দীন ইসলাম: তৃতীয় স্ত্রী মাসুমা চৌধুরী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুশয্যায়। স্বামী হয়েও সরকারের মাঝারি মানের আমলা রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার মো. নূর্বল ইসলাম দিচ্ছেন না স্ত্রীর ভরণপোষণ ও চিকিৎসার কোন খরচ। ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন, ইচ্ছাকৃতভাবে টেলিভিশন নষ্ট করা ছাড়াও বাসার দৈনিক পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার সব আয়োজনও চূড়ান্ত হয়েছে। ফলে ভাই-বোনদের সহায়তায় স্বামীর মগবাজারের বেলালাবাদ কলোনির বাসায় থেকে প্রাণপণে জীবন-যুদ্ধ চালাচ্ছেন মাসুমা চৌধুরী।
ওদিকে নির্যাতিত তৃতীয় স্ত্রীর অনুমতি না নিয়েই চতুর্থ বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার। এজন্য তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী ‘কুমারী’ কারও সঙ্গে তাকে বিয়ে দেয়ার আয়োজনে ব্যস্ত। এর আগের দু’টি বিয়ে স্ত্রীদের অনুমতি না নিয়েই করেছেন। এ আমলার বিয়ে বিয়ে খেলা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অন্যতম আলোচিত বিষয়। বিষয়টি কর্মকর্তার বাড়ির চার দেয়াল পেরিয়ে সচিবালয়ে চলে এসেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৃতীয় স্ত্রী মাসুমা চৌধুরী বলেন, আমার কাছ থেকে চতুর্থ বিয়ের অনুমতি নেননি মো. নূর্বল ইসলাম। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কিভাবে বিয়ের আয়োজন করেন তিনি? শুনেছি তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী এনিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে নূর্বল ইসলাম বলেন, গত ২৭শে মে আমি তাকে তালাক দিয়েছি। সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট আমিনুল ইসলামকে ফোন করলে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। তালাকনামা দেখানোর কথা বলতেই তিনি বলেন, সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। আমি আশা করবো আপনি রিপোর্টটি করবেন না। ঢাকায় এসে কাগজপত্র দিলেই বুঝতে পারবেন ওরা কত খারাপ। ওদিকে সংস্থাপন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়ে বিয়ে খেলাসহ নানা অভিযোগে এ আমলার বির্বদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এখন চলছে ফাইল চালাচালি। আগামী সপ্তাহেই তার বির্বদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিন স্ত্রী ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধানমন্ডির বাসিন্দা তানজিনা সুলতানা তানিকে ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে প্রথম বিয়ে করেন মো. নূর্বল ইসলাম। এটি তার প্রথম বিয়ে। এরপর তাদের ‘রিসাল’ নামে এক সন্তান হয়। সাবেক এক সচিবের এ মেয়েকে কখনওই স্ত্রীর যথাযথ মর্যাদা দেননি নূর্বল ইসলাম। এজন্য শেষ পর্যন্ত প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ’৯৫ সালে পারিবারিকভাবে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালের ২৬শে নভেম্বর তিনি চাঁদপুরের শাহীন আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর এ ঘরেও পিউলি নামে একটি সন্তান হয়। তবে দ্বিতীয় এ সংসারও খুব বেশিদিন টিকেনি। ওই স্ত্রীর কাছ থেকে বিয়ের অনুমতি না নিয়ে ২০০২ সালের ৭ই অক্টোবর মাসুমা চৌধুরীকে সর্বশেষ বিয়ে করেন তিনি। মাসুমা চৌধুরী বলেন, অবিবাহিত ছেলে পরিচয়ে প্রতারক নূর্বল ইসলাম আমাকে বিবাহ করেন। তার পরিবারের সদস্যদের মৌখিক কথায় আস্থা রেখে বিয়েতে রাজি হই। বিয়ের শর্ত অনুযায়ী ভাল বেতনের একটি এনজিও’র চাকরি থেকে ইস্তফা দেই। তবে আগের দু’টি বিয়ের খবর জানলে আমি কখনওই তাকে বিয়ে করতাম না। তিন স্ত্রী সম্পর্কে জানতে চাইলে নূর্বল ইসলাম বলেন, তিন বিয়ে করেছি। তবে সব বিয়েই বৈধ উপায়ে হয়েছে। এনিয়ে লুকোছাপা করার কিছু নেই।
বিয়ের পর আট বছর অন্ধকারে ছিলেন মাসুমা চৌধুরী। জানান, গত ৮ই জুন নিজের বাসার আলমারি গোছাতে যান তিনি। এরপর দু’টো ফটো অ্যালবাম ও বাসার অন্যান্য কাগজপত্র দেখে জানতে পারেন আসল কাহিনী। কাগজপত্রে তিনি দেখেন নূর্বল ইসলাম এর আগে তানজিনা সুলতানা তানি ও শাহিন আক্তারকে বিয়ে করেছেন। উভয়ের ঘরে একটি করে সন্তান যথাক্রমে রিসাল ও পিউলি রয়েছে। বিষয়টি জানার পর ১১ই জুন চট্টগ্রামের হালিশহর থানায় স্বামী নূর্বল ইসলাম ছাড়াও তিন ভাই মো. ইউনুছ মিয়া, ইউসুফ মিয়া ও আলী আহমদকে আসামি করে মামলা করেন মাসুমা। প্রতারণা ও আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলা নং- ৬, ধারা-৪০৬/৪২০/৪৯৫/৩৯ দণ্ডবিধি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাসুমা চৌধুরী বলেন, আমার প্রভিডেন্ট ফান্ডের তিন লাখ ও দেনমোহরের এক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন নূর্বল ইসলাম ও তার তিন ভাই। আত্মসাৎ ছাড়াও আমার স্বামী ও তার ভাইয়েরা ঢাকা শহরে একটি ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার জন্য যৌতুক হিসেবে দাবি করছে। যৌতুকের জন্য এর আগে অনেকবার আমার ওপর সীমাহীন অত্যাচার চালিয়েছে তারা। বিভাগীয় কমিশনার নূর্বল ইসলাম বলেন, আমাকে বিবাহিত জেনেই বিয়ে করেছেন মাসুমা। আমার ঘটকের নম্বর দেই, আপনি তাকে জিজ্ঞেস করে দেখেন- তবেই ঘটনার সত্যতা পেয়ে যাবেন। মাসুমা যা বলে বেড়াচ্ছেন তা সত্যি নয়।
সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছে তৃতীয় স্ত্রীর ধরনা: নূর্বল ইসলামকে সহজে ছেড়ে দেয়ার পাত্রী নন মাসুমা চৌধুরী। এজন্য প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও সংস্থাপন সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছে ধরনা দিয়েছেন তিনি। অভিযোগ আকারে বিভাগীয় কমিশনার নূর্বল ইসলামের নারীঘটিত কাহিনী ও অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। ওই অভিযোগের সঙ্গে তিনি নূর্বল ইসলাম ও তিন ভাইকে আসামি করে চট্টগ্রামের হালিশহর থানায় প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলার এজাহারের কপি, রমনা মডেল থানার দুইটি জিডি’র কপি ও কাবিননামার ফটোকপি জমা দিয়েছেন। একই সঙ্গে নূর্বল ইসলামের নানা কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করে একটি আবেদন জমা দিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপৰের কাছে জমা দেয়া আবেদনে তিনি বলেছেন, আমি রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার মো. নূর্বল ইসলামের স্ত্রী। স্বামী কর্তৃক প্রতারিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত ও ৰতিগ্রস্ত এক অবলা নারী। তালাকের ভয় দেখিয়ে আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এ অবস্থার প্রতিকার চাই। নূর্বল ইসলাম বলেন, তালাক দেয়া স্ত্রীকে কেউ ভরণপোষণ দেয়? আমার সরকারি বাসা জোর করে দখলে রেখেছেন মাসুমা। তাকে উচ্ছেদ করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন দপ্তরে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি।
এখন যেভাবে দিন কাটাচ্ছেন মাসুমা চৌধুরী: গত বছরের ১১ই জানুয়ারি ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে মাসুমা চৌধুরীর। তবে যৌতুক না দেয়ায় চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে তাকে স্বামী নূর্বল ইসলাম মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন বলে আবেদনে উলেৱখ করেছেন। তিনি বলেছেন, মৌলিক ও খোরপোশ বাবদ প্রাপ্য খাদ্য, বস্ত্র, গহনা, প্রসাধনী, হাত খরচের টাকা দিচ্ছেন না স্বামী। এখন ভাই-বোনদের কাছ থেকে ধারকর্য করে চিকিৎসা ও খোরপোশ নির্বাহ করে দীনহীনভাবে মুমূর্ষু অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। স্বামীর নামে বরাদ্দ করা সরকারি বাসায় থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছি। গত বছরের ১৩ই সেপ্টেম্বর থেকে অজ্ঞাত ঠিকানায় বসবাস করছেন নূর্বল ইসলাম। বোনের অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মোহাম্মদ আবদি রাহী বলেন, যৌতুকের জন্য দুলাভাই আমার বোন ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। এত টাকা আমরা কোথায় পাবো? বোনকে তার বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আঁটছে। মাসুমা চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রীয় গুর্বত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন আমার স্বামী। তাই তার বির্বদ্ধে করা মামলায় তদন্ত ও বিচার ব্যাহত হচ্ছে। আমার মানবেতর অবস্থা বর্ণনা করে গত বছর সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরে দু’টি জিডি করেছি। ওদিকে নিজের অবস্থা বর্ণনা করে সরকারের ঊর্ধ্বতনদের কাছে দেয়া চিঠিতে মাসুমা চৌধুরী বলেছেন, বিষয়টির প্রতি নজর না দিলে স্বামী কর্তৃক প্রতারিত, নির্যাতিত, অবহেলিত এবং নিগৃহীত একজন নারী কিভাবে বিনা চিকিৎসায় ও মানসিক যন্ত্রণায় কাতর হয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে তা প্রত্যৰ করবে জাতি ও সরকারের ঊর্ধ্বতনরা।
বিভাগীয় কমিশনার কিন্তু একজন বড় মাপের আমলা। এর আন্ডারে একটি বিভাগের সবকয়টি জেলা প্রশাসক। এই আমলা কয়দিন পরেই সচিব হবে যেমন জনাব সুনিল চন্দ্র পোদ্দার, সচিব ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয় যিনি ভিওআইপি, ইন্টারনেট, বিটিসিএল, টেলিটক সহ টোটাল টেলিকমিউনিকেশনের মালিক ও ভারতের নামে সব লিখে দিচ্ছে, অলরেডি ২৫% দিয়ে দিছে।
তো ঐ কমিশনার টাইপের লোকেরাই দেশ চালায়। কি আর আশা করা যায় এদের কাছে ? তাই আমরা সব সময় বলছি চলেন আমারা আমলা পিডাই।