আলজারিরার একটি রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত সেই ২০১৪ সালে। সেই তথ্য নিশ্চিত করেছিল তৎকালীন আইইডিসিইআরের প্রধান মাহমুদুর রহমান। রিপোর্টটি প্রকাশও হয়েছে ২০১৪ এর জুন মাসে।
আসলে এই করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ তেমন অচেনা ভাইরাস নয়; এটা একটা বড় ভাইরাস দলের সদস্য, যার নাম করোনা। এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে।
এই ভাইরাস যে হুট করেই জন্মেছে, এমনটাও নয়। এর আগেও এই ভাইরাস ছিল। এক দশক আগে ২০০৩ সালে যে ‘সার্স ভাইরাস’ (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিনড্রোম) এর সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি লোক। এটির উৎপত্তিস্থলও চীনের দক্ষিণাঞ্চল গুয়াংডং-এ। এ কারণে চীন যখন প্রথম এই ভাইরাসের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়, তখন এর নাম রাখে, SARS-CoV-2।
গবেষণা দেখা গেছে, কোভিড-১৯ ভাইরাসটি বিগত ৪ মাসে প্রায় ৮ বার নিজেকে পাল্টেছে। এখন বুদ্ধি দিয়ে ভাবলে বুঝা যাবে, এই ভাইরাসটি দিন দিন খারাপ না হয়ে উল্টো ভালোও হয়ে উঠতে পারে এবং সেই সম্ভাবনার হারও বলা যেতে পারে ৫০ শতাংশ। কাজেই আতঙ্কিত হয়ে লাভ নেই। এটি হঠাৎ করেই নির্মূল হবে না, এই ভাইরাস থাকবেই, আমাদের ভেতরেই থাকবে, হয়ত ভাইরাস তার রূপ এবং গতিপ্রকৃতি পাল্টাতে পারে। যার ফলে সেটি আর মরণঘাতি থাকবে না। একটি সহিষ্ণু ফ্লুর মতো বেঁচে থাকবে আমাদের শরীরে।
এই কথা যদি সত্য হয়, তাহলে এটিও সত্য হতে পারে যে, আমাদের শরীরে বহমান সহিষ্ণু ভাইরাস কখনো কখনো তার রূপ এবং গতিপ্রকৃতি পাল্টে ফেলতে পারে। এবং সেটা মারণ ভাইরাসে রূপ নিতে পারে। ঠিক যেমন আগেকার পুরোনো করোনা রূপ পাল্টিয়ে এখন মরণঘাতি ভাইরাসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
ভেবে দেখুন, এর আগেও যত ভাইরাসের সাথে মানবশরীরের সাক্ষাত হয়েছে, সবগুলো কিন্তু একেবারেই নির্মূল হয়ে যায়নি। যদিও ভ্যাকসিনের কাজটি হলো, সাময়িক মৃত্যুকে রোধ করা। যাতে মহামারীতে তরতর করে মানুষের মৃত্যু না ঘটে। এই ধরনের মৃত্যু আসলেই দুঃখজনক। এটি কখনো কাম্য নয়।
নিচে আলজাজিরার রিপোর্টির লিংক দেখুন। (পাঠকের বুঝার জন্য অনুবাদ করে দিলাম।)
আল জাজিরার রিপোর্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত!
আজ রবিবার বাংলাদেশে প্রথম মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম করোনা ভাইরাসের আক্রমণ ধরা পড়েছে। আবু ধাবী হয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এক ব্যক্তিকে এ রোগে আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, ৫৩ বছর বয়সী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি এখন একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসার পথে আবু ধাবিতে তিনঘণ্টা অবস্থানকালে সম্ভবত তিনি এ ভাইরাসের শিকার হয়েছে।
মাহমুদুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, ৫৩ বছর বয়সী ব্যক্তিটি যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। তিনি চলতি মাসের ৪ তারিখে দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরার দুই দিন পর তার ভেতর ভাইরাসের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। আর এর দ্বারা বাংলাদেশে পৃথিবীর ২২তম করোনা আক্রান্ত দেশ হিসেবে নাম লেখালো।
এ রোগটি ইতিমধ্যে সৌদি আবর, জর্ডান, সংযুক্ত আবর আমিরাত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে।
উল্লেখ্য যে, মানুষের ভেতর সর্বপ্রথম করোনা সনাক্ত হয় ২০১২ সালে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভোগেন। রোগটির অন্যান্য উপসর্গগুলো ২০০৩ সালে ছড়ানো ‘সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) -এর উপসর্গের মতো।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ৪০% পর্যন্ত পৌঁছেছে। গোটা পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ৮০০ জন এতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৩১০ জন। এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রচণ্ড কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হয়। আবার কখনো কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, এতদিন বাংলাদেশে করোনা আসা ছিল একটি সময়ের ব্যাপার মাত্র। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশী কাজ করেন, যাদের দুই তৃতীয়াংশ তথা ২০ লাখ রয়েছেন সৌদি আরবে।
প্রকাশকাল : ৫ ই জুন, ২০১৪ ইংরেজি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১০:৫১