somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘…….বিয়োজনের চৈতন্য…….’

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কলেজের হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ আগত অতিথী ও অভিবাকদের মধ্যে সবাই এরই মধ্যে নিজেদের আসন খুজে নিয়েছেন, কিছুক্ষনের মধ্যেই কীর্তি ছাত্রদের জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হবে। আজ ভাবতে ভাল লাগছে এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৭ বছরের জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি, বিভাগীয়ভাবে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান পাওয়ায় কলেজের স্যার’রা খুব খুশি, এস.এস.সি’তে যদিও স্থান পেয়েছিলাম তবে সেটা প্রথম ছিলনা তাই তখন খুব আক্ষেপ হয়েছিল। স্যারদের অক্লান্তপরিশ্রম আর আমাদের অদম্য অভিপ্রায় এটা সম্ভব হয়েছে, এবার এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা ৩জন বিভাগীয়ভাবে মেধা তালিকায় ১ থেকে ১০ এর মধ্যে আছি। উপস্থাপক শুরুতেই এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য সম্পর্কে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য পেশ করলেন, এরপর শিক্ষার্থীদের মথ্যে প্রথমে বিভাগীয়ভাবে ৮ম স্থান অধিকারী রাজীব নুর কে মঞ্চে গিয়ে তার অনুভূতি জানানোর জন্য অনুরোধ করলেন। রাজীব উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে তার মা-বাবাকে দেখিয়ে বললেন আমার মা-বাবা সব সময় আমার সাথে ছায়া সঙ্গীর মতই অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে তাই তাঁদের স্বপ্ন পুরনে আমি সবসময় ভাল করতে চাই সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। রাজীবের কথা গুলি আমার মাথার মধ্যে ঘুর পাক খাচ্ছে মনে হচ্ছে মাথার ভেতর কেউ লোহার তপ্ত খণ্ড দিয়ে ব্যাট-বল খেলছে আর ব্যাটের সাথে বলের প্রতিটি স্পর্শই আমার মাথার ভেতরে অনবরত কম্পনের সৃষ্টি করছে।


উপস্থাপক এবার মেধা তালিকায় ৩য় হওয়া অনামিকা শৈলি’কে অনুরোধ করল মঞ্চে গিয়ে তার অনুভুতি জানানোর জন্য, অনামিকা প্রথমে শিক্ষদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল তার পরেই বলল ওর এই অসামান্য সাফল্যের পেছনে তার মা-বাবার অকৃত্রিম ভালবাসার অবদান সবচেয়ে বেশী সে চায় এইভাবে সবসময় ভাল করে তার মা-বাবার মুখ উজ্জল করতে। ওদের কথা শুনে ঘামে আমার শরীর ভিজে যাচ্ছে ভেতরে থাকা শরীরের পানীয়জ্বল আজ অবলীলায় প্রতিটি পশমের গোড়াদিয়ে মিছিলের সহীত বের হয়ে আসছে, এক্ষুনিইতো আমার ডাক পড়বে আমি কি বলব? মা-বাবা সম্পর্কে কোন কিছুইতো আমার মনে নেই, মা-বাবার ব্যখ্যাওতো জানিনা, আমার কাছে মা-বাবা মানেইতো ঐ দুর গগণের তারা। অন্য কেউইতো তেমন নেই একমাত্র মামা সেওতো কখনও বলেনি তার স্বপ্নপুরন করতে হবে, সেই ছোট বেলা থেকেই স্কুল কলেজের হোষ্টেলেই থেকে বড় হচ্ছি। মামা ছাড়া অন্যকোন আত্মীয়-স্বজন সম্পর্কেওতো জানি না যাদের আমাকে নিয়ে কোন স্বপ্ন থাকতে পারে। এমনকি স্কুল কলেজের লম্বা ছুটির সময়গুলোও আমাকে হোষ্টেলেই থাকতে হয়েছে। বার্ষীক পরীক্ষার পর সবাই যখন হোষ্টেল থেকে তার মা-বাবার সাথে বাড়ী চলে যেত আমি তখন ওদের মা-বাবার দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম একটু! যদি একটু চমৎকার হত কেউ এসে বলত রোহান তোমার আব্বু আম্মু তোমাকে নিতে এসেছে। কিন্তু সে রকমতো কখনই হয়নি ঐ গগনের তারা ছাড়া কেউই আমার সংগী হয়নি, এমনকি মামা তার একমাত্র বোনের ছেলেকে তার বাড়ীতে নিতেও সাহশ করেননি পাছে তার বউ কোন ঝামেলা করে । মামার কাছেই কেটেছে বয়স দেড় থেকে ৭ অব্ধি। একসময় মামার পরিনয়ের কথা হল আর আমার সংস্থান হল হোষ্টেলে তার পর থেকেই হোষ্টেলই আমার সব। কি ছুটি কি ঈদ কোন কিছুতেই নিয়ম বদলায়নি শুধু মামাটা বছরে দুই একবার এসে দেখে যায়।


উপস্থাপকের কন্ঠে মেধা তালিকায় প্রথমস্থান অধিকারী রোহান আরেফীন এর নাম শুনেই অপ্রস্তুতভাবে উঠে দাঁড়ালাম কি বলব তা আমার জানা নেই কিন্তু তারপরেও মঞ্চে গিয়ে সৌজন্যতা দেখাতে হবে, আমার সামনে মাইক্রোফোন হাত-পায়ে কোন কম্পন নেই খুব স্বাভাবিক আছি কিন্তু হিয়ার মধ্যে রক্তক্ষরন হচ্ছে এটা বুঝতে বাকি নেই, হলরুমের প্রতিটি জোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই অতি আগ্রহের সহীত কিছু শুনার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু সেদিকে আমার বিন্ধুমাত্র প্রবৃত্তি নেই। আমি মনে হচ্ছে এখনও কোন চমৎকারের অপেক্ষা করছি, তাইতো এতগুলো জোড়া চোখের মধ্যে দুই জোড়া চোখ অনবরত খুজে ফিরছি। ঐ দুই জোড়া চোখ যারা হল আমার মা-বাবা! যারা পরম মমতাভরা চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে, যাদের চেহারায় ফুটে থাকবে ছেলের অসামান্য কীর্তিত্বে গর্বিত হওয়ার স্পষ্ট ছাপ। যারা আমার প্রতিটি শব্দের মধ্যে আমাকে নিয়ে বুণা তাদেঁর স্বপ্ন খুজে পাবে কিন্তু তা হচ্ছে না। আমি বরং আমার চোখে কিছুই দেখতে পারছিনা সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসছে, চোখ ভর্তি জ্বল নিয়ে কিছু দেখা যায় না, সবকিছু ক্ষীণ দেখায়। একি! মনে হচ্ছে আমার কণ্ঠও জমে গেল আমার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না কিন্তু দু চোখ থেকে গাল গড়িয়ে কয়েক ফোটা জ্বল পড়লো মেঝেতে। আজ হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুচতেও ইচ্ছে হয়না আজ যে, আমার ইচ্ছেগুলিও তার চৈতন্য হারিয়েছে।


উৎসর্গ: সকল সন্তানদের যাদের মা অথবা বাবা আজ ঐ দুর আকাশের তারা হয়েই দেখা দেয়।

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:০৫
৫২টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×