somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায় ইতালি, বিদায় বিশ্বকাপ ২০১০ (প্রথম পর্ব)

২৫ শে জুন, ২০১০ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতকাল বিশ্বকাপ ২০১০ থেকে বিদায় নিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন আর আমার প্রিয় দল ইতালি। বিদায় বেলায় টিভিতে প্রিয় খেলোয়াড়দের অভিব্যক্তি আমাকে আর দেখতে হয় নি। আমাদের বাসার ডিশের লাইনটা বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই কেন যেন খুব সমস্যা করছিলো, একটা ম্যাচও ঠিক মতো দেখতে পারি নি। প্রিয় দলের আগের দুটো ম্যাচও দেখতে পারি নি। গতকাল খেলা দেখার জন্য উদগ্রীব ছিলাম, কারণ তখন যে প্রিয় দলের প্রতিযোগিতায় বাঁচা-মরার লড়াই। ম্যাচ শুরুর পর সমস্যাসংকুল টিভিতে পরিষ্কার করে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না, তাই বাধ্য হয়ে বাসার অনেক দিনের পুরনো টিভিটা জঞ্জাল থেকে অনেক কষ্টে বের করে এনে সুইচ অন করে খেলা দেখার চেষ্টা করলাম। হায়, সে চেষ্টারও গুড়ে বালি, সেখানেও স্পষ্ট করে কিছু দেখা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আগের নিয়মেই খেলা দেখতে সচেষ্ট হতে হলো।

২৫ তম মিনিটে স্লোভাকিয়া ইতালির নড়বড়ে রক্ষণের সুযোগ নিয়ে আচমকা একটা গোল করে বসলো। অস্পষ্ট টিভিতেও আমি ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম যে ইতালির ডি-বক্সের মধ্যে পরপর সামনে-পিছনে দৌড়াতে থাকা দুজন স্লোভাকিয়ান ফরোয়ার্ড ওয়ান-টু-ওয়ান বল আদান-প্রদান করে কতোটা সহজে গোলটা দিয়ে দিলো, অথচ ইতালির রক্ষনভাগের খেলোয়াড়েরা তাদের বিপদজনক গতিবিধি লক্ষ্য করেও আগে থেকে মরিয়া হয়ে বাঁধা দিলো না। ইতালির যে রক্ষনভাগ নিয়ে এতো গর্ব হতো সেই রক্ষনভাগের এমন দৈন্য দশা দেখে মনটা ভেঙ্গে গেলো। বুঝতে পারলাম, রক্ষণ নির্ভর একটা দল এমন ভঙ্গুর রক্ষণভাগ নিয়ে কিছুতেই বেশি দূর এগুতে পারবে না। আমাকে আর বেশিক্ষণ খেলা দেখার সুযোগ না দিয়ে মিনিট কয়েক পরে হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো। তারপর অন্ধকারের মধ্যে শুয়ে-বসে দুরু দুরু বুকে আমার মাথায় চলতে লাগলো খেলার সম্ভাব্য ফলাফলের আশংকা।

ঘন্টা আধেক পর কারেন্ট এলো। গোলমেলে টিভিতে এবার আর খেলা দেখতে আগ্রহী হলাম না, ভাবলাম নেটে বসেই ফিফা.কম থেকে খেলার লাইভ স্কোরলাইনটা দেখবো। ইতোমধ্যে প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয়ে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু স্কোরলাইন সেই আগেরটাই, ইতালি ০ : ১ স্লোভাকিয়া। খেলার এমন অবস্থাতে দেখলাম ফিফা.কম এর লাইভ স্কোরবোর্ড পেইজের কমেন্ট সেকশনে আগত দর্শনার্থীরা ইতালিকে ইতোমধ্যে বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে দিতে শুরু করে দিয়েছে। সবার মুখেই একটা বাণী: বিদায় ইতালি, বিদায়

খেলার ৬২ মিনিট শেষ হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে চলছে, ৬৬ মিনিট, ৬৯ মিনিট, ৭১ মিনিট। আর সেই সাথে প্রিয় দলের জন্য কি এক কষ্টকর যন্ত্রনায় আমার ভেতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছে। ইতালি কি পারবে না একটা গোল দিয়ে সমতা ফেরাতে? কারণ গ্রুপের অপর শেষ ম্যাচে তখনও গোলশূন্য অবস্থা। ইতালি যদি একটা গোল দিয়ে সমতা ফেরাতে পারে তাহলেও তো নিভু নিভু করে ওদের আশার আলোটা জিইয়ে থাকে। এমনটা ভাবছিলাম, হঠাৎ করে বজ্রপাতের মতো স্কোরলাইনটা পাল্টে গিয়ে হয়ে গেলো ইতালি ০ : ২ স্লোভাকিয়া। আমাকে কোন কিছু বুঝে উঠার সুযোগ না দিয়েই তৎক্ষনাত কারেন্ট আবার চলে গেলো। আর আমি বজ্রাহতের মতো বসে রইলাম। কোথায় ভাবছি ইতালি একটা গোল দিয়ে সমতা ফেরাতে পারবে কি পারবে না, আর সেখানে প্রিয় দলের উপর গোলের পাল্টা আঘাত। কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে বুঝতে শুরু করলাম, আর আশা করে লাভ নেই। বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। ইতালির সুযোগ সন্ধানী ফরোয়ার্ডরা এতোটা কৌশলী নয় যে মাত্র ১৭ মিনিটের মধ্যে ২ গোল শোধ করে দিতে পারবে। কাজেই আর কি? বিশ্বকাপ নিয়ে আমার সকল আশা উন্মাদনার এখানেই তাহলে সমাপ্তি।

অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে ফের শুরু হলো কষ্টকর ভাবনাগুলি। বিশ্বকাপে নিজের প্রিয় দল নেই, কতোটা গ্লানিকর এই চিন্তা। হতাশা কমাতে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু অনেকদিনের পুরনো একটা স্বভাব্কেই যেন বারে বারে অনুভব করতে লাগলাম, মনের ভেতর দহন যন্ত্রণা চললে আমি যে এক ফোঁটা ঘুমাতে পারি না। এভাবেই কাটলো আরও কিছুক্ষণ। ঠিক আধা ঘন্টার মাথায় আবার কারেন্ট এলো, যদিও জানি ম্যাচ ততক্ষণে শেষ। পরাজয় ভাগ্যকে বরণ করে নিয়েই এবারের বিশ্বকাপে প্রিয় দলের শেষ স্কোরলাইনটা দেখার জন্য ফিফা.কম এ গেলাম। দেখলাম, ইতালি ২ : ৩ স্লোভাকিয়া। কাটা ঘায়ে যেন নুনের ছিটা পড়লো। আমার অনুমানকে ভুল প্রমান করে শেষ ১৭ মিনিটে ইতালিয়ান ফরোয়ার্ডরা ২ গোল করেছে ঠিকই, তবুও তাদের নামের পাশে পরাজয়ের গ্লানি। কেননা, ২ গোল দেয়ার পাশাপাশি তারা যে আরও একটা গোল হজম করে ফেলেছে। শেষ দিকে এসে গোল দেয়ার পাশাপাশি নিজেরা নতুন করে গোলটা না খেলে তারা তো ম্যাচটা ড্র ই করতে পারতো, আর সেটা হলে এই ড্রটাই ওদের দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে যেত কেননা গ্রুপের অপর ম্যাচটি গোলশুন্যভাবেই শেষ হয়েছে। কিন্তু বিধিবাম, শেষ পর্যন্ত পরাজিতের খাতাতেই রইলো ইতালির নাম। আর এরই সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো এবারের আসরে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের অভিযাত্রা।

মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা কষ্টগুলিকে যখন চেপে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত আছি তখন চোখে পড়লো ফিফা.কম সাইটে ম্যাচ উত্তর কিছু আবেগময় ফটো। হতাশায় মুষড়ে পড়া ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড ফ্যাবিও কাগলিরেল্লাকে সান্তনা দিতে দিতে আর ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন এক কর্মকর্তা। গতবারের আসরে সারা বিশ্বের সামনে ১৮ ক্যারট ট্রফি উঁচিয়ে ধরা অধিনায়ক ফ্যাবিও ক্যানাভারো জীবনের শেষ বিশ্বকাপ-ম্যাচ শেষে দু হাতে অশ্রু সজল চোখ ঢাকতে ঢাকতে অন্তিম বারের মতো মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন টানেলের ভেতর। প্রিয় দলের এমন দুঃখভরা বিদায়ে মনের ভেতর কষ্টের আঘাতগুলো কেমন করে যে অনুভূত হয় তা বোধ করি যে কোন দলের সমর্থকেরাই মনে মনে উপলব্ধি করতে পারবেন।

ইতালি জাতীয় দলের শ্রেষ্ঠ সব ডিফেন্ডারদের অনেকেরই খেলা দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি। দিনো জফ, ফ্রাংকো বারেসিদের খেলা দেখার কোন সুযোগই আমি পাই নি। পাওলো মালদিনির খেলা দেখার সুযোগ হয়েছিল তবে তা নেহায়েতই খুব কম। যার খেলা সত্যিই আমার নজর কেড়ে নিয়েছিলো তিনি হলেন ফ্যাবিও ক্যানাভারো। গত বিশ্বকাপে আসরের সিলভার বল জেতা ফ্যাবিও ক্যানাভারোর অপ্রতিরোধ্য রক্ষণনৈপুণ্য আমাকে ভীষনভাবে মুগ্ধ করে। তার আপোষহীন শরীরী ভাষা, মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত ক্লান্তিহীনভাবে দৌড়ে বেড়ানো, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে নিমেষেই বল কেড়ে নেয়ার দুর্দান্ত দক্ষতা, এর সবই ছিলো আমার কাছে হৃদয়গ্রাহী। তবে সময়ের পরিক্রমায় আর বয়সের ভারে সব কিছুতেই মরচে ধরে যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফ্যাবিও ক্যানাভারোর বেলাতেও ঠিক তেমনটাই ঘটলো। এইবারের আসরে তিনি যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফিরছিলেন। সেই নৈপুণ্য, সেই গতি তার মধ্যে এবার ছিলো অনুপস্থিত। যার ফলশ্রুতিতে ইতালির রক্ষনভাগের এমন ছন্নছাড়া অবস্থা, আর এরই ধারাবাহিকতা বয়ে নিয়ে আসলো দলের অকাল প্রস্থান। এক বিশ্বকাপের পর আরেক বিশ্বকাপ হয়তো আবার আসবে, কিন্তু ইতালির রক্ষণদূর্গের প্রবল প্রতিরোধ হয়ে ফের বুক চিতিয়ে দাঁড়াবে না একজন ফ্যাবিও ক্যানাভারো

বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে হারিয়ে গেলো প্রিয় দল। এমন অবস্থায় অন্যেরা কে কি করেন তা জানি না, তবে আসরের বাকি ম্যাচগুলো দেখা থেকে আমি নিজেকে ইতোমধ্যে গুটিয়ে নিয়েছি। কারণ, যেখানে আমার প্রিয় দলই নেই সেখানে খেলা দেখায় কেন জানি আমি আর কোন আগ্রহ বোধ করতে পারি না। যদি খেলা দেখতেই বসি তাহলে কিসের আশায়, কার জয়ের প্রার্থনায় টেলিভিশন সেটের সামনে বসবো? টিভিতে অন্য দলের খেলা দেখতে গেলে নিজ দলের অনুপস্থিতি হৃদয়ে অসহনীয় অন্তর্দহন সৃষ্টি করেই চলবে। কাজেই, প্রিয় দল ইতালির বিদায়ের সাথে সাথে আমার জন্যেও শেষ হয়ে গেলো এবারের বিশ্বকাপ।

( চলবে..... )
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১০ রাত ১১:০৩
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×