ছবি-গুগুল
অবশেষে মনে আসা সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করলাম। স্কুটি কিনে ফেলেছি। স্কুটির প্রতি অসম্ভব একটা ফ্যাসিনেশন আছে আমার। উবার, পাঠাও, ওভাই এসব দেখে আর তর সইল না আমিও ওবোন চালু করব ভাবছি।
হাসির কি হল? মেয়েরা কিছু করতে গেলেই কি হাসি পায়?
কিছুদিন পর....
ড্রাইভিং শিখলাম, লাইসেন্স করলাম। শুধু উবার আর পাঠাও তে রেজিস্ট্রেশন করা হলনা। অনলাইনে একটা পেজ খুলব বলে ভেবে রেখেছি৷
প্রথম অফিস স্কুটির সাথে...
আহা স্কুটি চালিয়ে অফিসে যাচ্ছি সেকি ফিলিংস হচ্ছে বোঝানো যাবেনা। জীবনে এমন সুখ যে আসবে ভাবিনি। স্কুটি চালাই আর গান গাই - এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত তুমি বলত? পেছনে উত্তম দার মতন কেউ থাকলে সেই লাগত।
আমি পাঠাও সার্ভিসের মতন মানুষকে সেবা করব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেললাম। সিদ্ধান্ত নিলাম অফিসে যাবার সময় থেকে ২০ মিনিট আগে বের হব। পরদিন তাই করলাম। স্কুটির গায়ে একটা মিডিয়াম সাইজের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিলাম। বাড্ডা টু মহাখালি পৌছে দেয়া হয়, শুধু মাত্র মেয়েদের জন্য। কিন্তু দেখলাম অফিসডে তে এই কাজ কঠিন। তাই শুক্র, শনি বার ২ঘন্টা বেছে নিলাম এই কাজ করার জন্য।
একটু অপ্রস্তুত ছিলাম। মুখে মাস্ক পড়ে নিলাম যাতে খুব বেশি লজ্জা না করে। পাশ দিয়ে মহিলারা হেঁটে যাচ্ছে কেউ পাত্তা দিচ্ছিল না। কেউ কেউ পড়ল কোন দাগ মনে কাটতে পারল না। ওহ নো ছেলেরা এভাবে হাসছে কেন? ইয়া আল্লাহ হেল্প কর। অবশেষে এক আপা এসে বলল সে যাবে কত টাকা জিজ্ঞেস করল, বললাম উঠুন আগে প্রব্লেম নেই, টাকা নিয়ে ভাবতে হবেনা৷ আমি তাকে মহাখালী পৌছে দিলাম।
ফিরে আসার সময় একরকম শান্তি পাচ্ছিলাম কারন মনে মনে আমি ঠিক করেছি আমি বিনা টাকায় সেবা দান করব। টাকা নিবনা মানুষের কাছ থেকে। যাইহোক, কিছুদিন মানুষ হাসল, কটাক্ষ করল। কিন্তু এরপর রেগুলার মহিলা যাত্রি যাওয়া শুরু করল। আমারো নেশা ধরে গেল সেবা করার৷ মজা পেয়ে গেলাম। আমার সাথে মানুষও মজা পায়। টাকা নেইনা দেখে সবাই খুব অবাক হয়। কেউ কেউ অনেক সম্মান দেয়।
সেদিন ঘটল বাজে ঘটনা একটা ছেলে সেকি তর্ক সে যাবে বললাম এটা মেয়েদের জন্য লেখা আছে দেখেন না? শেষে বলেই দিলাম আপনি মহিলা সেটা বললেই পারতেন। আসেন বসেন পাশে । তারপর সে এমন একটা দৃষ্টি দিয়ে চলে গেল।
কে জানে আজ ঘুম থেকে উঠে কার মুখ দেখছিলাম। এরকম বিপদে পড়ব বুঝিনি। আজ ফ্রাইডে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেলাম। লিংক রোড গিয়ে দাঁড়িয়েছি হঠাৎ একটা ছেলে এসে বলল প্লিজ আমাকে একটু পৌছে দেন না?
আমি-কি বলছেন? দেখেন না লেখা আছে মেয়েদের পৌছে দেয়া হয়।
ছেলে- জ্বী দেখেছি। প্লিজ আমার জীবন মরণ সমস্যা।
আমি- আরে আপনি পাঠাও ডাকেন।
ছেলে-এই দেখেন মোবাইলটা অফ। আর এই মোবাইলটা দেখেন এটা এন্ড্রয়েড নয়। প্লিজ হেল্প করুন। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। আজ আমার বিয়ে। আমার প্রেমিকা নিশ্চয় কাজি অফিসে এসে বসে আছে, দেরি হয়ে গেছে এমনিতেই আরো দেরি হলে চলে যেতে পারে।
আমি- মনে মনে বললাম কোন বিপদে পড়তে যাচ্ছি নাত? আবার ছেলেটার করুণ আকুতি দেখে মায়াও লাগছে।
ছেলে- কি ভাবছেন আপনি? প্লিজ হেল্প করুণ ।
মেয়ে- ওকে ওকে উঠুন। কোথায় যাবেন? আর হ্যাঁ গায়ে টাচ লাগাবেন না তাহলে একদম ফেলে দিব ।
ছেলে- জ্বী ম্যাম ঠিকাছে, আমি ভদ্র ছেলে। এনিওয়ে আমি উত্তরা যাব।
যেতে যেতে মনে হল বিপদে পড়লাম কিনা কে জানে?
কাজী অফিসে ঠিক মত পৌছে দিলাম ছেলেটাকে। দেখলাম সেখানে তার নিজের বোন আছে আরো পরিচিত তার অনেকেই আছে। কথা বার্তায় বুঝলাম। একটা মেয়ের পেছনে আসছে দেখে তারা প্রথমে অবাক হল। ছেলেটা বলল ইনি আমাকে হেল্প করেছেন।
ফিরে আসার সময় ছেলেটার বোন বলছিল থাকুন না আপনি। ভাল লাগবে আমাদের। আমি আর না করতে পারলাম না। ভেতরে গিয়ে সবাই বসলাম। ছেলের বোন কে জিজ্ঞেস করলাম পাত্রী আসেনি? বলল এখনো আসেনি। মনে মনে ছেলেটাকে গালি দিলাম , বদ ছেলে মিথ্যে বলছে।
ছেলের বোন এই সেই কথায় অনেক কিছু জেনে নিল আমার সম্পর্কে। আবার তার ভাই এর কথা বলল । আজই নাকি যার সাথে বিয়ের কথা সেই মেয়ের বিয়ে। মেয়ে পালিয়ে আসবে কাজি অফিসে। কিন্তু পাত্রি এখনো এসে পৌছায়নি। ছেলে অনেক টেনশন করতে লাগল। অনেক্ষন কেটে গেল। মেয়ের আসার নামই নেই।
শেষমেষ জানা গেল মেয়েটার কবুল হয়ে গেছে। সে আসলে আসতে পারেনি। মেয়ে ম্যাসেজ দিয়েছে তোমার মতন গাধারে কে বিয়ে করবে? তোমাকে আমি সত্যিকার ভালোবাসি নাই। টাকা পয়সা নাই আবার বিয়ে?
ছেলেটা কেঁদে দিল। ছেলের বোনটাও কাঁদতে লাগল। তার ভাইয়ের কি হবে এখন, মরে যাবে। এই সেই অনেক কথা। পরিবেশ টা কেমন গুমট হয়ে গেল।
আমি কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আবার কিভাবে বিদায় নিয়ে আসব সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। যাইহোক, শেষমেষ বলেই দিলাম আপা আমি আসছি।
ছেলের বোন কিছুক্ষন চুপ থেকে আমার হাত টা টান দিয়ে বলল যেয়োনা। কি নাম যেন বললে তুমি?
আমি- জ্বী মায়া।
- তুমি ঠিক মায়াই, মিষ্টি মেয়ে। বলেই হাতটা চেপে ধরলেন। বললেন মায়া আমার ভাইটা অনেক ভাল। আমার ভাই বলে বলছিনা। সত্যিই ভাল মানুষ। তুমি আমার ভাইকে বিয়ে কর। প্লিজ, প্লিজ।
আমিত অবাক হয়ে বলালাম কি বলছেন? আপনার মাথা ঠিক আছে?
- আমার মাথা ঠিকই আছে। প্লিজ না করোনা তুমি। তোমার পরিবারের সাথে কথা বলব আমরা।
আমিত ভয় পেয়ে গেলাম। কি হচ্ছে এসব? উনি আমার হাত চেপে ধরলেন। সবাইকে বলেলেন পাত্রী পেয়ে গেছি। মায়ার সাথেই বিয়ে হবে। এই কাজি সাহেব বিয়ে পড়ান।
আমিত চিৎকার করে বলে উঠলাম কি বলছেন। প্লিজ ছাড়ুন আমার হাত। যতই বলি ছাড়ুন তিনি ততই শক্ত করে ধরেন।
আরেএ ছাড়ুন ........ ছাড়ুন বলছি, ছাড়ুন। বাঁচাও............বাঁচাও......
চিৎকার টা মনে হয় বেশ জোরেই দিয়েছিলাম । পাশের রুম থেকে বোন এসে বলল কিরে মায়া কি হইছে? এই মায়া উঠ! কি স্বপ্নে দেখেছিস, হু? খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?
আমি চোখ মেলে দেখলাম বিছানায় আমি। ইস! এইটা তাহলে স্বপ্ন ছিল!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৯