ছবি-গুগুল
হঠাৎ করেই বড় আপার কল আসল
- কিরে মায়া কই তুই ?
- ঈদের পরদিন মানুষ কই থাকে হু?
- তুই কি সোজা কইরা কথা বলতে পারিস না?
- না বইন পারিনা। হিহিহি। আচ্ছা বল। আমি বাসাতেই আছি।
- আমিত সিলেট যাচ্ছি। যাবি নাকি?
- নাহ ভালো লাগেনা। বাসায় একটু রেস্ট নেই।
- চল না যাই। তুই আর মেজো চলে আয়। প্লিজ না করিস না মায়া ।
- আচ্ছা মেজ আপাকে জিজ্ঞেস করি।
মেজো আপা আর আমি বড় আপার বাসায় চলে আসলাম। আপার বাসায় আসার পর দেখি আপার মুখ কালো । বললাম কি হল। বলল কিছু হয়নি।
একটু পর দেখলাম বড় আপা মেজো আপা দুজন মিলে ফিস ফিস করছে। আমি আর তাদের কথায় বার্তায় কান দিলাম না। ফ্রেশ হয়েই খেয়ে দেয়ে ঘুম দিলাম কারন রাতে জার্নি করে সিলেট যেতে হবে। আমি আবার ঘুম পাগল মেয়ে। আহা কেউ একজন একদিন নাম দিয়েছিল ঘুম পরী।
রাতে বাসে উঠেই তো দেখি সেই ভেজাল। আমার আর মেজো আপার দুজনের সিট দুই জায়গায় পড়েছে। কারন শেষ দুইটা টিকিট ই ছিল দুই জায়গায়। বড় আপা ভাবল আমি রাগ করব আমি বললাম ঠিকাছে তুমি টেনশন কইরনা। দেখি আপা হাফ ছেড়ে বাঁচল।
মেজ আপার সিট বড় আপার দু সিট পড়েই একজন মহিলার সাথে পড়েছে। তো আমি আমার সিট নাম্বার অনুযায়ী পেছনে গেলাম। সিট খুঁজেও পেলাম। কিন্তু একি ভূত দেখলেও মানুষ এমন চমকায় না। যতটা আমি চমকে গেলাম। ছেলেটা কে দেখে রীতিমতন একটা ধাক্কা খেয়েছি। খুব পরিচিত একজন। যাইহোক, আমি তাকে বললাম
- এক্সকিউজ মি এটা কি জি-২?
- জ্বী
- আমি শুকনো একটা হাসি মুখে টেনে বললাম ধন্যবাদ।যেহেতু ব্যাগ ছোট তাই উপরে ব্যাগ রেখে সিটে বসলাম।
বসার সাথে সাথেই বড় আপা কল দিল।
- মায়া ঠিক মতন বসছিস তো? কোন প্রব্লেম নেই তো।
- না আপা , টেনশন করোনা। আমি ঠিক আছি।
বাস চলতে শুরু করল। জানালার পাশে সিট পেয়ে খুব ভালো লাগল। যদিও রাত বাইরের দৃশ্য দেখতে পাবনা বলে মন খারাপ লাগছিল। কিন্তু একটু পরই দেখি আকাশে চাঁদ উঠেছে। আহা চাঁদ কত যে ভালোবাসি! আমি জানিনা চাঁদ সবসমই আমার মনটা ভালো করে দেয়।
যদিও আমার খুবই মজা লাগছিল আরেকটা বিষয় ভেবে যে, যার সাথে যাচ্ছি তিনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড। ইভেন আমরা একই প্ল্যাটফর্মে লিখি। আমি অবশ্য লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছি। লেখালেখি করা মানে অনেক সময় দাও, চর্চা কর। ওহ এসব কেন জানি আমার দ্বারা কখনই হয়না। যাক মনে মনে পুলকিত হচ্ছি বৈঠা কে দেখে। ইয়ে মানে বৈঠা হল তার ব্লক নিক। এই বৈঠা নিয়ে যে কত মজা করেছি হিসেব নেই।
অনেকদিন ব্লগের এফবিতে লগইন করা হয়না। ভাবলাম আজকে একটু লগইন করি। মোবাইলটা আমার ওড়না দিয়ে একটু আড়াল করে রাখলাম যাতে পাশের জন দেখতে না পারে।
লগইন করার পরই দেখি বৈঠার নোটিফিকেশন আসছে। সে পোস্ট দিয়েছে।
" পাশেই সুন্দরী সহযাত্রী বসে আছে, বাতাসে তার এলোমেলো চুল মুখের উপর পড়ছে।
আর মনে গান বাজছে " এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত?"
স্ট্যাটাস দেখে আমার চোখ দুইটা ইয়া বড় হয়ে গেছে। আমি বার বার তার দিকে তাকাচ্ছিলাম। আর মনে মনে বলছিলাম কত্ত বড় মিথ্যুক! তিল কে তাল বানিয়েই তাহলে লিখে!
আমিও কম যাই না। আমিও কমেন্ট লিখছি
"আরে মিয়া আমিত দিব্বি দেখাতাছি একটা খালাম্মা টাইপ মহিলার লগে বইছেন"
রিপ্লাই দিছে বৈঠা সাহেব
" ধুর কি কন মায়া ? নিশ্চয় আপনার হিংসে হচ্ছে। হেহেহে
আমি মোবাইল সাইলেন্ট করে লিখলাম।
" বাতাসে তার চুল উড়ছে? অন্ধকারেও ভাল চোখে দেখেন দেখি।
"জ্বী ভালই দেখি! সুন্দরী বলে কথা। হেহেহে
আমি মুখ চেপে কতক্ষন হাসলাম। দেন লিখলাম
" এসি বাস, তার উপ্রে হিজাবী সহযাত্রী! কেমনে কি বলেন? সুন্দরী কই পাইলেন?
এই কমেন্ট দেখে বৈঠা সাহেব এর তো হুঁশ হল। সে আমাকে এখন ইনবক্সে এসে নক করা শুরু করল।
আমাকে জিজ্ঞেস করছিল আপনি কোথায় বলেন তো? আর এত কিছু কিভাবে বলছেন?
আমি বললাম বাতাসে আমার কত গুপ্তচর আছে সেটা কি জানেন আপনি? হিহিহি
আমি নেট অফ করে দিলাম। যাতে করে তার সন্দেহ না হয়। বাস দুই ঘন্টা চলার পর বিরতি দিল। রেস্টুরেন্ট এ বসে কফি পাণ করলাম। আমি নিজ থেকেই বৈঠা সাহেব কে বললাম আসেন কফি খাই। দেন কফি খাওয়ার সময় এটা সেটা জেনে নিলাম আমরা । কোথায় যাচ্ছি, সে কোথায় যাচ্ছে। বিরতি শেষ হল।
বাস আবার চলতে শুরু করল। আমার ঘুম আসছিল না তাই চোখ মেলে তাকিয়ে রইলাম। রাতে জার্নি করলে আমার কখনোই ঘুম হয়না। আমি দেখলাম বৈঠা সাহেব জেগে আছেন। আমি পর্দা সরিয়ে চাঁদ দেখছিলাম । হঠাৎ দেখি পাশ থেকে উনি বলছেন আপনি চাঁদ পছন্দ করেন?
আমি তার দিকে না তাকিয়েই বললাম - হু ভীষণ।
আমরা খুব আস্তে আস্তে কথা বলছিলাম যাতে অন্যদের সমস্যা না হয়।
- আমার মন খারাপ হলে আমি চাঁদ এর দিকে তাকিয়ে থাকি মন ভাল হয়ে যায়।
- তাই নাকি? আচ্ছা আপনার নামটা জানা হয়নি।
- মিঃ আপনার নাম কি ?
- প্রশ্নটা কিন্তু আমি আগে করেছিলান, যাইহোক, আমার নাম স্বপ্নিল
- তাই নাকি? আমি অধরা!
নাম শুনে স্বপ্নিল বলছিল জীবনে কাউকে ধরা দেননি? হাহাহা
- স্বপ্নিলের কথা শুনে আমি নিজেও হাসলাম। বললাম ধরা তো দিতেই চাই কিন্তু সেই মানুষ কোথায় পাই বলুন?
- কেন? এখনো সিংগেল নাকি?
আমি জাস্ট মুচকি হাসি দিয়ে বললাম
কেউ কথা রাখেনি
তেত্রিশ বছর কাটল
লাইন দুটি শুনে স্বপ্নিল বলল আপনি কবিতা আবৃতি করেন নাকি? বললাম না তবে ভালো লাগে। তাই শুনে বলল আপনার কন্ঠটা কিন্তু বেশ।
আমি এবার হেসে বলেই ফেললাম আপনি ভাল ফান করতে পারেন।
আমি নেটএ ঢুকে দেখি স্বপ্নিল অনেক ম্যাসেজ দিয়ছে।
তাকে রিপ্লাই দিলাম
- কি মশাই হিজাবী খালাম্মা টাইপ মেয়ের সাথে গল্প জুড়ে দিছেন দেখি।
-আচ্ছা বলেন তো আপনি কি আমি যে বাসে আছি সেই বাসেই আছেন?
- হাহাহা! আরে না আমিত আমার বাসায়
স্বপ্নিল একটা অবাক হবার ইমো দিয়ে উধাও হয়ে গেলো।
আমি স্বপ্নিল কে চকলেট সাধলাম। স্বপ্নিল চকলেট নিল।
স্বপ্নিল আরেকটা স্ট্যাটাস দিল
"আহা সুন্দরী মেয়েটি এবার চকলেট দিল, ঘুম বাদ দিয়ে আমাদের গল্প চলছে"
কমেন্ট দিলাম- "সাবধানে খাবেন প্লিজ। বিষ টিষ দিছে কিনা কে জানে? অজ্ঞান হবার ঔষধ ও মিক্সড করতে পারে! আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুণ। আমিন।
এই কমেন্ট পড়ে দেখি স্বপ্নিল চকলেট খাওয়া বন্ধ করে দিছে। মুখ কেমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। আমিত ভেতরে ভেতরে হাসতে হাসতে শেষ।
আমি বললাম কি মিঃ চকলেট খেতে কি ভয় পাচ্ছেন?
- না তা কেন? পরে খাব।
আমি- খেতে পারেন , এটাতে কিছু মেশানো নেই। ডোন্ট ওরি।
ভোরে আমরা সিলেট পৌছালাম। বাস থেকে নামার সময় স্বপ্নিল কে বললাম " বৈঠা সাহেব দয়া করে স্ট্যাটাস গুলো সত্য যেটা সেটাই লিখেন, সত্য সবসময়ই সুন্দর।
আমি চলে আসার পর হয়ত স্বপ্নিলের মাথা ঘুরছিল কারন আমি তাকে বৈঠা নামেই ডেকেছিলাম।
হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম স্বপ্নিল লিখেছে
"একজোড়া কাজল কালো চোখ দেখেছি। যে চোখের গভীরতা অনেক। মনে হলো সেই চোখে অনেক না বলা কথা লুকিয়ে আছে। কেন জানি সেই চোখ দুটি ভুলতে পারছিনা "
স্বপ্নিলের স্ট্যাটাসে আর কখনোই কমেন্ট দেয়া হয়নি। কারন এফবি পার্মানেন্ট ডিলিট দিয়েছিলাম।
#Stay home
#Stay Safe