somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুলাইমানি হত্যাকাণ্ড : ইরান কি শুধু প্রতিশোধ নেবে, নাকি যুদ্ধের দিকে যাবে?

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুলাইমানি হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্য আর যুক্তরাষ্ট্রের যেই পরিস্থিতি বিরাজমান, তাতে যুদ্ধের আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ইরান সুলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে, তার পরপরই ডোনাল্ট ট্রাম্পও পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এই পাল্টাপাল্টি হুমকিতে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি দীর্ঘ যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সবার দাবি হচ্ছে, যুদ্ধের ব্যাপারটা নির্ভর করবে আমেরিকার এ্যাকশনের ওপরে।

প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র যে কাজটি করেছে, সেটি একটি অন্যায় ও অনৈতিক কাজ। কারণ, আন্তর্জাতিক একটা নীতিমালা আছে- কোনো দেশের শীর্ষপর্যায়ের বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে হত্যা করা যায় না। এটি আন্তর্জাতিক আইন। এই আইন লঙ্ঘন করে আমেরিকা যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, এটি অবশ্যই নীতিবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। তার ওপর যদি আবারও যুক্তরাষ্ট্র হুমকি হুঁশিয়ারি দেয় বা কোনোপ্রকার হামলা চালায়, তাহলে কিন্তু ইরানের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। নিরুপায় হয়ে তাদেরকে যুদ্ধের দিকে যেতেই হবে। তবে এখন আপাতত সরাসরি ইরান কোনো যুদ্ধের প্রশ্নে সাড়া দেবে বলে মনে হয় না। তারা বড়জোর প্রতিশোধ নিবে, কঠিন প্রতিশোধ নিতে পারে। এবং একথা তারা বিভিন্ন বিবৃতিতে বলছে পর্যন্ত যে, আমরা সুলাইমানি হত্যাকাণ্ডের কঠিন প্রতিশোধ নেবো। যে কোনো সময় যে কোনো মূল্যে। সুযোগ বুঝে। এখন আপাতত যুদ্ধে জড়ানোর কোনো ইচ্ছা ইরানের আছে বলে মনে হয় না।

কেমন হতে পারে প্রতিশোধ?
আমেরিকা ইরানের এই হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সব মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে অনিরাপদ করে তুলল। ইরাক, সিরিয়া, লেবানন থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য যত জায়গায় মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, সবগুলোতে লালবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে খোদ আমেরিকা। ১৯৮৩ সালে লেবাননে ইরান মার্কিন ঘাঁটিতে একধরনের গুপ্তহামলা করেছিল, সেটি আমেরিকার মনে থাকার কথা। সেখানে দুই ট্রাকভর্তি বিস্ফোরক দিয়ে মার্কিন সৈন্যদের গুড়িয়ে দিয়েছিল ইরান। তাতে প্রায় ৩৫৮জন আমেরিকা এবং ফ্রান্সের সৈন্য নিহত হয়। এবং এর পরপরই কিন্তু আমেরিকা লেবানন থেকে সেনা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

এই ধরনের প্রতিশোধ মধ্যপ্রাচ্যে হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ, ইরান এখন আর সেই ১৯৮৩ সালের অবস্থানে নেই। এখন তারা ঢের শক্তিশালী। তার উপর মধ্যপ্রাচ্যে এখন এত বেশি সংখ্যক সংগঠন তৈরি হয়েছে, যেগুলো সব ইরানের অনুগত এবং ইরানের অঙ্গহেলুনিতে কাজ করবে। এখন যদি ইরানের সর্বোচ্চ পরিষদ থেকে কোনো প্রতিশোধের ঘোষণা না-ও আসে, তবে এই সমস্ত অঙ্গসংগঠনরা কিন্তু ছাড়বে না, তারা প্রতিশোধ নেবে। কারণ, জেনারেল কাশেম সুলাইমানি এসব সংগঠনের প্রধান ছিলেন।

ইরান কি আমেরিকার মাথাব্যথার কারণ?
যখন ট্রাম্পের নির্দেশে জেনারেল কাশেম সুলাইমানি হত্যাকাণ্ড রচনা হলো। তারপর থেকে কিন্তু ডোনাল ট্রাম্প খুব একটা স্বস্তিতে নেই। প্রথমত, সে নিজেও জানে, এটা একটি অন্যায় কাজ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনবিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবিদরাও ট্রাম্পের এই কাজের নিন্দা ও সমালোচনা করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার, ডেমোক্রাইড দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী চরম সমালোচনা করেছেন। সিআইয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান তো বলেই বসেছেন, ট্রাম্পের নির্দেশে যে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হলো, এর মধ্য দিয়ে আমেরিকানদের তিনি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলেন। এখন সামরিক এবং সাধারণ জনগণ মধ্যপ্রাচ্যে পিপড়ার মতো মরবে।

এখন কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্র তো সামরিক খাতে, অর্থনৈতিক খাতে অনেক এগিয়ে আছে। এখন ইরান যে কঠিন প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। তাতে ইরান সামরিক দিক দিয়ে আমেরিকার সাথে কতটুকু পেরে উঠবে বা আদৌ তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ধোপে টিকবে কিনা, সেটা একটা মূল্যবান প্রশ্ন! সারা বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে।

সরলভাবে মূল্যায়ন করলে করলে দেখা যায়, পৃথিবীতে এখন সামরিক শক্তির বিচারে সব কিছু হয় না। আগেপিছের কয়েকটা ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখুন, ১৯৭৯ সালে ইরানের ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’ হওয়ার পর, সেই থেকে আজ অব্দি প্রায় ৪০ বছর অতিবাহিত হয়েছে, এর মধ্যে আমেরিকা বারবার চেষ্টা করেছে, ইরানের ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র’কে নস্যাৎ দিতে এবং ইরানের ‘ইসলামি সরকার’কে উৎখাত করে দিতে। কোনোভাবেই পারেনি সফল হতে।

একটা পর্যায়ে তথা বিপ্লব হওয়ার অল্প সময় পরে তেহরান থেকে আমেরিকার দূতাবাস গুটিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এবং ইরাকের মাধ্যমে ইরানের ওপর যে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল, সে যুদ্ধ কিন্তু মোকাবিলা করেছে একাই ইরান। আর কেউ ছিল না। শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ ছিল- সিরিয়া। অথচ ইরাকের পাশে আমেরিকাসহ সারাবিশ্বের সবগুলো দেশ ছিল, যারা অস্ত্র দিয়ে, প্রযুক্তি দিয়ে, তথ্য দিয়ে এমনকি জনশক্তি দিয়ে আমেরিকাকে সাহায্য করেছে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে। কিন্তু সেই ইরান যুদ্ধ প্রতিরোধ করে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে গেল। তখন ইরাক সে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল জাতিসংঘের আওতায় একটা চুক্তিবদ্ধের মাধ্যমে।

এখন সেই ইরানের ওপর অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্ত্বেও তারা সামরিক শক্তি অনেক এগিয়ে। তারা প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। বিভিন্ন ধরন, বিভিন্ন পার্লার আর বিভিন্ন মানের অস্ত্র তারা নিজেরাই বানিয়েছে। এই যে অস্ত্রনিষেধাজ্ঞা শুধু, তা নয়। তাদের ওপর অর্থনিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। এতে কি হয়েছে? এতে ইরান স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। ফলে অস্ত্র ও প্রযুক্তিখাতে তারা এত বেশি শক্তিশালী যে আমেরিকার জন্য তারা সত্যি সত্যিই একটা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


গ্লোবাল হক মডেলের একটি মার্কিন ড্রোন

তার ছোটখাটো প্রমাণ হচ্ছে, সম্প্রতি পারস্য উপসাগরের আকাশে আমেরিকা ‘গ্লোবাল হক ড্রোন’ পাঠিয়েছিল। যেটি ভারত আমেরিকার কাছ থেকে ৬০০ কোটি ডলার ব্যয়ে কেনার পরিকল্পনা করেছিল। মার্কিন সরকার দাবি করে, এই ড্রোন বিশ্বের যে কোনো রাডার ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম। কিন্তু গতমাসে ইরানের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে একটি ‘গ্লোবাল হক ড্রোন’ করে সনাক্ত করে আমেরিকাকে মেসেজ দিলে আমেরিকা পাত্তা দেয়নি। পরে তেহরান সেই ড্রোনগুলোকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে ভূপাতিত করে। ড্রোনটিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার চার ঘণ্টা আগে এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের পর থেকেই এটির ওপর চোখ রেখেছিল ইরান। এই ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের নিজেরাই তৈরি করেছে, তারা প্রযুক্তি ও অস্ত্রের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে, একথা বলার আর সুযোগ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২১
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×