somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইসিয়াক
একান্ত ব্যক্তিগত কারণে ব্লগে আর পোস্ট দেওয়া হবে না। আপাতত শুধু ব্লগ পড়বো। বিশেষ করে পুরানো পোস্টগুলো। কোন পোস্টে মন্তব্য করবো না বলে ঠিক করেছি। আমি সামহোয়্যারইন ব্লগে আছি এবং থাকবো। ভালো আছি। ভালো থাকুন সকলে।

গল্পঃচরিত্রহীনা

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
মহুয়া খুব গুছিয়ে ঠোঁটের রংটা ঘষে নিলো।চোখের কাজল,কপালের টিপ,মুখের রং আগেই মাখা হয়ে গেছে। ঠোঁট যেহেতু আগেই আঁকা ছিলো তাই শুধু রংটা লাগিয়ে নিলো। ব্যাস।
আজ আর খোঁপা করেনি সে। সাধারণ বেনি করেছে। লাল হলুদ শাড়িতে আজ তাকে কনে বউ কনে বউ লাগছে।
নিজের রূপে নিজেই খানিক মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকলো ।
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আয়নাতে নিজেকে বার কয়েক দেখে নিলো সে।
কালামের মা বলে, ভাঙা আয়নায় নাকি মুখ দেখতে নেই, অমঙ্গল হয়। কিন্তু মহুয়ার কপালটাই তো ভাঙা, তাতে করে ভাঙা আয়নায় মুখ দেখলেই কি আর না দেখলেই কি। অমঙ্গল যা কিছু ঘটার তার সবটাই ঘটে চলেছে তার জীবনভর ।
শেষবারের মতো আয়নায় নিজেকে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বুকের আঁচলটা সরিয়ে ব্লাউজ ঠিক ঠাক সেট করে নিলো সে। এই ব্লাউজটা গত বছর বানানো। আগে একদম ঠিক ঠাক ছিলো এখন ঢলঢলে হয়ে গেছে খানিকটা। গতর শুকিয়ে যাচ্ছে নাকি? গতর শুকালে তো বিপদ। না খেয়ে মরতে হবে যে।
মহুয়ার মুখে খানিকটা চিন্তার রেখা দেখা দিল,তবে তা কিছুটা সময়ের জন্য। হঠাৎ করে তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে সব ভাবনা চিন্তা ঝেড়ে ফেলে উঠে দাড়ায় সে। এবার তাকে বেরোতে হবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে।
সে ভালো করে জানে ভাবনা চিন্তা করে কোন লাভ নেই, খামোখা শরীর খারাপ করবে। তার চেয়ে নিজের কাজে মন দেয়া ভালো। যা হবে তখন দেখা যাবে।
[২]
এতোক্ষণ জহির ড্যাবডেবিয়ে মহুয়ার সাজ পোশাক দেখছিলো।তার বউটা দিন দিন লাউ ডগার মতো থকথকে হয়ে উঠছে।
দেখলে মাথা ঠিক রাখা কষ্ট। কিন্তু সেই সাথে মাগীর দেমাকও বেড়ে গেছে খুব । কিছুতেই কাছে ঘেঁষতে দেয় না আজকাল । মাঝেমধ্যে মনে হয় ছুটে গিয়ে জোড়া পায়ের লাথি কষে দেয় কিন্ত কপাল মন্দ হলে যা হয়। তার তো পা ই নাই তো লাথি মারবেটা কি দিয়ে?
সুযোগ বুঝে মহুয়ার শরীর স্পর্শ করতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলো সে।
- এখন বিরক্ত করো না তো।সাজ পোশাক নষ্ট হলে খদ্দের দাড়াবে?
জহির একবুক অভিমান নিয়ে বলল,
- আমার জন্য কি কিছুই নাই? সব ওই তোর খদ্দেরের জন্য?
- অসুস্থ মানুষের অত লোভ ভালো নয়। পারো কিছু? জানা আছে মুরোদ। দু মিনিটেই শেষ। খামোখা উঠা আর নামা।
সত্যি মিথ্যা যাই হোক জহিরের মাথা হঠাৎ গরম হয়ে ওঠে,
- ছেনাল মাগী, গতর খাকি,বারো ভাতারি।
মহুয়াও কম যায় না। সেও খেঁকিয়ে ওঠে।
- দেখ, বেশি গলা বাজি করবি না।সোজা ভাত বন্ধ করে দেবো। খাস তো বউ এর কামাই অত কথা আসে কোথেকে?ভাত দেবার মুরোদ নেই কিল মারার গোঁসাই। গতর বেচে খাওয়াচ্ছি আবার বাবুর লম্বা লম্বা কথা।আমার কি দায় পড়েছে তোকে পোষা। নিতান্ত তুই এককালে ভালোবেসেছিলি, তোর হাত ধরে ভিটে ছেড়েছিলাম বলে টানটা এখনো রয়ে গেছে। অন্য কোন মাগী হলে এতোদিনে আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলে দিতো।এই আমি বলে দিলাম।
হঠাৎ করেই জহির চুপসে যায়।পা দুখানা ট্রেনে কাটা পড়ার সাথে সাথে তার দুনিয়া ওলোট পালোট হয়ে গেছে।
পালটে গেছে জীবনের সব হিসাব নিকাশ। চিল্লিয়ে লাভ হবে না। সাবধানী হতে হবে। মহুয়া দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে যে কোন সময় ছেড়ে চলে যেতে পারে।তখন বিপদ বাড়বে বই কমবে না।
জহির শুনেছে মহুয়া নাকি কাজের নাম করে কার না কার সাথে বাদাম ফুচকা খেয়ে বেড়ায়।ফোনে হেসে হেসে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে। মকবুল নাম তার, কাস্টমার নয় খোঁজ নিয়েছে সে, অনেকদিন ভেবেছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে কিন্তু অশান্তির ভয়ে আর জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে না তার। মহুয়া আর আগের মহুয়া নেই অনেক বদলে গেছে।
সময়ের সাথে সাথে মানুষ এতোটা বদলে যায় কিভাবে?
জহির নিজেও নিজেকে প্রশ্ন করে সেও কি আগের মতো আছে? মনে হয় না, সে এতোটা বদমেজাজি কোন কালেই ছিলো না, মহুয়ার গায়ে হাত তোলার কথা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি,কিন্তু এখন...
মাঝে মাঝে এখন নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হয়। এখন তার চারপাশটা শুধু হতাশায় ঘেরা। অন্ধকার আর অন্ধকার। আলোর দিশার খোঁজে সে মরিয়া কিন্তু কোথায় আলো?
তার মতো অসহায় মানুষের এ দুনিয়ায় কেউ নাই কিছু নাই। ব্যাটা ছেলেদের কাঁদতে নেই। তবুও তার কেবলি কান্না পায় আজকাল। জহির মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সে মহুয়াকে তার চোখের জল দেখাতে চায় না।
[৩]
মহুয়া জহিরের দিকে একবার তাকিয়ে বুঝতে পারলো অপরপক্ষ রণে ভঙ্গ দিয়েছে। এখন সে এক বুক অভিমান নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে ।
জিতে গেছে মহুয়া, তবে এ জেতায় তৃপ্তি নাই, মনের মধ্যে কেমন যেন অতৃপ্তির ছায়া,তিক্ততার কাটা খচখচ করে বিঁধতে লাগলো তার। আসলে প্রতিপক্ষ যদি জোরালো না হয় তবে কোন কিছুতেই সন্তুষ্টি লাভ করা যায় না।
তবে মানুষটার জন্য এখনও তার মনে মায়ার টান রয়ে গেছে।
সে হাজার চেষ্টা করলেও তা অস্বীকার করতে পারছে না। অথচ মকবুল নামে একজন তার জীবনে প্রবেশ করেছে, তারসাথে সময় কাটাতে, গল্প করতে খুনসুটি করতে তার খুব ভালো লাগে।
একে ভালোবাসা বলে কিনা তা তার জানা নেই। তবে অন্য রকম একটা টান সে অনুভব করে।
ভালোবাসা! ভালোবাসা তো উবে গেছে সেই সে দিন যেদিন ট্রেনে জহিরের দু খানা পা কাটা পড়লো। অভাব অভিযোগের ঘরে ভালোবাসা থাকে না।থাকে ঝগড়া, ফ্যাসাদ, অবিশ্বাস।
রসিক বাবুরা অবশ্য ভালোবাসা বলতে বিছানায় যাওয়াটাকেই বোঝে। মহুয়া সেই ভালোবাসার সওদাগরি ধান্দায় থাকে কি কায়দায় বড় অঙ্কের টাকা খসিয়ে নেওয়া যায়।
তবে দালাল, মাস্তান আর কমিশনারের লোকদের উৎপাতে অস্থির অবস্থা। তাদের ম্যানেজ করতে করতে জান পেরেশান।এত কষ্টের রোজগারের সিংহভাগ চলে যায় তাদের পকেটে। মহুয়া অবশ্য চালাকি করে কারো কারো বিছানায় গিয়ে সমস্যাটা মিটিয়ে আসে।
তবে কমিশনারের ভাইটা বদমাশের বদমাশ।মহুয়া তাকে খুব ভয়ও পায়। পিশাচের পিশাচ বলা যায় তাকে। তার ডাক আসলে মহুয়ার আত্না শুকিয়ে যায়। না জানি কত রকমের অত্যাচার সহ্য করতে হবে তাকে। বুড়ো বেটার শরীরের শক্তি নাই কিন্তু খায়েশ আছে ষোলআনা । কি সব যন্ত্র পাতি জোগাড় করে আনে কোথেকে কে জানে! খচ্চরের খচ্চর একটা ।
ওর কাছে গেলে ব্যাথায় গতর চার থেকে পাঁচদিন টনটন করে।
কাজে বসতে পারে না ঠিক মতো।
গত বছর তো রাহেলা ওর অত্যাচারেই মরলো।রক্তে ভেসে যাচ্ছিলো সারা ঘরের মেঝে। কি বিভৎস! ভাবতেই এখনো গা শিউরে ওঠে। পুলিশ এলো লাশ নিয়ে গেলো। নিরীহ কিছু লোক হেনস্তা হলো তারপর যে কে সেই। সব আবার আগের মতো।
মাঝে মধ্যে মনে হয় এই সব জজ্ঞালগুলোকে ধারালো ব্লেড দিয়ে এফোড় ওফোড় করে দিলে তবে শান্তি পাওয়া যাবে। তবে এও জানে শেষ পর্যন্ত সে টিকতে পারবে না।
[৪]
দিন এগিয়ে যায়, মহুয়া প্রতিদিনকার মতো আজও কাজে বেরিয়েছে।
এখন বেলা বেশ খানিকটা পড়ে এসেছে। নিওনবাতিগুলো জ্বলে উঠবে আরো কিছুটা পরে।মহুয়া হাঁটতে থাকে।
এই সময়টা মকবুল আসে ঘন্টা খানিক কাটিয়ে যায়।খুব হিসেবি সে। মহুয়া যদিও আরও কিছুটা সময় থাকতে বলে কিন্তু টিউশনির অজুহাতে সে চলে যায়।
আজও যথারীতি সে খুব সুন্দর করে সেজেছে। খোঁপায় বেলীফুলের মালা পড়েছে।গায়ে চমৎকার সৌরভের সুগন্ধী।
পরনের শাড়িটি টকটকে লাল। এটি তার বিয়ের শাড়ী।
সেই গাড়াগঞ্জ থেকে কেনা।খুব বেশিদিন আগের কথা নয়।
সে আর জহির বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রথমে গাড়াগঞ্জ বাজারে উঠেছিল।
সেখান থেকেই বিয়ের যাবতীয় কেনাকাটা করা হয়েছিলো । জহির তখন গ্রামে ট্রাক্টর চালাতো।হাতে কাঁচা পয়সার অগাধ আমদানি।
পরবর্তীতে ঢাকা শহরে এসে সে অবশ্য সি এন জি চালাতো। দিন ছিলো সে সব। তখন পৃথিবীটাকে মনে হতো রঙিন আর মধুময়।
তারপর যেদিন জহিরের পা দুখানা ট্রেনে কাটা পড়লো সেদিন থেকে শুরু হলো নরকময় জীবন।
জমে মানুষের টানাটানিতে জহির সে যাত্রায় রক্ষা পেলে ও মহুয়ার হাত হয়ে গেলো শূন্য। ঘরের ঘটিবাটি থেকে যা কিছুর মূল্য ছিলো সব এক এক করে হাতছাড়া হয়ে গেলো। মোটামুটি স্বচ্ছল থেকে ভিখারি হয়ে পথে দাড়ালো তারা।
ভিখারি তবে সুস্থ সবল ভিখারিকে ভিক্ষা দেবে কে? জামিলার পরামর্শে
বাসার কাজে ঢুকলো একরকম বাধ্য হয়ে। কয়েকদিন যেতে না যেতে ফাঁকা বাড়িতে গৃহকর্তা দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলো সে। শহরের শিক্ষিত জ্ঞানী গুণী মানুষ যে এতো নোংরা হতে পারে তা তার কাছে অজানা ছিলো।
ফুলমতি সব শুনে জানালো ওই সব কাপুরুষদের সুখ দিয়ে লাভ নাই। মনে রাখবে না অথচ সুযোগ পেলে খাবলে খাবে।
অসহায় মেয়ে মানুষের গতর হলো আসল শত্রু। তারচেয়ে এই গতর কাজে লাগিয়ে দু পয়সা ইনকাম করলে তাতে অন্তত কদিন ভালো মতো খেয়ে পড়ে বাঁচা যাবে।
বুদ্ধিটা পছন্দ হলো তার। উপায়ও ছিলো না কোন।
সেই থেকে শুরু, ভালো মন্দ পাপ পূন্য জানে না মহুয়া। দুটো ভাত জুটছে এতেই সে খুশি। ভাতের জ্বালা বড় জ্বালা।
হঠাৎ করে আবার জহিরের কথা মনে হতেই তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। আজও বড্ড বেশি বাজে ব্যবহার করেছে সে। অত বেশি করে না বললেও পারতো।ইদানীং জহির কিছু বললেই সে প্রতি উত্তরে বেশি করে কথা শোনায় এটা যে ঠিক না সেও বোঝে কিন্তু মাথা কারণে অকারণে সবসময় গরম হয়ে থাকে কি করবে সে। সুখের দিনগুলো কোথায় যে হারালো কে জানে। আর আসবে না ফিরে সে সব দিন। সম্পর্কও আর হয়তো কখনো ঠিক হবে না।
ফোন বেজে উঠতে মহুয়ার মন খুশি ঝিলিক মেরে ওঠে। মকবুলের ফোন। মহুয়া ফোন রিসিভ করে।
- হ্যালো জানটু কোথায় তুমি?
- তোমার পিছনে?
মহুয়া পেছন ফিরে অবাক হয়ে যায়,মকবুল এক গুচ্ছ গোলাপ হাতে দাড়িয়ে আছে।
সে ছুটে যায় মকবুলের দিকে তৃৃষিত চাতকের মতো।
[৫]
সময়ের সাথে সাথে মানুষ কত বদলে যায়,বদলে যায় তার ইচ্ছেগুলো,বদলে যায় তার জীবনযাপন বদলে যায় তার পৃথিবী । জীবন জীবিকার তাগিদে কোনদিন মহুয়া স্বপ্নেও ভাবেনি দুটো ভাতের জন্য তাকে রাস্তায় নামতে হবে। প্রতিদিন তাকে একটু একটু করে মরতে হবে।
দেখতে দেখতে আরো একটা বছর চলে গেলো, এর মধ্যে কত শত মানুষের সাথে দেখা হলো,কাজে বসা হলো।বেশির ভাগই কামুক শ্রেণির, তার মধ্যে যে ভালো মনের অধিকারী লোক একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়।
এই যে মকবুল। পড়াশোনা শেষে ছোট খাটো একটা চাকরি করে, ভালোবাসে গল্প কবিতা লিখতে।
সাত বছরের প্রেমিকার সাথে যেদিন সম্পর্ক শেষ হয়ে গেলো এক তরফা ভাবে, কি যে অসহায় হয়ে বসেছিল পার্কে। দেখে খুব মায়া হয়েছিল মহুয়ার। প্রথমে ভেবেছিলো খদ্দের তারপর........ সারা রাত বেচারার সাথে পার্কে বসে ছিলো সে।তার খুব মায়া করছিল ছেলেটার জন্য, মকবুলও জানিয়ে হালকা হয়েছিলো মনের যতো কষ্টের কথা বলে, কারো সাথে সে কাজে বসেনি সেরাতে।
সেই থেকে শুরু, এরপর থেকে যেদিন মকবুল আসে মহুয়া নিয়ম করে কাজে বসে না আর। মকবুলের সাথেই তার সময় কাটাতে ভালো লাগে।কত হাসি কত গান ঠাট্টা মজা। কেটে যায় সময় চোখের পলকে।
মানুষ এত মজার এত ভালো এতো সাধাসিধা কি করে হয়!
এমন করে সময় কাটাতে কাটাতে কবে কবে যেন দুজন দুজনের প্রতি আরো অনুরক্ত হয়ে পড়ে তারা। মকবুল আর মহুয়া ঠিক করে তারা বিয়ে করবে, সংসার বসাবে,চলে যাবে দুর শহরে, আবার বাঁচবে নতুন করে।
জহিরের কথা সে জোর করেই মন থেকে মুছে ফেলবে বলে ঠিক করে। কিন্তু সব সম্পর্ক কি চাইলেই মুছে ফেলা যায়?
আজ সেই দিন। মকবুল মনে হয় এতোক্ষণে চলে এসেছে। পার্কের পিছনে বুনো খেজুর গাছটার নিচে দাড়াবে বলেছিলো।মহুয়া ধীরে ধীরে হাঁটছে। মনটা খুশি খুশি হবারই কথা কিন্তু কিছুতেই সে খুশির কোনকিছু উপলব্ধিতে আনতে পারছে না। ক্ষণে ক্ষণে তার বুকের ভেতর মুচড়ে উঠছে। কিসের এতো পিছুটান..... তার চোখ জ্বালা করছে।
যত পথ সে হেঁটে এগোচ্ছে ততই বিষন্নতা অস্থিরতা বেড়ে চলেছে বুকের মধ্যে। এমন কেন হচ্ছে। তবে কি জহির কে সে এখনও ভালোবাসে? সব ভালোবাসা তবে ফুরিয়ে যায়নি? ঘুরে ফিরে জহিরের অসহায় মুখটাই ভেসে উঠছে বার বার। কিন্তু মকবুল? তার জীবনে মকবুলের স্হান কোথায়? এমন জটিল পরিস্থিতিতে সে কোনদিন পড়েনি।
আসার সময় জহির কে কিছু বলে আসা হয়নি তার। বলা যায় একরকম সে পালিয়ে চলে এসেছে। আসলে সে আজ জহিরের মুখোমুখি হবার সাহস সঞ্চয় করতে পারেনি। কি করে অসহায় মানুষটিকে সে বলবে আমি আর তোমার সাথে থাকতে চাই না।
তোমাকে আমার আর ভালো লাগে না।
আমি নতুন করে ঘর বাঁধতে চাই। আমি একটু সুখের মুখ দেখতে চাই।আমি হেসে খেলে পাখির মতে উড়তে চাই। আমি আর এই পাপের জীবনের বোঝা টানতে পারছি না।
প্রতিদিন মৃত্যুর দুয়ার থেকে ঘুরে আসতে আসতে আমি ক্লান্ত। আমি এই বেশ্যার জীবন চাই না।আমি আর প্রতি দিন তিলে তিলে মরতে চাই না।
অনেক কথা বলার ছিলো, বলা হয়নি। বলতে গিয়ে দ্বিধা এসে ভর করেছে।
আচ্ছা সে যদি আজ বাড়ি না ফেরে তবে কি জহির তাকে নিয়ে ভাববে? চিন্তিত হবে? তাকে ছাড়া তো লোকটা এক পাও চলতে পারে না সে চলে গেলে কি হবে তার?
হঠাৎ করে মহুয়ার মনের ভিতর এসব কি হচ্ছে?
লোকটা তো তাকে ইদানিং বেশির ভাগ সময় দুর ছাই করে, সময়ে অসময়ে মারধোর করে সুযোগ পেলে যদিও আগে এমনটা কখনো করতো না।
জহিরের ইদানিংকার আচরণে সে প্রচন্ড বিরক্ত। ঘরে জ্বালা বাইরে জ্বালা কাহাতক সহ্য হয়।তাই তো সে জহিরের সংসারের মায়া ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে। মকবুলকে সে কথা দিয়েছে। তার সাথে মহুয়া থাকবে।মকবুল বলেছে তাকে আর গতর বেচতে হবে না।মহুয়ারও এখন আর গতর বেচতে আর ভালো লাগে না।
এ লাইনে সব পুরুষগুলোই জানোয়ার। সুযোগ পেলে খুবলে খুবলে খাওয়ার ধান্দা। তার যে কত কষ্ট হয় সেই কথাটা একটুও ভাবে না কেউ। বেশ্যাও যে রক্ত মাংসের মানুষ এ কথাটা কে বোঝাবে কাকে?
ইদানীং বেশির ভাগ খরিদ্দারই ওষুধ খেয়ে আসে।কাজ শেষেও ছাড়তে চায় না। ব্যাথা করে,তীব্র যন্ত্রণায় চোখ ফেটে পানি বের হয়ে আসে তবুও খরিদ্দারের খায়েশ মেটে না।কখনো কখনো এক জনের কথা বলে পাঁচজন এসে হাজির হয়।সে রাতগুলো যেন দোজখের আজাব নেমে আসে।
মকবুলের সাথে সম্পর্কে মহুয়া নতুন করে আশার আলো দেখতে পেয়েছে।
আহ এবার বুঝি মুক্তি মিলবে,এই নরক যন্ত্রণার।
কিন্তু
মহুয়ার ভাবনায় হঠাৎ ছেদ পড়ে, একটু বসতে পারলে ভালো হতো। হঠাৎ করে সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে শুরু করে। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না তার কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয়।
মকবুল মানে তো নতুন জীবন, নতুন করে বাঁচা তাহলে নতুন করে কেন এই সিদ্ধান্তহীনতা ।আর জহিরের সাথে থাকা মানে অপমান অপদস্তের জীবন।
[৬]
তার যোগ্যতা সীমিত। তার উপরে চরিত্রে দাগ লেগে গেছে। অন্য কাজের চেষ্টা সে অনেকবারই করেছে।বারবনিতাকে কেউ কাজ দিতে চায় না। এ লাইনে ঢোকা যত সহজ বের হওয়া তত কঠিন।
মকবুলের সাথে সে অন্য শহরে গিয়ে থাকবে নতুন করে ভালোভাবে বাঁচবে বলে সে জহিরের হাত ছেড়ে দিয়ে এসেছে, মানুষ সমাজ তাকে স্বার্থপর,হৃদয়হীনা বলে বলুক। লোক নিন্দার ভয় সে আর করে না।
বেশ্যার আবার মন থাকে নাকি? কিন্তু হঠাৎ করে তার এমন লাগছে কেন? কিসের দ্বিধা এসে ভর করছে তার মনের মধ্যে? এমন কেন হচ্ছে তার সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না। সে কি ফিরিয়ে দেবে মকবুলকে?
এদিকে মকবুলের ও খোঁজ নেই,রাত বাড়ে, ফোন দিলে ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। তবে কি মকবুল মত বদলেছে? নাকি কোন বিপদে পড়েছে?
তাকে সামাজিক স্বীকৃতি দিতে সে কি কোন চাপের মুখোমুখি।মহুয়া যে চরিত্রহীনা বেশ্যা সে তো মকবুল ভালো করেই জানে। তবে তার পরিবার পরিজন জানে কি?
ধীরে ধীরে রাত আরো বাড়ে , তার বুকেও কষ্ট বাড়ে, অভিমান জমা হয়,অন্য রকম একটা শূন্যতা এসে ভর করে।চোখের কাজল কান্নায় ভেসে যায় ।এতোকক্ষণে সে বুঝে গেছে সব মিছে সব ফাঁকি মকবুল আসবে না। এই তার নিয়তি,চরিত্রহীনা বেশ্যার কথা স্বয়ং ইশ্বর ও ভাবে না।
শেষ রাতে মহুয়া বাড়ির পথ ধরে, মকবুল অজানা কারণে আজ আর আসেনি। আজ বিশেষ দিন ছিলো,মকবুল পর্ব হয়তো এখানেই শেষ।
এমনই তো হয়। নিজেকে বোঝায় সে, যাক নিজের স্বার্থে অমানবিক হলে চলবে না। সে চলে গেলে কে দেখবে জহিরকে, একসাথে বাঁচবে বলে শপথ করেছিলো একদিন তারা। আজ নিজের স্বার্থে সে শপথ কি ভাঙা ঠিক হবে? যদি একই ঘটনা উলটো হয়ে ঘটতো তার জীবনে? তখন জহির হয়তো তাকে ছেড়ে যেতো। সে যেতে চাইলে যেতো।সে সব নিয়ে ভেবে লাভ নেই।
জহির তার প্রথম ভালোবাসা সে শেষ ভালোবাসাই হয়ে থাক। কেউ তাকে ভালো না বাসলেও জহির একদিন তাকে ঠিকই ভালো বেসেছিলো। এক সাথে অনেকটা পথ হেঁটেছিলো, আজও সেই চলা শেষ হয়নি যদিও ভালোবাসা টুকু আর অবশিষ্ট নেই তবু্ও এক জীবনে এটুকুই তার স্বার্থকতা।বাকি সব মিছে। সরে গিয়ে দুরে গিয়ে ভালো
থাকুক মকবুল। জহিরই তার অবলম্বন হয়ে থাকুক,হোক সে অর্থব,অকর্মণ্য ।
শেষ।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:৩০
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×