
ছবি: জীবন আহমেদ
“দ্যা গুড, দ্যা ব্যাড অ্যান্ড দ্যা আগলি” সিনেমার মতো মানুষের জীবনটাই এমন । লোভ মানুষকে ধ্বংস করে । এত অর্থবিত্ত আসলেই কিছু নয় । সবকিছুই ভেলকি!
বন্যায় প্রায় ৬০ লক্ষাধিক মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে । কোনভাবে নিজের জীবনটা বাঁচিয়ে একটা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে, কেউবা ভেসে গেছে । পরনের দুই সেট কাপড়ও হয়তোবা অনেকেই নিতে পারেনি । অথচ একটা সাধারণ বাড়িতেই খাট, আলমারি, ওয়্যারড্রোব, ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশনসহ কত দামী জিনিসপত্র থাকে । এছাড়াও ঘরে ড্রামভর্তি চাউল থাকে, সারাবছরের জন্য কিনে রাখা পেঁয়াজ, আদা-রসুন থাকে, কিচেনে সবজি-ফল থাকে, রান্নার সামগ্রী থাকে ।
মানুষ যখন একটা বাসা থেকে অন্য বাসায় শিফট করে তখন রুমের বাল্বটাও খুলে নিয়ে যায়, বাথরুমে ব্যবহার করা চটিটাও নিয়ে যায় নতুন শিফট করা বাসায় ব্যবহার করার জন্য । বন্যা কবলিত মানুষগুলো সেই রুমের লাইট, ফ্রিজ, টিভি, খাট, এসি কোনোকিছুরই পরোয়া করেনি । পরোয়া করেছে শুধুমাত্র নিজ এবং পরিবারের জীবনের । কোনোহালে পরনের লুঙ্গি পড়েই বের হয়ে এসেছে ঘর থেকে । তবুও যেন জীবনটা শুধু বাঁচে!
বন্যাতে কত লক্ষ মানুষ ঘরছাড়া হয়ে গেলো । ভেসে গেলো গরু-ছাগল, ঘরের আসবাবপত্র, বিয়ের দিনে তোলা দু’জনের সেই শেরওয়ানী আর শাড়ি পরা ছবিটি, ছেলের বউয়ের জন্য যত্ন করে রাখা হাতের বালাটা, ভেসে গেলো কত মূল্যবান সম্পদগুলো । অথচ একটা অঞ্চলে কত ধনী মানুষ থাকে, দরিদ্র মানুষ থাকে । কত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে । অথচ সবাই এক নিমিষেই নিঃস্ব হয়ে গেলো ।
বন্যা পরবর্তী সময়ে এই মানুষগুলো কি আগের সেই জীবন ফিরে পান বা পাবেন! যা বন্যায় ভেসে গেছে সেগুলো কি আর ফেরত আসবে? আসবেনা!

ছবি: জীবন আহমেদ
এই দুর্যোগ, দুর্ভোগের সময়গুলোই আসলে আমাদের মানুষ গড়তে শেখায় । নিজের লোভ-লালসা, অহংকার, হালাল-হারাম, ক্ষমতা, আধিপত্য এসব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান শেখায় । মানুষ হিসেবে আমাদের কাজ কি, মানুষের কতটা সাধারণ, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, মানবতা এবং নিঃস্বার্থভাবে জীবন অতিবাহিত করা উচিত সেসব শেখায় ।
পরিশেষে আরেকটি কথা, সেই ৬০ লক্ষাধিক মানুষগুলোর মধ্যে এমনও মানুষ ছিল যাঁরা আমার-আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আছে । তাঁরা তাঁদের বাসার ছাদে ছবি তুলে আপলোড করতো, তাঁদের গ্রামীন পরিবেশের প্রকৃতির ছবি আপলোড করতো, ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন পোজ দিয়ে ছবি তুলে সেটা আপলোড করতো ।
ঘরহীন এই ফেসবুক বন্ধুগুলো হয়তোবা আর কখনও সেভাবে ছবি দিতে পারবে কি-না তা নিশ্চিত করে বলা যাবেনা । তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে কি-না সেটাও অজানা ।
এটাই আমাদের জীবন । এটাই স্রষ্টার নিদর্শন । যেই জীবনকে নিয়ে আমরা এত বড়াই করি, অহংকার করি, ক্ষমতার লোভে হানাহানি করি, আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্যকে বলি, ‘তুই আমারে চিনস?’...
সাব্বির আহমেদ সাকিল
০৪ আষাঢ় ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | শনিবার | ১৮ জুন ২০২২ ইং | নেত্রকোনা
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২২ রাত ১০:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


