এই সুর টা শুনলেই তার সারা শরীরটাতে একটা ঢেউ খেলে যায়। মনের অজান্তেই শরীরটা একেঁ বেঁকে যায়। সে যখনই সুরটা শোনে প্রথমেই তার পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু ধীরে ধীরেই একটা উত্থাল-পাথাল আনন্দ ভর করে। তার কাছে মনে হয় তার এই রক্ত-মাংসভর করা শরীরের ভিতর একটা নাগ-নাগিন এই সুরের সাথে তাল মিলিয়ে কেমন দুলে দুলে নাচছে।সে চোখ বন্ধ করে যেন সেই নাচ দেখতে পায়। প্রায় সময়ই সে রুমে একা থাকলে অথবা বাথরুমে থাকলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার জ্বিহবা টা দেখে নেয়। মাঝে মাঝে তার মনে হয় মুখ খুললেই একটা বড় জেরা জ্বিহবা বের হয়ে আসবে। কিন্তু এত বড় বয়স পর্যন্ত তার সন্দেহটা প্রমানিত হয়নি।
তিনি একটা ভাল করপোরেট অফিসে কাজ করেন, বেশ উচ্চ পর্যায়ে।পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালই আছেন। কিন্তু ইদানিং তার এই সমস্যাটা বেশ দেখা দিচ্ছে।অফিসে তিনি হয়তো কোন গুরুত্বপূর্ন মিটিং করছেন তখন হঠাৎ করেই তিনি সুরটা শুনতে পান। আর এর পর থেকেই তার শরীরটা মোচরাতে থাকে। তিনি তখন একটাই কাজ করেন-তা হল দ্রুত বাথরুমে গিয়ে জোড়ে কোন ঝর্ণা অথবা পানির কল ছেড়ে রাখেন।বড় অস্থির সে সময়, অবশ্য ভাগ্য ভাল হলে খুব দ্রুত সে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারে। না হলে কি যে হয়-একবার তো তাকে বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে বের করতে হয়েছে।যাক-মানুষজন অবশ্য এটা নিয়ে কোন সন্দেহ করেনি,একটা মানুষ যে কোন সময় অসুস্থ্য হতেই পারে।
কিন্তু কতদিন তিনি এভাবে চুপ করে থাকবেন। একজন ভাল ডাক্তারের কাছে তাকে যেতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অনেক কিছুই ভাবছিলেন। এমন সময় তিনি তার ছোট মেয়েটার একটা চিৎকার শুনলেন। তিনি মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন মেয়েটা তার থেকে একটু দূরেই পড়ে আছে। কিভাবে এটা হল? মেয়েটা যখন ধীরে ধীরে চোখ খুললো-তাকে দেখেই কেমন যেন আর্ত চিৎকার দিয়ে বলল-মা, তোমার কি হয়েছে? এমন করছিলে কেন?
তিনি বেশ অবাক হয়ে বললেন- কেন আমি আবার কি করলাম?আমি তো বারান্দায় দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবছিলাম।
নাতো, তুমি তো কেমন যেন করছিলে, সাপের মত দুলে দুলে নাচছিলে।তোমাকে দেখে এত ভয় পেয়েছিলাম যে তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।আচ্ছা মা, তোমার কি হয়েছে?
কই কিছু নাতো, বলেই তিনি তার আদরের মেয়েটার কপালে হাত রাখলেন আর এর পরই মেয়েটা আরো একবার ভয়ানক চমকে গেল। একি মা, তোমার হাতের এই অবস্থা কেন?এত খসখসে যেন সাপের চামরা?
তিনি নিজেও বেশ অবাক হলেন আর চমকেও গেলেন। তাই তো এটা কেমন করে হল-তিনি নিজেও তো লক্ষ্য করেনি। তার হাতটা কেমন অদ্ভুদ অমসৃন। কেমন একটা আঁশ আঁশ ভাব এসেছে।এরপরই তিনি দ্রুত তার রুমে চলে যান, গিয়ে তার বিশাল আয়নার সমানে দাঁড়িয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকেন নিজেকে। দুদিন আগেও তো তিনি ঠিক ছিলেন, এত দ্রুত কিভাবে বদলে গেলেন? ভাবতে ভাবতে তার মাথাটা কেমন ঘুরে গেল, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।
........বেশ অনেকক্ষন পর যখন তার জ্ঞান আসলো তখন তিনি নিজেকে আবিস্কার করলেন বিশ বছর আগে যে বাড়িটাতে তিনি থাকতেন সেখানে। তিনি চোখের সামনে দেখতে পেলেন-তার অসুস্থ্য সৎ মা বিছানাতে অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার করছে আর বলছে, তোকে আমি মায়ের ভালবাসা দিয়ে বড় করেছি।কোনদিন কোন কষ্টপেতে দেইনি। আর তুই এই সম্পত্তির জন্য আমাকে বিষ খাওয়ালি?তোর বুকের মধ্যে এতটুকু কষ্ট হল না?আমি আদর দিয়ে একটা কাল সাপ পুষেছিলাম। আমি তো মরেই যাবো-কিন্তু তুই সত্যি একদিন একটা বিষাক্ত সাপ হয়ে যাবি। আমি তোকে অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছি। তোর পাপ তোর সাথেই থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০