মেয়েটির চোখে ক্ষোভ, আক্রোষ, আক্ষেপ বা ঘৃর্ণা। যাই বলি না কেন ভালবাসা নেই তার চাহনিতে। নাম শেফালি। বয়স বড় জোর ১৪ বছর হতে পারে। চার বোন তিন ভাই, মোট সাত ভাই বোনের মধ্যে সে মেঝ। বাবা মারা গেছেন বছর চারেক হল। প্রচন্ড অভাবের সংসার। এই অভাবের সুযোগ নিয়ে স্থানীয় দালাল মেয়েটিকে সৌদ পাঠিয়েছিল সাত মাস আগে। সেখানে মেয়েটির সাথে কি হয়েছিল তা বর্ণনা করার ইচ্ছে আমার নেই। বহু বর্ননা করেছি শুনেছি আর শুনতে শোনাতে চায় না।
রাত সাড়ে নয়টা বা আসেপাসে হবে। অফিসে ডুকতে যাব। এই মেয়েটি সহ আরো তিনজন মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলাম। শেফালির চোখ বেয়ে পানি নামছে। জিজ্ঞাস করলাম আপাররা কি আজকে আসলেন? হ্যা না কিছুই বলল না। শেফালিকে দেখে একটু জোর দিয়েই কথা বললাম। নিজের পরিচয়ও দিলাম। শেষে বললাম আমি একজন মানবাধিকার কর্মী। আপনারা চাইলে আমি আপনাদের সাহায্য করতে পারি। এরপর বাকিটা আরব্যরজনী থেকে উঠে আসা এক করুন কাহিনী ।
আইন মতে ২৫ বছরের নিচে কোন মহিলা কর্মী প্রবাসে যেতে পারে না। আমার মনে হয়েছে শেফালীকে কেউই দেখেন নি। না পাসপোর্ট অফিস, না ভেরফিকেশন কারী পুলিস, না বিএমইটি প্রদানকারী না ইমিগ্রেশন পুলিস। রিক্রুটিং এজেন্সি, তারও কোন দায় নেই। এ্যাম্বেসির শ্রম উয়িং তারও কোন দায় নেই।
মেয়েটির মামা আসল। শুনলাম মা ও এসেছেন। মায়ের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। জীর্ণদেহ, জীর্ণশীর্ণ শাড়িতে এক মহিলা আসলেন। মা মেয়ের মিলন দেখলাম। মেয়ের চোখে ক্ষোভ দেখলাম।
ইতোমধ্যে ব্র্যাকের নয়নের সাথে কথা বলে দ্রুত আসতে বললাম। মেয়েটির জরুরী চিকিৎসা দরকার। আজ রাতে থাকার ব্যবস্থা দরকার। নয়ন কখনই আমাকে না বলেনি। আজকেও বলল না। প্রবাসি কল্যানেরও একজন অফিসারকে ডেকে নিয়ে আসলাম।
এর মধ্যে আমি মেয়েটির মা এর সাথে কথা বলে রাজি করালাম। সাথের আরেক সংগ্রামী মেয়ে সেও সাথে যেতে রাজি। নয়নকে নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতে ভর্তি করে যখন বাসায় ফিরলাম তখন রাত একটা। আমার মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়েছে। আজ তার সাথে প্রায় দেখাই হল না আমার।
লেখাঃAbdur Rahman
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৯ দুপুর ২:২৪