মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় কিছু আমলঃ
পবিত্র কুরআনুল কারিমের ভাষ্যানুযায়ী পৃথীবির প্রতিটি প্রাণি মৃত্যুবরণকারী। প্রত্যেকটি জীবকে সুনিশ্চিত মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরও মৃত্যুর স্বাদ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। তাই মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় কি তা জানা একান্ত জরুরী। কেননা, মৃত্যুর মাধ্যমেই মানুষের ইহজাগতিক সকল কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় আমলনামা। নেক আমল বদ আমল কোনোকিছুই আর করার ক্ষমতা থাকে না মৃত ব্যক্তির। কিন্তু মৃত ব্যক্তি কয়েকটি মাধ্যম থেকে আমলের সাওয়াব কিংবা পাপ অব্যাহতভাবে লাভ করতেই থাকেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ” .
আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের সাওয়াব মৃত্যুর পরেও বন্ধ হবে না। ১. সাদকায়ে জারিয়া, ২. ঐ ‘ইলম, যা দিয়ে উপকার করা যায় এবং ৩. ঐ নেক সন্তান, যে তার পিতার জন্য দু‘আ করে।
অর্থাৎ তার নিজের কোনো আমল আর চলতে থাকে না, আমলনামায় নতুন কোনো আমল যোগও হয় না কেবলমাত্র উপরোক্ত তিনটি ব্যতীত।
অতএব আমাদের উচিত, নিজ মৃত্যুর পূর্বে স্বীয় আপনজনদেরকে এ শিক্ষা দিয়ে যাওয়া যাতে তারা শরিয়াত বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরোধিতামূলক কোন কাজ না করে। বরং ধৈর্য্য ধারণ করে তাকদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকে এবং নিম্মের আমলগুলো করে যেতে থাকে-
১. ইন্না লিল্লাহি.. পড়া মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় এর প্রথম কাজঃ
ধৈর্য ধারণ করা ও ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলা। কোরআনে বর্ণিত রহিয়াছে যখন বিপদে পতিত হয়, তখন বল: ইন্না লিল্লাহি…
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে।
তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। সুরা বাকারা ২:১৫৫
কবরস্থ করার সুন্নত পদ্ধতি | এক কবরে কতজনকে দাপন?
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ
যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। সুরা বাকারা ২:১৫৬
২ তার জন্য দু‘আ করা ও তার সামনে উত্তম কথা বলাঃ
وَالَّذِينَ جَاؤُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ
আর এই সম্পদ তাদের জন্যে, যারা তাদের পরে আগমন করেছে। তারা বলেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে
এবং ঈমানে আগ্রহী আমাদের ভ্রাতাগণকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখো না।
হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি দয়ালু, পরম করুণাময়। সুরা হাশর ৫৯:১০
حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ حَيْوَةَ بْنِ شُرَيْحٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ – بِهَذَا الْحَدِيثِ – قَالَ إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى عَلَى قَتْلَى أُحُدٍ بَعْدَ ثَمَانِي سِنِينَ كَالْمُوَدِّعِ لِلْأَحْيَاءِ وَالْأَمْوَاتِ
ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) থেকে এ সনদেও একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আট বছর পর উহুদ যুদ্ধের শহীদদের জন্য জানাযা পড়েছেন জীবিত ও মৃতের দু‘আ করার অনুরূপ।
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ إِذَا مَاتَ الإنْسَانُ انْقَطَعَ عنه عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلَاثٍ صَدَقةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُرواه مسلم
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিস নয়
(১) সাদকা জারিয়াহ, (২) যে বিদ্যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায় অথবা (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।
৩ মৃত্যু সংবাদ দিয়ে মানুষকে এ কথা বলা যে, তোমরা মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করঃ
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ،. وَقَالَ غَيْرُهُ حَدَّثَنِي اللَّيْثُ حَدَّثَنِي عُقَيْلٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّهُ قَالَ لَمَّا مَاتَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُبَىٍّ ابْنُ سَلُولَ دُعِيَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيُصَلِّيَ عَلَيْهِ فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَثَبْتُ إِلَيْهِ، فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتُصَلِّي عَلَى ابْنِ أُبَىٍّ وَقَدْ قَالَ يَوْمَ كَذَا كَذَا وَكَذَا قَالَ أُعَدِّدُ عَلَيْهِ قَوْلَهُ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ ” أَخِّرْ عَنِّي يَا عُمَرُ ” فَلَمَّا أَكْثَرْتُ عَلَيْهِ قَالَ ” إِنِّي خُيِّرْتُ فَاخْتَرْتُ، لَوْ أَعْلَمُ أَنِّي إِنْ زِدْتُ عَلَى السَّبْعِينَ يُغْفَرْ لَهُ لَزِدْتُ عَلَيْهَا
قَالَ فَصَلَّى عَلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ انْصَرَفَ فَلَمْ يَمْكُثْ إِلاَّ يَسِيرًا حَتَّى نَزَلَتِ الآيَتَانِ مِنْ بَرَاءَةَ :وَلاَ تُصَلِّ عَلَى أَحَدٍ مِنْهُمْ مَاتَ أَبَدًا… إِلَى قَوْلِهِ ..وَهُمْ فَاسِقُونَ
হাদিসের অর্থঃ ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র (রহঃ) … উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আবদুল্লাহ ইবনু উবায় ইবনু সালুল মারা গেল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) পড়বার জন্য আহবান করা হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (জানাযার জন্য) উঠে দাঁড়ালে, আমি তাঁর কাছে গিয়ে আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি ইবনু উবায়ের জানাযার সালাত পড়াবেন? অথচ যে লোক অমুক দিন অমুক অমুক কথা বলেছে। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি তার কথাগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে এক একটি করে উল্লেখ করেছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বললেন, হে উমর, আমাকে যেতে দাও। আমি বারবার বলাতে তিনি বললেন, আল্লাহর আমাকে ইখতিয়ার দিয়েছেন। আমি তা গ্রহণ করেছি। আমি যদি বুঝতে পারি যে, সত্তরবারের চেয়েও অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করলে তাকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন, তবে আমি সত্তরবারের অধিক ক্ষমা প্রার্থনা করবো। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জানাযার সালাত আদায় করলেন এবং (জানাযা) থেকে প্রত্যাবর্তন করে আসার পরই সূরা বারাআতের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়, “তাদের কেউ মারা গেলে কখনো তার জানাযার সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করবে না। এরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি অবিশ্বাস করেছে। এবং পাপাচারী অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
৪ মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় এর একটি যথাশীঘ্র তার জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করাঃ
عن حُصَيْنِ بن وحْوَحٍ رضي الله عنه أَنْ طَلْحَةَ بنَ الْبُرَاءِ بن عازب رضِي اللهُ عنْهما مَرِض فَأتَاهُ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم يَعُودُهُ فَقَالَ إنّي لا أُرَى طَلْحةَ إلاَّ قدْ حَدَثَ فِيهِ المَوْتُ فَآذِنُوني بِهِ وَعَجِّلُوا بِهِ فَإنَّهُ لا يَنْبَغِي لجِيفَةِ مُسْلِمٍ أنْ تُحْبَسَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَهْلِهِ
হুসাইন ইবনু ওয়াহ্ওয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, ত্বালহা ইবনুল বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রোগগ্রস্ত হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। তিনি বললেনঃ ত্বালহার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে, তার বিষয়ে এছাড়া আমি আর কিছুই চিন্তা করি না। আমাকে তার মৃত্যুর খবর জানাবে। আর তার দাফন-কাফনের কাজ দ্রুত সমাধা করবে। কারণ, মুসলিমের লাশ তার পরিবারবর্গের নিকট আটকে রাখা উচিত নয়।
৫ মৃতের ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করাঃ
عَنْ أَبِـىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يُؤْتَى بِالرَّجُلِ الْمَيِّتِ عَلَيْهِ الدَّيْنُ فَيَسْأَلُ هَلْ تَرَكَ لِدَيْنِهِ مِنْ قَضَاءٍ فَإِنْ حُدِّثَ أَنَّهُ تَرَكَ وَفَاءً صَلَّى عَلَيْهِ وَإِلاَّ قَالَ صَلُّوا عَلٰى صَاحِبِكُمْ فَلَمَّا فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ الْفُتُوحَ قَالَ أَنَا أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ فَمَنْ تُوُفِّىَ وَعَلَيْهِ دَيْنٌ فَعَلَىَّ قَضَاؤُهُ وَمَنْ تَرَكَ مَالاً فَهُوَ لِوَرَثَتِهِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট জানাযা পড়ার জন্য যখন কোন ঋণগ্রস্ত মুর্দাকে হাযির করা হত, তখন তিনি জিজ্ঞাসা করতেন, ঋণ পরিশোধ করার মত কোন মাল ও ছেড়ে যাচ্ছে কি? সুতরাং উত্তরে যদি তাঁকে বলা হত যে, ‘হ্যাঁ, পরিশোধ করার মত মাল ছেড়ে যাচ্ছে’ তাহলে তিনি তার জানাযা পড়তেন। নচেৎ বলতেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়ে নাও। অতঃপর আল্লাহ যখন তাঁর জন্য বিভিন্ন বিজয় দান করলেন তখন তিনি বললেন, মুমিনদের জন্য তাদের নিজেদের চাইতে আমিই অধিক হকদার (দায়িত্বশীল।) সুতরাং যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা যাবে, তার ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার উপর এবং যে সম্পদ রেখে মারা যাবে, তার অধিকারী হবে তার ওয়ারেসীনরা।
৬ নিজ পিতা মাতার জন্য দোয়া করাও মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয়র তালিকায় পরেঃ
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:২৪
৭ মৃত ব্যক্তির দাফন শেষে ফেরার সময় কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মৃতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাঃ
حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى الرَّازِيُّ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بَحِيرٍ عَنْ هَانِئٍ، مَوْلَى عُثْمَانَ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتَّثْبِيتِ فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ، قَالَ أَبُو دَاوُدَ: بَحِيرٌ ابْنُ رَيْسَانَ
উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফন শেষ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ তোমাদের ভাইয়ের জন্য তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সে যেন প্রতিষ্ঠিত থাকে সেজন্য দু‘আ করো। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
৮ মৃত ব্যক্তির জন্য করণীয় এর গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হল মৃত ব্যক্তির নামে সাধারণ দান-সদকা করাঃ
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها أَنَّ رَجُلاً، قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسَهَا،
وَأُرَاهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ، أَفَأَتَصَدَّقُ عَنْهَا قَالَ “ نَعَمْ، تَصَدَّقْ عَنْهَا.
ইসমাঈল (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, একজন সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললেন, আমার মা হঠাৎ মারা যান। আমার ধারনা যে, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন, তাহলে সাদক করতেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে সাদকা করে দিতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে সাদকা কর।
৯ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোজা পালন করাঃ
وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، وَابْنُ أَبِي خَلَفٍ، وَعَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ، جَمِيعًا عَنْ زَكَرِيَّاءَ، بْنِ عَدِيٍّ قَالَ عَبْدٌ حَدَّثَنِي زَكَرِيَّاءُ بْنُ عَدِيٍّ، – أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عَمْرٍو، عَنْ زَيْدِ، بْنِ أَبِي أُنَيْسَةَ حَدَّثَنَا الْحَكَمُ بْنُ عُتَيْبَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، – رضى الله عنهما قَالَ جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أُمِّي مَاتَتْ وَعَلَيْهَا صَوْمُ نَذْرٍ أَفَأَصُومُ عَنْهَا قَالَ أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ فَقَضَيْتِيهِ أَكَانَ يُؤَدِّي ذَلِكِ عَنْهَا. قَالَتْ نَعَمْ . قَالَ ” فَصُومِي عَنْ أُمِّكِ .
ইসহাক ইবনু মানসূর, ইবনু আবূ খালফ ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। বলেন, জনৈকা মহিলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছেন। তার উপর মান্নতের সাওমের কাযা রয়েছে। আমি তার পক্ষ হতে এ সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) আদায় করতে পারি কি? তখন তিনি বললেন যদি তোমার মায়ের উপর কোন ঋণ থাকত এবং তুমি তা পরিশোধ করে দিতে, তবে তা তার পক্ষ হতে আদায় হতো কি?
সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমার মায়ের পক্ষ হতে তুমি সিয়াম পালন কর।
১০ মৃত ব্যক্তির নামে হজ আদায় করাঃ
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الطَّالْقَانِيُّ، وَهَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ، – الْمَعْنَى وَاحِدٌ قَالَ إِسْحَاقُ – حَدَّثَنَا عَبْدَةُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنِ ابْنِ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ عَزْرَةَ
عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم سَمِعَ رَجُلاً يَقُولُ لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ . قَالَ ” مَنْ شُبْرُمَةَ. قَالَ أَخٌ لِي أَوْ قَرِيبٌ لِي . قَالَ ” حَجَجْتَ عَنْ نَفْسِكَ. قَالَ لاَ . قَالَ ” حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ ” .
ইসহাক ইবন ইসমাঈল (রহঃ) …… ইবন আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনেন, লাব্বায়েক আন্ শুবরুমা’’ (আমি শুবরুমার পক্ষে হাযির)। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ শুবরুমা কে? সে ব্যক্তি বলে, আমার ভাই অথবা আমার বন্ধু। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ আচ্ছা তুমি কি হজ্জ করেছ? সে বলে, না। তিনি বলেনঃ প্রথমে তুমি নিজের হজ্জ আদায় কর, পরে শুবরুমার হজ্জ সম্পন্ন কর।
১১ কোরবানীর সময় মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানি করাঃ
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي الْحَسْنَاءِ، عَنِ الْحَكَمِ، عَنْ حَنَشٍ قَالَ رَأَيْتُ عَلِيًّا يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ مَا هَذَا فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي عَنْهُ .
উছমান ইবন আবী শায়বা (রহঃ) ….. হানাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি ‘আলী (রাঃ)-কে দু‘টি দুম্বা যবাহ করতে দেখে জিজ্ঞাসা করি, ব্যাপার কি? তখন তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এরূপ ওসীয়ত করে গেছেন যে, আমি যেন (তাঁর ইনতিকালের পর) তাঁর পক্ষে কুরবানি করি। তাই আমি তাঁর পক্ষ হতে এ কুরবানী করছি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি, স্বামী-স্ত্রীসহ আপনজনদের মধ্যে যারা মারা গেছে তাদের জন্য উল্লেখিত কাজগুলো করে তাদের পরকালীন জীবনের সফলতার জন্য দোয়া করার তাওফিক দান করুক। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩৫