somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

প্রতি দিনের পুষ্টি পূরণে দেশি ফলঃ

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুষ্টিতে ভরপুর দেশি ফল আনারস। ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

প্রতি দিনের পুষ্টি পূরণে দেশি ফলঃ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না। তিনি নানাবিধ ফুল ফলকে আমাদের জীবনযাপনের উপকারণ বানিয়েছেন। এগুলোকে দিয়ে পৃথিবীর সৌন্দর্য্য ও শোভা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমাদের ভোগ ও উপভোগের বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। বস্তুতঃ মোহনীয় কমনীয় অপরূপ রূপ সুধায় ভরপুর এই পৃথিবী এত সুন্দর হতো না যদি আল্লাহ তাআ'লা একে ফল ফসলে এমন করে না সাজাতেন। কত বিচিত্র্য ফুলের সমাহার! কত মনোহরি চিত্ত বিনোদিত ফলের ছড়াছড়ি! ফলফলাদি মূলতঃ আল্লাহ তাআলার অপূর্ব ও মহান এক নিয়ামত। একেক দেশে, একেক জনপদে রয়েছে একেক ফলের সমাহার। কোনো ফল মরুভূমিতে ভালো জন্মে। আবার কোনো কোনো ফল শীত প্রধান এলাকায় বেশ ফলে। কোনো ফল আবার আমাদের মত নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় ভালো জন্মে। এগুলোই আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিবৈচিত্র্য। এসব ভাবলেই মন ভালো হয়ে যায়। শ্রদ্ধায় মস্তক অবনত হয়ে আসে মহান স্রষ্টার সামনে।

আজ আমাদের দেশের ফলফলাদি নিয়ে কিছু কথা বলার ইচ্ছে। আমাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির উৎসগুলো কি কি হওয়া উচিত? দেশী ফলফলাদিতে কতটুকু পুষ্টি রয়েছে এবং তা দৈনন্দিন পুষ্টি যোগানে কতটুকু সক্ষম- ইত্যাদি বিষয়ই মূলতঃ আলোচ্য। আসলে আমাদের অনেকের আবার নাক সিটকানোর একটা পুরনো রোগ আছে। দেশী কোনো জিনিষে আমাদের বিশ্বাস নেই-

দেশি ফল খেলে কি হবে? এতে কি আছে? কিছু আছে কি? কিছু থাকে কি? ভিটামিন টিটামিন সব তো বিদেশী ফলে। খেতে তো হবে ওগুলোই।

-এই জাতীয় উদ্ভট বিশ্বাস ও বিদঘুটে চিন্তাধারার মানুষে ভরপুর আমাদের সমাজ। যাবেন কোথায়? এদের নিয়ে পড়েছি মহাবিপদে। দেশি সুস্বাদু নির্ভেজাল ফরমালিনমুক্ত পেয়ারা কিংবা আমড়া তারা ছোবে না, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা সুপারি সাইজের
বাসী সপ্তাহ কয়েকের পুরনো আপেলে আয়েশি ভঙ্গিতে কামড় দিয়ে যে হাসির ভাবটা নেয় তা দেখলে প্যাচার মুখেও হাসি ফুটে ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না! কোথায় যাব, দুঃখ রাখার জায়গা নেই!

যাক, তাদের কথা বলে আফসোস করে লাভ নেই। তাদের টাকা আছে, তাই তারা তা উড়াবেন। দেশী জিনিষ তারা খাবেন না, ছোবেন না, কে তাদের জোর করতে যাবে! কিন্তু ইদানিংকালের সোগ্লান যদিও বলে ভিন্ন কথা! তা হচ্ছে-

দেশি ফলে বেশি পুষ্টি,
অল্প খাদ্যে পাই তুষ্টি।

আসলেও তাই। দেশি ফল পুষ্টিতে ভরপুর। বর্তমানে ফল অর্থকরী ফসল। ফল গাছ কাঠ দেয়, ছায়া দেয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফলের রয়েছে ভেষজ বা ঔষধি গুণ। নিয়মিত ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ, সবল ও নিরোগ জীবন লাভ করা সম্ভব হয়। খনার বচন বলে পুরনো দিনের চমৎকার কিছু নীতিবাক্য আমাদের সমাজের মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আজও। সেখানে রয়েছে,

বারো মাসে বারো ফল,
না খেলে যায় রসাতল।

তাই আমাদেরও শ্লোগান হওয়া উচিত,

সুস্থ সবল জীবন চান,
হরহামেশা ফল খান।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক পুষ্টিহীনতার শিকার। এখানকার প্রায় ৮৮ ভাগ লোক ভিটামিন-এ, ৯০ ভাগ লোক ভিটামিন-সি, ৯৩ ভাগ লোক ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে বিভিন্ন প্রকার রোগে ভুগে থাকেন। এ ছাড়া প্রায় ৭০ ভাগ পুরুষ, ৭৩ ভাগ শিশু ও ৭৫ ভাগ মহিলা রক্তাল্পতাজনিত বিবিধ রোগে ভোগেন। আমাদের মারাত্মক এ পুষ্টি ঘাটতি পূরণে এবং রোগ প্রতিরোধে দেশী বিভিন্ন প্রজাতির ফলফলাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু আমাদের একটু সচেতনতা।

পুষ্টিবিদদের মতে, সুস্থ সবল দেহের জন্য দৈনিক জনপ্রতি ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া দরকার। তা জোগান দেয়া সম্ভব না হলে কমপক্ষে ৬০ গ্রাম ফল খাওয়া বাঞ্ছনীয়।

টিপে টিপে এ ফল খেতে হয় বলে এর এমন নাম। তবে না টিপেও খাওয়া যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে এর স্বাদ টক এবং কষ্টি। টেপার পর ভিতরে নরম ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়ে যায়। আচার ও ভর্তা করে এ ফল খাওয়া যায়। টিপা ফলের প্রায় ৬০ ভাগে রয়েছে আয়রন। এ ছাড়াও রয়েছে সালফার, ফসফেট, ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।এ গাছের ছালে রয়েছে ঔষধি গুন। গ্রামাঞ্চলে দাঁত ব্যথা উপসমে এ গাছের শিকড় ব্যবহৃত হয়। পাকা ফল হজমশক্তি ও মুখের স্বাদ বৃদ্ধি করে, লিভারের ক্যান্সার দমন করতে সহায়তা করে। হৃদরোগ ও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য দারুন উপকারী এ টিপা ফল।

টিপা ফল, দারুন স্বাদের একটি দেশি ফল।

পুষ্টির চাহিদা পূরণে দেশি ফলই যথেষ্টঃ

দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণে দেশি ফলই যথেষ্ট, বিদেশি ফলের প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা চাহিদার তুলনায় দেশি ফলের জোগান কম। অন্যদিকে দেশি ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মানুষের জানারও ঘাটতি রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কারিগরি সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট দুই বছর ধরে দেশের ৭৫টি শস্য ও শাকসবজি, ফলমূলের পুষ্টিমান যাচাই করে এ কথা বলেছে।

আসুন, বয়স অনুপাতে দৈনিক খাদ্য তালিকায় ফলের চাহিদার পরিমাণ দেখে নিই-

বয়স অনুপাতে দৈনিক খাদ্য তালিকায় ফলের চাহিদাঃ

বয়স ফলের পরিমাণ (মাথাপিছু গ্রহণ হার)
শিশু ৩০ গ্রাম
কিশোর (১৩-১৯ বছর) ৬০ গ্রাম
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ৬০ গ্রাম
গর্ভবতী মহিলা ৯০ গ্রাম

সূত্র : পুষ্টি প্রশিক্ষণ সহায়িকা, জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

পেয়ারা, পুষ্টিগুণে ভরপুর দেশি ফল।

দেশি ফলে বেশি বলঃ

আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে বাহারি ফল জন্মে। এসব দেশি ফল বিদেশি ফলের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। শুধু স্বাদে বা গন্ধেই নয়; পুষ্টি মানের বিচারেও দেশি ফল উৎকৃষ্ট। আজকাল অনেকে দেশি ফলের নাম শুনলে নাক ছিটকান। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাচ্চাদেরকে নামি-দামি বিদেশি ফল, যেমন- আপেল, আঙুর, মাল্টা ইত্যাদি খাওয়ান। অথচ সঠিক কথা হচ্ছে, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এসব বাসী ফলের চেয়ে দেশি তাজা ফলফলাদিতে পুষ্টি উপাদান বেশি।

উদাহরণস্বরূপ, বিদেশি ফল আপেলে ভিটামিন-সি আছে খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্র ৩.৫ মিলিগ্রাম। অপরদিকে বাংলার আপেল বলে খ্যাত পেয়ারায় ভিটামিন-সি আছে ২১০ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ, আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও, সত্যিটা হচ্ছে, পেয়ারায় আপেলের চেয়ে ৫০ গুণেরও বেশি ভিটামিন-সি আছে।

আবার, আঙুরে খাদ্যশক্তি আছে ১৭ কিলোক্যালরি আর দেশি ফল বড়ই বা কুলে খাদ্যশক্তি আছে ১০৪ কিলোক্যালরি যা আঙুরের ৬ গুণেরও বেশি। আঙুরে ভিটামিন সি আছে ২৮.৫ মিলিগ্রাম, বড়ই বা কুলে ভিটামিন সি আছে ৫১ মিলিগ্রাম অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ।

আবার দেখুন, পাকা আমে ক্যারোটিন আছে ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম, পেঁপের মধ্যে আছে ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম, কাঁঠালে আছে ৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম (ফল পরিচিতি ও চাষাবাদ কৌশল, কৃতসা)। সে তুলনায় আঙুর, আপেল, নাশপাতি, বেদানায় ক্যারোটিন আদৌ নেই। বিদেশি ফল মাল্টা ক্যারোটিন শূন্য অথচ দেশি কমলায় ক্যারোটিনের পরিমাণ ৩৬২ মাইক্রোগ্রাম (কৃষি কথা, আষাঢ় ১৪২১)। সুতরাং-

আর নয় বিদেশি ফল
খাবো কেবল দেশি ফল।

ডেউয়া, আমাদের ঐতিহ্যবাহী পুষ্টিকর গ্রামীন ফল।

অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধে দেশি ফলঃ

আগেই বলেছি, দেশি ফল অপুষ্টিজনিত সমস্যা ও রোগ প্রতিরোধে দারুন কার্যকর। একটু বিস্তারিত আলোচনায় গেলেই বিষয়টি অনুধাবন করা সহজ হবে বলে মনে করি।

অন্ধত্ব এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধে দেশি ফলঃ

আমরা জানি, ভিটামিন-এ’র অভাবে শিশুদের রাতকানা, অন্ধত্ব রোগ দেখা দেয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ হাজার শিশু অন্ধত্ব বরণ করে এবং রাতকানা রোগে ভোগে প্রায় পাঁচ লাখ শিশু। এ সমস্যা প্রতিরোধে ক্যারোটিন সমৃদ্ধ হলদে বা লালচে রঙিন ফল যেমন- পাকা আম, পাকা পেঁপে, পাকা কাঁঠাল দারুন কাজে দেয়। এসব ফলে থাকা এ ক্যারোটিন প্রায় ৬ ভাগের এক ভাগ ভিটামিন-এ তে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের শরীরে কাজে লাগে। এসব ফল অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। তাই শিশুসহ সব বয়সী লোকদের উচিত দৈনিক বেশি করে ফল খাওয়ার অভ্যাস করা।

ত্বক ও দাঁতের সুরক্ষাসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন সি যুক্ত দেশি ফলঃ

ভিটামিন-সি ত্বককে মসৃণ করে, দাঁতের মাঢ়িকে মজবুত করে ও সর্দি কাশি থেকে রক্ষা করে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন-সি রান্নার তাপে প্রায় ৮০% নষ্ট হয়ে যায়। ফল সরাসরি খাওয়া হয় বলে ভিটামিন-সি নষ্ট হয় না। ফল বিশেষ করে টক জাতীয় ফল ভিটামিন-সি’র রাজা। আমলকী ও অরবরই ভিটামিন-সি’র গুদাম ঘর। ভিটামিন-সি দৈনিক খেতে হয়। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকীতে ভিটামিন-সি থাকে ৪৬৩ মিলিগ্রাম আর অরবরইয়ে আছে ৪৬৩ মিলিগ্রাম। লেবুতে ৪৭ মাইক্রোগ্রাম, কমলা লেবুতে ৪০ মাইক্রোগ্রাম, বাতাবি লেবুতে ১০৫ মাইক্রোগ্রাম, আমড়ায় ৯২ মাইক্রোগ্রাম, কামরাঙায়-৬১ মাইক্রোগ্রাম, জামে ৬০ মাইক্রোগ্রাম, জলপাইয়ে ৩৯ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-সি বিদ্যমান। ভাতের সঙ্গে একটু লেবুর রসেই ভিটামিন-সি’র চাহিদা পূরণ হতে পারে। অন্যগুলো সামান্য একটু খেলেই দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ হবে।

কালো জাম, খেঁজুর, কাঁচকলা, পাকা তেঁতুল, তরমুজ লৌহ ঘাটতি পূরণে সহায়কঃ

লৌহ ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতার কারণে শিশু, কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, জ্ঞান বিকাশ কমে যায়। গর্ভকালীন রক্ত স্বল্পতার কারণে প্রসব-উত্তর রক্তক্ষরণের সময় মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে ফলের অবদান যথেষ্ট। বিশেষ করে কালো জাম, খেঁজুর, কাঁচকলা, পাকা তেঁতুল, তরমুজ লৌহ ঘাটতি পূরণে সহায়ক। ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় ডাবের বিশুদ্ধ পানি খুবই উপকারী। এতে আছে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাসের মতো পুষ্টিকর উপাদান। ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমির ফলে দেহে যে পানির অভাব হয় সে ক্ষেত্রে গ্লুকোজ স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ডাবের পানি অতুলনীয়। দৈনিক ডাবের পানি ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও হিতকর।

কাঁঠাল, লটকন, ডেউয়া, আতা, শরীফা ও অন্যান্য ফলে রয়েছে ভিটামিন-বি২ঃ

ভিটামিন-বি২ এর অভাবে মুখের কোণে ও ঠোঁটে ঘা হয়, ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়। এছাড়া নাকের দুইপাশে চর্মরোগ হয়। এসবের অভাব পূরণে ফল চমৎকার কাজ করে। কাঁঠাল, লটকন, ডেউয়া, আতা, শরীফা ও অন্যান্য ফল ভিটামিন-বি২ এর অভাব পূরণে সহায়ক। এসব ফল বেশি বেশি খাওয়া দরকার।

দেশি ফল আমড়া, আপেলের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি ভিটামিন যে ফলে, বিশ্বাস হয়! বিশ্বাস না হলেও এটিই সত্য।

আমড়াতে ভিটামিন আপেলের চেয়ে ৩০ গুণঃ

সবসময় হাতের কাছে পাওয়া এমন একটি ফল হলো আমড়া। আমড়াতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। মুখে রুচি বৃদ্ধিসহ অসংখ্য গুনাগুন রয়েছে আমড়ার। একটু ঝাল-লবন মেখে হাঁটতে চলতে ফিরতে, কথা বলতে বলতে কিংবা কাজের ফাঁকে সহজেই খাওয়া যায় এই ফল।

হজমে সহায়ক আমড়াঃ হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আমড়া। তাই তেল ও চর্বিযুক্ত খাদ্য খাওয়ার পর আমড়া খেয়ে নিতে পারেন; হজমে সহায়ক হবে।

রোগ প্রতিষেধক হিসেবেঃ আমড়ায় প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় এটি খেলে স্কার্ভি রোগ এড়ানো যায়। বিভিন্ন প্রকার ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে আমড়া। যে কোন কারণে কারো মুখের স্বাদ হারিয়ে গেলে তা ফিরিয়ে দেয় আমড়া। সর্দি-কাশি-জ্বরের উপশমেও আমড়া অত্যন্ত উপকারী।

হাজারো ভেষজগুণ আমড়ারঃ শিশুর দৈহিক গঠনে ক্যালসিয়াম খুব দরকারি। ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস এই আমড়া। শিশুদের এই ফল খেতে উৎসাহিত করতে পারেন। এছাড়া এটি রক্তস্বল্পতাও দূর করে। কিছু ভেষজ গুণ আছে আমড়ায়। এটি পিত্তনাশক ও কফনাশক। আমড়া খেলে মুখে রুচি ফেরে, ক্ষুধা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। আমড়ার রয়েছে অজস্র ভেষজগুণ।

প্রচুর মিনারেলসঃ আমড়ায় থাকা ভিটামিন সি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। খাদ্যে থাকা ভিটামিন এ এবং ই এটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে দেহকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত থেকে রক্ষা করে। পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমড়ায় প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম আর আঁশ আছে, যেগুলো শরীরের জন্য খুব দরকারি। জেনে অবাক হবেন যে আমড়াতে রয়েছে আপেলের চাইতে প্রায় তিরিশ গুন ভিটামিন।

ত্বক ভাল রাখেঃ ত্বকের ব্রণ কমাতে, ত্বক উজ্জ্বল রাখতে আমড়া উপকারী। আমড়ার ভিটামিন ‘সি’ ত্বক উজ্জ্বল রাখতে অত্যন্ত দরকার। তাই ত্বক সুস্থ ও উজ্জ্বল রাখতে খেতে পারেন আমড়া।

প্রতি ১০০ গ্রাম আমড়ায় ১ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম শ্বেতসার, শূন্য দশমিক ১০ গ্রাম স্নেহ জাতীয় পদার্থ এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন আছে। এ ছাড়াও আছে শূন্য দশমিক ২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন, শূন্য দশিমক শূন্য চার মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং তিন দশমিক নয় মিলিগ্রাম লৌহ। আমড়ার খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালোরি। খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসের পরিমাণ শূন্য দশমিক ছয় গ্রাম। সূত্র: বোল্ড স্কাই

প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য আমড়ায় ১ দশমিক ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৫ গ্রাম শ্বেতসার, শূন্য দশমিক ১০ গ্রাম স্নেহ জাতীয় পদার্থ এবং ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন আছে। এ ছাড়াও আছে শূন্য দশমিক ২৮ মিলিগ্রাম থায়ামিন, শূন্য দশিমক শূন্য চার মিলিগ্রাম রিবোফ্লাভিন, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং তিন দশমিক নয় মিলিগ্রাম লৌহ। আমড়ার খাদ্যশক্তি ৬৬ কিলোক্যালোরি। খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসের পরিমাণ শূন্য দশমিক ছয় গ্রাম।

দেশি ফল কাঠাল। এতে প্রচুর শর্করা, আমিষ ও ক্যারোটিন রয়েছে।

দৈনন্দিন ফলপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতায় করণীয়ঃ

বাংলাদেশে প্রায় ১৩০ রকম ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার মধ্যে প্রায় ৭০ রকম প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলের ভাণ্ডার রয়েছে। এসব ফল সারা বছর সমান হারে পাওয়া যায় না। বৈশাখ থেকে শ্রাবণ-এ ৪ মাসে ৫৪% ফলের প্রাচুর্য দেখা যায়। বাকি ৮ মাসে পাওয়া যায় মাত্র ৪৬% ফল। আবার জ্যৈষ্ঠে অর্থাৎ মধুমাসে ১৪% ও আষাঢ় মাসে ১৭% ফল উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ মোট উৎপাদনের ৩১% ফল পাওয়া যায় এ দুইমাসে। তাই বছরের বেশিরভাগ সময়ই আমরা দেশি ফল খেতে পাই না।

লটকন, একটি ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ পুষ্টিগুণে ভরপুর দেশি ফল।

সারা বছর দেশি ফলপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিতকরণে আমরা নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে পারিঃ

১. ভর মৌসুমে আম, লিচু, পেয়ারা, আনারস পচে বিনষ্ট হয়। আমের জুস, আমসত্ত্ব, মোরব্বা, চাটনি তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। আনারস টিনজাত করে রাখা যায়। পেয়ারার জ্যাম, জেলি, আমড়ার জেলি, তালের জ্যাম, জামের স্কোয়াশ, কুল থেকে আচার, চাটনি, পেঁপের জুস তৈরি করে সংরক্ষণ করলে পরবর্তীতে অমৌসুমে খাওয়া যায়।
২. সারা বছর যাতে আম, লিচু, কাঁঠাল, কুল, আনারস ও অন্যান্য ফল পাওয়া যায় সেজন্য বারোমাসি জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা জোরদার করা দরকার।
৩. এরই মধ্যে বারোমাসি আমড়া, বারোমাসী কামরাঙার প্রচলন হয়েছে। এগুলোর চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা দরকার।
৪. কলা, পেঁপে, নারিকেল সারা বছরই জন্মে। তাই এগুলোর আবাদ ব্যাপক সম্প্রসারণ করা দরকার।
৫. আজকাল বসতবাড়িতেও বনজ গাছ দেখা যায়। বনজ গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। এগুলো ফলগাছের ওপর ছায়া বিস্তার করে যা ফল গাছের জন্য যম স্বরূপ। এতে ফলের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় গ্রাম বাংলার প্রতিটি বসতবাড়িতে শুধু ফল চাষ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাহলে ফল গাছ থেকে আমরা পাবো খাদ্য, পুষ্টি, অর্থ ও সুন্দর পরিবেশ। এভাবে গড়ে উঠুক সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। সূত্র ও সহযোগিতা নেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতাঃ কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।



সফেদা, সুস্বাদু দেশি ফল, যাতে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’।

পরিশেষে বলতে চাই, দেশি ফলের প্রতি অবজ্ঞা বা অবহেলা প্রদর্শন নয়, একটি হলেও ফলের গাছ লাগান। ফলে ফলে ভরে উঠুক আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। নিরোগ, সুস্থ ও সুন্দর জাতি গঠনে দেশি ফল হয়ে উঠুক অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪৭
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×