somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মোটা দাগের কথা অশনি সংকেত (পর্ব-০২)

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মোটা দাগের কথা
অশনি সংকেত (পর্ব-০২)
আমাদের দেশে তিন ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত।
ক) সাধারন স্কুল কলেজের শিক্ষা
খ) মাদ্রাসা শিক্ষা
গ) ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা
খেয়াল করে দেখুন সব চাইতে বেশী ছেলেমেয়েরাই পড়াশুনা করে সাধারন স্কুল কলেজে। তার পর মাদ্রাসা, আর সবচাইতে কম পরিমান ছেলেমেয়ে পড়ে ইংলিশ মিডিয়ামে। ইংলিশ মিডিয়ামের পড়াশাশুনা করানোর সাধ্য কোন সাধারন আমজনতার নেই। এখানে সবাই পড়তে পারেনা। পড়তে লাগে বেশ মোটা অংকের টাকা। কিন্তু মজার বিষয় এখানে প্রশ্ন পত্র ফাঁসের কোন সুযোগ নেই। মাদ্রাসাতেও এই প্রশ্ন পত্র ফাঁসের কথা শোনা যায়নি। প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয় শুধু সাধারন লাইনে। যেখানে দেশের সবচাইতে বেশী সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর ভবিশ্যৎ তৈরি হয়। অর্থাৎ বেশীর ভাগ ছাত্র-ছাত্রী-ই সার্র্টিফিকেট পায় কিছু না শিখেই। প্রকৃত পক্ষে তারা মূর্খ-ই থেকে যায়।
আমি যদি বলি এই প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস এবং এই পাইকারী হরে এ প্লাস কিংবা গোল্ডেন প্লাসের ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা আর তা কোন একটা শক্তিশালি মহল উপরে বসে কলকাঠি নেড়ে ঘটাচ্ছে এটা তাহলে কি খুব ভুল হবে? ভুল হবে না। কারনটা একটু খুলে বলি তা হলে বুঝতে সুবিধা হবে।
মনে করুন একটা দেশে মোট একশ লোক আছে। তার মধ্যে রয়েছে নানা শ্রেনী। এখন ঐ দেশের দশজন লোক চাচ্ছে দেশের সকল কিছুই তারা নিয়ন্ত্রন করবে আর বাকি নব্বইজন লোক তাদের নিয়ন্ত্রনে থাকবে, তাদের ভয় পাবে সম্মান করবে, সেবাযতœ করবে। আর ঐ দশজনই দেশে সকল সুবিধা সর্ব্বোচ্চটা ভোগ করবে। ননি ছানা যা খাওয়ার তারাই খাবে। আর ঘোলটা খাবে বাকি নব্বইজন। কোন কিছুইতে বাকি নব্বই জনের কেউ তাদের ধারে কাছে আসতে পারবে না। কি মৌলিক চাহিদায়, কি যৌগিক চাহিদায়।
এখন এটা কি করে সম্ভব? নব্বই জন তো সংখ্যায় বেশী। আবার দেশটাও গনতান্ত্রিক দেশ। কি কারা যায়? ঐ দশজন ভাবলো বুদ্ধি দিয়ে এই নব্বইজনকে বশ করে রাখতে হবে। ঐ নব্বইজনের কাউকেই কিংবা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাউকেই কোন কিছু বুঝতে দেয়া যাবে না, বোঝার সুজোগ দেয়া যাবে না। এজন্য কি করতে হবে ঐ নব্বই জনকে শিখতে দেয়া যাবেনা পাশাপাশি আমাদের নিতে হবে উচ্চশিক্ষা। আর এই নোংড়া খেলায় মেতেছে এখন দেশের কিছু লোক। কারন তারা চায় তাদের কাছাকাছি যেন কেউ না যেতে পারে। কোন কিছু শিখে তারা যেন কিছু দাবি করতে না পারে। এখনই এই দেশের অধিকাংশ মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা সম্পর্কে সচেতন না। আর এখনকার শিক্ষার এই দুর্গন্ধ যুক্ত সময়ে আমি হলপ করে বলতে পারি এসএসসিতে এ প্লাস পাওয়া শতকরা ৬০ ভাগ ছেলে মেয়ে মৌলিক চাহিদা কি সেটাই জানে না। এখন সে কি করে বুঝবে যে সে কি কি থেকে বঞ্চিত? যদি নাই জানে তাহলে দেশের মাথা ঐ দশজনের কোন ঝামেলাও নেই। এই কারনেই এই গনহারে এ প্লাস দেয়া কিংবা প্রশ্ন ফাঁসের খেলা। যদি কেউ হিরোইন খেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে যায় তাহলে সে লেখা পড়া করতে যাবে কোন দুঃখে? আর যদিও দুএক লাইন পড়তে হয় তা হলে তা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেখে আগের রাতে চোখ বুলিয়ে গেলেই হবে। তার উপর তো খাতায় কালির দাগ থাকলেও নম্বর দেয়ার নিয়ম তো আছেই।
এখন পর্যন্ত এই প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে নানা পত্রিকায় কলামে টকশোতে শিক্ষা মন্ত্রিকে দায়ী করে বা তার দায়িত্বে অবহেলা বিষয়ক নানা কথা তো হয়েছেই বা এখনও হচ্ছে। আপনাদের বলছি এইযে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তাতে শিক্ষা মন্ত্রির ছেলে মেয়ে কিংবা কাছের আত্মিয় স্বজন কি কোন ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে? হয়নি। কারন তারা পড়ে ইংলিশ মিডিয়ামে। এখন পর্যন্ত কয়জন মন্ত্রির ছেলে মেয়ে সাধারন বাংলা মাধ্যম থেকে পাশ করেছে? তো তাদের অসুবিধা কোথায়? একজন শিক্ষা মন্ত্রি কত বড় ইয়ে হইলে পরিক্ষার সময় ফেইসবুক বন্ধ রাখতে বলতে পারে? মানে বিষয়টা এমন যে প্রশ্ন তো ফাঁস হবেই ফেসবুক তা ছড়াতে যাবে কেন?
প্রশ্ন পত্রে ভুলের জন্য কোরিয়ার শিক্ষা মন্ত্রি জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে পত্রত্যাগ করেছেন। এই খবর আর আমাদের দেশের এই ফাঁসের খবর একই পত্রিকায় হয়তো পাশাপাশি ছাপিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রি আপনি তো দৈনিক পত্রিকা পড়েন পড়েন, পড়েন না? যখন আপনার এই কলঙ্কিত কর্মজজ্ঞ আর কিম সাং-হুন মহানুভবাতার উদাহনের চিত্র একত্রে পাশাপাশি দেখেছেন তখন আপনার মনে কি হয়েছিলো? ঠিক আপনার ঐ সময়ের ভাবনাটা কি ছিলো আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে। আপনার কি একটুও লজ্জা হয়নি? আপানারা যারা মন্ত্রি মিনিষ্টার হন তাদের মায়েরা কি জন্মের সময় চোখে কাজল দেয়না?
আপনি এখনও চেয়ারে বসে আছেন- কয় জেনারেশন নষ্ট করতে চান? আপনার বিলম্ব জাতিকে লুলা করে দিচ্ছে।
এখন প্রায় সকল মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী তাদের জব সার্কুলারে দিয়ে দেয় এ লেভেল ও লেভেল অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু এটা ঠিক যে কোন ইন্টারভিউতে যদি ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েরা সাধারন ছেলে মেয়েদের সাথে অংশ গ্রহন করে তবে ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্টদেরই চাকরী হয়। কারন চাকরী দাতারা জানে এখনকার ছেলে মেয়েরা কি করে পাশ করেছে। বছর চারেক আগেও কথাটা এরকম ছিলো যে পরীক্ষা দিলেই পাশ আর এখন পরীক্ষা দিলেই এ প্লাস। প্লাস পেতে হলে পড়াশুনা করতে হবে এমন কোন কথা নেই। শিক্ষাবোডের্র কন্ট্রলামর, চেয়ারম্যান পরীক্ষকদের বলে দেয় খাতায় কালো দাগ থাকলে সেখানে শতকরা আশিভাগ নম্বর আপনারা দিবেন। নম্বর তো আর আপনাদের বাবার সম্পত্তি না। যদি নম্বর না দিতে পারেন তাহলে খাতা রেখে যান। এই কথার মানে কি? এখন তো ছাত্র ছাত্রীরা নিজেরাই অবাক হয়ে যায় নিজের ফলাফল দেখে। আমার বাবার এক স্টুডেন্ট আমাকে একবার বলল ভাইয়া আমি যে পাশ করব তা আমি নিজেও কোনদিন ভাবি নাই। কিন্তু দেখেন পাইয়া গেছি প্লাস।
মজার বিষয় হচ্ছে এতে কিন্তু ছাত্রÑছাত্রী’র বাবা মা বেশ খুশি। তারা মোটেই চিন্তিদ নয়। আমার ছেলে এপ্লাস পেয়েছে এই কথাটা বলতে পারাটাই তার জন্য সব চাইতে বড় বিষয়। আবার এই অভিবাভকই এক সময় দেশকে গালী দেবে যখন তার এই সাটিফিকেট ধারী মূর্খ ছেলে যখন চারকীর ইন্টারভিউতে ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েদের কাছে ধরা খাবে।
তাহলে সব মিলিয়ে একটু হিসেব করেন আমাদের মাথার উপর কি বিপদ ঝুলছে। দিনকে দিন বেড়ে চলছে বেকারত্বের হার। বাড়ছে অভাব। আর অভাব থেকে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের অপরাধের। আপনার ছেলে কিংবা মেয়েটি কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না সে হচ্ছে সাটিফিকেট ধারী মূর্খ। আর তা বানাচ্ছে আমাদের দেশের সার্থপর মানুষেরা। এটাই এদেশের জন্য অশনি শংকেত।

সাইফুল বাতেন টিটো
মিরপুর, ঢাকা।
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×