আসসালামু আলাইকুম। আমি একজন প্রফেসনাল সিভি রাইটার। আমাকে আপনার দরকার। কেন দরকার জানেন? দেখুন, আপনারা খুব ভালো করেই জানেন যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনারা এমন কিছু শিখে-পড়ে হাতি-ঘোড়া উল্টায়ে ফেলেন নাই, যার জোরে সিক্স ডিজিট স্যালারির চাকরি পেয়ে যাবেন, আনলেস ইউ আর আ টেকি অর লাকি পারসন। তাই আপনাকে সিভি লেখা জানতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অনেক উটকো বুদ্ধিজীবী প্রশ্ন করে বসতে পারে, এত বছর ভার্সিটিতে পড়েও কেন আপনি সিভি নিজে নিজে লিখতে পারেন না। জাস্ট ইগনর দেম। কিংবা ইগনর যদি না করতে চান, দুইটা কথা যদি শুনায়ে দিতে ইচ্ছা করে, তাহলে বলতে পারেন, আপনি যে এত বছর কলাম লিখতেছেন, দেশের উদ্দেশ্যে এত এত মহৎ বাণী দিতেছেন, আপনি কি পাওয়ার পয়েন্টে উন্নত মানের স্লাইড বানাইতে পারেন? আপনি কি গরুর মাংসের কিমা বানাইতে পারেন? আপনি কি ফ্রেঞ্চ স্টাইলে চুমা খাইতে পারেন? না পাইরা থাকলে তো অধিক কথার সার্থকতা নাই। হুমায়ূন আহমদের ডায়লগ দিয়া দিবেন। তখন তারা হুমায়ূন আহমেদকে গালি দেয়া শুরু করবে আপনাকে রাইখা। কাহিনী শেষ।
আচ্ছা, আমরা শুরু করি, কেমন? প্রথমেই বলে রাখি, আপনাদের যেই যুক্তিগুলা দিবো, ওগুলা বাজে। তবে যেহেতু আপনি ছোটবেলা থেকেই মুখে তুলে না দিলে চাবাইতে অভ্যস্ত না, তাই আমার দ্বারস্থ হতেই হবে। আমি আপনাদের সংক্ষেপে সিভি রাইটিং কোর্সের প্রয়োজনীয়তা জানিইয়ে দিচ্ছি।
১। এটি একটি প্রাচীন ব্যবসা। শুধু বাংলাদেশে না, আমেরিকাতেও এরকম অনেক সিভি রাইটিং এজেন্সি আছে। তারা অতি যত্ন সহকারে আপনার সিভি লিখে দিবে। আমেরিকায় বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ সিভি লেখার কাজে নিজের মেধা ব্যবহার না করে অন্যকে সেই সময়টা দিয়ে দেন। সুতরাং আপনাকেও দিতে হবে।
এখন শোনেন, আমেরিকায় মানুষের টাকা আছে প্রচুর। সেই টাকা খসানোর জন্যে নানারকম পন্থা বের করে বিভিন্ন ধান্দার মানুষ। আমেরিকা মানেই যে ছহি, শুদ্ধ দেশ; তা কিন্তু না। আমেরিকাতেও প্রচুর ধান্দাবাজ আছে। সুতরাং, আমেরিকা করলেই যে আপনাকে করতে হবে, তা না। তবে আপনারা করবেন। কেন করবেন? সে প্রশ্নের উত্তর আমি জানি, কিন্তু বলবো না। শুনলে আপনাদের মন খারাপ হবে।
২। আপনাকে প্রতিটি কাজের জন্যে আলাদা আলাদা সিভি বানাতে হবে। প্রতিটি কাজের জন্যে আলাদা আলাদা কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। যেন এইচ আর অথবা এ্যাডমিন প্রথমবার দেখাতেই আপনার সিভি আবর্জনার বাক্সে না ফেলে দেয়। তাই আপনারা ডাক্তার থেকে সুইপার থেকে রকেট সায়েন্টিস্ট, বিভিন্ন পদে এ্যাপ্লাই করলে এক সিভি দিয়ে হবে না।
ধরুন একজন আর্টসে পড়া স্টুডেন্ট রকেট সায়েন্টিস্ট পদে এ্যাপলিকেশন করবে। এখন এই ইন্ডাস্ট্রিটা তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। তার কোনো অভিজ্ঞতা নাই, পড়াশুনা নাই, সে কী করবে? জ্বী, ঠিক ধরেছেন। একটা উন্নত মানের সিভি বানাবে। আপনাকে ট্র্যাক চেঞ্জ করতে হলে গুগল থেকে প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। অন্তত দুই-তিন ঘন্টা তো লাগবেই! এরপর আপনি প্রিপারেশন নিবেন কখন, আর কি-ওয়ার্ড রিসার্চ করে সিভি বানাবেন কখন! প্রফেশনাল ক্যারিয়ার কন্সালটেন্ট আকা সিভি রাইটার ছাড়া কি এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব? জ্বী না, সম্ভব না। সুতরাং, আপনারা একটি চমৎকার ক্যারিয়ার পেতে চাইলে চমৎকার কিছু সিভি বানিয়ে রাখুন। আপনাকে প্রতিটার জন্যে আলাদা আলাদা সিভি বানাতে হবে। এবং এজন্যে কার কাছে আসতে হবে? জ্বী। আমার কাছে। আপনি চাইলে ইন্টারনেট ঘেঁটে এইসব শিখে নিতে পারেন। কিন্তু সবাই এত ইন্টারনেট ব্যবহার করলে ইন্টারনেট প্রোভাইডার কোম্পানিগুলোর ক্রয়কৃত ব্যান্ডউইথের ওপর প্রবল চাপ পড়বে। তাই এগুলো আমাদের হাতে ছেড়ে দিন।
৩। অনেকেই অভিযোগ করেন যে সিভিতে খুব সুন্দর সুন্দর কথা লেখা, সুন্দর ডিজাইন করা, তা দেখে আকৃষ্ট হয়ে তলব করা হয়, কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে কিছু পারে না। দেখুন, এর জন্যে আপনি দায়ী, সিভি রাইটিং এজেন্সি না। আপনি তাকে বেসিক কোশ্চেন করবেন না, যেমন শেষের কবিতার লেখক কে, পলাশীর যুদ্ধ কত সালে হয়েছিলো, এসব না করে আপনি জিজ্ঞাসা করছেন উগান্ডার রাজধানীর নাম কী। এখন ক্যান্ডিডেট এই প্রশ্নের উত্তর না জানলে তো আমার এজেন্সি দায় নিবে না!
সিভি রাইটিং একটি সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্র। সিভি লিখে দিয়ে অনেকের বেকারত্ব বিমোচন হচ্ছে। সরকারের কাছে আবেদন, এই খাতে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে সাহায্য করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৩