গ্রহণ করা দরকার।

ভিটামিন ডি ওষুধ হিসাবে খেতে হবে কাদের:

১। নবজাতক যারা শুধুই মায়ের দুগ্ধ পান করছে ও যারা ১০০০ মিলিলিটারের কম শিশু খাদ্য গ্রহণ করে।
২। শিশু-কিশোর যারা অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা নগরে বা অস্বাস্থ্যকর শহরে (ঢাকা অন্যতম) বসবাস করছে।
৩। দৈহিক স্থুল শিশু-কিশোর যাদের ত্বেেকর বিভিন্ন অংশে মখমলের মতো কালো অংশ দেখা দিচ্ছে।
৪। ধর্মীয় বা অন্য কারণে পোশাকে প্রায় সারাদেহ আবৃত শিশু-কিশোর।
৫। খাদ্য নালীর সমস্যার কারণে হজম ও বিপাকীয় কার্যক্রম হ্রাস পেলে।
৬। প্রাতিষ্ঠানিক জীবন যাপন (হেস্টেল, হাসপাতাল বা অফিস) যাতে রোদে যাবার সুযোগ কমে যায়।
৭। এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, এমন হলে।

ভিটামিন ডি-র ঘাটতি খুব বেশি হলে ৪০ হাজার ওট সপ্তাহে এবং পরবর্তীতে মাসে একটি করে ভিটামিন ডি ক্যাপসুল খেয়ে যেতে হবে। ঘাটতি কম হলে ২০ হাজার ওট ক্যাপসুল যথেষ্ট হতে পারে।

ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকলে তো বটেই, অন্য ক্ষেত্রেও, সকলকে সূর্যালোকে যেতে হবে নিয়মিত। দূর্ভাগ্যবশত: বাংলাদেশে প্রচলিত খাদ্যসমূহে ভিটামিন ডি-র উপস্থিতি খুবই কম, তারপরও যেসব খাদ্যে ভিটামিন ডি-র কিছু পরিমাণে উপস্থিতি আছে (উপরের তালিকা ভুক্ত) তা যতটা সম্ভব নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

সঠিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতাই ভিটামিন ডি -এর অভাব দূর করতে পারে। আসুন, সুস্থ জাতি গঠনে এগিয়ে আসি সকলেই।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৪৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×