somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ময়লার বাক্স না মানুষের আস্ত দেহ! // ফারহানা লাকি // বৃহস্পতিবার, ১৫-অক্টোবর-২০১৫ // বাংলামেইল২৪ডটকম //

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেবেলায় শুনতাম মা মারা গেলে বাবা হয় তাওই (তালুই)। এখন দেখছি বাবা না থাকলে মা হয় খুনি। মা না থেকে বাবা থাকলেতো তবু তাওই পাওয়া যায়। কিন্তু বাবা না থাকলে? আধুনিক মুক্তবাজার অথর্নীতিতে এসে বাবা না থাকলে মা হয় খুনি। তাহলে কি দরকার ছিল এই মুক্তবাজার অর্থনীতির। এই উন্নতির? সত্যি মানুষ আগাচ্ছে! নির্মমতার ঘাড়ে চেপে বড্ড বেশি তাড়াতাড়ি।

জানুয়ারি থেকে অক্টোবর এই দশ মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে নবজাতক উদ্ধার হয়েছে ৭৫২টি। এটি কি কেবল সংখ্যা? একজন মা তার সন্তানকে পরিবারের সহযোগিতায় কীভাবে খুন করেছে তার নির্মম কাহিনী এখন শুধুই পরিসংখ্যান? ভাবা যায় এই এক বছরে জমা হয়েছে ৭৫২টি নিষ্ঠুর নির্মম খুনের রোমহষর্ক গপ্প। একটি নবজাতক শিশু যেমন নিজের পায়ে হেঁটে এসে ডাস্টবিনে পড়ে না তেমন সদ্য প্রসব বেদনা নিয়ে মা তার সন্তানকে ফেলে দিতে আসে না, এটা স্পষ্ট। তাহলে পরিবারের অন্য যে কোন সদস্য বা সদস্যরাই এই কাজটি করেন। তিনি তবে কে? নবজাতকের নানা? নানি? মামা? নাকি খালা? নাকি সবাই একসাথে, একদলে?

আমি ভীষণ আতংকিত এই ভেবে যে, এই সংখ্যা এখন কেবল বাড়বে। বাড়বেই। যে খুনের সাথে পরিবার জড়িয়ে থাকে। পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয় সেই খুনকে রুখবে কে? কোন আইন? পরিত্রাণের উপায় আছে কি তবে? সত্যি নেই। আজ সকালে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবিকে তাই বলতে হলো এই নিষ্ঠুর সংসারে এখন আমার বসবাস। যেখানে নবজাতকের নাক কামড়ে খায় কুকুর। যেখানে একজন মা পরিবারের আর সকলের সহযোগিতায় হয়ে ওঠে খুনি। মা এখন খুনি। মা এর কাছে এখন সন্তান থেকে প্রেম, প্রেম থেকে সংসার, সংসার থেকেও সমাজ বড়। মাতৃত্ব এখন ঠুনকো। সন্তান এখন ডাস্টবিনের আবর্জনা।

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে বাঘ একবার নরমাংসের স্বাদ পেয়েছে তাকে ফিরিয়ে আনা কঠিন। তবে কি! যে কিশোর কিশোরী কিংবা যুবক যুবতী নৈতিকতাহীন এই শরীরের খেলায় মেতেছে কিংবা খুন করবার এই হোলি খেলায় নাচছে পরিবারের সাহায্যে সেই পথ থেকে আর ফিরবে কী? শরীরের নেশা এত সহজে ছাড়বে কি? শরীর এখন শরীরে নেশায় ছোটে।

নিষ্ঠুর প্রেমহীন সংসারে মানবিকতা জাগাবার জন্য কেউ আছে কি? কেউ নেই। পরিবারের সবাই এখন একজোট হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বসে এঁকে নেয় ছক। খুন করবার ছক। কে কীভাবে জন্মাবার মিনিট খানেকের মধ্যেই ডাস্টবিনে ফেলে আসবে এক দেবদূতকে! খুন করতে এখন হাত কাঁপে না। বুক কাঁপে না। দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যায় লক্ষ্যবস্তু ডাস্টবিনের দিকে।

আহা কি অসম্ভব ঠাণ্ডা মাথায় রেকি করে নেয়া আসন্ন নবজাতকের পরিবারের সদস্যদের। কে কখন কোথায় কোন সময়ে এই নিষ্ঠুর কাজটি করবেন তার ছক করা। রেকি করা। নিখুঁত পরিকল্পনার নিখুঁত রূপায়ন। কই ৭৫২টি নিউজের কোথাও তো এমন কথা লেখা হয়নি- নবজাতক ফেলতে এসে হাতেনাতে ধরা? মানবিকতা নৈতিকতা এখন ভেসে যাচ্ছে হাতের মুঠোয় থাকা মুঠোফোনের ইন্টারনেটে। শরীর এখন শরীর খোঁজে। মন এখন মৃতপ্রায় এক শব্দ।

নিষ্ঠুর এই খেলার এখনই সমাপন ঘটাতে না পারলে খুনের হোলি খেলায় নিমজ্জিত এই গোষ্ঠী রাষ্ট্রের গলা টিপে ধরবে অচিরেই। এরা বড় ভয়ংকর। এরা নিজেদের লেবাস খুলে যাওয়ার ভয়ে যে কোনো কাজ করতে পারে অনায়াসে। একসাথে পরিবারের সকলে মিলে এরা সিদ্ধান্ত নেয়। এরা সিদ্ধহস্ত। এরা চতু। এরা ধরা পড়ে না। এরা একজন কিংবা দু’জন নয় ৭৫২ বা তারও বেশি। নেহাতই কম নয় সংখ্যাটা। রাষ্ট্রের মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে এদের দিকে। বিষ মহামারী রকমের ছড়াবার আগে এই বিষ উপড়ে ফেলতে হবে। নষ্ট করতে হবে এই নষ্ট বীজের পুরো পরিবারকে।

খুব কঠিন না কিন্তু এদের খুঁজে বের করা। একটু চোখ কান খোলা রাখলেই ধরা সম্ভব। খুব ধনী আর খুব দরিদ্র এই দুই দলের মানুষ সমাজ সংসারের খুব ধার ধারে না। এরা ইচ্ছেমতো চলে। ইচ্ছে স্বাধীনতায়। অন্যের মনোরঞ্জনের জন্য এরা খুব একটা টলেও না নাচেও না। রাস্তার পাশে পলিথিন জড়িয়ে রাতে ঘুমায় যে মানুষ তার কাছে সমাজ সংসার সত্যি উপহাসের। আবার যিনি ডাবল এসি করা ঘরে নরম বিছানায় মখমলের চাদর জড়িয়ে ঘুমায় তার সংসার সমাজ মেইনটেইন করে চলার সময় নেই। তাই ধার ধারে না সমাজের। সংসারের। এরা তাই পরোয়াহীন। সুখী এবং মানবিকও। অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান জন্ম দিলেও তাই এড়িয়ে চলে না। অন্তত মেরে তো ফেলে না!

প্রমাণ করতে রাস্তার পাশে চলতি পথে চোখ রাখুন দেখবেন চুলে জট ধরে গেছে ময়লা কাপড়ে স্তূপ জমে গেছে কিন্তু কোলের মধ্যে সন্তান নিয়ে বসে আছে। যেন সকল সুখের সন্ধান পেয়ে গেছে। ভাত নেই। কাপড় নেই। খাবার নেই তবু সন্তান আঁকড়ে বসে আছে। সন্তানের বাবা কে তা বলতেও পারে না। তবু সে সন্তানের মুখে চুমু দিয়ে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। পরোয়া নেই কারো। সন্তানের বাবা দিয়ে কী হবে? সন্তানই আসল। আর সব তুচ্ছ। অনুভূতি সব। এই পথভিক্ষুকের কাছে তার সন্তানটি চেয়ে দেখুন তেড়ে আসবে মারতে। এরা আর যাই হোক মানুষ। মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ। খুনি নয়।

অন্যের ইচ্ছায় অন্যের মান বজায় রেখে চলে কেবল মধ্যবিত্তরা। পরিবার সংসার সমাজ নিয়ে চলতে হয় এদের। পরিবার আর সমাজের মন জুগিয়ে চলতে সন্তানকে বলি দিতে এরাই পারে। এদের কাছে সন্তান তুচ্ছ। সম্মান অনেক বড়। আস্ত মানুষকে কুকুরের খাবার করে দিলেও এদের কিছু যায় আসে না। বরং এদের সম্মান বাঁচে। সম্মান হলো সব। জীবন তুচ্ছ। এরা ভাবে মানবিকতা দিয়ে কে কবে কী করতে পেরেছে? মানবিক হয়ে লাভ নেই বরং সংসার করো। স্বামী থাকলে সন্তান পাবা গণ্ডায় গণ্ডায়। একটা যাবে তো আর একটা আসবে। অসংখ্য সন্তান জন্ম দেওয়া তো কেবল অসংখ্য মিলনেরই ইঙ্গিত! আহা সেইতো জীবন। সেইতো সুখ। সেইতো সংসার। সমাজ।

এখনই এই নষ্ট স্রোতকে থামাতে হবে। ধরতে হবে হাতে নাতে। পিষে মারতে হবে খুনিগুলোকে। একটা নষ্ট স্রোতকে মূল জনস্রোতে মিশতে দেওয়া কিছুতেই ঠিক হবে না।

মূল্যবোধের চাকায় চড়ে জীবনে জয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়ে কী হবে? বরং ‍লুকিয়ে চুকিয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নাও। প্রেমের হাওয়ায় ওড়ো আর রাস্তা ঘাটে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলো। ময়লার বাক্স না মানুষের আস্ত দেহ! সংখ্যাটা জানুয়ারি থেকে অক্টোবের মাঝামাঝিতে এসে ৭৫২। বছর শেষে এ সংখ্যা কতো দাঁড়াবে?

হে প্রিয় রাষ্ট্র, জন্মভূমি আমার, তোমার ঘাড়ে বসে থাকা সরকারের মাথায় একটু বুদ্ধি দাও। এই হত্যাকারীদের শাসন করবার শক্তি দাও। নয়তো উন্মুক্ত করো শরীরের সকল রহস্যময়তা স্কুলের পাঠ্যবই থেকেই। তুমি ডাস্টবিনে ফেলে রেখো না তোমার সন্তানকে। মাথা তুলে বাঁচবার সাহস দাও। সংসার, সমাজ থেকে মানুষ বড় সে শিক্ষার পথ তৈরি করতে সরকারকে সাহসী করো। নইলে যে, এই সংখ্যা ৭৫২ তে থাকবে না বাড়বে কেবল, বাড়বে। আমরা তা চাই না।

লেখক : তরুণ উদ্যোক্তা
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×