somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার সেই সময়ের ঈদগুলো

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানীং কেমন জানি অতীতের মধুর স্মৃতির কথা মনে করতে পারছিনা! এটা কেন হচ্ছে সেটাও বুঝছি না। হয়তোবা নানাবিধ কাজের চাপে থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। যা হোক এবারের ঈদকে সামনে রেখে আমার সেই সময়ের ঈদগুলোর কথা স্মরণ করতে চাইছি। খুব সুন্দর ছিলো দিনগুলো। ঈদ মানেই আনন্দ আর হাসি খুশি। ঈদের আগের দিন আপুরা মিলে ঘর-দোর পরিস্কার করে বাড়িটাকে সাজিয়ে তুলতেন আর আমি তাদেরকে টুকটাক সাহায্য করতাম। যেমন- বই পত্র গুছিয়ে রাখা, দোকান থেকে গোলাপ-রজনীগন্ধা কিনে আনা ইত্যাদি।

ঈদের দিন সকাল সকাল মা ঘুম থেকে ডেকে দিতেন। ঘুম থেকে উঠে গোসল সেড়ে নিতাম। তারপর সকালের নাস্তা করে ঈদের নতুন জামা পড়ে মা কে সালাম করে জেঠাতো ভাইদের সাথে ঈদগাহে যেতাম। নামাজ শেষে আমার সম বয়সীদের সাথে কুলোকুলি করতাম আর মুরব্বীদের সালাম করতাম। বড়রা হাঁটু গেড়ে বসে আমার সাথে কুলোকুলি করতো। এটা দেখে মজাও পেতাম। তারপর কবরস্থানে গিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়া দাদা-দাদী আর পাড়া-প্রতিবেশীদের কবর জিয়ারত করে বাসায় ফিরতাম।

ঈদগাহ থেকে বাসায় ফিরে প্রথমে বাসায় তৈরি করা ঈদ রেসিপিগুলো একটু একটু খেতাম (ছোটরা কী আর বেশি খেতে পারে?)। তারপর মা’র কাছ থেকে ঈদ সেলামী নিয়ে জেঠাতো ভাইদের সাথে পুরো পাড়ার সব ঘরে যেতাম। পুরো পাড়া বেড়ানোর পর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য তাদের সাথে বের হতাম। ঈদের ১ম দিনে সব আত্মীয়দের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হতোনা। তাই এভাবে ঈদের ২য় দিন পর্যন্ত বেড়াতাম। বেড়ানোর পর বাসায় ফিরে এসে ঈদ সেলামী কত পেয়েছি সেটা গুনে দেখতাম।

এভাবে ঈদের ১ম ও ২য় দিন কেটে যেত। এরপর ঈদের ৩য় দিনে আপুরা সাধারণত তাদের বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে যেত। আমাকেও তাদের সাথে নিয়ে যেত। অনেক সময় দেখা যেত একই জায়গায় জেঠাতো ভাইদের সাথে গিয়েছি পরে আবার আপুদের সাথেও গিয়েছি। ঈদের ৫ম কিংবা ৬ষ্ঠ দিনে পরিবারের সব সদস্যরা মিলে কোনো পর্যটন স্পট থেকে ঘুরে আসতাম। এক্ষেত্রে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত কিংবা ফয়েস লেকে বেশি যাওয়া হতো। বর্তমানের ফয়েস লেক আগে এমনটি ছিলো না। এখন এটা অনেক আধুনিক, ২০০৭ সালের পরে ফয়েস লেকের বিবর্তন ঘটেছে।

ছোটবেলার ঈদগুলোতে বাবাকে মিস করতাম। কারণ সে সময়ে বাবা বেশির ভাগ সময় প্রবাসে থাকতেন। সে সময়ে ঈদের আগে অর্থাৎ রমজান মাসে বাবা যখন বাসার টেলিফোনে ফোন করতেন তখন বাবাকে অনুরোধ করতাম ঈদে বাড়িতে আসার জন্য। বাবা হেসে হেসে উত্তর দিয়ে বলতেন- “পরের বছর তোমাদের সাথে ঈদ করবো ইনশাল্লাহ”। ঈদের দিন বাড়িতে আরেকটি মজার ব্যাপার লক্ষ্য করতাম। আমাদের পুরো পাড়াটিতে শুধু আমাদের বাড়িতে টেলিফোন সংযোগ থাকাতে পাড়ার যারা বিদেশে থাকতেন তারা আমাদের টেলিফোনটিতে ফোন করতেন তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার জন্য। আমার খুব ভালো লাগতো এটা দেখে যে- অন্তত এই টেলিফোনটি থাকার কারণে পাড়ার প্রবাসীরা উনাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে পারছে, বিপদ-আপদে কথা বলতে পারছে।

একদিন এক কান্ড করে বসেছিলাম। ঈদের দিন ঈদগাহ থেকে বাসায় ফিরে খেয়াল করলাম আমার ঈদের জামাটা আমার কেমন জানি সুন্দর লাগছে না! সে কী কান্না শুরু করেছিলাম! মা কোনো রকম আমাকে শান্ত করেছিলো। পরক্ষণে জেঠাতো ভাইদের সাথে যখন বেড়াতে বের হলাম তখন মনটা কেমন জানি আবার ভালো হয়ে গিয়েছিল। আরেকবার কেমন করে যেন আমার ঈদ সেলামীগুলো পকেট থেকে কোথায় পড়ে যায়। বাসায় এসে যখন দেখি আমার ঈদ সেলামীগুলো নেই তখন মন খারাপ করে বসেছিলাম। মা যখন দেখলো আমি মন খারাপ করে বসে আছি তখন কারণ জানার পর মা আবারো আমাকে ঈদ সেলামী দিলো। তাতেই মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল আমার।


সকল ব্লগারদের জানাই ঈদ-উল-ফিতর'এর শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।।

সমতল'এ এক কপি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:২২
২৮টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×