রাজনৈতিক জেরে নেতাকে গুম করে ফেলল আর সেটার দায় চাপল কল্লাকাটার ওপর। মেয়েকে উঠিয়ে ধর্ষণ করে মেরে ফেলে শিরোচ্ছেদ করল সেটার দোষও এই গুজবের। প্রায় এলাকায় পাগলকায় বা মানসিক প্রতিবন্ধী লোক থাকে। তাদেরকে 'গোয়েন্দা' বলার প্রবণতা আছে সরল জনগণের। এখন সেটা ছেলেধরায় রূপান্তর হয়েছে। ফলে গণপিটুনিতে ছাড় পাচ্ছে না এই অসহায় মানুষগুলো। পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা অন্যান্য দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিতে ছেলেধরা বলে গণপিটুনি খাচ্ছে অনেক নিরপরাধ মানুষও।
বাংলাদেশে একবার এক টাকার সোনালী কয়েন নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি প্রত্যক্ষদর্শী, আমার সামনে এক টাকার তামাকয়েন বিক্রি হয়েছিল পাঁচশ টাকার বিনিময়ে। এতে নির্দিষ্ট চক্রটি লাভবান হয়েছিল ঠিকই। গুজব ছড়ানোর আগে তারা কিছু কয়েন কিনেছিল মোটা দামে। এতে জনগণ উস্কে উঠলে তারা হন্যে হয়ে এক টাকা কয়েন জোগাড় করতে লেগেছিল। পরে জনগণও গুজবে হুজুগ হয়ে এক টাকার কয়েন কিনে পরে সেটা আর বেঁচতে পারিনি। কারণ, যারা বিক্রি করেছিল, তারাই গুজব রটনাকারীর অংশ ছিল। তারা বিক্রি করে আর কেনেনি। আমি একজনকে চিনতাম, যে পাঁচশ করে কয়েন কিনে সেটা আর বিক্রি করতে পারেনি।
বর্তমানে কল্লাকাটা বা ছেলেধরার এই গুজবটি চাউর হয় পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে। এতে ফেসবুক ফ্রিতে প্রচারমাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু পদ্মাসেতু সরকারি খরচে নির্মিত হচ্ছে তাই জনগণ ধরেই নিয়েছে এই কল্লাকাটা প্রকল্পটি সরকারি অনুদানে পরিচালিত। এ কারণে ছেলেধরা সন্দেহে পাকড়ানো লোকটিকে লোকজন পুলিশে দিচ্ছে না, সরকারি মদদে ছাড় পেয়ে যাবে বলে। তাই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েই বিচারের শেষতক দেখে নিচ্ছে। এতে অনেক নিরপরাধ লোকও গণপিটুনির বলি হচ্ছে, এমনকি ভিকটিমের আত্মীয় পরিজনও।
অথচ না পদ্মাসেতুতে কল্লার প্রয়োজন আছে, না এটি সরকারি মদদে পরিচালিত হচ্ছে। এটি একটি নির্জলা গুজব। আর এই গুজবের আড়ালে হচ্ছে স্বার্থসিদ্ধি। স্বার্থের জন্য বা অন্য যে কোনো কারণে মানুষ হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করছে, সেটার দোষ চাপতেছে এই গুজবের ওপর। ফলে মূল অপরাধী পার পেয়ে যাচ্ছে, গুজবের আড়ালে গাঢাকা দিচ্ছে।
তাই এখন থেকে ছেলেধরা সন্দেহে আর কোনো গণপিটুনি নয়, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন, তার চক্রটির অনুসন্ধান করুন। পুলিশে দিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৯ ভোর ৫:৪৭