somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘফুলের কাব্য (পর্ব-১)

২৩ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একটি কবিতার অধিকার

আমার এবার বিদায় নেবার পালা
আমি আর না-ই বা এলাম
তবু যদি আবার শ্রাবণ আসে
তোমার কখনো কবিতা পড়তে ইচ্ছে হয়
জেনে রেখো এই কবিতাটুকু তোমার জন্যেই লেখা,
কবিতার সবটুকু অধিকার তোমায় দিয়ে গেলাম।
ব্যস্ত সময়ের ভীড়ে যাত্রা বিরতি দিয়ে,
কখনো যদি হেঁটে যাও দূর রেলপথের ধারে
পাশের সঙ্গীটিকে জানিয়ে দিও
একটি কবিতা তোমারও ছিল।
বেঁচে থাক যদি দূর-পরবাসে
নিঃশব্দে এসে দাঁড়াও যদি সমুদ্র তটে
নীল জলে পা ডুবিয়ে যদি একা লাগে,
হতাশার ভুল ভেঙ্গে যেন মনে পড়ে
একটি কবিতা তোমারও আছে।
যদি চলার পথে কখনও ঝড় আসে
বিভীষিকার গর্জন করে কম্পন তুলে ধেয়ে আসে তোমার দিকে
ধরে নিও কবিতাটি তোমার পাশেই আছে আমৃত্যু নির্ভয়ে
আজ কবিতার সবটুকু অধিকার তোমায় দিলাম।



কখনো যদি মনে পড়ে

হে অবারিত মাঠ,
কখনো যদি মনে পড়ে
ধূলো উড়িয়ে জানিয়ে দিও,
তুমি ভালবেসেছিলে আমায়।
হে গ্রীষ্মের বোকা কাক,
কখনো যদি মনে পড়ে
সতীর উঠোনে চিৎকার করে জানিয়ে দিও
তুমিও ভালবেসেছিলে আমায়।
হে অলক্ষ্মী পেঁচা,
কখনো যদি মনে পড়ে
ঘুম-পাড়ানিয়া শ্মশান কালীকে গোপনে বলে দিও
তুমি ভালবেসেছিলে আমায়।
হে ভ্রাম্যমাণ ধূমকেতু,
কখনো যদি মনে পড়ে
তোমার ছায়াপথে অপরিচিত নক্ষত্রের দেখা পেলে বলে দিও
তুমিও ভালবেসেছিলে আমায়।
হে মধ্যবিত্ত যুবক,
কখনো যদি মনে পড়ে
চলতে চলতে তোমার ঘামের দুর্গন্ধকে জানিয়ে দিও
তুমি ভালবেসেছিলে আমায়।
হে দুর্ধর্ষ কালো মেঘ,
কখনো যদি মনে পড়ে
তীব্র বজ্রের হুংকারে পুরো পৃথিবীকে জানিয়ে দিও
তুমিও ভালবেসেছিলে আমায়।
কখনো যদি মনে পড়ে
কখনো যদি মনে পড়ে।



মেঘফুলের চিঠি

শহুরে নালায় ভাসছে এক মেঘফুলের চিঠি
খবর এসেছে, কোথায় এসেছে, নাগরিক কানাকানি;
দেয়ালের গায়ে আংগুল রেখেছি শৈবাল ছুব বলে
ফিরে আসব কথা দিচ্ছি প্রেমের পত্র পেলে।
চিঠি ভাসছে, চিঠি ডুবছে, চিঠি শহর জুড়ে
তোমার নামেও চিঠি এসেছে কালো মেঘেদের জলে।
কি নাম ধরে ডাকবে তোমায়, কি নাম লেখা খামে
বেনামে চিঠি ভাসছে শুধু তোমার শহর জুড়ে;
আয়ুপথ ধরে আসছে চিঠি মেঘফুলেদের ডাকে
ভেজা চিঠি ভাসে, পচা খামে, অযান্ত্রিক কোলাহলে।



ইহারা

পরিচিতির কেন্দ্রে ইহাদের অবস্থান,
ইহাদের ভালবাসার তরল তৈরি করেছে মহাসাগর,
ইহাদের অনুপস্থিতি তৈরি করেছে মহাশূন্য।
আমি কেন, কিভাবে, কোথায়, কি করছি?
এই প্রশ্নের উত্তর ইহাদের সমষ্টির ফলাফল।
আমি বিনে ইহারা অস্তিত্বহীন,
ইহাদের দ্বারা আমি অস্তিত্বপ্রাপ্ত।




সময় পাইনি বলে

আজ মৃত্যুকে না বলে দিলাম, ইহাকে আলিঙ্গন করার সময় পাইনি বলে,
যৌবন বাড়ন্ত তবু জন্মদাতা হইনি; সঠিক সময় তোমাকে পাইনি বলে;
রাজপথের স্লোগান ধরিনি; রক্ত উত্তপ্ত করার সময় পাইনি বলে,
পিতার শোকে পাথর হই না; আবেগি সে সময় পাইনা বলে
মায়ের আদর পেতে ছুটে যাই না; নষ্ট করবার অফুরন্ত সময় পাইনি বলে।
আমি এমন-ই
গোঁড়া, বেপরোয়া কিঞ্চিৎ একাকীত্বের মাদকতা;
ক্ষুদ্র পাষণ্ড, জং পড়া আধুনিক।
আমি এখন একা- নির্ঘুম,
আমি সময় পাই না
আমি ব্যস্ত, আমি আধুনিক, আমি যান্ত্রিক;
আমি সাঝ সকালে কবিতা লিখি; সময় পাইনি বলে।
পশুখাদ্য আমার আশ্রয়, হাসিমুখ আমার প্রশ্রয়
আমি শ্রেষ্ঠ হবার দৌড়ে আছি; পরাজিত হবার সময় পাইনি বলে;
আমি বেপর্দা লিঙ্গ সর্বস্ব একটি প্রাণী মাত্র, মানুষ হবার সময় পাইনি বলে;
আমি চিৎকার করে ডাকতে পারি না, বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে কাঁদতে পারি না
আমি তোমার হাত ধরে বহুদূর পারি দিতে চাই না,
সময় পাইনি বলে, সময় পাইনা বলে।



শ্রমিক

আমি জানি শ্রমিকের তপ্ত শরীরের রক্ত অতি মিষ্টি
তাহার সস্তা লোমকূপ অতি সস্তা, অতি জঘন্য
তাহার শক্ত হস্ত অস্পৃশ্য, আবেদনহীন;
আমি জানি তাহার কৃষ্ণ লিংগ পশুসদৃশ, হিংস্র
ইহার পাপ অক্ষয়, ফাঁসিকাষ্ঠ অব্যর্থ
আমি জানি তাহাদের গুনগান শুধু কাব্য, মহাকাব্য,
বাস্তবতায় সেথা ক্লান্ত,
ওহে আধুনিক, নমি তোমারে, মনে রেখো এই পাষানেরে।



নিলাম

প্রস্তাবিত হৃদয়টি নিলামে অবিক্রিত
আনুষ্ঠানিক নৃত্য অথচ নিচ্ছিদ্র,
ফাগুন এল, ফাগুন গেল, কিন্তু
অপরিচিত প্রেমিকার দেহজল স্নিগ্ধ, শান্ত।
এবং আমি, প্রেম পিপাসু
কামকাতুর এবং ভণ্ড।
সবিশেষে,
কবিতার খাতাটি দ্বিছিদ্র।



মধ্যবিত্ত

নেই উর্বর যোনীর হাতছানি,
নেই পাশবিকতার বাড়াবাড়ি
যা আছে তা নিয়েই টানাটানি,
বাদ-বাকি সব বাস্তবতার চোরাবালি।
নেই রাস্তার ধূলো-জমা প্রাসাদ
নেই ব্যস্ততার নামে ক্লান্তি-অবসাদ
যা আছে তা নিয়েই কাড়াকাড়ি
বাদ-বাকি সব স্বপ্নের গুড়েবালি।
নেই অনর্থের ছড়াছড়ি
নেই দম্ভের ফাঁকাবুলি
যা আছে তা নিয়েই বেশ আছি
বাদ-বাকি সব স্বপ্রতিবিম্বের মুখোমুখি।
আমারও চোখে আসে ঘুম,
আমিও সকাল কুঁড়াই
আমার আদর্শ আমার বড়াই।
সময়ের আঙ্গিনায় স্বার্থের বিনিময়ে বিকৃত হচ্ছে অর্থসুখের মধু
মূর্খেরা চিহ্নিত এবং দ্বিধাবিভক্ত;
এই বঙ্গদেশে উচ্চবিত্ত এবং নিন্মবিত্তেরা আজ সংখ্যালঘু
আমি গর্বিত, আমি মধ্যবিত্ত।



------------------------------------------------------------------------------------------- অনিক কান্তি সরকার
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×