টাইটেল পড়ে তেলে বেগুনে জলে ওঠার দরকার নাই। যদি নিচের পয়েন্টগুলোর সাথে সহমত না হন, তাইলে রাগটা ঝাড়তে পারেন।
১. মাটি: উর্বর মাটি কিনে আনছেন যারা শহরে থাকেন। যে টাকায় মাটি কিনছেন, তা কি ফসল/শশ্য হয়ে ফিরে আসছে?
২. পানি: যে পরিমান বিদ্যুৎ খরচ করে ছাদে গাছগুলোতে পানি দিচ্ছেন, সেই ইনভেস্টমেন্ট কি রিটার্ন পাচ্ছেন? খুব কমই আছে যারা চাল ধোয়ার পানি বা একবার ব্যবহৃত পানি সেচে ব্যবহার করেন।
৩. সার: বেশির ভাগ ছাদ কৃষিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করছেন। কারন জৈব্য সার তৈরীতে দুর্গন্ধ হয়, পোকা হয়, ব্যবহার ঝামেলা যুক্ত। রাসায়নিক সার ক্রয়ে বা উৎপাদনে সরকার কোটি কোটি টাকা নয় ছয় করে, আপনিও সেই নয় ছয় কে বাড়িয়ে দেন, তাই না?
৪. টব/পাত্র/ওয়াটাপ্রুফ ছাদ: এই যে হাজার হাজার টাকা খরচ করে মাটির/প্লাস্টিকের/ম্যাটেলিক পাত্র কেনেন বা বিশেষ ভাবে ছাদ তৈরী করে নেন, ৫-১০ বছরেও কি তা সেই খরচকে লাভে পরিনত করে?
৫. শ্রম: যে পরিমান শ্রম ঘন্টা অপচয় করেন বা কেউ কেউ মালি রাখেন, সেই পারিশ্রমিক বা খরচ কি ছাদ বাগান থেকে রিটার্ন পাচ্ছেন?
৬. মাটি দূষণ: যেহেতু বেশির ভাগ উৎসাহী ব্যক্তি রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন কোন সাধারন জ্ঞান ছাড়াই, তাই মাটি দূষিত হয়ে যায়, অথবা সেটা ফেলে দিয়ে নতুন মাটি সংগ্রহ করেন, তাতে কৃষি জমির টপ লেয়ার নষ্ট হয়। ১ ফুট উর্বর টপ লেয়ার তৈরী হতে কম পক্ষে ১৫ বছর সময় লাগে। কাজেই আপনি পরোক্ষ ভাবে মাটি দূষণ বা ক্ষয়ের সাথে জড়িত।
৭. পরিবেশ দূষণ:
- মাটির পাত্র তৈরী হতে পলি মাটি সংগ্রহ করে, আকার দিয়ে, রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়াতে হয়। কুমাররা পোড়ায়, গাছের কাঠ। ইট ভাটায় যে ক্ষতি হয়, আপনার মাটির টপ তৈরীতেও একই ক্ষতি হয়।
- যদি পাত্র প্লাস্টিকের হয়, তাহলে তো কথাই নেই। বাতাস পাস হতে পারে না বলে সেই টবে লাগানো গাছও ভাল হয় না, আবার ফেলে দিলে তা ১৫-২০ বছর সময় লাগে মাটির সাথে মিশতে। দূষণ আর দূষণ।
- টবে জমা পানিতে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়ার মশা জন্মায়। আজকের রিপোর্ট অনুযায়ী শুধু ঢাকাতেই ২৪৫ জন গত ৩ মাসে মারা গেছে।
- বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গ্যাস, তেল, কয়লা পোড়াতে হয়। মটর দিয়ে যে, আপনি ছাদে পানি তুলছেন, খেয়াল আছে আপনি বিদ্যুৎ খরচ করে তা করছেন? মানে পরিবেশ দূষণের অংশীদার। উপরন্তুু যেখানে ডলার সঙ্কট সেখানে আপনি তা প্রভাভিত করছেন, তাই না?
-আপনি যে কিটনাশক বা সার ব্যবহার করছেন, তার একটা অংশ বৃষ্টির পানিতে বা ওভার ফ্লো হয়ে ড্রেন হয়ে নদীতে মিশছে। মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
- আপনি ডিপ টিউবয়েল দিয়ে ৩-১০ টলা ছাদের উপরে পানি তুলছেন, যথেচ্ছা ভাবে গাছে পানি দিচ্ছেন, পানির লেয়ার নীচে চলে যাচ্ছে। পানি কিন্তু আনলিমিটেড নয়। গ্যাসের মত পানিও ফুরিয়ে যাচ্ছে । পরবর্তী প্রজন্ম পানি পাবে না, সে খেয়াল আছে?
৮. অর্থ লগ্নি: কেউ কেউ বিদেশী অর্কিড বা ইনডোর প্লান্ট বিদেশ থেকে সংগ্রহ করেন। তারা কি বিনা পয়সায় সংগ্রহ করছেন?
৯. এত সুন্দর ছাদে আপনি ছাদ বাগান করছেন, ঠিক আছে, সখের তোলা ৮০টাকা। কিন্তু নিজের অজান্তেই আপনি বিল্ডিঙের আয়ু কমিয়ে ফেলছেন।
১০. এই যে ছাদ বাগান করছেন, কখনও বৃক্ষের চারা লাগিয়েছেন স্কুল, কলেজ, রাস্তা বা ক্ষয়ে যাওয়া বনের মাটিতে?
ঘর ভর্তি কাঠের ফার্নিচার। কতগুলো গাছ কাটতে হয়েছে সেসব বানাতে হিসেব রাখেন? এই যে বনে বাদারে বৃক্ষ জাতীয় গাছ না লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা তিলে তিলে খরচ করছেন ছাদ কৃষিতে, অথচ পরিবেশের সত্যিকার অর্থে যা দরকার তা করছেন না, এতে আপনি নিজেই অবচেতন মনে সন্তুস্ট না, আপনার বাচ্চারও কি বা শিখছে? বাবা/মা গাছ লাগায় না, অথচ বাসায় কেউ আসলে ছাদ বাগান/কৃষি দেখাতে নিয়ে যায়। বৃহত্তর চিন্তা ঐ সব ফেমিলির বাচ্চারা কখনই শিখবে না। ওরাই বাবা মাকে ভাল রাখার নাম করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসবে...
পাখি মুক্ত আকাশে উড়লেই ভাল দেখায়, ছোট্ট খাঁচায় ছটফট করলে নয়...