somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যদিও কাছে আসা

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আশিক বাড়ি থেকে দ্বিমত করেই বের হল। প্রথমে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তাকে যেতেই হবে।

রাস্তায় বের হয়ে কিছুদুর যাওয়ার পরে আবারও দিশার ফোন। আশিক ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবার পরে কল রিসিভ করলো।

আশিক ফোন ধরে কথা বলার আগেই বলল
-কি ব্যাপার!! ফোন ধরতে এত সময় লাগে কেন?
-একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তো। তাই খেয়াল করি নি।
-তুমি আসছো তো?
-তুমি বলেছ তাই আমি আসবোই।
-জানো তোমাকে অনেকদিন না দেখার কারনে মনটা কেমন যেন করছে। তোমার আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না?
-হ্যা। তাইতো আমি তারাতারি আসার চেষ্টা করছি।
-গাড়িতে উঠতে কত সময় লাগবে?
-এইত কিছুসময়।
-আচ্ছা। গাড়িতে উঠে কথা হবে।

কিছুদুর যাওয়ার পরে আশিকের মনেহল পকেটে বেশি টাকা নেইত। এই টাকায় পৌঁছানো যাবে নাকি তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আর যেতে রাত হলে ভাড়াও বেশি লাগবে।

কিছুদুর যাওয়ার পরে আশিক তার এক বন্ধুর কাছে ফোন দিল। তার বন্ধু ফোন ধরে বলল
-কিরে বল।
-তুই কোথায় রে?
-আছি বাড়িতেই।
-আমাকে কিছু টাকা ধার দিতে পারবি?
-কতকটাকা?
-হাজার খানেক টাকা।
-এখনই লাগবে?
-হ্যা।
-আচ্ছা আমি তোকে বিকাশ করে দিচ্ছি।
-আচ্ছা।



বাজারে এসে বিকাশ থেকে টাকা তুলে আশিক টিকিট কাউন্টার এর দিকে রওনা দিল।

টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখল টিকিট নেই। বাস এসে দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রিরা বাসে উঠলেই বাস ছাড়বে। আশিক টিকিট কাউন্টারে কাজ করা লোকটির কাছে জিজ্ঞেস করলো
-একটা টিকিট দেওয়া যাবে?
-দেখছেন তো কোন টিকিট নেই।
-যদি কোন ব্যাবস্থা করে দিতেন।
-ব্যাবস্থা করা যাবে না।

আশিক টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে না থেকে তাৎক্ষনাত বাসে উঠে পরলো। টিকিট না থাকলেও বাসে উঠলো।

বাসে উঠে আশিক দাঁড়িয়ে আছে। কারন, তার কাছে টিকিট নাই। টিকিট না থাকায় কোনো সিটেই সে বসতে পারবে না।

আশিক কে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে বাসের হেল্পার তার দিকে এগিয়ে বলল
-কি ব্যাপার? দাঁড়িয়ে আছেন কেন!! সিট পান নি নাকি? টিকিট দেখি।

আশিক হেল্পারের সব প্রশ্ন শুনে একটা কথা বলল
-টিকিট নেই।
-টিকিট নেই মানে? টিকিট কি হয়েছে?
-টিকিট পাই নি। তাই টিকিট কাটিনি।
হেল্পার রেগে গিয়ে বলল
-টিকিট কাটেননি তো বাসে উঠেছেন কেন?
আশিক শান্ত গলায় বলল
-আমাকে যেতেই হবে। তাই উপায় না দেখে বাসে উঠেছি।
-কিন্তু এটা তো করা যাবে না।
-বোঝার চেষ্টা করেন। আমাকে যেতেই হবে। আমি নাহয় দাঁড়িয়েই যাবো।
-এত রাস্তা দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন?
-যেতে পারব।
হেল্পার শান্তভাবে বলল
-আচ্ছা। আমি দেখছি কোন সিট পাওয়া যায় নাকি। পাওয়া গেলে আপনাকে বসার জায়গা দেব। কিন্তু আপনাকে তিনশ টাকার জায়গায় চারশ টাকা দিতে হবে।
-আচ্ছা দেব।



বাস চলতে শুরু করলো। আশিক দাঁড়িয়ে দিশার কথা ভাবতে থাকলো। অনেককদিন দিশা অসুস্থ হয়ে আছে। আশিকের উচিৎ ছিল আগেই যাওয়া। কিন্তু বেকারদের এই এক সমস্যা চাইলেও সবকিছু সময়মত করতে পারে না।

হেল্পারের ডাকে আশিক বাস্তবে ফিরলো। হেল্পার ডাক দিয়ে বলল
-এদিকে আসুন। এখানে একটা সিট পাওয়া গেছে।

আশিক কোন চিন্তা না করে সিটটাতে গিয়ে বসলো। আশিক চারশ টাকা হেল্পারকে দিয়ে সিটে বসে থাকলো।

আশিক পাশের সিটে মানুষটির ফোনে কথা বলতে দেখে দিশাকে ফোন দেওয়ার কথা মনে পরে গেল।

দিশাকে ফোন দেওয়ার সাথে সাথে দিশা ফোন রিসিভ করলো। মনেহয় ফোন হাতে আশিকের ফোনের অপেক্ষায়ই ছিল। আশিক বলার আগেই দিশা বলল
-গাড়িতে উঠেছ?
-হ্যা।
-আসতে কতসময় লাগবে?
-অনেক রাত হতে পারে। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
-আমি ঘুমাব না। তুমি আসলে তারপরেই ঘুমাবো।
-তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে।
-হলে হবো। তবুও আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকবো।
-আচ্ছা। আমি তাহলে তারাতারি আসার চেষ্টা করবো।
-বেশি তারিঘরি করার দরকার নেই। তুমি ধিরে সুস্থভাবে আসলেই হবে।
-আচ্ছা। এখন রাখছি।

বাস তার আপন গতিতে চলছে। আশিকের মনের ভাবনাগুলোও আপন মনে নড়ে উঠছে। আশিকের আর দিশার সম্পর্কেরর কথা মনে পরছে।

আশিক আর দিশা প্রেম করে বিয়ে করেছে প্রায় এক বছরের মত। আর সেটা দিশার পরিবারের অমতে। দিশার পরিবার আজও মন থেকে মেনে নিতে পারে নি।

আশিককে দিশার পরিবার তেমন পছন্দ করে না। কারন আশিক বেকার। আশিককে বিয়ে করার কারনে পরিবারের কাছে দিশার মুল্যও কমে গিয়েছে।

বিয়ের পরে প্রথম দুইমাস দিশা আশিকের বাড়িতেই ছিল। পরে দিশার ইচ্ছায় তাকে বাবা-মায়ের বাড়িতে রেখে আসতে হয়েছে।

প্রথমে দিশার বাবা-মা দিশাকে বাড়িতে জায়গা দিতে না চাইলেও পরে মেয়ে হিসেবে বাড়িতে জায়গা দিয়েছে। কিন্তু দিশার ব্যাপারে তার পরিবারের উদাসীন হয়ে পরেছে।



হঠাৎ গাড়ির থেমে যাওয়ায় আশিক বাস্তবে ফিরে এল। আশিক তার গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। ভাবতে ভাবতে কখন যে পৌঁছে গেছে আশিক তা খেয়াল করে নি।

আশিক গাড়ি থেকে নেমে দেখে নয়টা তের মিনিট বাজে। এই সময় গাড়ি পাওয়া যাবে মনেহয়। তাই আশা নিয়ে রিক্সা খুঁজতে এগিয়ে গেল।

আশিক যতটা আশা নিয়ে এসেছিল, একজনের কথা শুনে সে আশা বিলীন হয়ে গেল। আজ নাকি রাস্তায় ধর্মঘট। আর এখন রাত আটটার পরে রাস্তায় কোন গাড়ি চলে না। তাই আশিককে হেটেই যেতে হবে।

আশিক উপায় না দেখে হাটা শুরু করলো। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার মত পথ হবে। হেটে যেতে এক ঘন্টার মত লাগবে। এছাড়া কোন উপায় নেই।

হেটে হেটে আশিক দিশার বাসার সামনে চলে আসলো। দ্রুত হাটায় এক ঘন্টার আগেই পৌঁছে গেছে। দিশাকে ডাক দিলে ভাল হয়। এতরাতে বাসার বেল না বাজালেই ভাল।

আশিক দিশার কাছে ফোন করতেই দিশা এসে দরজা খুলে দিল। আশিক দিশার সাথে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল।

বাসার মধ্যে ঢুকে তেমন কোন সাড়াশব্দ নেই। হয়তো জেনেছে আশিক এসেছে। তাই কারো কোন সাড়াশব্দ নেই। কারন আশিক আসলে এ বাড়ির কারো কিছু আসে যায় না। গেলেও কিছু আসে যায় না।

আশিক দিশার সাথে দিশার ঘরে গিয়ে বসলো। আশিক দিশাকে বলল
-তুমি খেয়েছ?
-না।
-খাও নি কেন? যাও খেয়ে আসো।
-তুমি খেয়েছ?
-আমি খেয়ে এসেছি।
-মিথ্যা বলার দরকার নেই। তুমি বসো, আমি খবার নিয়ে আসি। দুইজন একসাথেই খাবো।

আশিক কিছু বলতে চাইলেও দিশা কিছু না শুনে খাবার নিয়ে আসলো। খাবার রেখে আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দেবে? জানো অনেকদিন কেউ আমাকে মুখে তুলে খাওয়ায় না।
আশিক দিশার ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
-দিতে পারি। কিন্তু তোমার চোখে আমি হাসি দেখতে চাই।
দিশা চোখ মুছতে মুছতে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল
-আচ্ছা। ঠিকাছে।

আশিক দিশাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। আর দিশা বাচ্চাদের মত খুনসুটি করছে। দিশা আজ মনেহয় একটু মত হয়ে গিয়েছে। একটু পরে হয়তো বায়না ধরবে আশিকের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×