somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

// এত বেতন লইয়া ফানুসদা কী করিবেন! // মাইনুল এইচ সিরাজী | // সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫ // Prothom Alo // রস+আলো //

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের ফানুসদার আজ মন ভালো। কারণ, অষ্টম পে-স্কেল অবশেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে। ফানুসদা ক্যালকুলেটর আর কাগজ-কলম নিয়ে বসলেন। এটা ফানুসদার প্রতিদিনের অভ্যাস। হিসাব করে দেখেন, নতুন স্কেলে তিনি কত টাকা বেতন পাবেন। টাকার অঙ্কটা দেখে তাঁর চোখ জুড়িয়ে যায়। বাহ্, দারুণ তো! সরকারি চাকরি করে এত টাকা বেতন! তার মানে তিনি যে প্রতিদিন অফিসে কিছু সময়ের জন্য নিয়ম করে ঘুমান, সে জন্যও সরকার তাঁকে বাড়তি বেতন দেবে!
তাঁর ঠোঁটের হাসিটুকু কান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেল। এমন সময় বৌদি ঢুকলেন ঘরে। মুখ ঝামটা মেরে বললেন, ‘অফিসে না গিয়ে বসে বসে হাসছ কেন? পাগল না ছাগল!’
ফানুসদা বললেন, ‘আরে পাগল না, পাগল না, ছাগল! খাসি!’
‘মানে?’
‘আজ খাসি জবাই হবে। পে-স্কেল দিয়েছে। এই দেখো।’
ফানুসদা হিসাবের কাগজটা বৌদির দিকে এগিয়ে দিলেন। বৌদি চোখ কপালে তুলে বললেন, ‘এ তো দেখি অনেক টাকা! দিয়ে দিয়েছে নাকি?’
ফানুসদা অতিকষ্টে একটা ঢোঁক গিললেন, ‘আরে না না, এখনো দেয়নি, ঘোষণাই তো এল মাত্র!’
বৌদি বললেন, ‘তুমি ছাগল না কী যেন বললে?’
‘আরে ধুর, আমি ছাগল না। বলেছি ছাগল জবাই হবে।’
‘কোথায় ছাগল জবাই হবে?’
‘বাজারে। দাও, বাজারের ব্যাগ দাও। দুপুরে বিরিয়ানি হবে।’
‘তুমি অফিসে যাবে না?’
‘অফিসে তো প্রতিদিন যাই। বিরিয়ানি তো আর প্রতিদিন হবে না। আজ ইচ্ছেমতো বাজার করব। আজ বিরিয়ানি খাওয়ার দিন।’
ঢাউস সাইজের ব্যাগ নিয়ে ফানুসদা বাজারের দিকে রওনা দিলেন। এই ব্যাগে ভরে আস্ত একটা ছাগল নিয়ে আসা যাবে। বাসা থেকে বেরোতেই বাচ্চাকাচ্চার সঙ্গে দেখা। দু–একজন জানতে চাইল, ‘ফানুসদা আঙ্কেল, কোথায় যান?’
ফানুসদা আজ আর রাগ করবেন না। তাই মোলায়েম স্বরে বললেন, ‘বাজারে যাই, তোমাদের জন্য চকলেট আনব।’
এক দুষ্টু বাচ্চা জিজ্ঞেস করল, ‘চকলেট আনতে এত বড় ব্যাগ লাগে?’
‘শুধু চকলেট না, টকলেটও আনব।’ ফানুসদা ছেলেটার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলেন। গলির মাথায় এসে ভাবলেন, আজ আর হেঁটে যাওয়া ঠিক হবে না। সরকারি চাকরি করেন, মোটা অঙ্কের বেতন পাবেন। তাঁর একটা স্ট্যাটাস আছে না! সেটা ভেবেই কলার নেড়ে রিকশায় উঠে বসলেন। তাঁর মনে সংগীত দোলা দিতে লাগল, ‘যা পেয়েছি আমি তা চাই না, এত টাকা দিয়া আমি কী করিব...।’ না, ছন্দ মেলেনি। তবু তিনি গুনগুন করতে লাগলেন।
রিকশা থেকে নেমে ফানুসদা জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই মিয়া, ভাড়া কত তোমার?’
‘পঞ্চাশ টাকা।’
ফানুসদা আকাশ থেকে পড়লেন, ‘বিশ টাকার ভাড়া পঞ্চাশ টাকা?’
‘জি স্যার, পে-স্কেল দিছে না? আপনি তো সরকারি চাকরি করেন।’
ফানুসদার মনটা ভালো হয়ে গেল। তিনি আবারও কলার নাড়লেন।
বাজারে ঢুকে তিনি প্রথমে গেলেন মুদি দোকানে। রান্নাঘর খালি। তেল-মসলা নিলেন কিছু। দাম দেখে তাঁর চোখ কপালে উঠে গেল। এত টাকা! দোকানদার বললেন, ‘পেঁয়াজের দামই তো সত্তর টাকা, স্যার। সেই যে উঠেছে তেমনটা আর কমেনি। সমস্যা কী স্যার, পে-স্কেল দিয়েছে না?’ ফানুসদা আবার কলার নাড়লেন।
জুতার দোকানের সামনে দিয়ে যেতে ফানুসদা ভাবলেন, ব্যাটাকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া দরকার। দুর্দিনে কিস্তি সুবিধা দিয়ে কত উপকার করেছে লোকটা। তিনি দোকানে ঢুকলেন। দোকানদার হন্তদন্ত হয়ে বললেন, ‘টাকা দিতে এসেছেন, স্যার?’
‘কিসের টাকা?’ ফানুসদা আকাশ থেকে পড়লেন।
দোকানদার হিসাবের খাতা খুলে বললেন, ‘বারো শ টাকা বাকি আছে স্যার। বৌদি জুতা নিয়েছিলেন কিস্তিতে।’
ফানুসদা কাঁপা হাতে মানিব্যাগ বের করে বারো শ টাকা শোধ করে দিলেন। দোকানদার মুচকি হেসে বললেন, ‘এখন থেকে কিস্তি সুবিধা বাতিল। পে-স্কেল দিয়েছে না?’
ফানুসদা এবার কাঁপা হাতে কলার নাড়লেন। তাঁর কাছে আর শ খানেক টাকা অবশিষ্ট আছে। তাহলে খাসির মাংস? বিরিয়ানি? খাসির মাংস কি কিস্তিতে বিক্রি করে? তাঁর বুকটা ধক করে উঠল। কাঁপা কাঁপা পায়ে মাছ বাজারে ঢুকলেন। এক শ টাকা দিয়ে কিনলেন এক ভাগা মলা মাছ। আজ দুপুরে মলা মাছের বিরিয়ানি হবে। নতুন রেসিপি। পে-স্কেল দিয়েছে না?

// মাইনুল এইচ সিরাজী | // সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৫ // Prothom Alo // রস+আলো //

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×