ধ্রুব(১৯৩৪)
বাংগালী মুসলমানদের মধ্যে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতা হলেন কাজী নজরুল ইসলাম, চলচ্চিত্রের নাম ধ্রুব, চলচ্চিত্রটি ১৯৩৪ সালের পহেলা জানুয়ারি মুক্তি পায় পাওনিয়ার ফিল্মস কোম্পানির ব্যানারে। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম মুসলিম বাংগালী হিসেবে পাওনিয়ার ফিল্মস কোম্পানির সংগীত পরিচালকের ভূমিকায়ও কাজ করার সুযোগ পান। প্যারিসের চিত্র প্রতিষ্ঠান ম্যাডান থিয়েটারসের অন্যতম অংশীদার পিরোজ ম্যাডান ১৯৩৩ সালে পাওনিয়ার ফিল্মস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে গিরিশচন্দ্রের ‘ধ্রুব চরিত’ নিয়ে ছবি নির্মানের ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৩৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ধ্রুব’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন দু’জন; কাজী নজরুল ইসলাম ও সতেন্দ্রনাথ দে। মুক্তির তারিখ অনুসারে পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’ হল তেইশতম চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্রের মুক্তির সাথে সাথেই ম্যাডান থিয়েটারসের সাথে নজরুলের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়, কারণ হিসেবে জানা যায় ম্যাডান থিয়েটারস কবির সাথে প্রতারণা করেছিল। ‘ধ্রুব’ চলচ্চিত্রে নজরুল ‘নারদ’ চরিত্রে অভিনয় করেন আর নিত্যানন্দ ঘটক ‘বিষ্ণু’র চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রের ১৮টি গানের মধ্যে ১৭ টি নজরুলের সৃষ্টি এবং বাকি একটি গিরিশচন্দ্র ঘোষের। নজরুল এককভাবে ৩ টি গান এবং যৌথভাবে আরেকটি গান মাস্টার প্রবোধের সাথে দ্বৈতকণ্ঠে পরিবেশন করেন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ রচিত গানটির প্রথম চরণ ‘আয়রে আয় হরি’।
‘ধ্রুব’ চলচ্চিত্রে নজরুল রচিত ও সুরারোপিত গানগুলো হচ্ছে;
১। জাগো ব্যথার ঠাকুর
২। অবিরত বাদল বরষিছে
৩। চমকে চপলা মেঘে মগন গগণ
৪। ধূলার ঠাকুর, ধূলার ঠাকুর
৫। হরিনামের সুধার
৬। আমি রাজার কুমার
৭। হে দুঃখ হরণ ভক্তের সারণ
৮। শিশু নটবর নেচে যায়
৯। মধুর ছন্দে নাচে আনন্দে
১০। গহন বনে শ্রীহরি নামের
১১। দাও দেখা দাও দেখা
১২। ফুটিল মানস মাধবী কুঞ্জে (নজরুলের নিজের কণ্ঠের গান)
১৩। হূদিপদ্মে চরণ রাখো
১৪। ফিরে আয় ওরে ফিরে আয়
১৫। নাচো বনমালী
১৬। জয় পীতাম্বর শ্যাম সুন্দর
১৭। কাঁদিসনে আর কাঁদিসনে।
এই চলচ্চিত্রের ১৮ টি রিলের মধ্যে মাত্র একটি রিল সংগ্রহ করা হয়েছে।
ইতিহাসবিদ কালীশ মুখোপাধ্যায় ‘ধ্রুব’কে চিহ্নিত করেছেন অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরণের চলচ্চিত্র হিসেবে। অধ্যাপক অরুণদত্ত গুপ্ত ‘ধ্রুব’কে ভাল সঙ্গীতবহুল চলচ্চিত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সমালোচক খগেন্দ্রনাথ রায় লেখেন, “ ধ্রুব হয়েছে একখানি যাত্রান্তরিত নাটক। ধ্রুব ছবির অভিনয়ে নজরুল নতুনত্ব এনেছিলেন নারদ চরিত্রের মেকাপে। তিনি অশীতিপর নারদকে আটাশে নামিয়ে আনেন, পোশাকও বদলে ফেলেন।” নজরুলের এই বিদ্রোহ ও নবনারদী রূপ নিয়ে পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন মহলে তুমুল সমালোচনা হয়, কিন্তু নজরুল তার যুক্তি দিয়ে বলেছেন, “ আমি চিরতরুণ ও চিরসুন্দর প্রিয় নারদের রূপই দেবার চেষ্টা করেছি। ”
১৯৩১ সালে কাজী নজরুল ইসলাম ‘ধূপছায়া’ নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা, সেই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা ও চলচ্চিত্রটিতে ‘বিষ্ণু’র ভূমিকায় অভিনয় করেন বলে জানা যায়। এই চলচ্চিত্রের ইতিহাস এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি, হতে পারে এটি অসমাপ্ত বা অমুক্তিপ্রাপ্ত।
একনজরে ‘ ধ্রুব ’ চলচ্চিত্রঃ
চলচ্চিত্রের নামঃ ধ্রুব
নির্মানসালঃ ১৯৩৪
সময়কালঃ জানা যায়নি; শুধু জানা যায় ১৮ টি রিল ব্যবহৃত হয়েছে।
পরিচালকঃ কাজী নজরুল ইসলাম ও সতেন্দ্রনাথ দে
সঙ্গীতায়োজনঃ কাজী নজরুল ইসলাম
অভিনয়ঃ কাজী নজরুল ইসলাম, নিত্যানন্দ ঘটক, জয়নারায়ন মুখোপাধ্যায়, মাস্টার প্রবোধ, ভায়োলেট।
পরিবেশকঃ পাইওনিয়ার ফিল্মস কোম্পানি।
মুক্তির তারিখঃ ১ জানুয়ারি, ১৯৩৪।
- অনিক কান্তি সরকার (২৫ মে, ২০১৫)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৪:২৬