somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীসমূহ এবং লুকিয়ে থাকা বিশ্ময়কর সব সত্য

০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক পুত্র তার পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলো মহাবিশ্বে আধিপত্ব বিস্তার লাভের জন্য। এবং অর্জন করলো অকল্পনীয় ক্ষমতা যা কোনকালে কোন গড-এর মধ্যে ছিল না। এই সেই জিউস - গ্রিক পৌরানিক কাহিনীর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আমাদের কাছে এটা মিথ/শ্রুতি বা গল্প কিন্তু প্রাচীনদের কাথে এটাই ছিল বাস্তবতা। অনেক গ্রিক বিশ্বাস করে খ্রীষ্টের বহু শতাব্দী আগে জিউস-ই ছিল একমাত্র সত্যিকারের গড এবং প্রকৃতির সর্বনাশা রূপ তারই রোষের চিহ্ন বহন করে। এই হলো জিউস-এর মিথ/পুরাণ/গল্প যার পেছনে লুকিয়ে আছে বিশ্ময়কর সব সত্য।

"Clash of the Gods"




কেউ যদি আকাশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে সে পৃথীবি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী এই পরম-শক্তি ছিল শুধুমাত্র একজন গডের অধিনে- জিউস। সে ছিল ন্যায়বিচারের পক্ষে বলপ্রয়োগকারী, মানুষ এবং বিধাতাদের প্রধান। জিউস ছিলো বিধাতাদের রাজা। মানুষ এবং গডদের প্রতি ন্যায়বিচার নির্ধারণ ছিল তার দায়িত্বে। গ্রীক মিথলজী বা পৌরাণিক কাহিনীসমূহের একটা দিক লক্ষনীয় যে, একজন গ্রীক যখন বিধাতার আরাধনা করে তখন তাকে তাই করতে হয় যা বিধতাকে খুশি রাখে বা ধ্বংশ থেকে বিরত রাখে। আকাশের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বজ্রের শক্তি জিউসের নিয়ন্ত্রণে ছিল যা তার কাছে সবচাইতে বিধ্বংসী হাতিয়ার। বজ্রপাত-ই ছিল জিউসের কাছে সবচাইকে শক্তিশালী হাতিয়ার যা তাকে ঐশ্বরিক শ্রেষ্ঠত্ব এনে দেয়।


বিজ্ঞানের পূর্ববর্তী সময়ে পুরাণশাস্ত্র/ পৌরাণিক কাহিনীসমূহ সভ্যতাকে নাড়া দেয়। পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহ বা গতিপ্রকৃতি কেন এমন ছিল- এ বিষয়ে গ্রীক পুরাণশাস্ত্রবিদরা অনুসন্ধান চালায়। যদিও পৃথিবী কি করে বর্তমান অবস্থায় এলো এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে পর্যাপ্ত যুক্তি বা বৈজ্ঞানিক ব্যাক্ষা নেই। প্রাকৃতিক দূর্যোগগুলো তাদের কাছে অতি ভয়ঙ্কর বিষয় ছিল যা তারা গডের আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ মনে করতো। তাদের মতে এসব দূর্যোগ মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো যারা গডের সাধনা করেনি।

জিউস প্রকৃতি উপর ভরে করে নিজেকে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঈশ্বরে পরিণত করেছিল। কিন্তু জিউস কি করে এই চূড়ান্ত ক্ষমতা অর্জন করলো? জিউস সম্পর্কে আমরা যা জানি তার শুরু হয় প্রাচীন গ্রীক গ্রন্থকার হিসিউড লেখনি থেকে। প্রায় সাত শত বি.সি তে। তার বই 'আগনি' ছিল প্রাচীন গ্রীকের উৎপত্তির গল্প। জিউস এর উৎপত্তি বর্ণনা করতে গিয়ে 'আগনি'- এমন এক গল্পের জন্ম দেয় যেখানে রাজবংশীয় পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় বিশ্ব মহাকাশ সর্বব্যপী।

পুরাণশাস্ত্র মতে জিউস শরু থেকেই গডদের রাজা ছিলো না। সে তার পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায় সত্যিকার অর্থে মহাবিশ্বের নিয়ন্ত্রণ শক্তি আয়ত্ব করার জন্য। এবং এটা কখনই সহজ ছিলনা। ক্রুনুস ছিল তার পিতা। ক্রুনুস দানব সর্দার এবং মহাবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালি গড । তৎকালীন দানবগুলো ততটা সভ্য ছিল না এবং তারা নির্দয় ছিলো। দানবদের সর্দার হিসেবে ক্রুনুস তার বংশবৃদ্ধি করতে চায়। তাই সে তার প্রবাহিত রক্ত থেকে তৈরি করলো তার বোন এবং সাথী দানব- রেয়া। এই দুই সহোদর ক্রুনুস এবং রেয়া জন্ম দেয় গ্রীক ঈশ্বরের পরবর্তী প্রজন্ম। মিথলজী অনুসারে পরিবার নাম ছিল অলিম্পিয়ানস (The Olympians ) । তাদের মধ্যে ছিল- হেইডিস, পসেইডন এবং জিউস। কিন্তু তারা কেউই এত সহজে পৃথিবীতে ক্ষমতা প্রদর্শণ করতে পারে না। তাদের অবশ্যই এজন্য যুদ্ধে নামতে হয়।

ক্রুনুস সন্তান জন্মদানে উদ্বিগ্ন ছিল, কারণ সে চিন্তিত ছিল যেন তার সন্তান তার চাইতে ক্ষমতা ধর হয়ে না উঠে। পিতার অবস্থান একদিন সন্তান নিবে এটাই হিউম্যান সাইকোলজি। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্রুনুস ভীত ছিলো সর্বদা। এর সমাধান হিসেবে সে তার প্রত্যেকটি সন্তানকে গিলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো এবং কোন নবজাতক এলেই সে তা গিলে ফেলতো।


অবশ্য গিলে ফেলা সন্তানগুলো মরে যায় না, তবে ক্রুনুসের পেটের মধ্যে একপ্রকার বন্ধি অবস্থায় থেকে যায়। রেয়া বড়ই মর্মাহত, তার জন্মদেয়া পাঁচ পাঁচটি শিশু জিবন্ত গিলে ফেলেছে ক্রুনুস। এখন সে আবারো অন্ত: সত্ত্বা। কিন্তু এবার তার একটা পরিকল্পনা আছে। সে অন্যত্র চলে গেল এবং সূর্যের আড়ালে এক পাহাড়ের গুহায় জন্ম নিলো তার সন্তান- জিউস। কিন্তু ক্রুনুস আরেকটি সন্তান গিলে ফেলার প্রত্যাশায় ছিলো। রেয়া একটা শিশু আকৃতির পাথর কম্বল মুড়িয়ে হাজির করলো। দ্বিতীয়বার চিন্তা না করেই ক্রুনুস পাথরটি গিলে ফেললো।


রেয়া-র পরিকল্পনা সফল হলো। জিউসের পরিবর্তে পাথর চলে গেল ক্রুনুসের পেটে। জিউস বেঁচে গেল তা তার মায়ের চতুরতায়। এটা একটা স্বরণীয় ঘটনা। কিন্তু এই গোপন গুহা যা কিনা পুরাণশাস্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুতে- তার সত্যিকারের অস্তিত্ব কি আদৌ আছে? প্রাচীন গ্রীকরা তা-ই বিশ্বাস করে। তারা বিশ্বাস করে জিউস জন্ম নিয়েছিলো ক্রিট (Island of Crete ) দ্বীপে। এই পাহাড়ের গুহায়-( The cave of Island of Crete )



এই গুহাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একারণেই যে এখানেই শিশু জিউস লুকায়িত ছিলো। গুহাটির গঠন প্রতি বছর হাজারো বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করে। এটা এমন একটা জায়গা ছিলো যেখানে মানুষ জিউসের আরাধনা করতে যেত। গুহায় আরাধনার বিষয়টা স্পষ্ট হয় যখন সেখানে দেখা যায় হাজার বছরের পুরারো হাজারো অবাককরা পৌরানিক জিনিসপত্র বা আনুষঙ্গিক উপকরণ যা জিউসকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। এভাবে জিউস তার পিতার গিলে ফেলা থেকে রক্ষা পেল। প্রায় কাছাকাছি ধরনের ঘটনা বা গল্প আমরা জানতে পারি বিভিন্ন পুরাণ নির্ভর ধর্মগ্রন্থগুলোতে যেখানে গোপন বা ঐশ্বরিক সন্তানকে লুকিয়ে রাখা হয় তাদের রক্ষা করার জন্য। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তারা তাদের গন্তেব্যে পৌঁছায়। যেমন- জিসু বা মৌজেস এর ক্ষেত্রে একই কাহিনি ঘটতে দেখা যায়।

(চলবে)

সংযুক্তি-
Greek Mythology
http://www.greekmythology.com/
The Olympians
http://en.wikipedia.org/wiki/Twelve_Olympians
Island of Crete
http://www.greecetravel.com/crete/
The cave of Island of Crete
http://en.wikipedia.org/wiki/Zeus_cave
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১:০০
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×