বাংলা বই, অতিপরিচিত কিছু বই। খুব ভারিক্কি নয়, বরং একটু টানটান।
এর যে কোন একটা অপঠিত থাকলে, দারুণ কোন স্বাদ থেকে বঞ্চিত রয়ে যাওয়া হবে।
চটজলদি লিখে ফেললাম, লিস্টে আসতে পারে এমন আরো কিছু সহব্লগাররা সাজেস্ট করতে পারেন। স্মৃতি হাতড়ে, কথা মিলিয়ে দ্বিতীয় পোস্ট করব।
১. আত্মউন্নয়ন
যে কোন পরিস্থিতিতে এ বই থাকবে এ লিস্টের এক নম্বুরি!
সেল্ফ ডেভলপমেন্ট নিয়ে হররোজ ডজনখানেক বই তো বেরোয়, কিন্তু এটা যে চিরায়তর চিরায়ত। বিদ্যুৎ মিত্র ছদ্মনামে বাংলা ভাষার এক প্রধান শক্তিমান লেখক কাজীদা কিন্তু শুধু বইটা এডিট করে ছেড়ে দেননি তাঁর মাসুদ রানা’র মত- বরং লিখেছেন নিজের হাতে, তাও আবার মনের সবটুকু রঙ মিশিয়ে।
কাজীদার লেখা যে কতটা ক্ষুরধার- এ বইতে সে পরিচয়টা আরেকবার পাওয়া যাবে। আত্মউন্নয়ন বইতে তিনি প্রায় অবিশ্বাস্য কথাগুলোকে এত বেশি সরল ভাষায় বলেছেন, যেখানে পাঠক আপনাআপনি হয়ে পড়েন মাখন আর কাজীদার লেখনী পরিণত হয় মাখন কাটার ছুরিতে, যেটায় ধার নেই... আর বইয়ের আলোচনা? এ বইয়ের আলোচনা আমি করার কে?
২. জোছনা ও জননীর গল্প
নিরবতা হিরন্ময়। কতবার কেঁদে ফেলেছি জানি না, কিন্তু কান্নায় হেঁচকি উঠে গিয়েছিল একবার- সার্থক হুমায়ূন আহমেদের কলম ধরা। হুমায়ূনের সেরা বই আমার কাছে আয়নাঘর, অনিল বাগচীর একদিন (আরো ডজনখানেক নাম, মনে পড়ছে না কেন?)
৩. ক্রুগো, পৃ
বছর বছর এক দুটা করে সায়েন্স ফিকশন তো জাফর ইকবাল লেখেনই। এ আর নতুন কী? দু হাজার বারোতে ভাবলাম, নিরানব্বইয়ের সেই পাঠক কি ক্রুগোতে এখনো মুগ্ধ? অবাক হয়ে দেখলাম, এখনো। বাইরে বাইরে মনে হতে পারে আর সব টিপিক্যাল জাফর সাই-ফাই এর মতই এ দুটা। অসাধারণ অন্তপ্রবাহ আছে ভিতরে, ঠিকই গ্রাস করে নিবে।
৪. ছবির দেশে, কবিতার দেশে
সার্থক বই তো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কম লেখেননি। শতশত। কিন্তু এখানটার মত আর নয়। নিতান্ত নিম্নমধ্যবিত্ত সুনীল কীভাবে আমেরিকায় গেলেন, আর সেখান থেকে প্যারিস ও প্যারিসবাসিনীর প্রেমে পড়া। সবচে অবাক বিষয় হল, বইটার চ্যাপ্টারে চ্যাপ্টারে পাতায় পাতায় শিল্প আর সাহিত্য- ভাষা আর কবিতা –আন্দোলন আর সংস্কৃতির এমন সব রহস্য উন্মোচিত হয়, নিতান্ত দিন-আনা-খাওয়া মানুষটাও বুঁদ হয়ে যাবেন শুধু তাই না, একাত্ম বোধ করে অর্ধেকটা ফরাসি আর বাকি অর্ধেকটা কসমোপলিটান বাঙালিতে পরিণত হবেন।
যদি বলি ভ্রমণকাহিনীর কথা, এ বইয়ের তুলনা কোথায়?
৫. হেল কমান্ডো
লিস্টে এত উপরে ওঠার কারণ একটাই, এমন ওঅর-থ্রিলার অ্যাডভেঞ্চারগন্ধা কাহিনী বানিয়ে বানিয়েও বাংলা ভাষায় লেখার চল আজো আসেনি। আর এটাতো তরতাজা বাস্তব ঘটনার ডিপো। হ্যাটজ অফ টু মেজর আনোয়ার হোসেন, আ রিয়েল হেল কমান্ডো।
৬. শার্লক হোমস অমনিবাস
কোন উপায় নেই একটা উপন্যাস বা ছোটগল্প বাদ দেয়ার। উপভোগ্য মূলানুগ অনুবাদ পড়তে হলে কোলকাতার দ্বারস্থ হতে হবে। শার্লক হোমস কোন গোয়েন্দা গল্প নয়... অন্যভাবে বলতে গেলে, শার্লক হোমস যদি গোয়েন্দা গল্প হয়ে থাকে, তাহলে এরপর পৃথিবীতে আর কোন গোয়েন্দা গল্পই লেখা হয়নি। (যে কোন গোয়েন্দা লেখকের ভক্ত আমার উপর ক্ষেপে যেতেই পারেন, তার অধিকারও রয়েছে, কিন্তু কথাটা আমি উইথড্র করব না। হা হা।) আমার কাছে ফেলুদা লেগেছে হোমসের ছায়া আর ছায়া তো কখনোই কায়ার শতভাগ নয়। কাকাবাবু লেগেছে আবার ফেলুদার ছায়া, কিন্তু একটু হটে গিয়ে।
৭. কোয়ান্টাম মেথড, অটোসাজেশন, কণিকা সমগ্র
কোয়ান্টাম মেথড বইটা না পড়লেও চলে, যদি আত্মউন্নয়ন পড়া হয়। এটার ভাষা সুদিঙ, তারপরও উপভোগ্য লিস্টে ঠিক আসে না। অটোসাজেশনকে যদি বলি মহাজাতকের মাস্টারপিস, তাহলে কণিকা সমগ্রকে কী বলব? মাত্র তিনশ পাতার বিশ্বকোষ? এমন এক বিশ্বকোষ, যেখানে আদপে কোন ইনফরমেশনই নেই- আছে শুধু প্রবাহ। অস্বাধারণ!
৮. সুকান্তের কবিতা
উপভোগ্য। অনেক চেষ্টা করেও বইয়ের নাম আলাদা করে বলতে পারলাম না। কবিতা এমনি এক চীজ, যা খেতে মোটেও চীজের মত নয়, বরং পাথরকণা কুচি করে চিবুতে বলা। সেক্ষেত্রে সুকান্ত নমস্য। তাঁর তারুণ্যই এমন উপভোগ্য সরলস্য সরল কবিতা লিখিয়ে নিয়েছে তাঁকে দিয়ে। আহ্, আমরা সিঁড়ি, আর ওরা আমাদের মাড়িয়ে চলে যায়।
৯. রাখালী
জানি না বানানটাও ঠিক হল কিনা। জসীমউদদীন কী লিখেছেন কবিতাগুলো? ভিনগ্রহের বাংলা বোঝা প্রাণিও তো একাত্ম হয়ে যাবে লহরীতে! ওই সময়টার গন্ধ-রূপ-রস আর সমাজের প্রতিটা জিনিসের সাথে নেয়ে উঠবেন, তামুক খাওয়া কৃষকে পরিণত হবেন এক পলকে।
১০. ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়
নাম তুলে দিলাম, কারণ বইয়ের নামে কনফউশন আছে। দুটা ছোট বই একত্র করে তৃতীয় নাম দিয়ে ঢাকায় পাওয়া যায়। আবার অন্য নামে আরেকটা আছে। বেদ ও পুরাণে হজরত মোহাম্মদ, কল্কি অবতার ও মোহাম্মদ সাহেব- এ ধরনের নাম। আমার যে উপকার হল, আমিতো একটা ধর্মানুসারী। আর আমার কাছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা আহলে কিতাব হিসাবে বিবেচিত হয়ে গেলেন। সেইসাথে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হল খুব প্রসারিত। এখনো মনে পড়ে, ঠিক করেছিলাম মেয়ের নাম রাখব দ্বাদশী মাধবী শুক্লা। কারণ মাধব মাসের শুক্লপক্ষের দ্বাদশ তারিখে যে মহামানবের আগমন করার কথা ছিল, ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায় কীভাবে যেন হিসাব মিলিয়ে বের করেছিলেন যে সেটা বারো রবউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবীর সাথে মিলে যায়। (গালি নিজ দায়িত্বে দিবেন। মনোবিদরা বলেছেন, কোন মানুষ নেই, যে মনে মনে বা জোরে মা শব্দটা উচ্চারণ করার সাথে সাথে তার নিজের মায়ের মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে না।)
রাঙ্কের বাইরে: বিদ্রোহী ও অগ্নিবীণা
বই নয় তো হল কী? বিদ্রোহী’র বই হতে হবে না এখানে জায়গা পেতে। অগ্নিবীণা তো সেই ব্রিটিশ আমলে এক ধাক্কায় দু হাজার কপি বিক্রি হল, আর আমাদের প্রয়াত প্রধান কবির একটা বই দু হাজার আটেও বিক্রি হয়েছে মাত্র ত্রিশ কপি (সতর্কতা: ১. শামসুর রাহমানের সব কবিতাই সুন্দর- কিন্তু ওই বইটাও খুব ভাল ছিল সেটা ওই ত্রিশ পাঠক বলতে পারবেন, ২. আমি কিন্তু রবীন্দ্রবই বেশি পড়িনি, গান্ডু এবং মূর্খ বলা চলে। পড়াগুলো থেকে এ লিস্টে আসার মতন কোন নাম পাইনি।)
ফানরাঙ্ক: জীবনে যা দেখলাম
অধ্যাপক গোলাম আজম এ বইটাতে তার জীবনে দেখা অনেক বিষয় তুলে এনেছেন। বইটা পড়ে লেখকের শক্তিমত্তার পরিচয় পাই। বিশেষ করে তাঁর সুদূর প্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি এবং চোখের সক্ষমতার উদাহরণ হতে পারে বইটির লেখনী (নিজ দায়িত্বে পড়বেন, আমি ভাগীদার না।)