somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হেফাজত শফীর ব্যক্তিগত জীবন তিন স্ত্রী ও সাত সন্তান

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশেষ প্রতিবেদন: আল্লামা আহমদ শফীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে অনেকেই কিছু জানেন না। তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

কোথায় জন্ম আল্লামা শফীর?
আল্লামা শফীর জন্ম ভারতের বিহারে। প্রথমে বাংলাদেশের নোয়াখালিতে আসেন এবং সেখান থেকে পরবর্তীকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় আস্তানা গাঁড়েন। হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রধানপদে নিজের নিয়োগকে বৈধতা দেওয়ার কারণে জন্মস্থান নিয়ে রহস্য সৃষ্টি করা হয়।

কর্মজীবনের শুরু: পটিয়া বনাম হাটহাজারী

আল্লামা শফী প্রথম পটিয়ার আল জামেয়া আল ইসলামি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পটিয়া মাদ্রাসায় ঢুকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে টেনে আনার চেষ্টা শুরু করেন তিনি। কিন্তু ব্যর্থ হন। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে মাদ্রাসা থেকে চলে আসেন। তারপর পটিয়াতেই জিরি মাদ্রাসায় কিছু সময় শিক্ষকতা করেন। পটিয়ার ওই দুটি মাদ্রাসা এখনও আল্লামা শফীর রাজনীতির বিরোধী-ব্লক হিসেবে কাজ করছে।

আল্লামা শফীর মাদ্রাসা প্রধানের পদ
আল্লামা শফী অতপর সাধারণ শিক্ষক হিসেবে চাকুরি নেন দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে। এই মাদ্রাসায় চাকরী নেয়ার পর আল্লামা শফী কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট করার জন্য ভয়ংকর ও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন।

যেভাবে মাদ্রাসা প্রধান হলেন আল্লামা শফী
১৯৮৪ সালে হাটহাজারীর মুহতামিম মাওলানা আবদুর রহিম (আব্দুল খালেদ) মারা যাওয়ার পর সে সুযোগ চলে আসে আল্লামা শফীর সামনে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় মুহতামিম নির্বাচনের নির্ধারিত আইন। হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার নিয়ম অনুসারে যোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে কেউ হাটহাজারীর বাসিন্দা হলে তিনিই হবেন মাদ্রাসা প্রধান। স্বাভাবিকভাবেই, অগ্রাধিকারভিত্তিতে মাওলানা রহিমের ভাই আল্লামা সেলিমের মুহতামিম হওয়ার কথা । কিন্তু আল্লামা সেলিমের কর্তৃত্ব কখনোই নিরঙ্কুশ হয়নি। নানান জটিলতার কারণ এই মাদ্রাসার ইমাম বা অভিভাবকের দায়িত্ব চলে যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের খতিব উবায়দুল হকের কাছে।
এদিকে আল্লামা সেলিমের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ তুলে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনেই আল্লামা সেলিমকে মারাত্মকভাবে শারিরীক নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীকালে শাস্তি স্বরূপ আল্লামা সেলিমের মুহতামিম হওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে যায়। পর্দার সামনে চলে আসেন আল্লামা আহমদ শফী।
হাটহাজারীর স্থানীয় অনেক ব্যক্তিই মনে করেন, আল্লামা সেলিমের বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগটি তাকে ঘায়েল করার হাতিয়ার ছিল। কিন্তু মাওলানা সেলিমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে মুহতামিম পদ থেকে তাকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হলেও মাদ্রাসাটির প্রধান হওয়া সম্ভব ছিল না আল্লামা শফীর পক্ষে। অবশেষে বিএনপির দ্বিতীয় বারের শাসন আমলে আল্লামা শফী বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব ও মাদ্রাসা ইমাম মাওলানা উবায়দুল হকের সঙ্গে তার ঘনিষ্টতাকে কাজে লাগিয়ে এবং উবায়দুল হকের প্রভাব-প্রতিপত্তি ব্যবহার করে মাদ্রাসা প্রধানের পদটি দখল করেন।
আল্লামা শফী হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম হওয়ার পরই রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। নানান চেষ্টার পর ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠন তৈরী করেন এবং হেফাজতে ইসলামের সার্বিক কর্তৃত্ব নিয়ে নেন। হেফাজতে ইসলাম পরিণত হয় এক ব্যক্তি, এক নেতার সংগঠনে।

হুজুরের স্ত্রীগণ?

হাটহাজারী মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও জানেন না আল্লামা আহমদ শফীর স্ত্রী কত জন। বর্তমানে হুজুরের তিন জন মতান্তরে চারজন স্ত্রী বিদ্যমান। ৯২ বৎসরের জীবনে আল্লামা শফী অন্তত ছয় বার বিয়ে করেছেন। স্ত্রীদের মধ্য থেকে কারও মৃত্যু হলে, সে স্থান শূন্য থাকেনি। আল্লামা শফী প্রথম বিয়ে করেন ২৩ বছর বয়সে।

আল্লামা শফী স্ত্রীদের নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতরেই একটি কমপ্লেক্সে বসবাস করেন। তবে ব্যক্তিজীবন নিয়ে গোপনীয়তা রাখার চেষ্টা করেন তাই তার পারিবারিক অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলাম কিংবা হাটহাজারী মাদ্রাসার নেতা-কর্মীদের দাওয়াত দেয়া হয় না।

সন্তান সংখ্যা সাত

আল্লামা শফীর মোট সাত সন্তান। এর মধ্যে চারজন কন্যা ও তিন জন পুত্র। এই সাত সন্তানের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন মেজ ছেলে আনাস মাদানী। অন্য দুই ছেলে গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়া থাকেন। তিন মেয়ের জামাই-ই মাদ্রাসায় শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত। আনাস মাদানী হাটহাজারী মাদ্রাসায় ‘বড় হুজুরের’ উত্তরসূরী হিসেবে পরিচিত। মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র তার কক্ষটিই শীতাতপ নিয়ন্ত্রীত ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত।

বেহেশতী পয়গাম

২০০৮ সালের দিকে আল্লামা শফী হুজুর একদিন মাদ্রাসায় প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, তাঁর খোঁড়া মেয়েকে যে বিয়ে করবে, সে সরাসরি বেহেশতে যাবে। এই ঘোষণা সেই সময় হাটহাজারী এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি করে। এ মুহূর্তে হেফাজতের লোকজন এসব এড়িয়ে গেলেও তৎকালীন সময়ে এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।

হেফাজতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান হুজুর তাঁর ঘোষণার পেছনের যুক্তিও তুলে ধরেছিলেন। হুজুর বলেছিলেন, একজন সতী, পরহেজগার, পঙ্গু নারীকে বিয়ে করলে এই বিয়েই হাসরের ময়দানে নাজাতের উসিলা হবে।

আল্লামা শফীর এই ঘোষণার পরে হাটহাজারীর এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জামালউদ্দিন প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে আল্লামা শফীর শারীরিক প্রতিবন্ধী কন্যাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীকালে জামালউদ্দিন তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর প্রতি অবহেলা দেখালে প্রথম স্ত্রীর বড় সন্তান রোবায়েত বিন জামাল এ নিয়ে আল্লামা শফীর কাছে বারবার অভিযোগ করেন। কিন্তু এর কোন সুরাহা তারা পাননি বলে জানা যায়।

হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

হাটহাজারীতে আল্লামা শফী ও তাঁর মাদ্রাসা নিয়ে নানান গল্প ফাঁদা হয়। এর একটি হচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা। সংখ্যা বাড়িয়ে বলার মাধ্যমে মাদ্রাসার গুরুত্ব যেমন তুলে ধরা হয় তেমনি ক্ষমতা প্রকাশ করতেও তা ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে ছাত্রসংখ্যা অনুদান পেতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাধারণতভবে প্রচার রয়েছে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রসংখ্যা বিশ থেকে ত্রিশ হাজার। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে নিশ্চিত জানা গেছে – হাটহাজারী মাদ্রাসায় মোট ছাত্রের সংখ্যা কোনভাবেই আট হাজারের বেশি নয় ।

তথ্যসূত্রঃ অপরাধ কন্ঠ ।
Details:
Details:
https://aparadhkantha.wordpress.com/2013/07/30/আল্লামা-শফীর-ব্যক্তিগত-জ/
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২৫
২৮টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×